Ajker Patrika

তৈরি পোশাকে পৌষ মাস

ফারুক মেহেদী, ঢাকা
আপডেট : ১৩ এপ্রিল ২০২২, ০৯: ৪৬
তৈরি পোশাকে পৌষ মাস

রপ্তানি আয়ের প্রধান উৎস পোশাক খাতে সুবাতাস বইছে বেশ কিছুদিন ধরে। প্রতি মাসেই বেশি বেশি ক্রয়াদেশে ভর করে রেকর্ড হচ্ছে প্রবৃদ্ধিতে। তবে এখন যে ক্রয়াদেশ আসছে, তা সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। ক্রয়াদেশ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন অনেক উদ্যোক্তা। কোনো কোনো কারখানায় সক্ষমতার চেয়ে ক্রয়াদেশ বেশি হওয়ায় পণ্য সময়মতো জাহাজীকরণ করা নিয়েও সংকট তৈরি হচ্ছে।

প্রতিযোগী দেশ শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং তীব্র জ্বালানির সংকটের কারণে পোশাকের বৈশ্বিক ক্রেতারা বাংলাদেশে ভিড় করছেন—দেশের পোশাক খাতের শীর্ষ উদ্যোক্তারা এমন তথ্য জানিয়েছেন। তবে প্রবৃদ্ধি টেকসই করতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতাসহ নানা সমস্যার দ্রুত সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে বিজিএমইএ।

সাম্প্রতিক সময়ের রপ্তানি পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় জানা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ এই ৯ মাসে বাংলাদেশ ৩১ দশমিক ৪৩ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে যা প্রায় ৩৫ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল ৩১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার। পোশাক রপ্তানিতে উচ্চ প্রবৃদ্ধির ধারা প্রতি মাসেই অব্যাহত থাকছে। মূলত প্রতিযোগী দেশ মিয়ানমারে রাজনৈতিক অস্থিরতা, গত বছর ভারত ও ভিয়েতনামে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশে ক্রয়াদেশ আসতে সহায়ক হয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে করোনা সহনীয় হয়ে এলেও ক্রয়াদেশ বাড়ার প্রবাহ কমেনি, বরং প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে।

সম্প্রতি আরেক প্রতিযোগী দেশ শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ঘনীভূত হওয়া এবং সেখানে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করায় বিদেশি ক্রেতারা ওই দেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এর পরিবর্তে তাঁরা নিরাপদ উৎস হিসেবে বাংলাদেশ কিংবা অন্য প্রতিযোগী দেশের দিকে যাচ্ছেন বলে মনে করা হচ্ছে। শ্রীলঙ্কার কারণে ক্রেতারা বাংলাদেশে ক্রয়াদেশ কী পরিমাণ বাড়িয়েছেন, এর কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। যেহেতু বাংলাদেশে বৈশ্বিক ক্রেতাদের ক্রয়াদেশ অনেক বেড়ে গেছে, তাই তাঁরা ধারণা করছেন, নিশ্চয়ই বাড়তি ক্রয়াদেশে শ্রীলঙ্কা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া ক্রয়াদেশের একটি অংশ রয়েছে।

জানা যায়, শ্রীলঙ্কার রপ্তানি বাণিজ্যে পোশাকের অংশীদারত্ব কমবেশি ৬ বিলিয়ন ডলার। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় সেখানে মানুষ কাজ ছেড়ে রাস্তায় বিক্ষোভ করছে। কারফিউ দিয়ে সরকার মানুষকে ঘরে আটকে রাখার চেষ্টা করছে। বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের কারণে জ্বালানি তেল কিনতে পারছে না দেশটি। ফলে পরিবহনব্যবস্থায় অচলাবস্থার পাশাপাশি এখন দিনে ১২-১৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হচ্ছে। এতে পোশাকসহ সব ধরনের উৎপাদনব্যবস্থাই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ইউরোপ-আমেরিকার ক্রেতারা মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছেন।

গতকাল সোমবার ঢাকা ও চট্টগ্রামের কয়েকটি তৈরি পোশাক কারখানার উদ্যোক্তা ও কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেন, এখন এত ক্রয়াদেশ আসছে যে কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। ঢাকার নিট পোশাক কারখানার দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, তাঁদের কারখানায় কয়েক শিফটে কাজ হচ্ছে। করোনাসহ নানা কারণে এমনিতেই কর্মীর সংকট আছে। তার মধ্যে সক্ষমতার চেয়ে বেশি অর্ডার আসায় তাঁদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রতিটি কারখানায়ই কমবেশি ১৫-২০ শতাংশ কর্মীর ঘাটতি রয়েছে। আগামী ছয় মাস তাঁরা কোনো নতুন অর্ডার নেওয়ার মতো অবস্থায় নেই।

চট্টগ্রামের একজন উদ্যোক্তা জানান, সেখানের কারখানাগুলোতেও ক্রয়াদেশের চাপে কর্মীদের ওভারটাইম দিয়ে দিনরাত কাজ করাতে হচ্ছে। জরুরি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কর্মী নিয়োগের চেষ্টা করা হচ্ছে। কর্মীর সংকট মোকাবিলায় অনেক কারখানায় উন্নত যন্ত্রপাতি সংযোজন করে উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। শ্রীলঙ্কা সংকটের কারণে তাঁরা বাড়তি ক্রয়াদেশ পাচ্ছেন বলে জানালেও সময়মতো পণ্য শিপমেন্ট করা নিয়েও উদ্বেগ আছে তাঁদের মধ্যে।

দেশের অন্যতম শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এনভয় গ্রুপের চেয়ারম্যান ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি কুতুবউদ্দিন আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, শ্রীলঙ্কা থেকে কী পরিমাণ ক্রয়াদেশ বাংলাদেশে আসছে, এখনো এর কোনো প্রমাণ তৈরি হয়নি। তবে শ্রীলঙ্কার ক্রয়াদেশের একাংশ বাংলাদেশে আসছে–এটা শতভাগ নিশ্চিত। কারণ, ক্রেতারা কী করবে? তারা তো অনিশ্চয়তা জেনে কাউকে ক্রয়াদেশ দিয়ে বসে থাকবে না। পরিস্থিতি যদি এ রকম চলতে থাকে, অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে অবশ্যই তারা যেখানে নিশ্চয়তা পাবে, সেখানে যাবে।

বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, ক্রেতারা অবশ্যই বাংলাদেশমুখী হচ্ছে। নাহলে এত ক্রয়াদেশ আসছে কীভাবে? তবে শ্রীলঙ্কা থেকেই ক্রেতারা দল বেঁধে বাংলাদেশমুখী হচ্ছে, এখনই এটা বলার সময় আসেনি।

বিজিএমইএর সহসভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, ‘আমাদের এখানে বিপুল অর্ডার আসছে। শ্রীলঙ্কা থেকেও অনেক অর্ডার বাংলাদেশে আসছে। আমাদের উদ্যোক্তারা অর্ডার নিয়ে কাজ করছেন। তবে এখানে সমস্যা হলো “এজ অব ডুয়িং বিজনেসে” আমরা পিছিয়ে পড়ছি। ঘাটে ঘাটে আমাদের ধাক্কা খেতে হয়। অনেক অর্ডার থাকার পরও যদি আমরা তা টেকসই করতে না পারি, এটা আমাদের নিজেদের কারণেই হবে। কারণ আমাদের বিভিন্ন আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় ভুগতে হয়। আমরা নতুন করে আবারও পিছিয়েছি। এখন আবার শিল্পকারখানায় গ্যাস রেশনিং করা হচ্ছে। এভাবে হলে অর্ডার সময়মতো কীভাবে শিপমেন্ট হবে? এগুলো সরকারকে ভাবতে হবে।’

জানা যায়, বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৩ শতাংশ জোগান দেয় পোশাক খাত। এর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে নিট পোশাক। এ খাতে চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে ১৭ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আয় নিয়ে এসেছে। এ খাতের আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৩৫ শতাংশ বেশি। আর ওভেন পোশাক রপ্তানি করে গত ৯ মাসে আয় হয়েছে ১৪ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কোটি টাকা আত্মসাৎ করে লাপাত্তা: কে এই ফ্লাইট এক্সপার্ট এমডি সালমান, বাবার হাত ধরে যাঁর উত্থান

আ.লীগের এমপি শাম্মীর বাসায় ১০ লাখ টাকা চাঁদাবাজি ও ভাগ-বাঁটোয়ারার বিবরণ দিলেন রিয়াদ

কিশোরগঞ্জে হর্টিকালচারের উপপরিচালকের বিরুদ্ধে ‘সমকামিতার’ অভিযোগ, মামলা বাবুর্চির

ইউটিউবে ১০০০ ভিউতে আয় কত

আক্কেলপুরে পুলিশের মোটরসাইকেলের ধাক্কায় সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের স্ত্রী নিহত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত