Ajker Patrika

বাঁশের সাঁকো ভেঙে দুর্ভোগ

কাউনিয়া প্রতিনিধি
আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০২১, ১৭: ২৬
বাঁশের সাঁকো ভেঙে দুর্ভোগ

‘বহু দিন থাকি খালি শুনো এ্যাটে এ্যাকনা পাকা বিরিজ হইবে। ভোট আসিলে চেয়ারম্যান-মেম্বাররা বিরিজ করি দিবার চায়। আর অপিছারেরা আইসে খালি মাপি নিয়া যায়। কিন্তু বিরিজ আর পাকা হয় না।’

তিস্তার শাখা মানস নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে আক্ষেপের সুরে কথাগুলো বলছিলেন কাউনিয়ার চরনাজিরদহ গ্রামের বৃদ্ধ আবদুর রহিম।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, উপজেলার চরপ্রাণনাথ ও চরনাজিরদহ গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া মানসের ওপরে একটি পাকা সেতুর অভাবে আশপাশের আট গ্রামের মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এই পথ দিয়ে পশ্চিম পাড়ের লোকজনের হাটবাজারসহ উপজেলা সদরে যাওয়া ছাড়া আর বিকল্প কোনো পথ নেই। এখানে যোগাযোগের জন্য একটি বাঁশের সাঁকো ছিল। এটি তিন মাস আগে ভেঙে যায়।

শহীদবাদ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ওয়ার্ড সদস্য কামরুজ্জামান জানান, নদীর পশ্চিম পাড়ে কাউনিয়ার চরনাজিরদহ, চরএকতা, পল্লীমারী ও প্রাণনাথ গ্রামের অংশ এবং লালমনিরহাটের খলাইঘাট, রাজপুর, খুনিয়াগাছ ও চাংড়া গ্রাম রয়েছে। এসব গ্রামের বাসিন্দাদের পূর্ব পাড়ের স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা ও হাটবাজারে আসতে হয়। যাতায়াতের একমাত্র এই পথে সেতু নির্মাণ না হওয়ায় ভোগান্তি ভোগ করতে হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, নদীর ওপর থাকা বাঁশের সাঁকোটি ভেঙে পড়ে আছে। দুই পাড়ের বাসিন্দাদের কেউ কচুরিপানার ওপর বাঁশ ফেলে, আবার কেউ ভিজে নদী পার হচ্ছেন।

চরনাজিরদহ গ্রামের রফিকুল ইসলাম জানান, ১৯৮৮ সালে গঙ্গাচড়া বাঁধ নির্মাণের ফলে তিস্তা নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে এখানে মরা নদীতে পরিণত হয়। সেই থেকে দুই পাড়ের মানুষ কলাগাছের ভেলা দিয়ে নদী পারাপার হতো। চার বছর আগে ইউনিয়ন পরিষদ এবং এলাকাবাসীর যৌথ সহযোগিতায় নদীর ওপর বাঁশের সাঁকো তৈরি করে। কিন্তু গত জুলাইয়ে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সাঁকোটি ভেঙে যায়। এতে করে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

খলাইঘাট গ্রামের শরিফুল ইসলাম ও চাংড়া গ্রামের হাশেম আলী জানান, তাঁদের এই রাস্তা ছাড়া শহর ও হাটবাজারে যাতায়াতের বিকল্প কোনো রাস্তা নেই। সেতু না থাকার কারণে রোগীদের প্রায় আট কিলোমিটার পথ ঘুরে গাড়িতে করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। পূর্ব চরনাজিরদহ গ্রামের কৃষক শওকত আলী বলেন, এ পাড়ের বাসিন্দারা নদীর ‍ওই পাড়ের জমিতে চাষাবাদ করেন। তাঁদের উৎপাদিত ফসল নিয়ে আসতে অনেক কষ্ট হয়। এতে করে উৎপাদন খরচও বেড়ে যায়।

কৃষক শহিদুল ইসলাম ও আকবর আলী বলেন, নির্বাচনের সময় সবাই বলে এবার পাকা সেতু হবে। নির্বাচন শেষ হলে আর কেউ কথা রাখে না। এবার তাঁরা আগে সেতু চাইবেন, পরে ভোট দেবেন।

স্থানীয় স্কুলের শিক্ষার্থী শাওন ও মিশুসহ কয়েকজন জানায়, সাঁকোর ওপর দিয়ে তাঁরা কোনো রকমে নদী পার হয়ে পারত। এখন সাঁকোও নেই। তাদের প্রতিদিন নদীতে সাঁতার কেটে স্কুলে যেতে হয়।

হারাগাছ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাকিবুল ইসলাম পলাশ জানান, ভেঙে পড়া বাঁশের সাঁকো সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাঁশের মাচা তৈরি করা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে সাঁকো সংস্কার করে চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।

শহীদবাগ ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল হান্নান আজকের পত্রিকাকে জানান, পাকা সেতু নির্মাণে স্থানীয় সাংসদ ও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি উদ্যোগ নিয়েছেন। চলতি বছর সেতু নির্মাণের অনুমতি পাওয়া যাবে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে কাউনিয়ার দায়িত্বে থাকা পীরগাছা উপজেলা প্রকৌশলী মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যে সেতু নির্মাণের জন্য মাটি পরীক্ষা করা হয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রীর ডিও লেটার সংবলিত সেতু নির্মাণের জন্য একটি প্রস্তাবনা ঢাকায় এলজিইডি অফিসে পাঠানো হয়েছে। অনুমতি পেলে টেন্ডারের মাধ্যমে সেতু নির্মাণ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত