Ajker Patrika

ছিন্নভিন্ন জাপা, সুযোগ নেবে বিএনপি

আনিছুর লাডলা, লালমনিরহাট
আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২: ২৬
ছিন্নভিন্ন জাপা, সুযোগ নেবে বিএনপি

উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাট। পশ্চিমে তিস্তা নদী আর পূর্বে ভারতীয় সীমান্ত নিয়ে জেলার অন্যতম দুটি উপজেলা হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম। এ দুই উপজেলা নিয়ে গঠিত লালমনিরহাট-১ আসনে একসময় বেশ আধিপত্য ছিল জাতীয় পার্টির (জাপা)। কিন্তু ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছে আসন হারায় জাপা। এর পর থেকেই ধীরে ধীরে ছিন্নভিন্ন হতে থাকে দলটি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ সুযোগই কাজে লাগাতে চাইছে বিএনপি। জাপার ভোট নিজেদের পক্ষে আনতে চাইছেন দলটির নেতারা। তবে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এগিয়ে রাখতে হবে আওয়ামী লীগকে।

২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতাহার হোসেন আসনটি দখলে নেন। এরপর একবারও তাঁর জয়রথ থামানো যায়নি। দলটির নেতা-কর্মীরা বলছেন, এলাকায় রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন এবং করে যাচ্ছেন তিনি। একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ হিসেবে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতাহার হোসেন এলাকায় বেশ জনপ্রিয়।

দীর্ঘদিন ধরে লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন এমপি মোতাহার হোসেন। বিগত মহাজোট সরকারের আমলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী থাকার সুবাদে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন তিনি। আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দৌড়ে এমপি মোতাহার হোসেনই এগিয়ে। তবে তিনি কোনো কারণে না চাইলে তাঁর ছেলে হাতীবান্ধা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান সোহাগ দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। এ ছাড়া আলোচনায় আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লিয়াকত হোসেন বাচ্চু, পাটগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বাবুল। তাঁদের সবাই এলাকায় কাজ করে যাচ্ছেন।

তবে এ আসনের পাটগ্রাম উপজেলায় আওয়ামী লীগের মধ্যে নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব রয়েছে বলে জানা গেছে। নির্বাচনের আগে দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলতে না পারলে নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করছেন দলের কর্মীরা।

এদিকে জোটের কারণে টানা কয়েকবার এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীর ওপরই নির্ভর করেছে বিএনপি। তবে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাওয়ায় প্রায় ২১ বছর পর ২০১৮ সালে ধানের শীষ প্রতীকে এ আসনে বিএনপি থেকে নির্বাচন করেন ব্যারিস্টার হাসান রাজীব প্রধান। জেলা বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে দলীয় মামলাগুলো তিনিই দেখভাল করে থাকেন। এ কারণে তাঁরা বিপদে হাসান রাজীব প্রধানের ওপর অনেকটা নির্ভরশীল। তবে বেশির ভাগ সময় ঢাকায় অবস্থান করায় নেতাশূন্য হয়ে পড়েছে এলাকা। তারপরও যে সময়ে তিনি এলাকায় আসেন, তখন নেতা-কর্মীদের নিয়ে ঘর গোছানোর কাজে ব্যস্ত থাকেন।

বিএনপির একাধিক কর্মী বলছেন, হাসান রাজীব এলাকায় সার্বক্ষণিক সময় দিলে ভোটের আগে বিএনপি চাঙা হবে এবং আগামী সংসদ নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আশা করা যায়। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি জয়নুল আবেদীন সরকারের ছেলে সায়েদুজ্জামান কোয়েল, সাবেক ছাত্রদল নেতা ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট সাজেদুল ইসলাম পাটোয়ারী উজ্জ্বল বিএনপির মনোনয়নের জন্য নিজ এলাকায় কাজ করছেন।

এ আসনে বিএনপিতে দলীয় কোন্দল না থাকলেও মনোনয়ন নিয়ে মতভেদ রয়েছে।

১৯৮৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত টানা চারবার আসনটি জাতীয় পার্টির দখলে থাকলেও বর্তমানে নানা কারণে দলটির সাংগঠনিক তৎপরতা ঝিমিয়ে পড়েছে। নেতৃত্ব সংকটের কারণে দলটির বহু নেতা-কর্মী জাপা ছেড়ে ক্ষমতাসীনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়েছেন।

সাবেক এমপি জয়নুল আবেদীন সরকার মারা যাওয়ার পর নেতৃত্ব সংকটের কারণে সাংগঠনিক তৎপরতা ঝিমিয়ে পড়ে দলটির। কিন্তু এবারের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এম জি মোস্তফা, জাপা নেতা মোস্তফা সেলিম বেঙ্গল এবং লালমনিরহাট জেলা জাপার যুগ্ম সদস্যসচিব আরিফ শাহরিয়ার সিজার এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। তবে দলের স্থানীয় বেশির ভাগ নেতা-কর্মী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চাইছেন। তবে তিনি মনোনয়ন চাইবেন কি না, সে ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছুই জানা যায়নি।

[প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন হাতীবান্ধা প্রতিনিধি রবিউল ইসলাম রবি ও পাটগ্রাম প্রতিনিধি আজিনুর রহমান আজিম]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত