সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

আপনি, রবীন্দ্রনাথ, রাষ্ট্রে বিশ্বাস করতেন না; বিশ্বাস করতেন সমাজে। ভারতবর্ষে সমাজই বড়, রাষ্ট্র এখানে একটি উৎপাতবিশেষ—এ আপনার ধারণার অন্তর্গত ছিল। রাষ্ট্র ছিল বাইরের। সমাজ আমাদের নিজস্ব। এই সমাজকে আমরা নিজের মতো গড়ে তুলব, এই আস্থা আপনার ছিল।
কিন্তু রাষ্ট্রের উৎপাত কমেনি, ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। রাষ্ট্র হয়ে দাঁড়িয়েছে শোষণ ও লুণ্ঠনে অতিশয় বিশ্বস্ত যন্ত্র। যন্ত্র সে শাসকদের হাতে। শাসকেরা অধীন সাম্রাজ্যবাদের হাতে। আমরা দেখছি রাষ্ট্র আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অধিক দক্ষ ও সর্বগ্রাসী হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি আছে এনজিও। এরা অনেকটা মিশনারিদের মতো। নতুন ধর্ম প্রচার করছে—সেটি হলো, পুঁজিবাদ। রাষ্ট্র নিজে পুঁজিবাদী ও আমলাতান্ত্রিক; এনজিওদের সাহায্য দানও পুঁজিবাদী; তাদের লক্ষ্য মানুষকে বিশ্ব পুঁজিবাদের অংশ করে ফেলা।
রুশ বিপ্লবের পর, রবীন্দ্রনাথ, আপনি সোভিয়েত ইউনিয়নে গিয়েছিলেন। গিয়ে মনে হয়েছিল আপনার যে, আপনি তীর্থ দর্শনে এসেছেন। মানব-মুক্তির নব আয়োজন আপনাকে অভিভূত করেছিল। সেই সোভিয়েত এখন আর নেই। ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। এখন সেখানে বিদেশি বণিক ও স্বদেশি মতলবিদের দানবীয় পদচারণে নতুন মানুষ সৃষ্টির সব উদ্যমসহ সবকিছুই লন্ডভন্ড। আপনি ফিরে এলে ব্যথা পেতেন।
তখনো, সেই ১৯৩০-এ স্তালিন যখন অবিচ্ছেদ্য ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত, সেই সময়ে আপনি একটি কালো ছায়া দেখেছিলেন ব্যাপারটার ভেতরে; সেটি যান্ত্রিকতার। ছায়াটি কায়া ধরেছে, প্রচণ্ড ও প্রকাণ্ড হয়েছে এবং আমলাতন্ত্রের রূপ নিয়ে বিদেশি পুঁজিবাদের সহায়তায় আঘাত করেছে রুশ বিপ্লবের অর্জনগুলোকে। রাষ্ট্রকে আপনি ভয় করতেন, ভয় তাকে সমাজ বিপ্লবীরা সবাই করেন, তাঁরা চান রাষ্ট্র ক্রমেই শক্তি হারিয়ে অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ুক, মানুষ মুক্তি পাক, আপনি যাকে সমাজ বলতেন সেখানে। কিন্তু রাষ্ট্রকে খাটো করা যায়নি। কেননা শোষণের শিকড়গুলো উপড়ে ফেললেও গোড়া ভেতরে রয়ে যায় এবং বাইরে থেকে পুঁজিবাদীরা তাতে জলসিঞ্চন করেছে। রাষ্ট্র বৈষম্যের সন্তান এবং বৈষম্যের প্রতিপালক; অর্থাৎ কিনা সন্তানও বটে, অভিভাবকও বটে। পৃথিবীজুড়ে বৈষম্য যে তীব্রতর হচ্ছে, তার প্রমাণ রাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান দৌরাত্ম্য। এ বড় মারাত্মক বাস্তবতা আজ পৃথিবীজুড়ে।
আপনি বলেছিলেন, রেখেছ বাঙালি করে, মানুষ করোনি। জননীকে বলেছিলেন ও কথা। বাঙালি মানুষ হয়েছে কি, এখনো? কতটা? হিন্দু হয়েছে, মুসলমান হয়েছে, ধনী হয়েছে, দরিদ্র হয়েছে, কিন্তু ঠিক ঠিক মানুষ হয়নি।
মানুষ হওয়ার প্রথম শর্তই হচ্ছে বাঙালি হওয়া। বাঙালি হলেই যে মানুষ হবে তা নয়, ‘রেখেছ বাঙালি করে, মানুষ করোনি’—এ তো আপনারই কথা; কিন্তু বাঙালি না হলে কিছুতেই সে মানুষ হতে পারবে না। বাঙালি হওয়ার অর্থ কী?
না, কেবল বাংলা ভাষা বলা বা ব্যবহার করা নয়। সেটা বিদেশিরাও করতে পারে, যদি তারা ইচ্ছা করে। বাঙালি হওয়ার অর্থ হচ্ছে একদিকে যেমন বাংলা ভাষা ব্যবহার করা, অন্যদিকে তেমনি বাঙালির জন্য সহানুভূতি বোধ করা। অন্য বাঙালির দুর্দশায় যে বিপন্ন বোধ করে এবং তাকে সাহায্য করতে চায়, সেই বাংলাভাষীকেই বাঙালি বলি। বাঙালি সম্পন্ন হবে, কিন্তু সংলগ্নও হবে, পরস্পরের। আপনি শ্রেষ্ঠ বাঙালি। কেননা একদিকে আপনি বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ কবি, অন্যদিকে বাংলার দুঃখে সর্বাধিক পরিমাণে কাতর একজন মানুষ।
কিন্তু এই যে একাধারে সম্পন্ন ও সংলগ্ন হওয়া, এটা নেই আজ বাঙালির মধ্যে। সম্পন্নরা তো বটেই, দরিদ্ররাও পরস্পরবিচ্ছিন্ন। আপনি উন্নতির অনেক হামবড়াই দেখতে পেতেন চতুর্দিকে; কিন্তু বিচ্ছিন্নতা দেখতেন সঙ্গে সঙ্গে এবং পীড়িত হতেন।
আপনি চেয়েছিলেন বঙ্গসন্তানেরা সবাই গৃহছাড়া লক্ষ্মীছাড়া হোক। তারা ঘরকুনো থাকবে না, বেরিয়ে পড়বে, জয় করবে সারা বিশ্ব। গৃহছাড়া সে-ই হতে পারে, যার গৃহ আছে, নইলে সে ছাড়বে কী? কেমন করে? অধিকাংশ বাঙালির আজ গৃহ নেই। মন্বন্তর, বঙ্গভঙ্গ, স্বাধীনতাযুদ্ধ, সাম্প্রদায়িকতার নীরব উৎপাত ও শ্রেণি-নিপীড়ন—সবকিছুই গৃহহীন করেছে বিপুলসংখ্যক বাঙালিকে। ভূমিহীন উপেনের সংখ্যা আজ একটি-দুটি নয়, কোটি কোটি; তাদের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান ভেদ নেই, দলে দলে তারা গৃহহীন হচ্ছে, চলেছে শহরে, সেখানে বাসিন্দা হচ্ছে বস্তির। এই স্রোতোধারা দেখলে বড় পীড়িত হতেন রবীন্দ্রনাথ।
আপনি বলেছিলেন, আপনার গান বাঙালিকে গাইতে হবে। তা তারা গায় বৈকি। আপনার গানই তো জাতীয় সংগীত—বাঙালি রাষ্ট্রের, ভারতীয় রাষ্ট্রের, এমনকি শ্রীলঙ্কারও। কিন্তু আপনার গান আজ কতভাবে যে বিপদগ্রস্ত, তার তো কোনো ইয়ত্তা নেই। ব্যান্ড মিউজিকের জঙ্গি আওয়াজ তাকে চাপা দিতে চাচ্ছে পদে পদে, দ্রুতগামী ট্রাক যেমন করে চাপা দেয় নিরীহ পথযাত্রীকে, ঠিক তেমনিভাবে।
বাঙালি সংস্কৃতির নিজস্বতা আজ নানাভাবে আক্রান্ত। লোকে আন্তর্জাতিক হচ্ছে, যার অর্থ দাঁড়ায় নিজের ঘরেই সে পরবাসী হয়ে পড়েছে। বাঙালির জন্য বড়াই করার একটা বিষয় ছিল তার সাহিত্য। ঈশ্বর গুপ্তের যুগ পার হয়ে বাংলা সাহিত্য এগিয়েছিল অনেকটা দূর। আপনি তাকে হাত ধরে পার করে নিয়ে এসেছিলেন একটা লম্বা পথ। কিন্তু সেই সাহিত্য আজ আবার পিছু হটা শুরু করেছে, ঈশ্বর গুপ্তের সময়ের অভিমুখে।
কিন্তু রবীন্দ্রনাথ আবার আসবেন না, আসা সম্ভব নয়। রবীন্দ্রনাথ সেজে যদি আজ কেউ আসেন, তবে ধরে নিতে হবে তিনি আসল নন, মেকি। কেননা ইতিহাসে অগ্রগমন আছে, প্রত্যাগমন নেই। নায়ক একবারই আসেন, বারবার নয়।
কিন্তু তাঁকে আমাদের খুবই প্রয়োজন। প্রয়োজন আমাদের মানুষ হওয়ার শিক্ষা দেওয়ার জন্য। তিনি এলে বলবেন সংলগ্ন হতে। জোর দেবেন শিক্ষার ওপর। যেমন বুদ্ধির, তেমনি হৃদয়ের।
রাজনীতিকে তিনি বাদ দেবেন না। তাঁর দৃষ্টি কখনোই এ সত্যটি দেখতে ভুল করবে না যে বাঙালির শত্রু কেবল বাইরে নেই, রয়েছে ভেতরেও; ভেতরে তার শত্রু হচ্ছে বৈষম্য। এই বৈষম্য দূর করতে হলে জনগণকে রাষ্ট্রক্ষমতা করায়ত্ত করতে হবে। শেষ জীবনে বঙ্কিমচন্দ্র রাজনীতিবিমুখ হয়ে পড়েছিলেন এবং আশ্রয় খুঁজেছিলেন ধর্মে। শেষ জীবনে বিদ্যাসাগর চলে যেতে চেয়েছিলেন সাঁওতাল পরগনায়। রবীন্দ্রনাথ কোনোটিই করেননি; করতেনও না। তিনি জনপদেই থাকতেন, নিজের অবস্থানে থেকে অংশ নিতেন রাজনীতিতে, রাষ্ট্রকে যাতে দুর্বল করা যায় সেই লক্ষ্যে এবং এগিয়ে যেতেন সামনের দিকে, যেমনটি তিনি সারা জীবন করে গেছেন।
রবীন্দ্রনাথ আজ নেই, তবু তিনি আছেন এবং থাকবেন। তিনি তাঁর সাহিত্য রেখে গেছেন, রেখে গেছেন তাঁর জীবনকেও। আমরা কেউই রবীন্দ্রনাথ হব না; তাঁর মেধা আমাদের কারও নেই; কিন্তু তাঁর পথে আমরা অবশ্যই অগ্রসর হতে পারি। সেই পথটি হচ্ছে বাঙালি হওয়ার পথ। বিচ্ছিন্নতা কাটিয়ে সংলগ্ন হতে বলেছেন তিনি; বলেছেন একই সঙ্গে হৃদয়বান ও বুদ্ধিমান হতে, বলেছেন উদারচিত্ত ও সাহসী হতে। উন্নতি মানে শুধু দালানকোঠা নয়; দালানকোঠা অবশ্যই দরকার হবে, তবে আরও বেশি করে যার দরকার হবে, সেটি হচ্ছে মানুষ হিসেবে প্রসারিত ও উন্নত হওয়া; অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথ না হয়েও রবীন্দ্রনাথের মতো হওয়া।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আপনি, রবীন্দ্রনাথ, রাষ্ট্রে বিশ্বাস করতেন না; বিশ্বাস করতেন সমাজে। ভারতবর্ষে সমাজই বড়, রাষ্ট্র এখানে একটি উৎপাতবিশেষ—এ আপনার ধারণার অন্তর্গত ছিল। রাষ্ট্র ছিল বাইরের। সমাজ আমাদের নিজস্ব। এই সমাজকে আমরা নিজের মতো গড়ে তুলব, এই আস্থা আপনার ছিল।
কিন্তু রাষ্ট্রের উৎপাত কমেনি, ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। রাষ্ট্র হয়ে দাঁড়িয়েছে শোষণ ও লুণ্ঠনে অতিশয় বিশ্বস্ত যন্ত্র। যন্ত্র সে শাসকদের হাতে। শাসকেরা অধীন সাম্রাজ্যবাদের হাতে। আমরা দেখছি রাষ্ট্র আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অধিক দক্ষ ও সর্বগ্রাসী হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি আছে এনজিও। এরা অনেকটা মিশনারিদের মতো। নতুন ধর্ম প্রচার করছে—সেটি হলো, পুঁজিবাদ। রাষ্ট্র নিজে পুঁজিবাদী ও আমলাতান্ত্রিক; এনজিওদের সাহায্য দানও পুঁজিবাদী; তাদের লক্ষ্য মানুষকে বিশ্ব পুঁজিবাদের অংশ করে ফেলা।
রুশ বিপ্লবের পর, রবীন্দ্রনাথ, আপনি সোভিয়েত ইউনিয়নে গিয়েছিলেন। গিয়ে মনে হয়েছিল আপনার যে, আপনি তীর্থ দর্শনে এসেছেন। মানব-মুক্তির নব আয়োজন আপনাকে অভিভূত করেছিল। সেই সোভিয়েত এখন আর নেই। ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। এখন সেখানে বিদেশি বণিক ও স্বদেশি মতলবিদের দানবীয় পদচারণে নতুন মানুষ সৃষ্টির সব উদ্যমসহ সবকিছুই লন্ডভন্ড। আপনি ফিরে এলে ব্যথা পেতেন।
তখনো, সেই ১৯৩০-এ স্তালিন যখন অবিচ্ছেদ্য ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত, সেই সময়ে আপনি একটি কালো ছায়া দেখেছিলেন ব্যাপারটার ভেতরে; সেটি যান্ত্রিকতার। ছায়াটি কায়া ধরেছে, প্রচণ্ড ও প্রকাণ্ড হয়েছে এবং আমলাতন্ত্রের রূপ নিয়ে বিদেশি পুঁজিবাদের সহায়তায় আঘাত করেছে রুশ বিপ্লবের অর্জনগুলোকে। রাষ্ট্রকে আপনি ভয় করতেন, ভয় তাকে সমাজ বিপ্লবীরা সবাই করেন, তাঁরা চান রাষ্ট্র ক্রমেই শক্তি হারিয়ে অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ুক, মানুষ মুক্তি পাক, আপনি যাকে সমাজ বলতেন সেখানে। কিন্তু রাষ্ট্রকে খাটো করা যায়নি। কেননা শোষণের শিকড়গুলো উপড়ে ফেললেও গোড়া ভেতরে রয়ে যায় এবং বাইরে থেকে পুঁজিবাদীরা তাতে জলসিঞ্চন করেছে। রাষ্ট্র বৈষম্যের সন্তান এবং বৈষম্যের প্রতিপালক; অর্থাৎ কিনা সন্তানও বটে, অভিভাবকও বটে। পৃথিবীজুড়ে বৈষম্য যে তীব্রতর হচ্ছে, তার প্রমাণ রাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান দৌরাত্ম্য। এ বড় মারাত্মক বাস্তবতা আজ পৃথিবীজুড়ে।
আপনি বলেছিলেন, রেখেছ বাঙালি করে, মানুষ করোনি। জননীকে বলেছিলেন ও কথা। বাঙালি মানুষ হয়েছে কি, এখনো? কতটা? হিন্দু হয়েছে, মুসলমান হয়েছে, ধনী হয়েছে, দরিদ্র হয়েছে, কিন্তু ঠিক ঠিক মানুষ হয়নি।
মানুষ হওয়ার প্রথম শর্তই হচ্ছে বাঙালি হওয়া। বাঙালি হলেই যে মানুষ হবে তা নয়, ‘রেখেছ বাঙালি করে, মানুষ করোনি’—এ তো আপনারই কথা; কিন্তু বাঙালি না হলে কিছুতেই সে মানুষ হতে পারবে না। বাঙালি হওয়ার অর্থ কী?
না, কেবল বাংলা ভাষা বলা বা ব্যবহার করা নয়। সেটা বিদেশিরাও করতে পারে, যদি তারা ইচ্ছা করে। বাঙালি হওয়ার অর্থ হচ্ছে একদিকে যেমন বাংলা ভাষা ব্যবহার করা, অন্যদিকে তেমনি বাঙালির জন্য সহানুভূতি বোধ করা। অন্য বাঙালির দুর্দশায় যে বিপন্ন বোধ করে এবং তাকে সাহায্য করতে চায়, সেই বাংলাভাষীকেই বাঙালি বলি। বাঙালি সম্পন্ন হবে, কিন্তু সংলগ্নও হবে, পরস্পরের। আপনি শ্রেষ্ঠ বাঙালি। কেননা একদিকে আপনি বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ কবি, অন্যদিকে বাংলার দুঃখে সর্বাধিক পরিমাণে কাতর একজন মানুষ।
কিন্তু এই যে একাধারে সম্পন্ন ও সংলগ্ন হওয়া, এটা নেই আজ বাঙালির মধ্যে। সম্পন্নরা তো বটেই, দরিদ্ররাও পরস্পরবিচ্ছিন্ন। আপনি উন্নতির অনেক হামবড়াই দেখতে পেতেন চতুর্দিকে; কিন্তু বিচ্ছিন্নতা দেখতেন সঙ্গে সঙ্গে এবং পীড়িত হতেন।
আপনি চেয়েছিলেন বঙ্গসন্তানেরা সবাই গৃহছাড়া লক্ষ্মীছাড়া হোক। তারা ঘরকুনো থাকবে না, বেরিয়ে পড়বে, জয় করবে সারা বিশ্ব। গৃহছাড়া সে-ই হতে পারে, যার গৃহ আছে, নইলে সে ছাড়বে কী? কেমন করে? অধিকাংশ বাঙালির আজ গৃহ নেই। মন্বন্তর, বঙ্গভঙ্গ, স্বাধীনতাযুদ্ধ, সাম্প্রদায়িকতার নীরব উৎপাত ও শ্রেণি-নিপীড়ন—সবকিছুই গৃহহীন করেছে বিপুলসংখ্যক বাঙালিকে। ভূমিহীন উপেনের সংখ্যা আজ একটি-দুটি নয়, কোটি কোটি; তাদের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান ভেদ নেই, দলে দলে তারা গৃহহীন হচ্ছে, চলেছে শহরে, সেখানে বাসিন্দা হচ্ছে বস্তির। এই স্রোতোধারা দেখলে বড় পীড়িত হতেন রবীন্দ্রনাথ।
আপনি বলেছিলেন, আপনার গান বাঙালিকে গাইতে হবে। তা তারা গায় বৈকি। আপনার গানই তো জাতীয় সংগীত—বাঙালি রাষ্ট্রের, ভারতীয় রাষ্ট্রের, এমনকি শ্রীলঙ্কারও। কিন্তু আপনার গান আজ কতভাবে যে বিপদগ্রস্ত, তার তো কোনো ইয়ত্তা নেই। ব্যান্ড মিউজিকের জঙ্গি আওয়াজ তাকে চাপা দিতে চাচ্ছে পদে পদে, দ্রুতগামী ট্রাক যেমন করে চাপা দেয় নিরীহ পথযাত্রীকে, ঠিক তেমনিভাবে।
বাঙালি সংস্কৃতির নিজস্বতা আজ নানাভাবে আক্রান্ত। লোকে আন্তর্জাতিক হচ্ছে, যার অর্থ দাঁড়ায় নিজের ঘরেই সে পরবাসী হয়ে পড়েছে। বাঙালির জন্য বড়াই করার একটা বিষয় ছিল তার সাহিত্য। ঈশ্বর গুপ্তের যুগ পার হয়ে বাংলা সাহিত্য এগিয়েছিল অনেকটা দূর। আপনি তাকে হাত ধরে পার করে নিয়ে এসেছিলেন একটা লম্বা পথ। কিন্তু সেই সাহিত্য আজ আবার পিছু হটা শুরু করেছে, ঈশ্বর গুপ্তের সময়ের অভিমুখে।
কিন্তু রবীন্দ্রনাথ আবার আসবেন না, আসা সম্ভব নয়। রবীন্দ্রনাথ সেজে যদি আজ কেউ আসেন, তবে ধরে নিতে হবে তিনি আসল নন, মেকি। কেননা ইতিহাসে অগ্রগমন আছে, প্রত্যাগমন নেই। নায়ক একবারই আসেন, বারবার নয়।
কিন্তু তাঁকে আমাদের খুবই প্রয়োজন। প্রয়োজন আমাদের মানুষ হওয়ার শিক্ষা দেওয়ার জন্য। তিনি এলে বলবেন সংলগ্ন হতে। জোর দেবেন শিক্ষার ওপর। যেমন বুদ্ধির, তেমনি হৃদয়ের।
রাজনীতিকে তিনি বাদ দেবেন না। তাঁর দৃষ্টি কখনোই এ সত্যটি দেখতে ভুল করবে না যে বাঙালির শত্রু কেবল বাইরে নেই, রয়েছে ভেতরেও; ভেতরে তার শত্রু হচ্ছে বৈষম্য। এই বৈষম্য দূর করতে হলে জনগণকে রাষ্ট্রক্ষমতা করায়ত্ত করতে হবে। শেষ জীবনে বঙ্কিমচন্দ্র রাজনীতিবিমুখ হয়ে পড়েছিলেন এবং আশ্রয় খুঁজেছিলেন ধর্মে। শেষ জীবনে বিদ্যাসাগর চলে যেতে চেয়েছিলেন সাঁওতাল পরগনায়। রবীন্দ্রনাথ কোনোটিই করেননি; করতেনও না। তিনি জনপদেই থাকতেন, নিজের অবস্থানে থেকে অংশ নিতেন রাজনীতিতে, রাষ্ট্রকে যাতে দুর্বল করা যায় সেই লক্ষ্যে এবং এগিয়ে যেতেন সামনের দিকে, যেমনটি তিনি সারা জীবন করে গেছেন।
রবীন্দ্রনাথ আজ নেই, তবু তিনি আছেন এবং থাকবেন। তিনি তাঁর সাহিত্য রেখে গেছেন, রেখে গেছেন তাঁর জীবনকেও। আমরা কেউই রবীন্দ্রনাথ হব না; তাঁর মেধা আমাদের কারও নেই; কিন্তু তাঁর পথে আমরা অবশ্যই অগ্রসর হতে পারি। সেই পথটি হচ্ছে বাঙালি হওয়ার পথ। বিচ্ছিন্নতা কাটিয়ে সংলগ্ন হতে বলেছেন তিনি; বলেছেন একই সঙ্গে হৃদয়বান ও বুদ্ধিমান হতে, বলেছেন উদারচিত্ত ও সাহসী হতে। উন্নতি মানে শুধু দালানকোঠা নয়; দালানকোঠা অবশ্যই দরকার হবে, তবে আরও বেশি করে যার দরকার হবে, সেটি হচ্ছে মানুষ হিসেবে প্রসারিত ও উন্নত হওয়া; অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথ না হয়েও রবীন্দ্রনাথের মতো হওয়া।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

আপনি, রবীন্দ্রনাথ, রাষ্ট্রে বিশ্বাস করতেন না; বিশ্বাস করতেন সমাজে। ভারতবর্ষে সমাজই বড়, রাষ্ট্র এখানে একটি উৎপাতবিশেষ—এ আপনার ধারণার অন্তর্গত ছিল। রাষ্ট্র ছিল বাইরের। সমাজ আমাদের নিজস্ব। এই সমাজকে আমরা নিজের মতো গড়ে তুলব, এই আস্থা আপনার ছিল।
কিন্তু রাষ্ট্রের উৎপাত কমেনি, ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। রাষ্ট্র হয়ে দাঁড়িয়েছে শোষণ ও লুণ্ঠনে অতিশয় বিশ্বস্ত যন্ত্র। যন্ত্র সে শাসকদের হাতে। শাসকেরা অধীন সাম্রাজ্যবাদের হাতে। আমরা দেখছি রাষ্ট্র আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অধিক দক্ষ ও সর্বগ্রাসী হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি আছে এনজিও। এরা অনেকটা মিশনারিদের মতো। নতুন ধর্ম প্রচার করছে—সেটি হলো, পুঁজিবাদ। রাষ্ট্র নিজে পুঁজিবাদী ও আমলাতান্ত্রিক; এনজিওদের সাহায্য দানও পুঁজিবাদী; তাদের লক্ষ্য মানুষকে বিশ্ব পুঁজিবাদের অংশ করে ফেলা।
রুশ বিপ্লবের পর, রবীন্দ্রনাথ, আপনি সোভিয়েত ইউনিয়নে গিয়েছিলেন। গিয়ে মনে হয়েছিল আপনার যে, আপনি তীর্থ দর্শনে এসেছেন। মানব-মুক্তির নব আয়োজন আপনাকে অভিভূত করেছিল। সেই সোভিয়েত এখন আর নেই। ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। এখন সেখানে বিদেশি বণিক ও স্বদেশি মতলবিদের দানবীয় পদচারণে নতুন মানুষ সৃষ্টির সব উদ্যমসহ সবকিছুই লন্ডভন্ড। আপনি ফিরে এলে ব্যথা পেতেন।
তখনো, সেই ১৯৩০-এ স্তালিন যখন অবিচ্ছেদ্য ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত, সেই সময়ে আপনি একটি কালো ছায়া দেখেছিলেন ব্যাপারটার ভেতরে; সেটি যান্ত্রিকতার। ছায়াটি কায়া ধরেছে, প্রচণ্ড ও প্রকাণ্ড হয়েছে এবং আমলাতন্ত্রের রূপ নিয়ে বিদেশি পুঁজিবাদের সহায়তায় আঘাত করেছে রুশ বিপ্লবের অর্জনগুলোকে। রাষ্ট্রকে আপনি ভয় করতেন, ভয় তাকে সমাজ বিপ্লবীরা সবাই করেন, তাঁরা চান রাষ্ট্র ক্রমেই শক্তি হারিয়ে অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ুক, মানুষ মুক্তি পাক, আপনি যাকে সমাজ বলতেন সেখানে। কিন্তু রাষ্ট্রকে খাটো করা যায়নি। কেননা শোষণের শিকড়গুলো উপড়ে ফেললেও গোড়া ভেতরে রয়ে যায় এবং বাইরে থেকে পুঁজিবাদীরা তাতে জলসিঞ্চন করেছে। রাষ্ট্র বৈষম্যের সন্তান এবং বৈষম্যের প্রতিপালক; অর্থাৎ কিনা সন্তানও বটে, অভিভাবকও বটে। পৃথিবীজুড়ে বৈষম্য যে তীব্রতর হচ্ছে, তার প্রমাণ রাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান দৌরাত্ম্য। এ বড় মারাত্মক বাস্তবতা আজ পৃথিবীজুড়ে।
আপনি বলেছিলেন, রেখেছ বাঙালি করে, মানুষ করোনি। জননীকে বলেছিলেন ও কথা। বাঙালি মানুষ হয়েছে কি, এখনো? কতটা? হিন্দু হয়েছে, মুসলমান হয়েছে, ধনী হয়েছে, দরিদ্র হয়েছে, কিন্তু ঠিক ঠিক মানুষ হয়নি।
মানুষ হওয়ার প্রথম শর্তই হচ্ছে বাঙালি হওয়া। বাঙালি হলেই যে মানুষ হবে তা নয়, ‘রেখেছ বাঙালি করে, মানুষ করোনি’—এ তো আপনারই কথা; কিন্তু বাঙালি না হলে কিছুতেই সে মানুষ হতে পারবে না। বাঙালি হওয়ার অর্থ কী?
না, কেবল বাংলা ভাষা বলা বা ব্যবহার করা নয়। সেটা বিদেশিরাও করতে পারে, যদি তারা ইচ্ছা করে। বাঙালি হওয়ার অর্থ হচ্ছে একদিকে যেমন বাংলা ভাষা ব্যবহার করা, অন্যদিকে তেমনি বাঙালির জন্য সহানুভূতি বোধ করা। অন্য বাঙালির দুর্দশায় যে বিপন্ন বোধ করে এবং তাকে সাহায্য করতে চায়, সেই বাংলাভাষীকেই বাঙালি বলি। বাঙালি সম্পন্ন হবে, কিন্তু সংলগ্নও হবে, পরস্পরের। আপনি শ্রেষ্ঠ বাঙালি। কেননা একদিকে আপনি বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ কবি, অন্যদিকে বাংলার দুঃখে সর্বাধিক পরিমাণে কাতর একজন মানুষ।
কিন্তু এই যে একাধারে সম্পন্ন ও সংলগ্ন হওয়া, এটা নেই আজ বাঙালির মধ্যে। সম্পন্নরা তো বটেই, দরিদ্ররাও পরস্পরবিচ্ছিন্ন। আপনি উন্নতির অনেক হামবড়াই দেখতে পেতেন চতুর্দিকে; কিন্তু বিচ্ছিন্নতা দেখতেন সঙ্গে সঙ্গে এবং পীড়িত হতেন।
আপনি চেয়েছিলেন বঙ্গসন্তানেরা সবাই গৃহছাড়া লক্ষ্মীছাড়া হোক। তারা ঘরকুনো থাকবে না, বেরিয়ে পড়বে, জয় করবে সারা বিশ্ব। গৃহছাড়া সে-ই হতে পারে, যার গৃহ আছে, নইলে সে ছাড়বে কী? কেমন করে? অধিকাংশ বাঙালির আজ গৃহ নেই। মন্বন্তর, বঙ্গভঙ্গ, স্বাধীনতাযুদ্ধ, সাম্প্রদায়িকতার নীরব উৎপাত ও শ্রেণি-নিপীড়ন—সবকিছুই গৃহহীন করেছে বিপুলসংখ্যক বাঙালিকে। ভূমিহীন উপেনের সংখ্যা আজ একটি-দুটি নয়, কোটি কোটি; তাদের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান ভেদ নেই, দলে দলে তারা গৃহহীন হচ্ছে, চলেছে শহরে, সেখানে বাসিন্দা হচ্ছে বস্তির। এই স্রোতোধারা দেখলে বড় পীড়িত হতেন রবীন্দ্রনাথ।
আপনি বলেছিলেন, আপনার গান বাঙালিকে গাইতে হবে। তা তারা গায় বৈকি। আপনার গানই তো জাতীয় সংগীত—বাঙালি রাষ্ট্রের, ভারতীয় রাষ্ট্রের, এমনকি শ্রীলঙ্কারও। কিন্তু আপনার গান আজ কতভাবে যে বিপদগ্রস্ত, তার তো কোনো ইয়ত্তা নেই। ব্যান্ড মিউজিকের জঙ্গি আওয়াজ তাকে চাপা দিতে চাচ্ছে পদে পদে, দ্রুতগামী ট্রাক যেমন করে চাপা দেয় নিরীহ পথযাত্রীকে, ঠিক তেমনিভাবে।
বাঙালি সংস্কৃতির নিজস্বতা আজ নানাভাবে আক্রান্ত। লোকে আন্তর্জাতিক হচ্ছে, যার অর্থ দাঁড়ায় নিজের ঘরেই সে পরবাসী হয়ে পড়েছে। বাঙালির জন্য বড়াই করার একটা বিষয় ছিল তার সাহিত্য। ঈশ্বর গুপ্তের যুগ পার হয়ে বাংলা সাহিত্য এগিয়েছিল অনেকটা দূর। আপনি তাকে হাত ধরে পার করে নিয়ে এসেছিলেন একটা লম্বা পথ। কিন্তু সেই সাহিত্য আজ আবার পিছু হটা শুরু করেছে, ঈশ্বর গুপ্তের সময়ের অভিমুখে।
কিন্তু রবীন্দ্রনাথ আবার আসবেন না, আসা সম্ভব নয়। রবীন্দ্রনাথ সেজে যদি আজ কেউ আসেন, তবে ধরে নিতে হবে তিনি আসল নন, মেকি। কেননা ইতিহাসে অগ্রগমন আছে, প্রত্যাগমন নেই। নায়ক একবারই আসেন, বারবার নয়।
কিন্তু তাঁকে আমাদের খুবই প্রয়োজন। প্রয়োজন আমাদের মানুষ হওয়ার শিক্ষা দেওয়ার জন্য। তিনি এলে বলবেন সংলগ্ন হতে। জোর দেবেন শিক্ষার ওপর। যেমন বুদ্ধির, তেমনি হৃদয়ের।
রাজনীতিকে তিনি বাদ দেবেন না। তাঁর দৃষ্টি কখনোই এ সত্যটি দেখতে ভুল করবে না যে বাঙালির শত্রু কেবল বাইরে নেই, রয়েছে ভেতরেও; ভেতরে তার শত্রু হচ্ছে বৈষম্য। এই বৈষম্য দূর করতে হলে জনগণকে রাষ্ট্রক্ষমতা করায়ত্ত করতে হবে। শেষ জীবনে বঙ্কিমচন্দ্র রাজনীতিবিমুখ হয়ে পড়েছিলেন এবং আশ্রয় খুঁজেছিলেন ধর্মে। শেষ জীবনে বিদ্যাসাগর চলে যেতে চেয়েছিলেন সাঁওতাল পরগনায়। রবীন্দ্রনাথ কোনোটিই করেননি; করতেনও না। তিনি জনপদেই থাকতেন, নিজের অবস্থানে থেকে অংশ নিতেন রাজনীতিতে, রাষ্ট্রকে যাতে দুর্বল করা যায় সেই লক্ষ্যে এবং এগিয়ে যেতেন সামনের দিকে, যেমনটি তিনি সারা জীবন করে গেছেন।
রবীন্দ্রনাথ আজ নেই, তবু তিনি আছেন এবং থাকবেন। তিনি তাঁর সাহিত্য রেখে গেছেন, রেখে গেছেন তাঁর জীবনকেও। আমরা কেউই রবীন্দ্রনাথ হব না; তাঁর মেধা আমাদের কারও নেই; কিন্তু তাঁর পথে আমরা অবশ্যই অগ্রসর হতে পারি। সেই পথটি হচ্ছে বাঙালি হওয়ার পথ। বিচ্ছিন্নতা কাটিয়ে সংলগ্ন হতে বলেছেন তিনি; বলেছেন একই সঙ্গে হৃদয়বান ও বুদ্ধিমান হতে, বলেছেন উদারচিত্ত ও সাহসী হতে। উন্নতি মানে শুধু দালানকোঠা নয়; দালানকোঠা অবশ্যই দরকার হবে, তবে আরও বেশি করে যার দরকার হবে, সেটি হচ্ছে মানুষ হিসেবে প্রসারিত ও উন্নত হওয়া; অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথ না হয়েও রবীন্দ্রনাথের মতো হওয়া।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আপনি, রবীন্দ্রনাথ, রাষ্ট্রে বিশ্বাস করতেন না; বিশ্বাস করতেন সমাজে। ভারতবর্ষে সমাজই বড়, রাষ্ট্র এখানে একটি উৎপাতবিশেষ—এ আপনার ধারণার অন্তর্গত ছিল। রাষ্ট্র ছিল বাইরের। সমাজ আমাদের নিজস্ব। এই সমাজকে আমরা নিজের মতো গড়ে তুলব, এই আস্থা আপনার ছিল।
কিন্তু রাষ্ট্রের উৎপাত কমেনি, ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। রাষ্ট্র হয়ে দাঁড়িয়েছে শোষণ ও লুণ্ঠনে অতিশয় বিশ্বস্ত যন্ত্র। যন্ত্র সে শাসকদের হাতে। শাসকেরা অধীন সাম্রাজ্যবাদের হাতে। আমরা দেখছি রাষ্ট্র আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অধিক দক্ষ ও সর্বগ্রাসী হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি আছে এনজিও। এরা অনেকটা মিশনারিদের মতো। নতুন ধর্ম প্রচার করছে—সেটি হলো, পুঁজিবাদ। রাষ্ট্র নিজে পুঁজিবাদী ও আমলাতান্ত্রিক; এনজিওদের সাহায্য দানও পুঁজিবাদী; তাদের লক্ষ্য মানুষকে বিশ্ব পুঁজিবাদের অংশ করে ফেলা।
রুশ বিপ্লবের পর, রবীন্দ্রনাথ, আপনি সোভিয়েত ইউনিয়নে গিয়েছিলেন। গিয়ে মনে হয়েছিল আপনার যে, আপনি তীর্থ দর্শনে এসেছেন। মানব-মুক্তির নব আয়োজন আপনাকে অভিভূত করেছিল। সেই সোভিয়েত এখন আর নেই। ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। এখন সেখানে বিদেশি বণিক ও স্বদেশি মতলবিদের দানবীয় পদচারণে নতুন মানুষ সৃষ্টির সব উদ্যমসহ সবকিছুই লন্ডভন্ড। আপনি ফিরে এলে ব্যথা পেতেন।
তখনো, সেই ১৯৩০-এ স্তালিন যখন অবিচ্ছেদ্য ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত, সেই সময়ে আপনি একটি কালো ছায়া দেখেছিলেন ব্যাপারটার ভেতরে; সেটি যান্ত্রিকতার। ছায়াটি কায়া ধরেছে, প্রচণ্ড ও প্রকাণ্ড হয়েছে এবং আমলাতন্ত্রের রূপ নিয়ে বিদেশি পুঁজিবাদের সহায়তায় আঘাত করেছে রুশ বিপ্লবের অর্জনগুলোকে। রাষ্ট্রকে আপনি ভয় করতেন, ভয় তাকে সমাজ বিপ্লবীরা সবাই করেন, তাঁরা চান রাষ্ট্র ক্রমেই শক্তি হারিয়ে অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ুক, মানুষ মুক্তি পাক, আপনি যাকে সমাজ বলতেন সেখানে। কিন্তু রাষ্ট্রকে খাটো করা যায়নি। কেননা শোষণের শিকড়গুলো উপড়ে ফেললেও গোড়া ভেতরে রয়ে যায় এবং বাইরে থেকে পুঁজিবাদীরা তাতে জলসিঞ্চন করেছে। রাষ্ট্র বৈষম্যের সন্তান এবং বৈষম্যের প্রতিপালক; অর্থাৎ কিনা সন্তানও বটে, অভিভাবকও বটে। পৃথিবীজুড়ে বৈষম্য যে তীব্রতর হচ্ছে, তার প্রমাণ রাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান দৌরাত্ম্য। এ বড় মারাত্মক বাস্তবতা আজ পৃথিবীজুড়ে।
আপনি বলেছিলেন, রেখেছ বাঙালি করে, মানুষ করোনি। জননীকে বলেছিলেন ও কথা। বাঙালি মানুষ হয়েছে কি, এখনো? কতটা? হিন্দু হয়েছে, মুসলমান হয়েছে, ধনী হয়েছে, দরিদ্র হয়েছে, কিন্তু ঠিক ঠিক মানুষ হয়নি।
মানুষ হওয়ার প্রথম শর্তই হচ্ছে বাঙালি হওয়া। বাঙালি হলেই যে মানুষ হবে তা নয়, ‘রেখেছ বাঙালি করে, মানুষ করোনি’—এ তো আপনারই কথা; কিন্তু বাঙালি না হলে কিছুতেই সে মানুষ হতে পারবে না। বাঙালি হওয়ার অর্থ কী?
না, কেবল বাংলা ভাষা বলা বা ব্যবহার করা নয়। সেটা বিদেশিরাও করতে পারে, যদি তারা ইচ্ছা করে। বাঙালি হওয়ার অর্থ হচ্ছে একদিকে যেমন বাংলা ভাষা ব্যবহার করা, অন্যদিকে তেমনি বাঙালির জন্য সহানুভূতি বোধ করা। অন্য বাঙালির দুর্দশায় যে বিপন্ন বোধ করে এবং তাকে সাহায্য করতে চায়, সেই বাংলাভাষীকেই বাঙালি বলি। বাঙালি সম্পন্ন হবে, কিন্তু সংলগ্নও হবে, পরস্পরের। আপনি শ্রেষ্ঠ বাঙালি। কেননা একদিকে আপনি বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ কবি, অন্যদিকে বাংলার দুঃখে সর্বাধিক পরিমাণে কাতর একজন মানুষ।
কিন্তু এই যে একাধারে সম্পন্ন ও সংলগ্ন হওয়া, এটা নেই আজ বাঙালির মধ্যে। সম্পন্নরা তো বটেই, দরিদ্ররাও পরস্পরবিচ্ছিন্ন। আপনি উন্নতির অনেক হামবড়াই দেখতে পেতেন চতুর্দিকে; কিন্তু বিচ্ছিন্নতা দেখতেন সঙ্গে সঙ্গে এবং পীড়িত হতেন।
আপনি চেয়েছিলেন বঙ্গসন্তানেরা সবাই গৃহছাড়া লক্ষ্মীছাড়া হোক। তারা ঘরকুনো থাকবে না, বেরিয়ে পড়বে, জয় করবে সারা বিশ্ব। গৃহছাড়া সে-ই হতে পারে, যার গৃহ আছে, নইলে সে ছাড়বে কী? কেমন করে? অধিকাংশ বাঙালির আজ গৃহ নেই। মন্বন্তর, বঙ্গভঙ্গ, স্বাধীনতাযুদ্ধ, সাম্প্রদায়িকতার নীরব উৎপাত ও শ্রেণি-নিপীড়ন—সবকিছুই গৃহহীন করেছে বিপুলসংখ্যক বাঙালিকে। ভূমিহীন উপেনের সংখ্যা আজ একটি-দুটি নয়, কোটি কোটি; তাদের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান ভেদ নেই, দলে দলে তারা গৃহহীন হচ্ছে, চলেছে শহরে, সেখানে বাসিন্দা হচ্ছে বস্তির। এই স্রোতোধারা দেখলে বড় পীড়িত হতেন রবীন্দ্রনাথ।
আপনি বলেছিলেন, আপনার গান বাঙালিকে গাইতে হবে। তা তারা গায় বৈকি। আপনার গানই তো জাতীয় সংগীত—বাঙালি রাষ্ট্রের, ভারতীয় রাষ্ট্রের, এমনকি শ্রীলঙ্কারও। কিন্তু আপনার গান আজ কতভাবে যে বিপদগ্রস্ত, তার তো কোনো ইয়ত্তা নেই। ব্যান্ড মিউজিকের জঙ্গি আওয়াজ তাকে চাপা দিতে চাচ্ছে পদে পদে, দ্রুতগামী ট্রাক যেমন করে চাপা দেয় নিরীহ পথযাত্রীকে, ঠিক তেমনিভাবে।
বাঙালি সংস্কৃতির নিজস্বতা আজ নানাভাবে আক্রান্ত। লোকে আন্তর্জাতিক হচ্ছে, যার অর্থ দাঁড়ায় নিজের ঘরেই সে পরবাসী হয়ে পড়েছে। বাঙালির জন্য বড়াই করার একটা বিষয় ছিল তার সাহিত্য। ঈশ্বর গুপ্তের যুগ পার হয়ে বাংলা সাহিত্য এগিয়েছিল অনেকটা দূর। আপনি তাকে হাত ধরে পার করে নিয়ে এসেছিলেন একটা লম্বা পথ। কিন্তু সেই সাহিত্য আজ আবার পিছু হটা শুরু করেছে, ঈশ্বর গুপ্তের সময়ের অভিমুখে।
কিন্তু রবীন্দ্রনাথ আবার আসবেন না, আসা সম্ভব নয়। রবীন্দ্রনাথ সেজে যদি আজ কেউ আসেন, তবে ধরে নিতে হবে তিনি আসল নন, মেকি। কেননা ইতিহাসে অগ্রগমন আছে, প্রত্যাগমন নেই। নায়ক একবারই আসেন, বারবার নয়।
কিন্তু তাঁকে আমাদের খুবই প্রয়োজন। প্রয়োজন আমাদের মানুষ হওয়ার শিক্ষা দেওয়ার জন্য। তিনি এলে বলবেন সংলগ্ন হতে। জোর দেবেন শিক্ষার ওপর। যেমন বুদ্ধির, তেমনি হৃদয়ের।
রাজনীতিকে তিনি বাদ দেবেন না। তাঁর দৃষ্টি কখনোই এ সত্যটি দেখতে ভুল করবে না যে বাঙালির শত্রু কেবল বাইরে নেই, রয়েছে ভেতরেও; ভেতরে তার শত্রু হচ্ছে বৈষম্য। এই বৈষম্য দূর করতে হলে জনগণকে রাষ্ট্রক্ষমতা করায়ত্ত করতে হবে। শেষ জীবনে বঙ্কিমচন্দ্র রাজনীতিবিমুখ হয়ে পড়েছিলেন এবং আশ্রয় খুঁজেছিলেন ধর্মে। শেষ জীবনে বিদ্যাসাগর চলে যেতে চেয়েছিলেন সাঁওতাল পরগনায়। রবীন্দ্রনাথ কোনোটিই করেননি; করতেনও না। তিনি জনপদেই থাকতেন, নিজের অবস্থানে থেকে অংশ নিতেন রাজনীতিতে, রাষ্ট্রকে যাতে দুর্বল করা যায় সেই লক্ষ্যে এবং এগিয়ে যেতেন সামনের দিকে, যেমনটি তিনি সারা জীবন করে গেছেন।
রবীন্দ্রনাথ আজ নেই, তবু তিনি আছেন এবং থাকবেন। তিনি তাঁর সাহিত্য রেখে গেছেন, রেখে গেছেন তাঁর জীবনকেও। আমরা কেউই রবীন্দ্রনাথ হব না; তাঁর মেধা আমাদের কারও নেই; কিন্তু তাঁর পথে আমরা অবশ্যই অগ্রসর হতে পারি। সেই পথটি হচ্ছে বাঙালি হওয়ার পথ। বিচ্ছিন্নতা কাটিয়ে সংলগ্ন হতে বলেছেন তিনি; বলেছেন একই সঙ্গে হৃদয়বান ও বুদ্ধিমান হতে, বলেছেন উদারচিত্ত ও সাহসী হতে। উন্নতি মানে শুধু দালানকোঠা নয়; দালানকোঠা অবশ্যই দরকার হবে, তবে আরও বেশি করে যার দরকার হবে, সেটি হচ্ছে মানুষ হিসেবে প্রসারিত ও উন্নত হওয়া; অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথ না হয়েও রবীন্দ্রনাথের মতো হওয়া।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

আপনি, রবীন্দ্রনাথ, রাষ্ট্রে বিশ্বাস করতেন না; বিশ্বাস করতেন সমাজে। ভারতবর্ষে সমাজই বড়, রাষ্ট্র এখানে একটি উৎপাতবিশেষ—এ আপনার ধারণার অন্তর্গত ছিল। রাষ্ট্র ছিল বাইরের। সমাজ আমাদের নিজস্ব। এই সমাজকে আমরা নিজের মতো গড়ে তুলব, এই আস্থা আপনার ছিল।
০৮ মে ২০২৪
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

আপনি, রবীন্দ্রনাথ, রাষ্ট্রে বিশ্বাস করতেন না; বিশ্বাস করতেন সমাজে। ভারতবর্ষে সমাজই বড়, রাষ্ট্র এখানে একটি উৎপাতবিশেষ—এ আপনার ধারণার অন্তর্গত ছিল। রাষ্ট্র ছিল বাইরের। সমাজ আমাদের নিজস্ব। এই সমাজকে আমরা নিজের মতো গড়ে তুলব, এই আস্থা আপনার ছিল।
০৮ মে ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

আপনি, রবীন্দ্রনাথ, রাষ্ট্রে বিশ্বাস করতেন না; বিশ্বাস করতেন সমাজে। ভারতবর্ষে সমাজই বড়, রাষ্ট্র এখানে একটি উৎপাতবিশেষ—এ আপনার ধারণার অন্তর্গত ছিল। রাষ্ট্র ছিল বাইরের। সমাজ আমাদের নিজস্ব। এই সমাজকে আমরা নিজের মতো গড়ে তুলব, এই আস্থা আপনার ছিল।
০৮ মে ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আপনি, রবীন্দ্রনাথ, রাষ্ট্রে বিশ্বাস করতেন না; বিশ্বাস করতেন সমাজে। ভারতবর্ষে সমাজই বড়, রাষ্ট্র এখানে একটি উৎপাতবিশেষ—এ আপনার ধারণার অন্তর্গত ছিল। রাষ্ট্র ছিল বাইরের। সমাজ আমাদের নিজস্ব। এই সমাজকে আমরা নিজের মতো গড়ে তুলব, এই আস্থা আপনার ছিল।
০৮ মে ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২০ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫