Ajker Patrika

বাটার মোড়ের জিলাপি ছাড়া চলেই না

রিমন রহমান, রাজশাহী
আপডেট : ১৩ এপ্রিল ২০২২, ১১: ০৪
বাটার মোড়ের জিলাপি ছাড়া চলেই না

নামহীন একটি দোকান। এই দোকানের জিলাপি কিনতে আসরের নামাজের পর রীতিমতো রাস্তায় লাইনে দাঁড়ায় লোকজন। কড়াই থেকে জিলাপি তোলার ফুরসত পান না কারিগর। ক্রেতা সামলাতে হিমশিম অবস্থা তাঁর। রোজার মাসে রাজশাহীর বাটার মোড়ের জিলাপির দোকানের নিত্যদিনের চিত্র এটি।

প্রতিষ্ঠাকালে দোকানটির নাম ছিল ‘রানীবাজার রেস্টুরেন্ট’। কয়েক বছরের মধ্যে নষ্ট হয়ে যায় সাইনবোর্ড। এর পর থেকেই ‘বাটার মোড়ের জিলাপির দোকান’ হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে এটি। নামহীন এই দোকানের জিলাপির সুনাম তিন প্রজন্ম ধরে। বাটার মোড়ের জিলাপি ছাড়া ইফতারের কথা ভাবতেই পারেন না স্থানীয় অনেকে।

মান ধরে রেখে বছরের পর বছর জিলাপি তৈরি করে আসছেন এখানকার কারিগরেরা। স্বাদেও কোনো হেরফের নেই। সাধারণ সময়ে দোকানটিতে দিনে ৮০ থেকে ৯০ কেজি জিলাপি বিক্রি হলেও রোজায় তা বেড়ে ২০০ কেজিতে গিয়ে দাঁড়ায়।

ঐতিহ্যবাহী এই দোকানে জিলাপি কিনতে এসেছেন সৈয়দ সাবিয়ার রহমান নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘আমার বয়স এখন ৬০। ২০ বছর বয়স থেকে এই জিলাপি খেয়ে আসছি। এখন ডায়াবেটিসের ভয়ে কম খাই। কিন্তু ইফতারে এই জিলাপি থাকাই লাগে। তা না হলে মনে হয় ইফতারিটা পরিপূর্ণ হলো না।’

বাটার মোড়ের জিলাপির দোকানের যাত্রা শুরু ষাটের দশকে। তখন দোকানটির মালিক ছিলেন সোয়েব উদ্দিন। একমাত্র কারিগর ছিলেন যামিনী সাহা। পরে যামিনী সাহার জিলাপির প্যাঁচ দেওয়া শিখে যান তাঁর ছেলে কালিপদ সাহা। ১৯৮০ সালে বাবার মৃত্যুর পর প্রধান কারিগর হন কালিপদ সাহা। কালিপদের হাতে তৈরি এই জিলাপি এক সময় রাজশাহী শহরের মানুষের কাছে ‘কালিবাবু’ নামেও পরিচিত হয়ে ওঠে। কালিপদ সাহা মারা যান ২০১৭ সালে। এখন প্রধান কারিগর তাঁর শিষ্য সাফাত আলী। সঙ্গে আছেন শফিকুল ইসলাম।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে দোকানের সামনে বসে জিলাপি ভাজছিলেন শফিকুল। জিলাপির প্যাঁচ দিতে দিতে বললেন, ‘মাসিক ৩০ টাকা বেতনে এখানে এসেছি। এখন বেতন পাই ১৫ হাজার টাকা। জীবনের বাকিটা সময়ও এই দোকানেই কাটিয়ে দিতে চাই।’

এত সুস্বাদু জিলাপি কীভাবে তৈরি করেন—জানতে চাইলে শফিকুল বললেন, আসলে কারিগর কিছু না। মহাজন যদি চান, তাহলেই খাবার সুস্বাদু হবে। এ জন্য লাভের আশা কম করতে হবে। এই দোকানের ক্ষেত্রে তাই হয়। মহাজন কয়েক ধরনের ময়দা, ভালো তেল দিয়ে জিলাপি ভাজতে বলেন। এই ইচ্ছাটা থাকতে হবে। তবে হ্যাঁ, জিলাপি ভালো করতে বেশি পরিশ্রমও করতে হয়।

রাজশাহীর সাধারণ দোকানগুলোতেই এ বছর ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি দরে জিলাপি বিক্রি হচ্ছে। অথচ এত নামডাকের বাটার মোড়ের জিলাপি বিক্রি করা হচ্ছে ১৪০ টাকায়। এ নিয়ে কথা হয় বর্তমানে দোকানটির দায়িত্বে থাকা মো. শামীমের সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘আমরা দাম বাড়াতে চাই না। আর রোজা হলে তো দাম বাড়ানোর কথা চিন্তাই করি না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত