Ajker Patrika

শঙ্খ ঘোষ

সম্পাদকীয়
শঙ্খ ঘোষ

শঙ্খ ঘোষ সেই কবি, যিনি কবিতায় তো বটেই, গদ্যে, ভাষণে এবং প্রতিদিনের জীবনযাপনেও প্রাতিষ্ঠানিকতাকে ভেঙেছেন। চল্লিশের দশকের যে তরুণ কবিরা বাংলা কবিতায় স্বতন্ত্র ধারার খোঁজে ‘কৃত্তিবাস’ ও ‘শতভিষা’ পত্রিকাকে কেন্দ্র করে নতুন এক পথের সৃষ্টি করেছিলেন, শঙ্খ ঘোষ তাঁদের একজন। তিনি একাধারে কবি, গদ্যশিল্পী, রবীন্দ্র গবেষক ও সাহিত্য সমালোচক ছিলেন।

আজীবন শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত থেকে তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্বভারতী ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। তাঁর পারিবারিক নাম ছিল চিত্তপ্রিয় ঘোষ।

শঙ্খ ঘোষের পৈতৃক বাড়ি ছিল বরিশালের বানারীপাড়ায়। তবে তাঁর কৈশোরের একটি অংশ পাবনায় কেটেছে। দেশভাগের সময় সেখানকার চন্দ্রপ্রভা বিদ্যাপীঠ থেকে ম্যাট্রিক দিয়ে চলে যান কলকাতায়। এরপর প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বাংলায় স্নাতক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন তিনি।

শক্তি, সুনীল, শঙ্খ, উৎপল, বিনয়—এই পাঁচ কবিকে বলা হতো জীবনানন্দ দাশ-পরবর্তী বাংলা কবিতার পঞ্চপাণ্ডব। শঙ্খ ঘোষ হিসেবে তিনি বেশি পরিচিত হলেও ‘কুন্তক’ বা ‘শুভময়’ ছদ্মনামেও লিখেছেন। তাঁর বাবরের প্রার্থনা, মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে, গান্ধর্ব কবিতাগুচ্ছ অসাধারণ সৃষ্টি।

কবি হিসেবে শঙ্খ ঘোষের পরিচয় ব্যাপক হলেও তিনি আজীবন গবেষণা করেছেন রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে। আগে বাঙালি বিদ্বজনেরা রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকীর্তি নিয়েই কেবল গর্বিত থাকতেন। তিনিই প্রথম সাহিত্য, গান-কবিতা, নাটক-চিত্রকলা, উপন্যাসসহ রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টির সমগ্রতায় তাঁকে চেনালেন, বাঙালির জীবনে তাঁকে বেঁধে দিলেন এক দৃঢ় বন্ধনে। একের পর এক রচনায় রবীন্দ্রনাথের শিল্পচেতনা ও জীবনচেতনাকে বাঙালির জীবনে আত্মজাগরণের মন্ত্র করে তুললেন তিনি।

বিপুল তাঁর রচনাসম্ভার। শিশু-কিশোরদের জন্য লেখা ছাড়াও তিনি লিখেছেন ছড়া, উপন্যাস থেকে কবিতা এবং শিল্পসাহিত্যবিষয়ক প্রবন্ধ। অসংখ্য সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। অনুবাদ করেছেন। রাষ্ট্রের অন্যায় কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তিনি রাস্তায় নেমে বক্তব্যও দিয়েছেন।
১৯৩২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের চাঁদপুরে জন্ম শঙ্খ ঘোষের।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত