Ajker Patrika

জোয়ারে ভাসে জীবন

সুমেল সারাফাত, মোংলা (বাগেরহাট)
জোয়ারে ভাসে জীবন

বাগেরহাটের মোংলায় ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ ১৫ বছরেও সংস্কার করা হয়নি। মোংলাসহ পশুর নদের তীরে বসবাসকারী মানুষের টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি পূরণ হয়নি এখনো। বাঁধ না থাকায় কোনো দুর্যোগ এলেই এখনো দিনরাতে জোয়ারের পানিতে ভাসছে মোংলার পশুর নদের পাড়ের বাসিন্দারা।

উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পশুর নদের পাড়ের সিগন্যাল টাওয়ারের পর থেকে কানাইনগর থেকে জয়মনিরঘোল পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের প্রয়োজন রয়েছে। শুধু সিডরই নয়, পরে ২০০৮ সালে আঘাত হানা নার্গিস, ২০০৯ সালের আইলা, ২০১৩ সালের মহাসেন, ২০১৫ সালের কোমেন, ২০১৬ সালের রোয়ানু, ২০১৭ সালের মোরা, ২০১৯ সালের ফণী, বুলবুল, তারপর ইয়াস, অশনি ও সিত্রাংয়ের মতো ঘূর্ণিঝড়ের জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এই উপকূলের বাসিন্দারা।

এ ছাড়া বাঁধ না থাকায় কোনো জলোচ্ছ্বাস ছাড়াও সারা বছর এমনিতেই প্রতিদিন দুবার জোয়ারে ভাসছে পশুর নদের পাড়ের লোকজন।ইয়াস ও অশনির পর পশুর নদের পাড়ের কানাইনগর এলাকায় গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মাত্র ৩০০ মিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড, যা ভেঙে যায় ছয় মাসের মাথায়। এরপর থেকে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই জায়গা বিভিন্ন প্রকল্পের (কাবিখা, কাবিটা) মাধ্যমে বছর বছর তা মেরামত করা হলেও তা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি। তা ভেঙে এখন একাকার।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মোংলার চাঁদপাই ও চিলা ইউনিয়নের নদীর পাড়ের ১৭ কিলোমিটার এলাকা দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শত শত পরিবার। তাদের একটাই দাবি—টেকসই বাঁধ নির্মাণ। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মপরিকল্পনা এলাকার বাইরে রয়ে গেছে মোংলা উপজেলা। বাগেরহাটের অন্যান্য উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকাণ্ড থাকলেও মোংলায় না থাকায় দীর্ঘকালেও এখানে কোনো বাঁধ নির্মাণের কাজ হয়নি। তবে ঘূর্ণিঝড় ফণী ও বুলবুলের ক্ষয়ক্ষতির পর স্থানীয় প্রশাসনের দাবির ভিত্তিতে ২০১৯ সালে প্রথম কানাইনগর এলাকায় ৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা থোক বরাদ্দ দিয়ে ৩০০ মিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড। যে বাঁধ স্থায়ী ছিল মাত্র কয়েক মাস।

এদিকে মোংলা হয়ে মোরেলগঞ্জ পর্যন্ত ৯৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণের সমীক্ষা চালাচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে তা কবে হবে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না তারা।

বাঁধ নির্মাণকারী ঠিকাদার বেল্লাল বলেন, পশুর নদের তীব্র স্রোত, বর্ষা মৌসুমে উত্তাল নদী এবং এ নদী দিয়ে বিদেশি জাহাজসহ প্রতিনিয়ত অসংখ্য নৌযান চলাচলের ঢেউয়ে স্বল্প সময়ে সে বাঁধ ভেঙে ও ধসে যায়। গত সোমবারও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা কানাইনগর এলাকা পরিদর্শন করে গেছেন। সেখানে টেকসই বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা চলছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) জেলা সমন্বয়কারী নূর আলম শেখ বলেন, কোনো ঘূর্ণিঝড় বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ এলে প্রশাসনসহ সর্বত্রই বেড়িবাঁধ নির্মাণের কথা আলোচনায় আসে। দুর্যোগ কেটে গেলে আবার সবাই সেই কথা ভুলে যায়। ২০০৭ সালে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডর আঘাত হানলে বাগেরহাটের মোংলা উপজেলা রক্ষাকারী বাঁধ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু ১৫ বছর পার হলেও সেই বাঁধ এখনো নির্মিত হয়নি।

বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ বলেন, মোংলার কানাইনগর ও জয়মনিরঘোল প্রবল ভাঙনপ্রবণ এলাকা। তাই সেখানে টেকসই বাঁধ নির্মাণের সমীক্ষা ও পরিকল্পনা চলছে। এ কার্যক্রম শেষ হলেই ওই এলাকায় বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে। দীর্ঘদিন ধরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মপরিকল্পনার বাইরে থাকায় মোংলা এলাকায় বাঁধ নির্মাণের কাজ করা সম্ভব হয়নি।এখন সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় মোংলায় বাঁধের কাজের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত