Ajker Patrika

অনিয়ম করে নিয়োগ কর্মকর্তার আট পদে

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
অনিয়ম করে নিয়োগ কর্মকর্তার আট পদে

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানির (কেজিডিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ছিলেন আইয়ুব খান। তাঁর সময়ে ২০১৬ সালে নিয়ম আমন্য করে উপমহাব্যবস্থাপক (কারিগরি) পদে আটজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু তাঁদের কেউ চাকরির শর্ত পূরণ করতে পারেননি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবু তাঁদের নিয়োগ দেয় কর্তৃপক্ষ। এসব কর্মকর্তার মধ্যে নিয়োগ পরীক্ষায় যিনি প্রথম হয়েছেন, তিনি আবার এমডি আইয়ুব খানের বড় ছেলে আশেক উল্লাহ।

সম্প্রতি বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর তৎকালীন মহাব্যবস্থাপক ফিরোজ খান এবং এমডি আইয়ুব খানকে বদলি করা হয়।অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন ফিরোজ খান; যিনি আইয়ুব খানের বিশ্বস্ত লোক হিসেবে পরিচিত। ওই নিয়োগ কমিটির পরীক্ষা নেওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট)। কিন্তু পরে বুয়েটের মাধ্যমে লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়নি। ফিরোজ খান তাঁর আস্থাভাজনদের নিয়ে কমিটি গঠন করে নিজেরা প্রশ্নপত্র তৈরি করে পরীক্ষা নেন।

আজকের পত্রিকার হাতে আসা নথিপত্রে দেখা যায়, নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম হওয়া আশেক উল্লাহর রোল নম্বর ছিল ২০। তিনি ১০০ নম্বরের মধ্যে ৭৭ পেয়েছেন। দ্বিতীয় দেখানো হয় শাপলা দেওয়ানজীকে। তাঁর রোল নম্বর ১২, পেয়েছেন ৭০। তৃতীয় হন ফারুক আহমেদ, তাঁর রোল ১৫, পেয়েছেন ৬৭.৫০। চতুর্থ হন বেগম আরিফা আক্তার, যার রোল নম্বর ১, তিনি পেয়েছেন ৬৭ নম্বর। পঞ্চম হয়েছেন আপেল মাহমুদ, তিনি পেয়েছেন ৬৬। ষষ্ঠ স্থান অধিকার করেন লোকমান হোসেন গাজী, তিনি পান ৬১.৫০ নম্বর। ৫৫ নম্বর পেয়ে ১১তম হন বেগম কারীমা আক্তার, তাঁর রোল নম্বর ২১ এবং ৫৩.৫০ নম্বর পেয়ে ১৪তম হন মো. হাসান আল কাদির, তাঁর রোল নম্বর ১৯।

কেজিডিসিএলে সহকারী প্রকৌশলী পদে ১১ বছর কর্মরত ছিলেন প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম। তিনি তাঁদের মতো ওই নিয়োগের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অংশ নেন। তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ছিল ৬৪। মেধাতালিকায় ষষ্ঠ হয়েছিলেন।কামরুল ইসলামের দাবি, ১৫ লাখ টাকা ঘুষ দিতে না পারায় তাঁর চাকরি হয়নি। অথচ মেধাতালিকায় ১৪তম অবস্থানে থাকা হাসান আল কাদেরকে অভিজ্ঞতা ছাড়াই নিয়োগ দেওয়া হয়।২০১৬ সালের এই নিয়োগের ক্ষেত্রে কর্ণফুলী গ্যাসের নিয়োগ বিধিতে উল্লেখ ছিল, ওই পদে নিয়োগের জন্য সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে (গ্যাস সেক্টর) পাঁচ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। অথচ আশেক উল্লাহর সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা ছিল না।

আশেক উল্লাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কমিটি যাচাই-বাছাই করেই নিয়োগ দিয়েছে। অ্যাডহকের অভিজ্ঞতা দিয়ে চাকরি পাওয়ার বিষয়টি কমিটি দেখেছে। এখানে আমার কোনো দোষ নেই।’

নিয়োগ পাওয়া ফারুক আহমেদেরও পাঁচ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা ছিল না। তিনি বিদ্যুৎ সেক্টরের অভিজ্ঞতার সনদ দেখিয়ে চাকরি নিয়েছেন। এমনকি ওই পদে চাকরির জন্য আবেদন করতে হলে শিক্ষাগত যোগ্যতা বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রিসহ ন্যূনতম সিজিপিএ থাকতে হবে ৩। ফারুকের  সিজিপিএ রয়েছে ২.৮০।

নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক ফিরোজ খান এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এ বিষয়ে জানার জন্য তিনি বর্তমান প্রশাসনের কাছে যোগাযোগ করতে বলেন।

সার্বিক বিষয়ে জানতে কেজিডিসিএলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা পেট্রোবাংলার পরিচালক (প্রশাসন) আলতাফ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি কেজিডিসিএলের এমডির সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। তবে এমডি রফিকুল ইসলামের কার্যালয়ে গিয়েও তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত