Ajker Patrika

বর্জ্যে বিষাক্ত খুলনার তিন নদী

শেখ আবু হাসান, খুলনা
বর্জ্যে বিষাক্ত খুলনার তিন নদী

ভৈরব ও রূপসার মিলনস্থলে অবস্থান খুলনা মহানগরীর। বিভিন্ন কারখানার বর্জ্যমিশ্রিত দূষিত পানি, তেলের ডিপো, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও জাহাজ ধোয়ামোছার তেল-মবিলে এ দুটি নদ-নদীর পানিদূষণ বিপজ্জনক পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। জলজ প্রাণী মারা যাওয়াসহ জীববৈচিত্র্যও মারাত্মক হুমকির মুখে।

দুই পারের অনেক মানুষ এখন এ নদ-নদীর পানি ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে। অন্যদিকে রূপসা নদী থেকে একটি শাখা বেরিয়ে ময়ূর নদ নামে প্রবেশ করেছে এ শিল্প শহরের ভেতরে। এটি অনেক আগেই ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পরিবেশ বিজ্ঞানী মো. আব্দুল্লাহ হারুন চৌধূরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, কলকারখানার বর্জ্যমিশ্রিত পানি পরিশোধন ছাড়া ভৈরব-রূপসায় ফেলায় পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। বায়োকেমিক্যাল অক্সিজেন চাহিদা (বিওডি) বেড়ে যাচ্ছে এবং নদ-নদীর তলদেশে মারাত্মকভাবে অক্সিজেনের ঘাটতির সৃষ্টি হয়ে মাছসহ জলজ প্রাণী মারা যাওয়াসহ জীববৈচিত্র্যও মারাত্মক হুমকির মুখে। যেসব সংস্থার মনিটরিং করার কথা, তারা দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পরিবেশ অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, সিটি করপোরেশন ও অধিকাংশ মৎস্য প্রক্রিয়াজাত কারখানার পানি শোধনের জন্য ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের (ইটিপি) কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে এসব ময়লা পানিতে ব্যাকটেরিয়াসহ রাসায়নিক দ্রব্যের মিশ্রণ থাকছে। একইভাবে মৎস্য প্রক্রিয়াজাত কারখানার বর্জ্যমিশ্রিত পানি নদীতে ফেলা হচ্ছে।

দূষণের কারণে নগরীর রূপসা নতুন বাজার ঘাট থেকে দৌলতপুর সরকারি বিএল কলেজ ঘাট পর্যন্ত দুই পারের অনেক মানুষ ভৈরব-রূপসার পানি ব্যবহার ছেড়ে দিয়েছে। নগরের কালীবাড়ি ঘাট এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানান, এখন ভৈরব নদে গোসল করলে নানা ধরনের চর্মরোগ দেখা দিচ্ছে। এ ছাড়া এসব নদীতে এখন আর মাছের দেখা মিলছে না।

মেঘনা তেল ডিপোর উপমহাব্যবস্থাপক এস এম আব্দুল্লাহ বলেন, ‘এখানকার তেল ডিপোগুলোর বর্জ্য, বিশেষ করে তেলমিশ্রিত পানি পরিশোধনের জন্য কোনো ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নেই। তবে তাদের ডিপোর বর্জ্য ও পানি নদীতে ফেলা হয় না। তেল নিয়ে আসা জাহাজগুলো নদীতে অবস্থান করে। সেগুলোর বর্জ্য ও জাহাজ ধোয়া তেল-মবিল ও পানি কীভাবে ফেলা হয় তা আমরা বলতে পারব না।’

পরিবেশ আইনবিদ সমিতির খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুল বলেন, খুলনা মহানগরীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ময়ূর নদ অনেক আগেই ভয়াবহ দূষণে জর্জরিত। এর পানি ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই। নগরীর অধিকাংশ বর্জ্য ও দূষিত পানি প্রতিনিয়ত ফেলে নদীটিকে একপ্রকার মেরে ফেলা হয়েছে। অপর দিকে ভৈরব ও রূপসার দূষিত পানি সুন্দরবন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে, যা বনের জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে।

খুলনা পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মো. ইকবাল হোসেন বলেন, নানা কারণে ময়ূর নদ মারাত্মক দূষণের কবলে। তবে ভৈরব-রূপসার নদ-নদীর পানিদূষণ সে মাত্রায় নেই। প্রতি মাসেই ভৈরব-রূপসার পানি পরীক্ষা করা হচ্ছে। নদী দুটির পানি স্বাভাবিক মাত্রায় রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর এ ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে।

খুলনা সিটি করপোরেশনের চিফ কনজারভেন্সি অফিসার মো. আব্দুল আজিজ বলেন, দূষিত পানি পরিশোধন করে নদীতে ফেললে ভালো হতো, কিন্তু ব্যয়বহুল বলে এই প্রযুক্তি এখনো কেসিসি স্থাপন করতে পারেনি। তবে ময়ূর নদ রক্ষার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

খননকাজ শুরু করা হয়েছে। বর্ষার কারণে তা সাময়িক বন্ধ রয়েছে। নগরীতে আধুনিক কসাইখানা স্থাপনের কাজ চলছে। সেই সঙ্গে নগরীতে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনারও কাজ চলছে। নগরীর বড় ড্রেনগুলোর পানি শোধনের জন্য ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপনের প্রস্তাবনা করা হয়েছে। এ জন্য একটু সময় লাগতে পারে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাড়ি থেকে ভিজিএফের চাল উদ্ধার দাবিতে ছড়ানো ভিডিওটি ভিন্ন ঘটনার

অপমানিত সহকর্মীর ছাদ থেকে লাফ, শ্রমিক বিক্ষোভে রণক্ষেত্র শ্রীপুর, আহত শতাধিক

সরকারি কর্মচারীদের ১০–১৫ শতাংশ বিশেষ সুবিধা ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি

জি-৭ সম্মেলন: টানা ৫ বছর বিশেষ অতিথি, এবার আমন্ত্রণ পেলেন না মোদি

দেশ টিভির কার্যালয়ে ১২০০ বস্তা চাল পাঠানো প্রয়োজন: উপদেষ্টা আসিফ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত