Ajker Patrika

কোম্পানীগঞ্জে সহিংসতার রাত

কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) প্রতিনিধি
আপডেট : ১১ অক্টোবর ২০২১, ১৬: ৩৩
কোম্পানীগঞ্জে সহিংসতার রাত

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে গত শনিবার দিবাগত রাতে কয়েকটি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। ককটেল হামলা হয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির বাড়িতে। অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে একটি পরিবহন কাউন্টারে। জোর করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে একটি নুরানি মাদ্রাসা। আর সন্ত্রাসী হামলায় আহত হয়েছেন সাবেক এক কাউন্সিলর।

প্রথম তিন ঘটনার জন্য দায়ী করা হয়েছে কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভার মেয়র কাদের মির্জাকে। আর হামলায় আহত সাবেক কাউন্সিলর কাদের মির্জার অনুসারী।

শনিবার রাত পৌনে ৮টার দিকে বসুরহাট পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন চৌধুরী শিমুলের (৪৩) ওপর হামলা হয়। একই বাড়ির মনজিল চৌধুরী (২৫) নামের যুবক তাঁর ওপর হামলা করে মাথা ফাটিয়ে দেন বলে তিনি অভিযোগ করেন। মনজিল নোয়াখালী জেলা পরিষদ সদস্য ও জেলা বাস মালিক সমিতির নেতা আকরাম উদ্দিন চৌধুরী সবুজের ছেলে। আহত শিমুলকে রাতেই নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এ ঘটনার পর রাত সাড়ে ১০টার দিকে হামলা হয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খিজির হায়াত খানের বাড়িতে। তিনি অভিযোগ করেন, ২০-২৫ জন সন্ত্রাসী সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে চরকাঁকড়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে তাঁর বাড়ির সামনে পৌঁছায়। এরপর মুখোশ পরা কয়েকজন ভেতরে প্রবেশ করে বাসা লক্ষ্য করে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। শব্দ শুনে এলাকাবাসী এগিয়ে এলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। হামলার কিছু দৃশ্য বাসার সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে। সেই ভিডিও তিনি ফেসবুকে দিয়েছেন। হামলাকারীরা মেয়র কাদের মির্জার অনুসারী বলে অভিযোগ করেন খিজির হায়াত।

প্রায় একই সময়ে মেয়র কাদের মির্জার অনুসারীরা বসুরহাট বাসস্ট্যান্ডে সবুজ চৌধুরীর মালিকানাধীন বসুরহাট ড্রিম লাইন বাস সার্ভিসের কাউন্টারে অগ্নিসংযোগ করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

একই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকাল রোববার সকালে আহত সাবেক কাউন্সিলর শিমুলের ছোট ভাই সোহেলের নেতৃত্বে ২০-৩০ জন পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় একটি নুরানি মাদ্রাসা বন্ধ করে দেন। কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আজম পাশা চৌধুরী রুমেল অভিযোগ করেন, তাঁর বাবা প্রয়াত কামাল পাশা চৌধুরীর নামে প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসাটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বের করে দিয়ে মাদ্রাসাটিতে তালা মেরে তা বন্ধ করে দেন মেয়র কাদের মির্জার অনুসারীরা।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে মেয়র কাদের মির্জার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

খিজির হায়াতের বাসভবনে ককটেল হামলা, ড্রিম লাইন কাউন্টারে অগ্নিসংযোগ, সাবেক কাউন্সিলর শিমুলের ওপর হামলার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন আনোয়ার। তবে এসব ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি বলে জানান ওসি।

কোম্পানীগঞ্জে কয়েক মাস ধরে আওয়ামী লীগের বিবদমান দুই পক্ষ মেয়র কাদের মির্জা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলের অনুসারীদের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষ লেগেই আছে। এসব ঘটনায় একজন সংবাদকর্মী ও একজন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। অনেকে পঙ্গুত্ববরণ এবং বেশ কয়েকজন এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পক্ষে-বিপক্ষে অর্ধশতাধিক মামলায় অনেকে এখনো কারাগারে আটক আছেন। নানা আতঙ্কে উভয় পক্ষের শত শত নেতা-কর্মী আত্মগোপন ও এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত