Ajker Patrika

শীতেও তেমন উত্তাপ ছড়াল না রাজনীতি

শীতেও তেমন উত্তাপ ছড়াল না রাজনীতি

বছরের শেষ দিকে এসে মনে হচ্ছিল এবার শীতটা রাজনৈতিক উত্তাপেই কাটবে। বিএনপি বিভাগীয় সমাবেশ ডেকে হঠাৎ চাঙা হয়ে উঠেছিল। ১০ ডিসেম্বর ঢাকা সমাবেশের আগে তারা বেশ জমিয়ে ফেলেছিল। সরকারের বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে একের পর এক বিভাগীয় সমাবেশ শান্তিপূর্ণ উপায়ে শেষ করে সরকারের সামনে কিছুটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়ার সক্ষমতা দেখিয়ে বেশ লম্বা সময় পর রাজনৈতিক মহলের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পেরেছিল ১৬ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি। বিএনপির পেছনে মানুষ নেই, তারা মুখে বড় বড় কথা বললেও বড় সমাবেশ করার ক্ষমতা নেই–এমন বিদ্রূপ তাদের শুনতে হয়েছে। অথচ বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো; বিশেষ করে সব ধরনের গণপরিবহন চলাচল বন্ধ করে দিলেও দলীয় সমর্থকদের সভাস্থলে উপস্থিত করার বিকল্প ব্যবস্থা করতে সফল হয়েছিল বিএনপি। কয়েকটি মহাসমাবেশে তো এক-দুদিন আগে থেকেই মানুষ উপস্থিত থেকে বিএনপির শক্তির জানান দিয়েছে।

বিভিন্ন সমাবেশে বড় জমায়েত দেখে বিএনপি নেতাদের কারও কারও সম্ভবত মাথা গরম হয়ে গিয়েছিল। তাঁরা ভেবেছিলেন, ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় এত বিশাল সমাবেশ হবে, যা সরকারের ভিত কাঁপিয়ে দেবে, সরকারের পতন ত্বরান্বিত হবে। বিএনপি হয়তো সরকারের ভিত ও জনসমর্থনের দিকটি হালকাভাবেই দেখেছিল। আওয়ামী লীগ যে ভুঁইফোড় রাজনৈতিক দল নয়, কিংবা টোকাইদের দিয়ে গড়া দল নয়, এটা বিএনপির মাথা গরম নেতৃত্ব বিবেচনায় নিতে ভুলে গিয়ে এমন বক্তব্যও দিয়ে ফেলে, ১০ ডিসেম্বরের পর দেশ চলবে খালেদা জিয়ার নির্দেশে। লন্ডনে ‘পালিয়ে থাকা’ দলের কান্ডারি তারেক রহমানের দেশে ফেরার কথাও বলা হয়। ব্যস, সরকার নড়েচড়ে বসে। ধরে নেওয়া হয়, বিএনপির কোনো বদমতলব আছে সরকার ফেলে দেওয়ার। সরকারি প্রশাসন তৎপর হয়ে ওঠে। আওয়ামী লীগ ও সরকার কঠোর অবস্থানে যাওয়ায় কিছুটা এলোমেলো হয়ে যায় বিএনপি।

ঢাকায় বিএনপি নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে চাইলে সরকার আপত্তি জানায়। সরকার চেয়েছিল বিএনপির সমাবেশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিতে। নয়াপল্টনে সমাবেশ করার বিষয়ে বিএনপি অনমনীয় মনোভাব দেখিয়েও শেষ পর্যন্ত সরকারের সঙ্গে মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ে হেরে গেছে। সমাবেশ নিতে হয়েছে গোলাপবাগে। গোলাপবাগের সমাবেশে লোকসমাগম কম হয়েছে, না বেশি হয়েছে, তার চেয়ে বড় হয়ে ওঠে এটা যে বিএনপিকে সিদ্ধান্ত থেকে নড়াতে পেরেছে সরকার তথা আওয়ামী লীগ। এটা বিএনপির পিছু হটা, আওয়ামী লীগের সাফল্য। এতে মানুষের কাছে এই বার্তা যায় যে বিএনপিকে আওয়ামী লীগের ইচ্ছামতোই চলতে হয়।

৭ ডিসেম্বর পল্টনে বিএনপি অফিসের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় এক বিএনপি কর্মী নিহত হওয়ার পর থেকেই বিএনপির অবস্থান দুর্বল হতে থাকে। পুলিশ অভিযান চালায় বিএনপির অফিসে। প্রতিবাদে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একা একা কেন্দ্রীয় অফিসের সামনে ফুটপাতে কয়েক ঘণ্টা অসহায়ের মতো বসে ছিলেন। দলের শত শত নেতা-কর্মীর কেউ সাহস করে তাঁর পাশে গিয়ে বসেননি। এর থেকেই বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতার চিত্র ফুটে ওঠে। দলীয় অফিসে হামলা এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্য নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের পর কোনো বড় ধরনের প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করতেও পারেনি বিএনপি।

শীতকালে আমাদের দেশে সাধারণত রাজনীতির মাঠ গরম থাকে। আমাদের দেশে বড় সব আন্দোলন-সংগ্রাম শীতের আগে-পরেই হয়েছে। এ বছর সারা দেশে শীতের প্রকোপ বেশি। শীতে মানুষ জবুথবু হয়ে আছে। রাজনীতির হাওয়াও গরম হতে না হতেই ঠান্ডা হয়ে গেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ সফরে এসেও বিএনপিসহ সরকারবিরোধীদের হাতে গরম কফির মগ তুলে না দিয়ে বরং সরকারকেই যেন কিছুটা স্বস্তি দিয়ে গেছেন। ফলে রাজনীতির মাঠ শিগগিরই গরম হয়ে ওঠার কোনো লক্ষণ নেই। উত্তাপ ছড়ানোর রাজনীতির দিন কি তাহলে শেষ হয়ে গেল? এই প্রশ্নের জবাব এখনই এককথায় দেওয়া যাবে না। তবে এটা ঠিক যে দেশের মানুষ রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন দেখতে চায়। রাজনীতির কারণে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা যেন ব্যাহত না হয়, আয়-উপার্জনে ব্যাঘাত না ঘটে—মানুষ সেটাই চায়। তাই এখন রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণার আগে নেতা-নেত্রীদের মানুষের মনোভাবের কথাটা বিবেচনায় নিতে হবে। রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসেবে হরতাল-ধর্মঘট ইতিমধ্যে কার্যকারিতা হারিয়েছে।

‘খেলা হবে’ বলে রাজনীতিতে কয়েক দিন শোরগোল শোনা গেলেও এখন দৃশ্যত রাজনীতির ময়দানে খেলা দেখা যাচ্ছে না। মাঠের বিরোধী দল বিএনপি হঠাৎ জেগে আবার ঝিমোচ্ছে। বিভাগীয় সমাবেশ করে দলটি যতটা উজ্জীবিত হয়ে উঠেছিল, তা ধরে রাখার টনিক হিসেবে অসংখ্য নামসর্বস্ব দলের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা কতটুকু কার্যকর হবে, তা-ও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ আরেক দফা ক্ষমতায় থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিএনপিসহ আরও অনেক দল চাইছে, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরাতে। এ বিষয়টিও সীমিত আছে বক্তব্য-পাল্টা বক্তব্যের মধ্যে। জাতীয় রাজনীতি যেমন উত্তাপ ও গতিহীন, তৃণমূলের রাজনীতিও এখন চৈত্র মাসের শুকনো ডোবার মতো। সবাই যেন কিসের অপেক্ষায়, কোনো বাঁশির সুর বেজে ওঠে কি না, সে জন্য কান পেতে আছে। কেন্দ্রের নির্দেশ ছাড়া কেউ কিছু করে না। আবার কেন্দ্র থেকে নির্দেশ দিলেও অনেক সময় তা কার্যকর হয় না। আওয়ামী লীগ জানে, যত দিন শেখ হাসিনা আছেন, তত দিন তাদের কোনো ভাবনা নেই। তাই আওয়ামী লীগ সরকারে থাকায় দল ঢুকে গেছে সরকারে। আওয়ামী লীগের সরকার না হয়ে সরকারের আওয়ামী লীগ হয়েছে। ছোট-বড় প্রায় সব নেতাই তদবির বা অন্য কোনো ধান্দায় ব্যস্ত। গত কয় বছরে তৃণমূলের অনেকেই বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছেন। কে কীভাবে টাকা কামিয়েছেন, কান পাতলেই তা শোনা যায়। এসব শুধুই কি রটনা?

সারা দেশে আওয়ামী লীগের এখনকার রাজনীতি হলো আখের গোছানোর। পাওয়া এবং খাওয়ার রাজনীতি। কিন্তু সবাই তো আর খেতে-পরতে পারছেন না। তাই তৈরি হচ্ছে দ্বন্দ্ব। পাওয়া গ্রুপ এবং না-পাওয়া গ্রুপের দ্বন্দ্ব এতটাই প্রকট যে কেন্দ্র থেকে হুকুম দিয়েও এটা দূর করা কঠিন হয়ে পড়ছে।

তৃণমূলে বিএনপির অবস্থাও ভালো নয়। বিএনপির সমর্থকদেরও ভরসার জায়গা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান। দুজনই দণ্ডিত আসামি।একজন সরকারের অনুগ্রহে গৃহবন্দী, অন্যজন লন্ডনে বসে স্কাইপে দল চালান। ফলে তৃণমূলে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যেও অস্থিরতা আছে। আছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। তবে তারপরও ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্নে বিএনপির কেন্দ্রের মতো স্থানীয় পর্যায়ের নেতারাও এতটাই মশগুল যে তাঁরা সংগঠনকে মজবুত করার জন্য মানুষের কাছে নিজেদের রাজনৈতিক বক্তব্য তুলে ধরার চেয়ে বেশি পছন্দ করেছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের তোয়াজ করতে। কে কাকে ল্যাং মেরে সামনে যেতে পারবেন, সেই অসুস্থ প্রতিযোগিতা বিএনপিতেও চরম।

দেখা যায় এটাই যে এলাকা এলাকায় দল আছে, আছে দলাদলিও। কেউ বলতে পারেন, এটাই তো রাজনীতি। দল এবং দলাদলি থাকলেই বুঝতে হবে রাজনীতি আছে। হ্যাঁ, এই অর্থে তৃণমূলে রাজনীতি আছে। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি আছে সব জায়গায়। জাতীয় পার্টি আর জামায়াত আছে অনেক জায়গায়। আর অন্য সব দল আছে কোনো কোনো জায়গায়। বাম দলগুলোর অবস্থান তৃণমূলে একেবারেই দুর্বল। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি শুধু যে দেশের সব জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন-ওয়ার্ড পর্যায়ে আছে তা নয়, বাড়ি বাড়িতে আছে। আমি এটাও কোথাও কোথাও লক্ষ করেছি যে এক পরিবারে চার রাজনৈতিক দলের সদস্যও আছেন—আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত ও জাসদ।

জাতীয়ভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে খুব সদ্ভাব না থাকলেও তৃণমূলের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। তৃণমূলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে রেষারেষি নেই, সেটা বলা যাবে না, তবে একধরনের গোপন সমঝোতাও আছে। আওয়ামী লীগের এ রকম সমঝোতা আছে কোথাও কোথাও জামায়াতের সঙ্গেও। এই মিলমিশের পেছনে আবার লেনদেনের সম্পর্ক আছে বলেও শোনা যায়। সরকারি দলের লোকেরা দুই পয়সা আয়-রোজগার করছেন, বিএনপি-জামায়াত তাদের সহযোগিতা করছে। এমনও শোনা যায় যে এই মর্মে গোপন সমঝোতা হচ্ছে, এখন বিএনপি-জামায়াতকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে, পরে দরকার হলে আওয়ামী লীগও যেন সেটা পায়; অর্থাৎ তৃণমূলের রাজনীতিও আর নীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। নীতির রাজনীতি অবশ্য জাতীয় পর্যায়েও নেই।

একটা সময় ছিল যখন রাজনীতির গতিমুখ ছিল তৃণমূলে। মানুষের মধ্যে থেকে, মানুষের জন্য কাজ করে তৃণমূলে যাঁরা জনগণের বিশ্বস্ত নেতা হয়ে উঠতেন, তাঁরাই ধাপে ধাপে জাতীয় রাজনীতিতে ঠাঁই পেতেন। এখন ধারা বদলে গেছে। এখন নেতা হওয়ার জন্য জনগণের সমর্থনের প্রয়োজন হয় না। এখনকার বেশির ভাগই হাইব্রিড নেতা। ওপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া। রাজনীতি এখন বিত্তবান হওয়ার উপায়।রাজনীতি পরিণত হয়েছে ব্যবসায়। কম বিনিয়োগে বেশি মুনাফা। জাতীয় রাজনীতির এই ধাক্কা তৃণমূলেও আঘাত হেনেছে। তাই তৃণমূলেও চলছে টাকার খেলা। স্থানীয় পর্যায়ের যেকোনো নির্বাচনেও এখন যে পরিমাণ টাকা ব্যয় করা হয়, তা এক কথায় অকল্পনীয়।

 তৃণমূলের রাজনীতিতে সবার অলক্ষ্যে একটি পরিবর্তন ঘটছে বলে আমার ব্যক্তিগত ধারণা। গণতান্ত্রিক-প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলোর নিষ্ক্রিয়তা এবং উদাসীনতার সুযোগে ধর্মাশ্রয়ী রাজনৈতিক দলগুলো, বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী তৃণমূলে প্রভাব বিস্তার করছে। জামায়াত বাংলাদেশের সবচেয়ে কৌশলী ও সুচতুর রাজনৈতিক দল। তাদের বেড়ে ওঠার ভয়াবহ বিপদ আজ যাঁরা দেখছেন না, তাঁরা খুব শিগগির পস্তাবেন। জামায়াতের সঙ্গে আজ যাঁরা কৌশলের খেলা খেলছেন, তাঁরা যখন নিজেদের ভুল বুঝতে পারবেন, তখন হয়তো আর সংশোধনের সুযোগ পাওয়া যাবে না।

তৃণমূলের রাজনীতির ক্ষয়রোগ নিরাময় করতে হলে জাতীয় রাজনীতিতেই আগে পরিবর্তন আনতে হবে। তৃণমূলের ওপর ভর করে জাতীয় রাজনীতি, নাকি জাতীয় রাজনীতির ধারায় তৃণমূলের রাজনীতি–এই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দেবে কে?

লেখক: জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

জীবনের শেষ ইচ্ছার কথা ফেসবুকে প্রকাশ, বাস্তবেও ঘটল তাই

সাংবাদিকদের ন্যূনতম বেতন নবম গ্রেডের কাছাকাছি করা হচ্ছে: উপদেষ্টা মাহফুজ

ঘরে ঝুলছিল নারীর লাশ

সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হককে কেন জামিন দেওয়া হবে না, হাইকোর্টের রুল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

জীবনের শেষ ইচ্ছার কথা ফেসবুকে প্রকাশ, বাস্তবেও ঘটল তাই

সাংবাদিকদের ন্যূনতম বেতন নবম গ্রেডের কাছাকাছি করা হচ্ছে: উপদেষ্টা মাহফুজ

ঘরে ঝুলছিল নারীর লাশ

সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হককে কেন জামিন দেওয়া হবে না, হাইকোর্টের রুল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

জীবনের শেষ ইচ্ছার কথা ফেসবুকে প্রকাশ, বাস্তবেও ঘটল তাই

সাংবাদিকদের ন্যূনতম বেতন নবম গ্রেডের কাছাকাছি করা হচ্ছে: উপদেষ্টা মাহফুজ

ঘরে ঝুলছিল নারীর লাশ

সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হককে কেন জামিন দেওয়া হবে না, হাইকোর্টের রুল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

জীবনের শেষ ইচ্ছার কথা ফেসবুকে প্রকাশ, বাস্তবেও ঘটল তাই

সাংবাদিকদের ন্যূনতম বেতন নবম গ্রেডের কাছাকাছি করা হচ্ছে: উপদেষ্টা মাহফুজ

ঘরে ঝুলছিল নারীর লাশ

সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হককে কেন জামিন দেওয়া হবে না, হাইকোর্টের রুল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

জীবনের শেষ ইচ্ছার কথা ফেসবুকে প্রকাশ, বাস্তবেও ঘটল তাই

সাংবাদিকদের ন্যূনতম বেতন নবম গ্রেডের কাছাকাছি করা হচ্ছে: উপদেষ্টা মাহফুজ

ঘরে ঝুলছিল নারীর লাশ

সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হককে কেন জামিন দেওয়া হবে না, হাইকোর্টের রুল

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত