Ajker Patrika

বিধি মানছেন না প্রার্থীরা

মো. নাজিম উদ্দিন ইমন, কেরানীগঞ্জ (ঢাকা)
আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২১, ১৪: ১৮
বিধি মানছেন না প্রার্থীরা

তৃতীয় ধাপের নির্বাচনে কেরানীগঞ্জ উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) ২৮ নভেম্বর ভোট অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে ৮টি ইউনিয়নে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা। এতে নির্বাচনী জৌলুস কিছুটা কমলেও প্রতিটি ইউনিয়নের মেম্বার (ইউপি সদস্য) প্রার্থীরা প্রচার চালাচ্ছেন পুরোদমে। কিন্তু আচরণবিধি মানছেন না অনেকেই।

উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, কেরানীগঞ্জ উপজেলার ১১টি ইউপির ৩টিতে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ ৩টিতে চেয়ারম্যান প্রার্থী ১৫ জন। এ ছাড়া ১১টি ইউপিতে ৯৯ মেম্বার ও ৩৩টিতে মহিলা মেম্বার (সংরক্ষিত সদস্য) পদের ২১ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। বাকি পদগুলোতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪৭৩ জন প্রার্থী। ১২ নভেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পরপরই প্রচারণায় নেমেছেন চেয়ারম্যান ও মেম্বার প্রার্থীরা।

জানা যায়, নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে গিয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন প্রার্থীরা। তাঁরা অনেকটা ফ্রি স্টাইলে আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন। কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছেন তাঁরা। প্রার্থীদের গণসংযোগ থেকে পোস্টার কিংবা মাইকিং সব ক্ষেত্রেই আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা নির্বাচন অফিস যেন এক রকম নির্বিকার। প্রতিনিয়ত আচরণবিধি লঙ্ঘন হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। ফলে আচরণবিধি লঙ্ঘন করা প্রার্থী ও তাঁদের সমর্থকেরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। তবে প্রার্থীদের দাবি তাঁরা আচরণবিধি মেনেই গণসংযোগ চালাচ্ছেন।

উপজেলার নির্বাচনী বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কাকডাকা ভোর থেকে শুরু হয় প্রার্থীদের মাইকিং ও গানবাজনা এবং তা চলে মধ্যরাত পর্যন্ত। অথচ ইউনিয়ন পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা ২০১৬-এর ২১ নম্বর ধারায় ২ নম্বর উপধারায় উল্লেখ রয়েছে, কোনো নির্বাচনী এলাকায় মাইক বা শব্দের মাত্রা বর্ধনকারী যন্ত্রের ব্যবহার দুপুর ২টার আগে এবং রাত ৮টার পরে করা যাবে না। এ ছাড়া একই বিধিমালায় ১২ নম্বর ধারার ২ নম্বর উপধারায় উল্লেখ রয়েছে, চেয়ারম্যান প্রার্থীরা নির্বাচনী এলাকায় ৩টি এবং মেম্বার ও মহিলা মেম্বার প্রার্থীরা ১টির বেশি নির্বাচনী ক্যাম্প বা অফিস স্থাপন করতে পারবেন না। কিন্তু প্রায় সব প্রার্থীই একাধিক নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন করেছেন। বিধিমালা অনুসারে কোনো প্রার্থী আঠা দিয়ে কোথাও পোস্টার লাগাতে পারবে না। কিন্তু প্রার্থীরা আচরণবিধির তোয়াক্কা না করেই বিভিন্ন দেয়ালে পোস্টার লাগাচ্ছেন।

উপজেলার শুভাঢ্যা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আমান ৩-৪টি নির্বাচনী ক্যাম্প স্থাপন করেছেন। এমনকি প্রতিটি ক্যাম্পে ভোর থেকে রাত পর্যন্ত উচ্চশব্দে চলে গান-বাজনা ও প্রচার। এ ছাড়া তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সাথী আলী ও মো. কে এম সাইদুর রহমান মনিরও একইভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে চলেছেন।

একই ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী মো. আবুল হোসেন আঠা দিয়ে দেয়ালে পোস্টার লাগিয়েছেন। এদিকে উপজেলার শাক্তা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী হাবিবুর রহমান ভোর থেকে রাত পর্যন্ত এলাকায় মাইকিং করছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শুভাঢ্যা ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী সাথী আলী বলেন, ‘আমরা কোনো আচরণবিধি লঙ্ঘন করছি না। আচরণবিধি মেনেই নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি।’

শাক্তা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী হাবিবুর রহমানের সঙ্গে বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।

উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আ. আজিজ বলেন, ‘আমরা একটি পরিচ্ছন্ন নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। প্রার্থীদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি, আচরণবিধি লঙ্ঘনের কোনো সুযোগ নেই। কেউ হয়তো না বুঝে কিছুটা করলেও তাঁদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে।’

কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মেহেদি হাসান বলেন, ‘নির্বাচনী আচরণবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য আমাদের তিনজন ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। অভিযোগ এলেই আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচনী পরিবেশ বজায় রাখতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত