Ajker Patrika

বইমেলার আড্ডা, নাকি আড্ডার বইমেলা

রজত কান্তি রায়, ঢাকা
আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২: ০০
বইমেলার আড্ডা, নাকি আড্ডার বইমেলা

জ্যাম ঠেলতে ঠেলতে এগিয়ে চলেছি বইমেলার দিকে। এ যেন স্বপ্নের দৌড়। দৌড়াচ্ছি কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছি না। ঘোড়া নেই, প্রচুর গাড়ি আমার পেছনে ধাওয়া করেছে! আমিও সামনের গাড়িকে। সবাই দৌড়াচ্ছে। কিন্তু কেউ কাউকে ধরতে পারছে না। এমন একটা অবস্থার মধ্যেই আড্ডা জমে উঠল রায়হানের সঙ্গে।

রায়হান কার চালান অ্যাপে। এসএসসি পাস করেছেন। তারপর আর পড়েননি। মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। করোনা সেটাও বন্ধ করে দিয়েছিল। বললাম, ক্লাসের বাইরে গল্প-কবিতার বই কিছু পড়েছেন কখনো? কয়েক পলক তাকিয়ে থাকলেন রাস্তার দিকে। তারপর বললেন, না। সুযোগ পাইনি। বললাম, সুযোগ পাননি নাকি ইচ্ছা হয়নি? বললেন, সুযোগই হয়নি। বললাম, বইমেলায় গিয়েছেন কখনো? বললেন, না, ভেতরে যাই নাই। বাইরে থেকে দেখছি। সুযোগ হয় নাই। ইচ্ছা ছিল। উত্তর এমন কাঠখোট্টা হলে কিছু বলার থাকে না। কিন্তু রায়হানের সঙ্গে কথা বলতে আমার ভালো লাগছে।

বছর পঁচিশের রায়হানের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া। বললেন, বই লেখা তো অনেক কঠিন কাজ! বই পড়তে হয়। তারপর বুঝতে হয়। তারপর লিখতে হয়। তার ওপর ভুল হওয়া যাবে না। মানুষ ভুলটা পড়লে খেপে যেতে পারে। বললাম, হুম। যাবেন মেলায়? রায়হান বললেন, সুযোগ নাই স্যার। তারপর জানালেন, প্রতিদিন তাঁকে কত টাকা উপার্জন করতে হয়, কেন করতে হয়। এ আশঙ্কাও প্রকাশ করলেন, জীবনের এই নাগপাশ ছিঁড়ে বই পড়া কিংবা বইমেলায় যাওয়ার সুযোগ তাঁর এ জীবনে হয়তো আর হবে না।

জ্যাম ঠেলতে ঠেলতে এগোতে থাকি। এত জ্যাম যে গাড়ি ছেড়ে দিয়ে দৌড়াতে থাকি মেলার দিকে। একসময় ঢুকে যাই ভেতরে।

সারি সারি বইয়ের দোকানে রাশি রাশি বই। প্রতিটি সারিতেই আড্ডা বসেছে কবি, লেখক, গবেষকদের। আমিও ভিড়ে যাই একটায় পরিচিতদের সঙ্গে। সেখানে ছিলেন বৈভব প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী পাপিয়া জেরিন। ১৭টি নতুন বই এনেছেন তাঁরা। নতুন লেখকদের বইও আছে। জানতে চাইলাম, গত দুই বছরের ক্ষতি পোষাবে তো এবার। পাপিয়া জানালেন, পোষাবে হয়তো। কারণ, প্রচুর মানুষ আসছে মেলায়। মানুষের সংখ্যা আশা জাগাচ্ছে।

পাশেই পেন্ডুলাম প্রকাশনী। রুম্মান তার্শফিকের সঙ্গে দেখা সেখানে। ভীষণ আড্ডাবাজ যুবতী। ফলে আড্ডা জমেই গেল।

রাত বাড়ে। আড্ডা বাড়ে। ফিরতে হবে বলে ছটফটানি বাড়ে। এই ব্যস্ত জীবনে বইমেলায় শুক্রবারের আড্ডার একটা আলাদা ব্যঞ্জনা আছে। মাইকের কর্কশ শব্দ ঘোষণা করে, মেলার সময় শেষ হতে আর অল্প সময় বাকি আছে। আরও ঘোষণা হতে থাকে ১১ ফেব্রুয়ারির মেলার কর্মসূচি। লোকসংস্কৃতিবিদ আশরাফ সিদ্দিকী স্মরণসভা আছে আজ, বিকেলে। মেলার ১০ম দিন পর্যন্ত মেলায় এসেছে প্রায় ১ হাজার বই। এর মধ্যে ২৯৫টি কবিতার বই, ১৭৮টি উপন্যাস, গল্পের বই ১১২টি। তথ্য শুনে একটু অবাক হলাম এই ভেবে যে মেলার ১০ দিন চলে গেলেও মাত্র ১ হাজার বই!

সে যাক। সংখ্যা দিয়ে কী আর হয়েছে কবে। আড্ডা ভাঙছে ধীরে ধীরে। আমরা মেলা ছাড়তে থাকি। আবার কাল হয়তো আসা হবে। হয়তো হবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রশিক্ষণ ছাড়াই মাঠে ৪২৬ সহায়ক পুলিশ কর্মকর্তা

গ্রাহকের ২,৬৩৫ কোটি টাকা দিচ্ছে না ৪৬ বিমা কোম্পানি

১০০ বছর পর জানা গেল ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত