Ajker Patrika

বন্যার আগেই বাঁধে ধস

আনিছুর লাডলা, লালমনিরহাট
আপডেট : ১৩ মে ২০২২, ১৫: ৪৪
Thumbnail image

লালমনিরহাটে গত বন্যায় সংস্কার করা বাঁধ চলতি বছর বন্যা আসার আগেই ধসে গেছে। এতে হুমকিতে পড়েছে সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের ভূমি কার্যালয়, তিস্তাপাড়ের বসতবাড়িসহ ফসলি জমি।

ভারতের গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে ওই দেশের সরকার একতরফা তিস্তার পানি নিয়ন্ত্রণ করে। এতে শীতের আগেই বাংলাদেশ অংশে তিস্তা নদী মরুভূমিতে পরিণত হয়। আবার বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত পানিপ্রবাহের ফলে বাংলাদেশ অংশে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া তিস্তায় পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে নদীর তলদেশ। এতে পানিপ্রবাহের পথ না পেয়ে বর্ষাকালে উজানের ঢেউয়ে লালমনিরহাটসহ আশপাশের জেলায় ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়। নদীর ভাঙন বেড়ে যায় কয়েক গুণ।

পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রতিবছর বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের নামে বরাদ্দ দিলেও কাজ শুরু করা হয় বর্ষাকালে। এতে বর্ষার অথই পানিতে জরুরি কাজের নামে দেওয়া বরাদ্দ কোনো কাজে আসছে না নদীপাড়ের মানুষের।

স্থানীয় লোকজন জানান, গত বছর বন্যার সময় লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ গ্রামে নির্মিত বাঁধ সংস্কার করতে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। গত বন্যার পর কাজটি সমাপ্ত করা হয়। চলতি বছর বন্যা আসার আগেই গত সপ্তাহে বাঁধের ৩০ মিটার ধসে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন বালুর বস্তা ফেলে কোনো রকমে বাঁধ রক্ষা করে। এখন হুমকিতে রয়েছে খুনিয়াগাছ ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ের ভবন, খুনিয়াগাছ ইউনিয়ন পরিষদ, উচ্চবিদ্যালয়, খুনিয়াগাছ বাজার ও বিভিন্ন বসতবাড়ি।

খুনিয়াগাছ এলাকার বাঁধটির পাশে বসবাস করা সত্তরোর্ধ্ব আব্দুর রউফ বলেন, ‘গত শুক্রবার মধ্যরাতে হঠাৎ বাঁধটি ধসে যায়। আমার বাড়ি রক্ষায় গ্রামবাসীকে নিয়ে কিছু বালুর বস্তা ফেলে আপাতত রক্ষা করেছি। ধসে যাওয়া স্থানে ছয় মাস আগে কাজ করায় সরকার। যা আবার বন্যা না আসার আগেই ধসে গেছে।’

খুনিয়াগাছ এলাকার আব্দুর রহিম বলেন, বাঁধ থেকে মাত্র ২০০ গজ দূরে সরকারি অফিস, স্কুল ও হাটবাজার। নদীর পানি আর একটু বাড়লে ধসে যাওয়া স্থান দিয়ে নদী প্রবাহিত হবে। তখন ওই সব স্থাপনা নদীতে বিলীন হবে। তাই দ্রুত বাঁধটি সংস্কার করা দরকার।

তিস্তা নদীতে ছোট ছোট বাঁধ না দিয়ে ভাঙন ও বন্যা থেকে রক্ষায় ভিন্ন দাবি তোলেন ওই গ্রামের আব্দুর রশিদ। তিনি বলেন, রাস্তা না পেলে পানিতে তো নদীর পাড় ভেঙে যাবেই। তিস্তা নদী তো কখনো খনন করা হয়নি। তাই নদীটি খনন করে দুই তীরে বাঁধ নির্মাণ করলে একদিকে যেমন বন্যা আর ভাঙন থেকে রক্ষা হবে, অন্যদিকে হাজার হাজার একর জমি চাষাবাদে আসবে।

লালমনিরহাট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান সুজন বলেন, ‘নির্বাহী প্রকৌশলীকে নিয়ে বাঁধটি পরিদর্শন করেছি। দ্রুত সংস্কার করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে।’ লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ‘বাঁধটির ধসে যাওয়া স্থান

পরিদর্শন করে সংস্কারের জন্য বরাদ্দ চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। আশা করি, আসন্ন বন্যার আগেই সংস্কার করা হবে।’ গত বন্যার পর সংস্কার করে এ বছর বন্যার আগেই ধসে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নদীর কাজ এমনই। পানির স্রোতে বিলীন হতে পারে। পানির নিচেও ধসে যেতে পারে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত