Ajker Patrika

রোজায় চিকিৎসা নেওয়ার ক্ষেত্রে

মো. আরমান বিন আজিজ মজুমদার
রোজায় চিকিৎসা নেওয়ার ক্ষেত্রে

রোজা রাখা অবস্থায় চিকিৎসাসংক্রান্ত কী কী করা যাবে আবার কী কী করা যাবে না, সেসব নিয়ে সাধারণ রোগীদের মধ্যে জ্ঞান ও সচেতনতার অভাব রয়েছে। নানান সংশয় ও বিভ্রান্তি রয়েছে চিকিৎসকদের মাঝেও। এসব বিভ্রান্তি দূর করার জন্য ১৯৯৭ সালের জুন মাসে মরক্কোয় অনুষ্ঠিত নবম ফিকহ-চিকিৎসা সম্মেলন থেকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এই সম্মেলনে জেদ্দা ইসলামিক ফিকহ একাডেমি আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, আলেকজান্দ্রিয়া, মিসর এবং ইসলামিক শিক্ষা বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থার (আইএসইএসসিও) বিজ্ঞ প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এই সম্মেলনের মূল বিষয় ছিল, রোজা  অবস্থায় যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং ওষুধ প্রয়োগে রোজা নষ্ট হবে না, সেসব বিষয়ে সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া। এ জন্য ইসলামিক চিন্তাবিদেরা চিকিৎসাবিজ্ঞান-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা ও গবেষণা করে রোজা অবস্থায় ওষুধ প্রয়োগ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পর্কে সুচিন্তিত তথ্য উপস্থাপন করেন। বিষয়টি ২০০৪ সালে বিখ্যাত ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে (বিএমজে) বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ হিসেবে প্রকাশিত হয়।

যা করা যাবে

  • রোজা অবস্থায় চোখ ও কানের ড্রপ ব্যবহার করা যাবে।
  • রোজা অবস্থায় ইনহেলার, স্প্রে ব্যবহার করা যাবে।
  • হার্টের এনজাইনার সমস্যার জন্য বুকে ব্যথা উঠলে ব্যবহৃত নাইট্রোগ্লিসারিন ট্যাবলেট বা স্প্রে জিহ্বার নিচে ব্যবহার করলে রোজা নষ্ট হবে না।
  • রোজা রেখে শিরাপথে খাদ্য-উপাদান ছাড়া কোনো ওষুধ ত্বক, মাংসপেশি বা হাড়ের জোড়ায় ইনজেকশন হিসেবে প্রয়োগ করলে রোজার কোনো ক্ষতি হবে না।
  • চিকিৎসার প্রয়োজনে রোজা রেখে অক্সিজেন কিংবা চেতনানাশক গ্যাস গ্রহণে রোজা নষ্ট হবে না।
  • চিকিৎসার প্রয়োজনে ক্রিম, অয়েন্টমেন্ট, ব্যান্ডেজ, প্লাস্টার ইত্যাদি ব্যবহার করলে এবং এসব উপাদান ত্বকের গভীরে প্রবেশ করলেও রোজার কোনো সমস্যা হবে না।
  • রোজা রেখে দাঁত তোলা যাবে। দাঁতের ফিলিং করা যাবে এবং ড্রিল ব্যবহার করা যাবে। এ ছাড়া দাঁত পরিষ্কার করার সময় অসাবধানতাবশত কিছু গিলে ফেললে রোজা নষ্ট হবে না। 
  • রোজা রেখে পরীক্ষার জন্য রক্ত দিতে 
    বাধা নেই।
  • কাউকে রক্তদানে এবং রক্ত গ্রহণেও 
    বাধা নেই।
  • চিকিৎসার জন্য যোনিপথে ট্যাবলেট কিংবা পায়ুপথে সাপোজিটরি ব্যবহার করলে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না।
  • পরীক্ষার জন্য যোনিপথ কিংবা পায়ুপথে চিকিৎসক বা ধাত্রী আঙুল প্রবেশ করালেও রোজার সমস্যা হবে না।
  • রোজা রেখে জরায়ু পরীক্ষার জন্য হিস্টেরোস্কপি এবং আইইউসিডি ব্যবহার করা যাবে।
  • হার্ট কিংবা অন্য কোনো অঙ্গের এনজিওগ্রাফি করার জন্য কোনো রোগ নির্ণয়কারক দ্রবণ শরীরে প্রবেশ করানো হলে রোজার ক্ষতি হবে না। 
  • কোনো অঙ্গের অভ্যন্তরীণ চিত্র ধারণের জন্য সেই অঙ্গের প্রবেশপথে কোনো ক্যাথেটার বা নালির মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তরল রঞ্জক প্রবেশ করালে রোজা নষ্ট হবে না। 
  • রোগনির্ণয়ের জন্য অ্যান্ডোস্কোপি বা গ্যাস্ট্রোস্কোপি করলেও রোজা নষ্ট হয় না। তবে অ্যান্ডোস্কোপি বা গ্যাস্ট্রোস্কোপি 
    করার সময় ভেতরে তরল কিংবা অন্য কোনো কিছু প্রবেশ করানো যাবে না, যার খাদ্যগুণ রয়েছে। 
  • রোজা রাখা অবস্থায় না গিলে মাউথওয়াশ, মুখের স্প্রে ব্যবহার করা যাবে এবং গড়গড়া করা যাবে। 
  • রোজা রাখা অবস্থায় লিভারসহ অন্য কোনো অঙ্গের বায়োপসি করা যাবে। 
  • রোজা রাখা অবস্থায় পেরিটোনিয়াল কিংবা মেশিনে কিডনি ডায়ালাইসিস করা যাবে।

তবে নাকের ড্রপের ব্যাপারে অনেক স্কলার আপত্তি করেন। অনেক সময় এসব ফিকহ বিষয়ে বিভিন্ন স্কলারের মধ্যে মতপার্থক্য থাকতে পারে। সব স্কলারের মতামতের প্রতিই আমাদের শ্রদ্ধা থাকা প্রয়োজন।

যা করা যাবে না
রোজা রাখা অবস্থায় স্যালাইন বা গ্লুকোজ-জাতীয় কোনো তরল শিরাপথে গ্রহণ করা যাবে না।

লেখক: চক্ষুরোগ ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, সাবেক ফ্যাকাল্টি মেম্বার, চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সারজিসের পোস্টে কমেন্ট করে বরখাস্ত মৎস্য মন্ত্রণালয়ের কর্মচারী

‘৩ শর্তে’ সশস্ত্র বাহিনীর চাকরিচ্যুতদের বিক্ষোভ স্থগিত

আলটিমেটাম শেষ হওয়ার আগেই আসতে পারে অন্তর্বর্তী প্রশাসনের ঘোষণা

ভারতের সঙ্গে টক্কর দিলে বাঁচতে পারবে না বাংলাদেশ: বিজেপি নেতা

চিরকুটে শিক্ষাব্যবস্থাকে দায়ী করে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষার্থীর ‘আত্মহত্যা’

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত