ফারুক হাসান

স্বাধীনতা-উত্তরকালে যে কয়টি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অনন্য অর্জন, এর মধ্যে অন্যতম হলো তৈরি পোশাকশিল্প খাত, যা আজ আমাদের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। খাতটি শুধু জাতীয় অর্থনীতিকেই সমৃদ্ধ করেনি, একই সঙ্গে নিশ্চিত করেছে অগণিত মানুষের কর্মসংস্থান। প্রায় ৪০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান এবং পরোক্ষভাবে প্রায় ১ কোটি মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস এই শিল্পের জিডিপিতে অবদান ১১ শতাংশ।
পোশাকশিল্পের হাত ধরেই দেশের অর্থনীতিতে এসেছে ঈর্ষণীয় সাফল্য। অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকগুলোতে প্রতিযোগীদের পেছনে ফেলে সামনের সারিতে বাংলাদেশ। বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ৩০টি অর্থনীতির মধ্যে বাংলাদেশকেও ধরা হয়। এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে পোশাকশিল্প।
কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানিতে অভূপূর্ব সাফল্য দেখিয়ে চলেছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। আর ডেনিমে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে সব দেশকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ রয়েছে প্রথম অবস্থানে। সরকারের সহযোগিতায় শিগগিরই ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশ শীর্ষস্থান অধিকার করবে বলে আমরা আশাবাদী।
গত ৫০ বছরে আমরা শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি মডেল অনুসরণ করেছি। এখন সময় এসেছে টেকসই উৎপাদনে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য শিল্পে টেকসই প্রবৃদ্ধি অনুসরণ এবং একটি টেকসই ব্যবসায়িক মডেল অর্জন করার জন্য আগামী দিনে সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করে, কারিগরি ও উদ্ভাবনী উৎকর্ষ এনে, শিল্প-শ্রমিক-সমাজ-পরিবেশের মধ্যে একটি সামগ্রিক ইকো-সিস্টেম এনে প্রবৃদ্ধির পরবর্তী মডেল নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের। এ বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিজিএমইএ পোশাকশিল্পের টেকসই কৌশলগত রূপকল্প-২০৩০ প্রণয়ন করেছে। এর অভীষ্ট হচ্ছে মানুষ ও পরিবেশ, অর্থাৎ এই সবুজ গ্রহকে বিপন্ন না করে শিল্পের টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন করা, যা ইএসজির (এনভায়রনমেন্টাল সোশ্যাল গভর্ন্যান্স) সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
রূপকল্পের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দিক
২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন ৩০ শতাংশ কমানোর লক্ষ্য নিয়ে বিজিএমইএ ইউএনএফসিসিসির ‘ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি চার্টার ফর ক্লাইমেট অ্যাকশন’ স্বাক্ষর করেছে। এই অঙ্গীকার বিজিএমইএর কৌশলগত টেকসই উন্নয়ন রূপকল্পে ১ নম্বরে রাখা হয়েছে। ২০৩০ সাল নাগাদ জ্বালানি ব্যবহারের অন্তত ২০ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপন্ন করাও লক্ষ্য।
গত অর্থবছরে আমরা ৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানির মাইলফলক ছুঁয়েছি এবং আগামী দিনগুলোতে রপ্তানি নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি, সরকার, সহযোগী ব্র্যান্ড এবং স্টেকহোল্ডারদের সহযোগিতায় ২০৩০ সালের মধ্যে রপ্তানি ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে সক্ষম হব। শিল্পের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ও প্রবৃদ্ধি বাড়াতে ইতিমধ্যেই বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে পোশাকশিল্পের জন্য একটি উদ্ভাবন, দক্ষতা ও পেশাগত নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য, ২০৩০ সালের মধ্যে শিল্পের উৎপাদনশীলতা ৬০ শতাংশ বাড়ানো।
২০৩০ সালের মধ্যে প্রতিটি দেশে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগসংবলিত পোশাক-পণ্য রপ্তানি করে বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের পদচিহ্ন ছড়িয়ে দেওয়াটাও আরেকটি লক্ষ্য। ইতিমধ্যে পোশাকশিল্পে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
সুশাসন ছাড়া টেকসই উন্নয়ন অর্জন করা যায় না। তাই ২০৩০ সালের মধ্যে শিল্পে শতভাগ সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমরা একা পথ চলতে চাই না; একটি উন্নত ভবিষ্যতের জন্য দেশে ও বিদেশে সব সহযোগীর সঙ্গে অংশীদারত্বমূলক এবং দৃঢ় কাজের সম্পর্ক গড়তে চাই।
২০৩০ সালের মধ্যে রপ্তানি ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যে শিল্পের সক্ষমতা বাড়াতে ইতিমধ্যেই সরকারের সহায়তায় পণ্য, বাজার ও ফাইবার বহুমুখীকরণ এবং দক্ষতা উন্নয়ন, ইনোভেশন ও টেকনোলজি আপগ্রেডেশন, কস্ট-কমপিটিটিভ হওয়ার মাধ্যমে ভ্যালু চেইনে এগিয়ে থাকার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পণ্য বহুমুখীকরণ: বৈশ্বিক বাজারে গুণগত মানসম্পন্ন স্পোর্টসওয়্যার, আউটারওয়্যার এই পণ্যগুলোর বিশাল চাহিদা। তবে সেই সব বাজারে আমাদের উপস্থিতি নগণ্য। হাই-ফ্যাশনে সক্ষমতা প্রদর্শন করতে হাই-এন্ড ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে অংশীদারত্ব গড়ে তোলা হবে।
বিশ্ববাজারে কটন বস্ত্রের শেয়ার এবং পোশাকের ব্যবহার মাত্র ২৫ শতাংশ, সেখানে বাংলাদেশের রপ্তানি করা তৈরি পোশাকের ৭৫ শতাংশ কটন পণ্যে কেন্দ্রীভূত। বিজিএমইএর পক্ষ থেকে সাধারণ পোশাকের পাশাপাশি উচ্চমূল্যের বা ব্যতিক্রমী পোশাক তৈরিতে সদস্যদের প্রতিনিয়ত উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।
বাজার বহুমুখীকরণ: বিজিএমইএ অ্যাপারেল ডিপ্লোমেসির মাধ্যমে নতুন নতুন বাজার তৈরি এবং আমাদের মূল বাজারগুলোতে কীভাবে রপ্তানি আরও বাড়ানো যেতে পারে, সে লক্ষ্যে কাজ করছে। বিগত দশকে বাজার সম্প্রসারণে আমাদের সফলতাও অনেক।যেখানে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে অপ্রচলিত বাজারগুলোতে আমাদের তৈরি পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল প্রায় ৮৪৮ দশমিক ৮৭ মিলিয়ন ডলার, ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা ৮ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে নতুন কয়েকটি বাজারের ওপর ভর করে পোশাক খাত থেকে রপ্তানি আয় আগের বছরের চেয়ে ১০ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মতো অপ্রচলিত বাজারে এই প্রথম ১ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। জাপানে রপ্তানি গত বছর ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি ছিল, এবার তা দেড় বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।
শিল্পকে আরও এগিয়ে নেওয়ার জন্য পণ্যের ডিজাইন পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া, লিড টাইম কমানো, সর্বশেষ প্রযুক্তি গ্রহণ, উৎপাদন ব্যয় কমানো এবং কারখানাগুলোকে আরও টেকসই করার কোনো বিকল্প নেই। সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে জ্ঞানার্জনের জন্য বিজিএমইএর প্রধান কার্যালয়ে নতুন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কেন্দ্রটি পোশাক কারখানাগুলোকে অটোমেশন, থ্রিডি ডিজাইনিং, উদ্ভাবন, সর্বোত্তম শিল্প প্রকৌশল-প্রক্রিয়া গ্রহণ ও অনুশীলন, ডিজিটাল ম্যানুফ্যাকচারিং বিষয়ে সম্যক ধারণা অর্জন এবং মডিউলার প্রক্রিয়াগুলো অনুপ্রাণিত করার জন্যও কাজ করবে।
টেকনোলজি আপগ্রেডেশন: বিশ্ববাণিজ্যপটে দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে। প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান এবং এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার চ্যালেঞ্জ সবার সামনে আসছে। বাংলাদেশের পোশাকশিল্প ইতিমধ্যেই চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে প্রবেশ করেছে, আধুনিক স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রচলিত উৎপাদন এবং শিল্পব্যবস্থার স্বয়ংক্রিয়করণের প্রক্রিয়া চলমান। প্রতিটি কারখানাই এখন অটোমেশনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে।
পোশাকশিল্প নিরাপদ কর্মপরিবেশের রোল মডেলের তকমা পেয়েছে। আমরা সামাজিক ও পরিবেশগত টেকসই উন্নয়ন এবং শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যাপক অগ্রগতিসহ অনেক উদ্যোগের মাধ্যমে একটি পরিচ্ছন্ন শিল্প গড়তে সক্ষম হয়েছি।
সবুজ শিল্পায়ন: বিশ্বের সর্বাধিক পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানার আবাসস্থল এখন বাংলাদেশ। বর্তমানে দেশে ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের (ইউএসজিবিসি) সনদপ্রাপ্ত ১৯৮টি লিড গ্রিন কারখানা রয়েছে, যার মধ্যে প্লাটিনাম রেটেড ৭১ এবং ১১৩টি গোল্ড রেটেড। বিশ্বের সেরা ১০০ কারখানার মধ্যে ৪০টি আমাদের। আরও ৫০০টির মতো কারখানা লিড সনদ পাওয়ার প্রক্রিয়াধীন।
সার্কুলারিটি: রূপকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি আমরা সার্কুলার ফ্যাশন বা সার্কুলারিটি নিয়েও কাজ করছি। বিজিএমইএ দেশে সার্কুলার ফ্যাশন অনুশীলনকে সহায়তা করার জন্য একটি ‘সার্কুলার ফ্যাশন পার্টনারশিপ’ প্রকল্প চালু করেছে। এই প্রকল্পের লক্ষ্য হচ্ছে, পোশাক কারখানায় প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সার্কুলার ফ্যাশনসহ পোশাক খাতে টেকসই অনুশীলনের প্রচার করা।
রেসপন্সিবল বিজনেস হাব: বর্তমানে ফ্যাশন বিশ্বের একটি অতিগুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সাসটেইনেবল বিজনেস এনভায়রনমেন্ট। নতুন নতুন ডিউ ডিলিজেন্স গাইডলাইন আসছে। বিজিএমইএ জিআইজেডের সহযোগিতায় পোশাক খাতে মানবাধিকার, পরিবেশগত ডিউ ডিলিজেন্স (এইচআরইডিডি) শক্তিশালী করতে রেসপন্সিবল বিজনেস হাব চালু করেছে।
যেসব ক্ষেত্রে মনোযোগ দিতে হবে
কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালে আমরা সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের গুরুত্ব এবং শিল্পে এর প্রভাব দেখেছি। আমাদের অবশ্যই গুরুত্ব আরোপ করতে হবে সময়মতো অর্ডার সরবরাহ করায় এবং আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা মেটানোয়। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের প্রবৃদ্ধির জন্য ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি উৎপাদন খরচ কমাতে, গুণগত মান উন্নত করতে, সাপ্লাই চেইনের দক্ষতা বাড়াতে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে। আপস্ট্রিম সাপ্লাই চেইনকে একীভূত করার মাধ্যমে বাংলাদেশ আমদানি করা কাঁচামালের ওপর নির্ভরশীলতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারে।
মন্দার সময় ক্রেতারা আরও সাশ্রয়ী মূল্যে বিকল্পগুলো খুঁজছেন। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য পোশাক প্রস্তুতকারকদের অবশ্যই উৎপাদন পরিচালনা সুবিন্যস্তকরণ, বর্জ্য হ্রাসকরণ এবং সরবরাহকারীদের সঙ্গে আরও ভালোভাবে নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে ব্যয় দক্ষতার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
বিশ্বব্যাপী ভোক্তারা ফ্যাশনশিল্পের পরিবেশগত প্রভাব সম্পর্কে আরও সচেতন হয়ে উঠছেন এবং টেকসই ও পরিবেশবান্ধব পোশাকের ক্রমবর্ধমান চাহিদা রয়েছে।
জৈব কটন ও পুনর্ব্যবহৃত উপকরণ ব্যবহার করে, পরিবেশবান্ধব উৎপাদন-প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি টেকসই ফ্যাশন চেইন তৈরি করে ভোক্তাদের এই প্রবণতাকে পুঁজি করে আমরা সুবিধা পেতে পারি। এসএমই প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে সহজে অর্থায়নের নিয়মিত স্কিমগুলো গ্রহণ করতে পারে এবং সাসটেইনেবিলিটি চর্চাগুলো গ্রহণের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখতে সমর্থ হয়, এর ব্যবস্থা করতে হবে।
শিল্পের জন্য অব্যাহত বিদ্যুৎ ও গ্যাসের পর্যাপ্ত সরবরাহের বিকল্প নেই। সেই সঙ্গে রপ্তানি ত্বরান্বিত করার জন্য আমদানি-রপ্তানির প্রক্রিয়া, বিশেষ করে কাস্টমস, বন্দর এবং বন্ড-সংক্রান্ত প্রক্রিয়াগুলো আরও সহজ করা জরুরি।
সবশেষে বলতে হয়, দীর্ঘ মেয়াদে শিল্পের টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য শক্তিশালী নীতি-সহায়তা স্থিতিশীলতার বিকল্প নেই। যেসব নীতি-সহায়তা ইতিমধ্যে শিল্পের জন্য সহায়ক বলে প্রমাণিত হয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারে সরকার ও নীতিনির্ধারকদের সমর্থন দেওয়া জরুরি। তারা এই সংকটকালে আন্তর্জাতিক পোশাক বাজারে বাংলাদেশের শক্তিশালী উপস্থিতির জন্য আগামী কয়েক বছরের জন্য স্থিতিশীল রাজস্ব নীতি, আরও প্রণোদনামূলক স্কিম, রপ্তানির কাঁচামালে শুল্ক-সুবিধা, ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পে আর্থিক সহায়তা প্রদান প্রভৃতির কথা ভাবতে পারে।
লেখক: সভাপতি, বিজিএমইএ

স্বাধীনতা-উত্তরকালে যে কয়টি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অনন্য অর্জন, এর মধ্যে অন্যতম হলো তৈরি পোশাকশিল্প খাত, যা আজ আমাদের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। খাতটি শুধু জাতীয় অর্থনীতিকেই সমৃদ্ধ করেনি, একই সঙ্গে নিশ্চিত করেছে অগণিত মানুষের কর্মসংস্থান। প্রায় ৪০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান এবং পরোক্ষভাবে প্রায় ১ কোটি মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস এই শিল্পের জিডিপিতে অবদান ১১ শতাংশ।
পোশাকশিল্পের হাত ধরেই দেশের অর্থনীতিতে এসেছে ঈর্ষণীয় সাফল্য। অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকগুলোতে প্রতিযোগীদের পেছনে ফেলে সামনের সারিতে বাংলাদেশ। বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ৩০টি অর্থনীতির মধ্যে বাংলাদেশকেও ধরা হয়। এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে পোশাকশিল্প।
কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানিতে অভূপূর্ব সাফল্য দেখিয়ে চলেছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। আর ডেনিমে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে সব দেশকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ রয়েছে প্রথম অবস্থানে। সরকারের সহযোগিতায় শিগগিরই ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশ শীর্ষস্থান অধিকার করবে বলে আমরা আশাবাদী।
গত ৫০ বছরে আমরা শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি মডেল অনুসরণ করেছি। এখন সময় এসেছে টেকসই উৎপাদনে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য শিল্পে টেকসই প্রবৃদ্ধি অনুসরণ এবং একটি টেকসই ব্যবসায়িক মডেল অর্জন করার জন্য আগামী দিনে সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করে, কারিগরি ও উদ্ভাবনী উৎকর্ষ এনে, শিল্প-শ্রমিক-সমাজ-পরিবেশের মধ্যে একটি সামগ্রিক ইকো-সিস্টেম এনে প্রবৃদ্ধির পরবর্তী মডেল নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের। এ বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিজিএমইএ পোশাকশিল্পের টেকসই কৌশলগত রূপকল্প-২০৩০ প্রণয়ন করেছে। এর অভীষ্ট হচ্ছে মানুষ ও পরিবেশ, অর্থাৎ এই সবুজ গ্রহকে বিপন্ন না করে শিল্পের টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন করা, যা ইএসজির (এনভায়রনমেন্টাল সোশ্যাল গভর্ন্যান্স) সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
রূপকল্পের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দিক
২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন ৩০ শতাংশ কমানোর লক্ষ্য নিয়ে বিজিএমইএ ইউএনএফসিসিসির ‘ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি চার্টার ফর ক্লাইমেট অ্যাকশন’ স্বাক্ষর করেছে। এই অঙ্গীকার বিজিএমইএর কৌশলগত টেকসই উন্নয়ন রূপকল্পে ১ নম্বরে রাখা হয়েছে। ২০৩০ সাল নাগাদ জ্বালানি ব্যবহারের অন্তত ২০ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপন্ন করাও লক্ষ্য।
গত অর্থবছরে আমরা ৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানির মাইলফলক ছুঁয়েছি এবং আগামী দিনগুলোতে রপ্তানি নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি, সরকার, সহযোগী ব্র্যান্ড এবং স্টেকহোল্ডারদের সহযোগিতায় ২০৩০ সালের মধ্যে রপ্তানি ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে সক্ষম হব। শিল্পের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ও প্রবৃদ্ধি বাড়াতে ইতিমধ্যেই বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে পোশাকশিল্পের জন্য একটি উদ্ভাবন, দক্ষতা ও পেশাগত নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য, ২০৩০ সালের মধ্যে শিল্পের উৎপাদনশীলতা ৬০ শতাংশ বাড়ানো।
২০৩০ সালের মধ্যে প্রতিটি দেশে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগসংবলিত পোশাক-পণ্য রপ্তানি করে বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের পদচিহ্ন ছড়িয়ে দেওয়াটাও আরেকটি লক্ষ্য। ইতিমধ্যে পোশাকশিল্পে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
সুশাসন ছাড়া টেকসই উন্নয়ন অর্জন করা যায় না। তাই ২০৩০ সালের মধ্যে শিল্পে শতভাগ সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমরা একা পথ চলতে চাই না; একটি উন্নত ভবিষ্যতের জন্য দেশে ও বিদেশে সব সহযোগীর সঙ্গে অংশীদারত্বমূলক এবং দৃঢ় কাজের সম্পর্ক গড়তে চাই।
২০৩০ সালের মধ্যে রপ্তানি ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যে শিল্পের সক্ষমতা বাড়াতে ইতিমধ্যেই সরকারের সহায়তায় পণ্য, বাজার ও ফাইবার বহুমুখীকরণ এবং দক্ষতা উন্নয়ন, ইনোভেশন ও টেকনোলজি আপগ্রেডেশন, কস্ট-কমপিটিটিভ হওয়ার মাধ্যমে ভ্যালু চেইনে এগিয়ে থাকার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পণ্য বহুমুখীকরণ: বৈশ্বিক বাজারে গুণগত মানসম্পন্ন স্পোর্টসওয়্যার, আউটারওয়্যার এই পণ্যগুলোর বিশাল চাহিদা। তবে সেই সব বাজারে আমাদের উপস্থিতি নগণ্য। হাই-ফ্যাশনে সক্ষমতা প্রদর্শন করতে হাই-এন্ড ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে অংশীদারত্ব গড়ে তোলা হবে।
বিশ্ববাজারে কটন বস্ত্রের শেয়ার এবং পোশাকের ব্যবহার মাত্র ২৫ শতাংশ, সেখানে বাংলাদেশের রপ্তানি করা তৈরি পোশাকের ৭৫ শতাংশ কটন পণ্যে কেন্দ্রীভূত। বিজিএমইএর পক্ষ থেকে সাধারণ পোশাকের পাশাপাশি উচ্চমূল্যের বা ব্যতিক্রমী পোশাক তৈরিতে সদস্যদের প্রতিনিয়ত উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।
বাজার বহুমুখীকরণ: বিজিএমইএ অ্যাপারেল ডিপ্লোমেসির মাধ্যমে নতুন নতুন বাজার তৈরি এবং আমাদের মূল বাজারগুলোতে কীভাবে রপ্তানি আরও বাড়ানো যেতে পারে, সে লক্ষ্যে কাজ করছে। বিগত দশকে বাজার সম্প্রসারণে আমাদের সফলতাও অনেক।যেখানে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে অপ্রচলিত বাজারগুলোতে আমাদের তৈরি পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল প্রায় ৮৪৮ দশমিক ৮৭ মিলিয়ন ডলার, ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা ৮ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে নতুন কয়েকটি বাজারের ওপর ভর করে পোশাক খাত থেকে রপ্তানি আয় আগের বছরের চেয়ে ১০ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মতো অপ্রচলিত বাজারে এই প্রথম ১ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। জাপানে রপ্তানি গত বছর ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি ছিল, এবার তা দেড় বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।
শিল্পকে আরও এগিয়ে নেওয়ার জন্য পণ্যের ডিজাইন পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া, লিড টাইম কমানো, সর্বশেষ প্রযুক্তি গ্রহণ, উৎপাদন ব্যয় কমানো এবং কারখানাগুলোকে আরও টেকসই করার কোনো বিকল্প নেই। সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে জ্ঞানার্জনের জন্য বিজিএমইএর প্রধান কার্যালয়ে নতুন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কেন্দ্রটি পোশাক কারখানাগুলোকে অটোমেশন, থ্রিডি ডিজাইনিং, উদ্ভাবন, সর্বোত্তম শিল্প প্রকৌশল-প্রক্রিয়া গ্রহণ ও অনুশীলন, ডিজিটাল ম্যানুফ্যাকচারিং বিষয়ে সম্যক ধারণা অর্জন এবং মডিউলার প্রক্রিয়াগুলো অনুপ্রাণিত করার জন্যও কাজ করবে।
টেকনোলজি আপগ্রেডেশন: বিশ্ববাণিজ্যপটে দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে। প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান এবং এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার চ্যালেঞ্জ সবার সামনে আসছে। বাংলাদেশের পোশাকশিল্প ইতিমধ্যেই চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে প্রবেশ করেছে, আধুনিক স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রচলিত উৎপাদন এবং শিল্পব্যবস্থার স্বয়ংক্রিয়করণের প্রক্রিয়া চলমান। প্রতিটি কারখানাই এখন অটোমেশনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে।
পোশাকশিল্প নিরাপদ কর্মপরিবেশের রোল মডেলের তকমা পেয়েছে। আমরা সামাজিক ও পরিবেশগত টেকসই উন্নয়ন এবং শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যাপক অগ্রগতিসহ অনেক উদ্যোগের মাধ্যমে একটি পরিচ্ছন্ন শিল্প গড়তে সক্ষম হয়েছি।
সবুজ শিল্পায়ন: বিশ্বের সর্বাধিক পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানার আবাসস্থল এখন বাংলাদেশ। বর্তমানে দেশে ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের (ইউএসজিবিসি) সনদপ্রাপ্ত ১৯৮টি লিড গ্রিন কারখানা রয়েছে, যার মধ্যে প্লাটিনাম রেটেড ৭১ এবং ১১৩টি গোল্ড রেটেড। বিশ্বের সেরা ১০০ কারখানার মধ্যে ৪০টি আমাদের। আরও ৫০০টির মতো কারখানা লিড সনদ পাওয়ার প্রক্রিয়াধীন।
সার্কুলারিটি: রূপকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি আমরা সার্কুলার ফ্যাশন বা সার্কুলারিটি নিয়েও কাজ করছি। বিজিএমইএ দেশে সার্কুলার ফ্যাশন অনুশীলনকে সহায়তা করার জন্য একটি ‘সার্কুলার ফ্যাশন পার্টনারশিপ’ প্রকল্প চালু করেছে। এই প্রকল্পের লক্ষ্য হচ্ছে, পোশাক কারখানায় প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সার্কুলার ফ্যাশনসহ পোশাক খাতে টেকসই অনুশীলনের প্রচার করা।
রেসপন্সিবল বিজনেস হাব: বর্তমানে ফ্যাশন বিশ্বের একটি অতিগুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সাসটেইনেবল বিজনেস এনভায়রনমেন্ট। নতুন নতুন ডিউ ডিলিজেন্স গাইডলাইন আসছে। বিজিএমইএ জিআইজেডের সহযোগিতায় পোশাক খাতে মানবাধিকার, পরিবেশগত ডিউ ডিলিজেন্স (এইচআরইডিডি) শক্তিশালী করতে রেসপন্সিবল বিজনেস হাব চালু করেছে।
যেসব ক্ষেত্রে মনোযোগ দিতে হবে
কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালে আমরা সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের গুরুত্ব এবং শিল্পে এর প্রভাব দেখেছি। আমাদের অবশ্যই গুরুত্ব আরোপ করতে হবে সময়মতো অর্ডার সরবরাহ করায় এবং আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা মেটানোয়। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের প্রবৃদ্ধির জন্য ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি উৎপাদন খরচ কমাতে, গুণগত মান উন্নত করতে, সাপ্লাই চেইনের দক্ষতা বাড়াতে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে। আপস্ট্রিম সাপ্লাই চেইনকে একীভূত করার মাধ্যমে বাংলাদেশ আমদানি করা কাঁচামালের ওপর নির্ভরশীলতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারে।
মন্দার সময় ক্রেতারা আরও সাশ্রয়ী মূল্যে বিকল্পগুলো খুঁজছেন। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য পোশাক প্রস্তুতকারকদের অবশ্যই উৎপাদন পরিচালনা সুবিন্যস্তকরণ, বর্জ্য হ্রাসকরণ এবং সরবরাহকারীদের সঙ্গে আরও ভালোভাবে নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে ব্যয় দক্ষতার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
বিশ্বব্যাপী ভোক্তারা ফ্যাশনশিল্পের পরিবেশগত প্রভাব সম্পর্কে আরও সচেতন হয়ে উঠছেন এবং টেকসই ও পরিবেশবান্ধব পোশাকের ক্রমবর্ধমান চাহিদা রয়েছে।
জৈব কটন ও পুনর্ব্যবহৃত উপকরণ ব্যবহার করে, পরিবেশবান্ধব উৎপাদন-প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি টেকসই ফ্যাশন চেইন তৈরি করে ভোক্তাদের এই প্রবণতাকে পুঁজি করে আমরা সুবিধা পেতে পারি। এসএমই প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে সহজে অর্থায়নের নিয়মিত স্কিমগুলো গ্রহণ করতে পারে এবং সাসটেইনেবিলিটি চর্চাগুলো গ্রহণের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখতে সমর্থ হয়, এর ব্যবস্থা করতে হবে।
শিল্পের জন্য অব্যাহত বিদ্যুৎ ও গ্যাসের পর্যাপ্ত সরবরাহের বিকল্প নেই। সেই সঙ্গে রপ্তানি ত্বরান্বিত করার জন্য আমদানি-রপ্তানির প্রক্রিয়া, বিশেষ করে কাস্টমস, বন্দর এবং বন্ড-সংক্রান্ত প্রক্রিয়াগুলো আরও সহজ করা জরুরি।
সবশেষে বলতে হয়, দীর্ঘ মেয়াদে শিল্পের টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য শক্তিশালী নীতি-সহায়তা স্থিতিশীলতার বিকল্প নেই। যেসব নীতি-সহায়তা ইতিমধ্যে শিল্পের জন্য সহায়ক বলে প্রমাণিত হয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারে সরকার ও নীতিনির্ধারকদের সমর্থন দেওয়া জরুরি। তারা এই সংকটকালে আন্তর্জাতিক পোশাক বাজারে বাংলাদেশের শক্তিশালী উপস্থিতির জন্য আগামী কয়েক বছরের জন্য স্থিতিশীল রাজস্ব নীতি, আরও প্রণোদনামূলক স্কিম, রপ্তানির কাঁচামালে শুল্ক-সুবিধা, ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পে আর্থিক সহায়তা প্রদান প্রভৃতির কথা ভাবতে পারে।
লেখক: সভাপতি, বিজিএমইএ
ফারুক হাসান

স্বাধীনতা-উত্তরকালে যে কয়টি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অনন্য অর্জন, এর মধ্যে অন্যতম হলো তৈরি পোশাকশিল্প খাত, যা আজ আমাদের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। খাতটি শুধু জাতীয় অর্থনীতিকেই সমৃদ্ধ করেনি, একই সঙ্গে নিশ্চিত করেছে অগণিত মানুষের কর্মসংস্থান। প্রায় ৪০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান এবং পরোক্ষভাবে প্রায় ১ কোটি মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস এই শিল্পের জিডিপিতে অবদান ১১ শতাংশ।
পোশাকশিল্পের হাত ধরেই দেশের অর্থনীতিতে এসেছে ঈর্ষণীয় সাফল্য। অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকগুলোতে প্রতিযোগীদের পেছনে ফেলে সামনের সারিতে বাংলাদেশ। বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ৩০টি অর্থনীতির মধ্যে বাংলাদেশকেও ধরা হয়। এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে পোশাকশিল্প।
কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানিতে অভূপূর্ব সাফল্য দেখিয়ে চলেছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। আর ডেনিমে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে সব দেশকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ রয়েছে প্রথম অবস্থানে। সরকারের সহযোগিতায় শিগগিরই ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশ শীর্ষস্থান অধিকার করবে বলে আমরা আশাবাদী।
গত ৫০ বছরে আমরা শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি মডেল অনুসরণ করেছি। এখন সময় এসেছে টেকসই উৎপাদনে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য শিল্পে টেকসই প্রবৃদ্ধি অনুসরণ এবং একটি টেকসই ব্যবসায়িক মডেল অর্জন করার জন্য আগামী দিনে সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করে, কারিগরি ও উদ্ভাবনী উৎকর্ষ এনে, শিল্প-শ্রমিক-সমাজ-পরিবেশের মধ্যে একটি সামগ্রিক ইকো-সিস্টেম এনে প্রবৃদ্ধির পরবর্তী মডেল নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের। এ বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিজিএমইএ পোশাকশিল্পের টেকসই কৌশলগত রূপকল্প-২০৩০ প্রণয়ন করেছে। এর অভীষ্ট হচ্ছে মানুষ ও পরিবেশ, অর্থাৎ এই সবুজ গ্রহকে বিপন্ন না করে শিল্পের টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন করা, যা ইএসজির (এনভায়রনমেন্টাল সোশ্যাল গভর্ন্যান্স) সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
রূপকল্পের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দিক
২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন ৩০ শতাংশ কমানোর লক্ষ্য নিয়ে বিজিএমইএ ইউএনএফসিসিসির ‘ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি চার্টার ফর ক্লাইমেট অ্যাকশন’ স্বাক্ষর করেছে। এই অঙ্গীকার বিজিএমইএর কৌশলগত টেকসই উন্নয়ন রূপকল্পে ১ নম্বরে রাখা হয়েছে। ২০৩০ সাল নাগাদ জ্বালানি ব্যবহারের অন্তত ২০ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপন্ন করাও লক্ষ্য।
গত অর্থবছরে আমরা ৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানির মাইলফলক ছুঁয়েছি এবং আগামী দিনগুলোতে রপ্তানি নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি, সরকার, সহযোগী ব্র্যান্ড এবং স্টেকহোল্ডারদের সহযোগিতায় ২০৩০ সালের মধ্যে রপ্তানি ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে সক্ষম হব। শিল্পের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ও প্রবৃদ্ধি বাড়াতে ইতিমধ্যেই বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে পোশাকশিল্পের জন্য একটি উদ্ভাবন, দক্ষতা ও পেশাগত নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য, ২০৩০ সালের মধ্যে শিল্পের উৎপাদনশীলতা ৬০ শতাংশ বাড়ানো।
২০৩০ সালের মধ্যে প্রতিটি দেশে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগসংবলিত পোশাক-পণ্য রপ্তানি করে বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের পদচিহ্ন ছড়িয়ে দেওয়াটাও আরেকটি লক্ষ্য। ইতিমধ্যে পোশাকশিল্পে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
সুশাসন ছাড়া টেকসই উন্নয়ন অর্জন করা যায় না। তাই ২০৩০ সালের মধ্যে শিল্পে শতভাগ সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমরা একা পথ চলতে চাই না; একটি উন্নত ভবিষ্যতের জন্য দেশে ও বিদেশে সব সহযোগীর সঙ্গে অংশীদারত্বমূলক এবং দৃঢ় কাজের সম্পর্ক গড়তে চাই।
২০৩০ সালের মধ্যে রপ্তানি ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যে শিল্পের সক্ষমতা বাড়াতে ইতিমধ্যেই সরকারের সহায়তায় পণ্য, বাজার ও ফাইবার বহুমুখীকরণ এবং দক্ষতা উন্নয়ন, ইনোভেশন ও টেকনোলজি আপগ্রেডেশন, কস্ট-কমপিটিটিভ হওয়ার মাধ্যমে ভ্যালু চেইনে এগিয়ে থাকার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পণ্য বহুমুখীকরণ: বৈশ্বিক বাজারে গুণগত মানসম্পন্ন স্পোর্টসওয়্যার, আউটারওয়্যার এই পণ্যগুলোর বিশাল চাহিদা। তবে সেই সব বাজারে আমাদের উপস্থিতি নগণ্য। হাই-ফ্যাশনে সক্ষমতা প্রদর্শন করতে হাই-এন্ড ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে অংশীদারত্ব গড়ে তোলা হবে।
বিশ্ববাজারে কটন বস্ত্রের শেয়ার এবং পোশাকের ব্যবহার মাত্র ২৫ শতাংশ, সেখানে বাংলাদেশের রপ্তানি করা তৈরি পোশাকের ৭৫ শতাংশ কটন পণ্যে কেন্দ্রীভূত। বিজিএমইএর পক্ষ থেকে সাধারণ পোশাকের পাশাপাশি উচ্চমূল্যের বা ব্যতিক্রমী পোশাক তৈরিতে সদস্যদের প্রতিনিয়ত উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।
বাজার বহুমুখীকরণ: বিজিএমইএ অ্যাপারেল ডিপ্লোমেসির মাধ্যমে নতুন নতুন বাজার তৈরি এবং আমাদের মূল বাজারগুলোতে কীভাবে রপ্তানি আরও বাড়ানো যেতে পারে, সে লক্ষ্যে কাজ করছে। বিগত দশকে বাজার সম্প্রসারণে আমাদের সফলতাও অনেক।যেখানে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে অপ্রচলিত বাজারগুলোতে আমাদের তৈরি পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল প্রায় ৮৪৮ দশমিক ৮৭ মিলিয়ন ডলার, ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা ৮ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে নতুন কয়েকটি বাজারের ওপর ভর করে পোশাক খাত থেকে রপ্তানি আয় আগের বছরের চেয়ে ১০ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মতো অপ্রচলিত বাজারে এই প্রথম ১ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। জাপানে রপ্তানি গত বছর ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি ছিল, এবার তা দেড় বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।
শিল্পকে আরও এগিয়ে নেওয়ার জন্য পণ্যের ডিজাইন পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া, লিড টাইম কমানো, সর্বশেষ প্রযুক্তি গ্রহণ, উৎপাদন ব্যয় কমানো এবং কারখানাগুলোকে আরও টেকসই করার কোনো বিকল্প নেই। সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে জ্ঞানার্জনের জন্য বিজিএমইএর প্রধান কার্যালয়ে নতুন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কেন্দ্রটি পোশাক কারখানাগুলোকে অটোমেশন, থ্রিডি ডিজাইনিং, উদ্ভাবন, সর্বোত্তম শিল্প প্রকৌশল-প্রক্রিয়া গ্রহণ ও অনুশীলন, ডিজিটাল ম্যানুফ্যাকচারিং বিষয়ে সম্যক ধারণা অর্জন এবং মডিউলার প্রক্রিয়াগুলো অনুপ্রাণিত করার জন্যও কাজ করবে।
টেকনোলজি আপগ্রেডেশন: বিশ্ববাণিজ্যপটে দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে। প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান এবং এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার চ্যালেঞ্জ সবার সামনে আসছে। বাংলাদেশের পোশাকশিল্প ইতিমধ্যেই চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে প্রবেশ করেছে, আধুনিক স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রচলিত উৎপাদন এবং শিল্পব্যবস্থার স্বয়ংক্রিয়করণের প্রক্রিয়া চলমান। প্রতিটি কারখানাই এখন অটোমেশনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে।
পোশাকশিল্প নিরাপদ কর্মপরিবেশের রোল মডেলের তকমা পেয়েছে। আমরা সামাজিক ও পরিবেশগত টেকসই উন্নয়ন এবং শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যাপক অগ্রগতিসহ অনেক উদ্যোগের মাধ্যমে একটি পরিচ্ছন্ন শিল্প গড়তে সক্ষম হয়েছি।
সবুজ শিল্পায়ন: বিশ্বের সর্বাধিক পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানার আবাসস্থল এখন বাংলাদেশ। বর্তমানে দেশে ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের (ইউএসজিবিসি) সনদপ্রাপ্ত ১৯৮টি লিড গ্রিন কারখানা রয়েছে, যার মধ্যে প্লাটিনাম রেটেড ৭১ এবং ১১৩টি গোল্ড রেটেড। বিশ্বের সেরা ১০০ কারখানার মধ্যে ৪০টি আমাদের। আরও ৫০০টির মতো কারখানা লিড সনদ পাওয়ার প্রক্রিয়াধীন।
সার্কুলারিটি: রূপকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি আমরা সার্কুলার ফ্যাশন বা সার্কুলারিটি নিয়েও কাজ করছি। বিজিএমইএ দেশে সার্কুলার ফ্যাশন অনুশীলনকে সহায়তা করার জন্য একটি ‘সার্কুলার ফ্যাশন পার্টনারশিপ’ প্রকল্প চালু করেছে। এই প্রকল্পের লক্ষ্য হচ্ছে, পোশাক কারখানায় প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সার্কুলার ফ্যাশনসহ পোশাক খাতে টেকসই অনুশীলনের প্রচার করা।
রেসপন্সিবল বিজনেস হাব: বর্তমানে ফ্যাশন বিশ্বের একটি অতিগুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সাসটেইনেবল বিজনেস এনভায়রনমেন্ট। নতুন নতুন ডিউ ডিলিজেন্স গাইডলাইন আসছে। বিজিএমইএ জিআইজেডের সহযোগিতায় পোশাক খাতে মানবাধিকার, পরিবেশগত ডিউ ডিলিজেন্স (এইচআরইডিডি) শক্তিশালী করতে রেসপন্সিবল বিজনেস হাব চালু করেছে।
যেসব ক্ষেত্রে মনোযোগ দিতে হবে
কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালে আমরা সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের গুরুত্ব এবং শিল্পে এর প্রভাব দেখেছি। আমাদের অবশ্যই গুরুত্ব আরোপ করতে হবে সময়মতো অর্ডার সরবরাহ করায় এবং আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা মেটানোয়। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের প্রবৃদ্ধির জন্য ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি উৎপাদন খরচ কমাতে, গুণগত মান উন্নত করতে, সাপ্লাই চেইনের দক্ষতা বাড়াতে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে। আপস্ট্রিম সাপ্লাই চেইনকে একীভূত করার মাধ্যমে বাংলাদেশ আমদানি করা কাঁচামালের ওপর নির্ভরশীলতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারে।
মন্দার সময় ক্রেতারা আরও সাশ্রয়ী মূল্যে বিকল্পগুলো খুঁজছেন। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য পোশাক প্রস্তুতকারকদের অবশ্যই উৎপাদন পরিচালনা সুবিন্যস্তকরণ, বর্জ্য হ্রাসকরণ এবং সরবরাহকারীদের সঙ্গে আরও ভালোভাবে নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে ব্যয় দক্ষতার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
বিশ্বব্যাপী ভোক্তারা ফ্যাশনশিল্পের পরিবেশগত প্রভাব সম্পর্কে আরও সচেতন হয়ে উঠছেন এবং টেকসই ও পরিবেশবান্ধব পোশাকের ক্রমবর্ধমান চাহিদা রয়েছে।
জৈব কটন ও পুনর্ব্যবহৃত উপকরণ ব্যবহার করে, পরিবেশবান্ধব উৎপাদন-প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি টেকসই ফ্যাশন চেইন তৈরি করে ভোক্তাদের এই প্রবণতাকে পুঁজি করে আমরা সুবিধা পেতে পারি। এসএমই প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে সহজে অর্থায়নের নিয়মিত স্কিমগুলো গ্রহণ করতে পারে এবং সাসটেইনেবিলিটি চর্চাগুলো গ্রহণের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখতে সমর্থ হয়, এর ব্যবস্থা করতে হবে।
শিল্পের জন্য অব্যাহত বিদ্যুৎ ও গ্যাসের পর্যাপ্ত সরবরাহের বিকল্প নেই। সেই সঙ্গে রপ্তানি ত্বরান্বিত করার জন্য আমদানি-রপ্তানির প্রক্রিয়া, বিশেষ করে কাস্টমস, বন্দর এবং বন্ড-সংক্রান্ত প্রক্রিয়াগুলো আরও সহজ করা জরুরি।
সবশেষে বলতে হয়, দীর্ঘ মেয়াদে শিল্পের টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য শক্তিশালী নীতি-সহায়তা স্থিতিশীলতার বিকল্প নেই। যেসব নীতি-সহায়তা ইতিমধ্যে শিল্পের জন্য সহায়ক বলে প্রমাণিত হয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারে সরকার ও নীতিনির্ধারকদের সমর্থন দেওয়া জরুরি। তারা এই সংকটকালে আন্তর্জাতিক পোশাক বাজারে বাংলাদেশের শক্তিশালী উপস্থিতির জন্য আগামী কয়েক বছরের জন্য স্থিতিশীল রাজস্ব নীতি, আরও প্রণোদনামূলক স্কিম, রপ্তানির কাঁচামালে শুল্ক-সুবিধা, ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পে আর্থিক সহায়তা প্রদান প্রভৃতির কথা ভাবতে পারে।
লেখক: সভাপতি, বিজিএমইএ

স্বাধীনতা-উত্তরকালে যে কয়টি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অনন্য অর্জন, এর মধ্যে অন্যতম হলো তৈরি পোশাকশিল্প খাত, যা আজ আমাদের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। খাতটি শুধু জাতীয় অর্থনীতিকেই সমৃদ্ধ করেনি, একই সঙ্গে নিশ্চিত করেছে অগণিত মানুষের কর্মসংস্থান। প্রায় ৪০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান এবং পরোক্ষভাবে প্রায় ১ কোটি মানুষের জীবিকার প্রধান উৎস এই শিল্পের জিডিপিতে অবদান ১১ শতাংশ।
পোশাকশিল্পের হাত ধরেই দেশের অর্থনীতিতে এসেছে ঈর্ষণীয় সাফল্য। অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকগুলোতে প্রতিযোগীদের পেছনে ফেলে সামনের সারিতে বাংলাদেশ। বর্তমানে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ৩০টি অর্থনীতির মধ্যে বাংলাদেশকেও ধরা হয়। এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে পোশাকশিল্প।
কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানিতে অভূপূর্ব সাফল্য দেখিয়ে চলেছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। আর ডেনিমে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে সব দেশকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ রয়েছে প্রথম অবস্থানে। সরকারের সহযোগিতায় শিগগিরই ইউরোপের বাজারে বাংলাদেশ শীর্ষস্থান অধিকার করবে বলে আমরা আশাবাদী।
গত ৫০ বছরে আমরা শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির একটি মডেল অনুসরণ করেছি। এখন সময় এসেছে টেকসই উৎপাদনে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য শিল্পে টেকসই প্রবৃদ্ধি অনুসরণ এবং একটি টেকসই ব্যবসায়িক মডেল অর্জন করার জন্য আগামী দিনে সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করে, কারিগরি ও উদ্ভাবনী উৎকর্ষ এনে, শিল্প-শ্রমিক-সমাজ-পরিবেশের মধ্যে একটি সামগ্রিক ইকো-সিস্টেম এনে প্রবৃদ্ধির পরবর্তী মডেল নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের। এ বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিজিএমইএ পোশাকশিল্পের টেকসই কৌশলগত রূপকল্প-২০৩০ প্রণয়ন করেছে। এর অভীষ্ট হচ্ছে মানুষ ও পরিবেশ, অর্থাৎ এই সবুজ গ্রহকে বিপন্ন না করে শিল্পের টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন করা, যা ইএসজির (এনভায়রনমেন্টাল সোশ্যাল গভর্ন্যান্স) সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
রূপকল্পের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দিক
২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন ৩০ শতাংশ কমানোর লক্ষ্য নিয়ে বিজিএমইএ ইউএনএফসিসিসির ‘ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি চার্টার ফর ক্লাইমেট অ্যাকশন’ স্বাক্ষর করেছে। এই অঙ্গীকার বিজিএমইএর কৌশলগত টেকসই উন্নয়ন রূপকল্পে ১ নম্বরে রাখা হয়েছে। ২০৩০ সাল নাগাদ জ্বালানি ব্যবহারের অন্তত ২০ শতাংশ নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপন্ন করাও লক্ষ্য।
গত অর্থবছরে আমরা ৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানির মাইলফলক ছুঁয়েছি এবং আগামী দিনগুলোতে রপ্তানি নিশ্চিত করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা বিশ্বাস করি, সরকার, সহযোগী ব্র্যান্ড এবং স্টেকহোল্ডারদের সহযোগিতায় ২০৩০ সালের মধ্যে রপ্তানি ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে সক্ষম হব। শিল্পের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ও প্রবৃদ্ধি বাড়াতে ইতিমধ্যেই বিজিএমইএ কমপ্লেক্সে পোশাকশিল্পের জন্য একটি উদ্ভাবন, দক্ষতা ও পেশাগত নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য, ২০৩০ সালের মধ্যে শিল্পের উৎপাদনশীলতা ৬০ শতাংশ বাড়ানো।
২০৩০ সালের মধ্যে প্রতিটি দেশে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগসংবলিত পোশাক-পণ্য রপ্তানি করে বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের পদচিহ্ন ছড়িয়ে দেওয়াটাও আরেকটি লক্ষ্য। ইতিমধ্যে পোশাকশিল্পে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
সুশাসন ছাড়া টেকসই উন্নয়ন অর্জন করা যায় না। তাই ২০৩০ সালের মধ্যে শিল্পে শতভাগ সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমরা একা পথ চলতে চাই না; একটি উন্নত ভবিষ্যতের জন্য দেশে ও বিদেশে সব সহযোগীর সঙ্গে অংশীদারত্বমূলক এবং দৃঢ় কাজের সম্পর্ক গড়তে চাই।
২০৩০ সালের মধ্যে রপ্তানি ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যে শিল্পের সক্ষমতা বাড়াতে ইতিমধ্যেই সরকারের সহায়তায় পণ্য, বাজার ও ফাইবার বহুমুখীকরণ এবং দক্ষতা উন্নয়ন, ইনোভেশন ও টেকনোলজি আপগ্রেডেশন, কস্ট-কমপিটিটিভ হওয়ার মাধ্যমে ভ্যালু চেইনে এগিয়ে থাকার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পণ্য বহুমুখীকরণ: বৈশ্বিক বাজারে গুণগত মানসম্পন্ন স্পোর্টসওয়্যার, আউটারওয়্যার এই পণ্যগুলোর বিশাল চাহিদা। তবে সেই সব বাজারে আমাদের উপস্থিতি নগণ্য। হাই-ফ্যাশনে সক্ষমতা প্রদর্শন করতে হাই-এন্ড ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে অংশীদারত্ব গড়ে তোলা হবে।
বিশ্ববাজারে কটন বস্ত্রের শেয়ার এবং পোশাকের ব্যবহার মাত্র ২৫ শতাংশ, সেখানে বাংলাদেশের রপ্তানি করা তৈরি পোশাকের ৭৫ শতাংশ কটন পণ্যে কেন্দ্রীভূত। বিজিএমইএর পক্ষ থেকে সাধারণ পোশাকের পাশাপাশি উচ্চমূল্যের বা ব্যতিক্রমী পোশাক তৈরিতে সদস্যদের প্রতিনিয়ত উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।
বাজার বহুমুখীকরণ: বিজিএমইএ অ্যাপারেল ডিপ্লোমেসির মাধ্যমে নতুন নতুন বাজার তৈরি এবং আমাদের মূল বাজারগুলোতে কীভাবে রপ্তানি আরও বাড়ানো যেতে পারে, সে লক্ষ্যে কাজ করছে। বিগত দশকে বাজার সম্প্রসারণে আমাদের সফলতাও অনেক।যেখানে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে অপ্রচলিত বাজারগুলোতে আমাদের তৈরি পোশাক রপ্তানির পরিমাণ ছিল প্রায় ৮৪৮ দশমিক ৮৭ মিলিয়ন ডলার, ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা ৮ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে নতুন কয়েকটি বাজারের ওপর ভর করে পোশাক খাত থেকে রপ্তানি আয় আগের বছরের চেয়ে ১০ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মতো অপ্রচলিত বাজারে এই প্রথম ১ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। জাপানে রপ্তানি গত বছর ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি ছিল, এবার তা দেড় বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।
শিল্পকে আরও এগিয়ে নেওয়ার জন্য পণ্যের ডিজাইন পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া, লিড টাইম কমানো, সর্বশেষ প্রযুক্তি গ্রহণ, উৎপাদন ব্যয় কমানো এবং কারখানাগুলোকে আরও টেকসই করার কোনো বিকল্প নেই। সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোতে জ্ঞানার্জনের জন্য বিজিএমইএর প্রধান কার্যালয়ে নতুন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কেন্দ্রটি পোশাক কারখানাগুলোকে অটোমেশন, থ্রিডি ডিজাইনিং, উদ্ভাবন, সর্বোত্তম শিল্প প্রকৌশল-প্রক্রিয়া গ্রহণ ও অনুশীলন, ডিজিটাল ম্যানুফ্যাকচারিং বিষয়ে সম্যক ধারণা অর্জন এবং মডিউলার প্রক্রিয়াগুলো অনুপ্রাণিত করার জন্যও কাজ করবে।
টেকনোলজি আপগ্রেডেশন: বিশ্ববাণিজ্যপটে দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে। প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান এবং এই পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার চ্যালেঞ্জ সবার সামনে আসছে। বাংলাদেশের পোশাকশিল্প ইতিমধ্যেই চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে প্রবেশ করেছে, আধুনিক স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রচলিত উৎপাদন এবং শিল্পব্যবস্থার স্বয়ংক্রিয়করণের প্রক্রিয়া চলমান। প্রতিটি কারখানাই এখন অটোমেশনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে।
পোশাকশিল্প নিরাপদ কর্মপরিবেশের রোল মডেলের তকমা পেয়েছে। আমরা সামাজিক ও পরিবেশগত টেকসই উন্নয়ন এবং শ্রমিকদের কল্যাণে ব্যাপক অগ্রগতিসহ অনেক উদ্যোগের মাধ্যমে একটি পরিচ্ছন্ন শিল্প গড়তে সক্ষম হয়েছি।
সবুজ শিল্পায়ন: বিশ্বের সর্বাধিক পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানার আবাসস্থল এখন বাংলাদেশ। বর্তমানে দেশে ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের (ইউএসজিবিসি) সনদপ্রাপ্ত ১৯৮টি লিড গ্রিন কারখানা রয়েছে, যার মধ্যে প্লাটিনাম রেটেড ৭১ এবং ১১৩টি গোল্ড রেটেড। বিশ্বের সেরা ১০০ কারখানার মধ্যে ৪০টি আমাদের। আরও ৫০০টির মতো কারখানা লিড সনদ পাওয়ার প্রক্রিয়াধীন।
সার্কুলারিটি: রূপকল্প বাস্তবায়নের পাশাপাশি আমরা সার্কুলার ফ্যাশন বা সার্কুলারিটি নিয়েও কাজ করছি। বিজিএমইএ দেশে সার্কুলার ফ্যাশন অনুশীলনকে সহায়তা করার জন্য একটি ‘সার্কুলার ফ্যাশন পার্টনারশিপ’ প্রকল্প চালু করেছে। এই প্রকল্পের লক্ষ্য হচ্ছে, পোশাক কারখানায় প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সার্কুলার ফ্যাশনসহ পোশাক খাতে টেকসই অনুশীলনের প্রচার করা।
রেসপন্সিবল বিজনেস হাব: বর্তমানে ফ্যাশন বিশ্বের একটি অতিগুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, সাসটেইনেবল বিজনেস এনভায়রনমেন্ট। নতুন নতুন ডিউ ডিলিজেন্স গাইডলাইন আসছে। বিজিএমইএ জিআইজেডের সহযোগিতায় পোশাক খাতে মানবাধিকার, পরিবেশগত ডিউ ডিলিজেন্স (এইচআরইডিডি) শক্তিশালী করতে রেসপন্সিবল বিজনেস হাব চালু করেছে।
যেসব ক্ষেত্রে মনোযোগ দিতে হবে
কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালে আমরা সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের গুরুত্ব এবং শিল্পে এর প্রভাব দেখেছি। আমাদের অবশ্যই গুরুত্ব আরোপ করতে হবে সময়মতো অর্ডার সরবরাহ করায় এবং আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা মেটানোয়। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের প্রবৃদ্ধির জন্য ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি উৎপাদন খরচ কমাতে, গুণগত মান উন্নত করতে, সাপ্লাই চেইনের দক্ষতা বাড়াতে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে। আপস্ট্রিম সাপ্লাই চেইনকে একীভূত করার মাধ্যমে বাংলাদেশ আমদানি করা কাঁচামালের ওপর নির্ভরশীলতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারে।
মন্দার সময় ক্রেতারা আরও সাশ্রয়ী মূল্যে বিকল্পগুলো খুঁজছেন। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য পোশাক প্রস্তুতকারকদের অবশ্যই উৎপাদন পরিচালনা সুবিন্যস্তকরণ, বর্জ্য হ্রাসকরণ এবং সরবরাহকারীদের সঙ্গে আরও ভালোভাবে নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে ব্যয় দক্ষতার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
বিশ্বব্যাপী ভোক্তারা ফ্যাশনশিল্পের পরিবেশগত প্রভাব সম্পর্কে আরও সচেতন হয়ে উঠছেন এবং টেকসই ও পরিবেশবান্ধব পোশাকের ক্রমবর্ধমান চাহিদা রয়েছে।
জৈব কটন ও পুনর্ব্যবহৃত উপকরণ ব্যবহার করে, পরিবেশবান্ধব উৎপাদন-প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি টেকসই ফ্যাশন চেইন তৈরি করে ভোক্তাদের এই প্রবণতাকে পুঁজি করে আমরা সুবিধা পেতে পারি। এসএমই প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে সহজে অর্থায়নের নিয়মিত স্কিমগুলো গ্রহণ করতে পারে এবং সাসটেইনেবিলিটি চর্চাগুলো গ্রহণের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখতে সমর্থ হয়, এর ব্যবস্থা করতে হবে।
শিল্পের জন্য অব্যাহত বিদ্যুৎ ও গ্যাসের পর্যাপ্ত সরবরাহের বিকল্প নেই। সেই সঙ্গে রপ্তানি ত্বরান্বিত করার জন্য আমদানি-রপ্তানির প্রক্রিয়া, বিশেষ করে কাস্টমস, বন্দর এবং বন্ড-সংক্রান্ত প্রক্রিয়াগুলো আরও সহজ করা জরুরি।
সবশেষে বলতে হয়, দীর্ঘ মেয়াদে শিল্পের টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য শক্তিশালী নীতি-সহায়তা স্থিতিশীলতার বিকল্প নেই। যেসব নীতি-সহায়তা ইতিমধ্যে শিল্পের জন্য সহায়ক বলে প্রমাণিত হয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারে সরকার ও নীতিনির্ধারকদের সমর্থন দেওয়া জরুরি। তারা এই সংকটকালে আন্তর্জাতিক পোশাক বাজারে বাংলাদেশের শক্তিশালী উপস্থিতির জন্য আগামী কয়েক বছরের জন্য স্থিতিশীল রাজস্ব নীতি, আরও প্রণোদনামূলক স্কিম, রপ্তানির কাঁচামালে শুল্ক-সুবিধা, ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পে আর্থিক সহায়তা প্রদান প্রভৃতির কথা ভাবতে পারে।
লেখক: সভাপতি, বিজিএমইএ

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২৩ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

স্বাধীনতা-উত্তরকালে যে কয়টি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অনন্য অর্জন, এর মধ্যে অন্যতম হলো তৈরি পোশাকশিল্প খাত, যা আজ আমাদের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। খাতটি শুধু জাতীয় অর্থনীতিকেই সমৃদ্ধ করেনি, একই সঙ্গে নিশ্চিত করেছে অগণিত মানুষের
২৫ জুলাই ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

স্বাধীনতা-উত্তরকালে যে কয়টি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অনন্য অর্জন, এর মধ্যে অন্যতম হলো তৈরি পোশাকশিল্প খাত, যা আজ আমাদের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। খাতটি শুধু জাতীয় অর্থনীতিকেই সমৃদ্ধ করেনি, একই সঙ্গে নিশ্চিত করেছে অগণিত মানুষের
২৫ জুলাই ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২৩ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

স্বাধীনতা-উত্তরকালে যে কয়টি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অনন্য অর্জন, এর মধ্যে অন্যতম হলো তৈরি পোশাকশিল্প খাত, যা আজ আমাদের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। খাতটি শুধু জাতীয় অর্থনীতিকেই সমৃদ্ধ করেনি, একই সঙ্গে নিশ্চিত করেছে অগণিত মানুষের
২৫ জুলাই ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২৩ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

স্বাধীনতা-উত্তরকালে যে কয়টি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অনন্য অর্জন, এর মধ্যে অন্যতম হলো তৈরি পোশাকশিল্প খাত, যা আজ আমাদের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি। খাতটি শুধু জাতীয় অর্থনীতিকেই সমৃদ্ধ করেনি, একই সঙ্গে নিশ্চিত করেছে অগণিত মানুষের
২৫ জুলাই ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২৩ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫