জাহীদ রেজা নূর

বাংলার ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, ঈদসহ ধর্মীয় উৎসবগুলো বরাবরই ঘটা করে পালন করা হতো। বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করতে গেলে মীর্জা নাথানের বর্ণনার কাছে যেতে হয়।
তার আগে মীর্জা নাথান রচিত ‘বাহারিস্তান-ই-গায়েবী’ বইটি নিয়ে দু-একটি কথা বলতে হয়। বইটির লেখক বাংলার মোগল সেনাপতি আলাউদ্দীন ইসফাহানকেই মীর্জা নাথান বলে ডাকা হতো। এই বই সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে (১৬০৫-১৬২৭) বাংলার ইতিহাস পুনর্গঠনের জন্য খুবই দামি একটি উৎস। মোগল সাম্রাজ্যের অন্য সব গতানুগতিক ইতিহাস থেকে ‘বাহারিস্তান-ই-গায়েবী’ ছিল ভিন্নধর্মী। মীর্জা নাথান সমগ্র সাম্রাজ্য নিয়ে লেখেননি, লিখেছেন শুধু বাংলা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের ঘটনাবলি নিয়ে।
মীর্জা নাথানের বাবা মালিক আলী ছিলেন সুবাদার ইসলাম খানের নৌবহরের প্রধান। ১৬০৮ সালে ইসলাম খাঁর সঙ্গে যখন মালিক আলী ঢাকায় আসেন, মীর্জা নাথানও তখন ঢাকায় এসেছিলেন। তিনিও পিতার সঙ্গে রাজকীয় বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। সুবাদার ইসলাম খানের শাসনকালে তিনি মুসা খান, খাজা উসমান ও প্রতাপাদিত্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেন। শাহজাদা শাহজাহান পিতা মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বাংলায় এসেছিলেন। সে সময় মীর্জা নাথান শাহজাহানের দলে যোগ দেন। শাহজাহান বাংলা থেকে দাক্ষিণাত্যে যাওয়ার পর মীর্জা নাথান সম্পর্কে আর কিছু জানা যায় না। সম্ভবত অবসরজীবনে তিনি তাঁর বিপুলায়তন ‘বাহারিস্তান-ই-গায়েবী’ নামের মূল্যবান বইটি লিখেছিলেন।
ঈদ নিয়ে মীর্জা নাথান লিখেছেন, ‘ঈদের আনন্দ-উৎসবের সূচনা হতো নতুন চাঁদকে স্বাগত জানানোর মাধ্যমে। দিনের শেষে সন্ধ্যা সমাগমে নতুন চাঁদ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজকীয় নাকাড়া বেজে ওঠে এবং গোলন্দাজ সেনাদলের সকল আগ্নেয়াস্ত্র থেকে ক্রমাগত তোপ দাগানো হয়। রাত্রির শেষ ভাগে কামানের অগ্ন্যুদ্গিরণ শেষ হয় এবং এরপর শোনা যায় ভারী কামানের আওয়াজ। এটা ছিল দস্তুরমতো ভূমিকম্প।’
মীর্জা নাথানের এই বর্ণনা থেকেই বোঝা যায়, ঈদের আগমনে কেমন খুশির উল্লাস বয়ে যেত মুসলমানদের মনে।
ঈদের সময় স্ত্রী-পুরুষ, বালক-বালিকানির্বিশেষে প্রত্যেকেই নতুন ও ভালো কাপড় পরত। সকালেই ঈদের নামাজের স্থানে শোভাযাত্রা করে যেত। যারা অবস্থাপন্ন, তারা পথে পথে টাকা-পয়সা ও উপহারদ্রব্য ছড়িয়ে দিত। সাধারণ মুসলমান গরিবদের ভিক্ষা দিত। এই বর্ণনা পাওয়া যায় ‘নওবাহার-ই-মুর্শিদকুলী খান’ বইয়ের লেখক আজাদ হোসেন বিলগ্রামীর বর্ণনায়। এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা যাক, নবাব আলিবর্দী ভ্রাতুষ্পুত্র ও জামাতা নওয়াজিশ মুহম্মদ খান প্রিয়জনের মৃত্যুর কারণে ঈদুল আজহার দিন নিরানন্দভাবে সময় কাটাতেন। বৃদ্ধ নবাব চেষ্টা করতেন তাঁকে নতুন কাপড়-চোপড় পরাতে। কিন্তু তিনি তাতে ব্যর্থ হয়ে হারেমের বেগম ও নারীদের ঈদের আনন্দ-উৎসব উপযোগী কাপড় নিয়ে তাঁকে উৎফুল্ল করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
আবার ফিরি মীর্জা নাথানের কাছে। ঈদুল আজহা নিয়ে মীর্জা নাথান লিখেছেন, ‘নামাজান্তে খতিবের খুৎবাহ পাঠ শেষ হলে লোকেরা তাঁকে কাপড়-চোপড় ও টাকা-পয়সা উপহার দেয়। গরিব-দুঃখীদের সাহায্যের জন্য তার সম্মুখে টাকা-পয়সা ছড়িয়ে দেওয়া হয়। দুস্থ লোকদের অনেকে এর দ্বারা তাদের অভাব দূর করে এবং সুখী হয়। পরস্পরের প্রতি সম্বোধনে আকাশ-বাতাস মুখরিত হয়ে ওঠে।’
এরপর লিখেছেন, ‘কোরবানি সম্পন্ন হওয়ার পর বিরাট ভোজের ব্যবস্থা করা হয়। সুন্দর গায়ক, মোহনী নর্তকী এবং নম্র স্বভাবের গল্পকথকদের মধুর আপ্যায়নের সঙ্গে দিনরাত ভোজানুষ্ঠান চলতে থাকে। শিল্পকারখানার বহু শ্রমিককে উপহারসামগ্রী প্রদানে তুষ্ট করা হয়।’
সে সময় সেনাপতি শুজাত খান ঈদের দিন বন্ধুবান্ধবকে আপ্যায়নের জন্য সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন। দু-তিন দিন ধরে সংগীত ও নৃত্য পরিবেশনের ব্যবস্থা থাকত তাতে। এ থেকে অনুমান করে নেওয়া কঠিন নয় যে, ঈদের সঙ্গে সামাজিক-সাংস্কৃতিক বন্ধন ছিল পোক্ত। খাদ্য ও সাংস্কৃতিক উৎসব ছিল ঈদের অন্যতম আকর্ষণ।
২.
ঢাকা শহর বাংলার রাজধানী হওয়ার সময়কার ঈদের বর্ণনা তো পাওয়া গেল। পরবর্তীকালের কথা জানা যাবে আবুল মনসুর আহমদ, আনিসুজ্জামান, মাহবুব-উল-আলম চৌধুরীর কাছ থেকে। এবং দেখা যাবে, ঈদের আনন্দ আসলে কালের বিবর্তনে ম্লান হয়নি মোটেও। সংগীত যে ঈদের একটা অনুষঙ্গ ছিল, সেটাও পাওয়া যাবে পরবর্তী বর্ণনায়।
আবুল মনসুর আহমদ বলছেন, ‘বছরে দুইবার ঈদের জমাত হইত বটে, কিন্তু তাতে বড়রাই শামিল হইত। কাজেই জমাতে খুব অল্প লোক হইত। ঈদের মাঠে লোক না হইলেও বাড়ি-বাড়ি আমোদ-সামুদ হইত খুব। সাধ্যমতো লোকেরা নতুন কাপড়-চোপড় পরিয়া বেদম গান-বাজনা করিত। সারা রাত ঢোলের আওয়াজ পাওয়া যাইত। প্রায়ই বাড়ি বাড়ি ঢোল-ডগর দেখা যাইত।’
ঈদুল আজহা সম্পর্কে আনিসুজ্জামান লিখছেন, ‘মুসলমানরা ত্যাগের উৎসরূপে ঈদ-উল আজহা উদ্যাপন করে। এর উৎপত্তি হয়েছে হযরত ইব্রাহিমের সময় থেকে। আল্লাহর উদ্দেশ্যে হযরত ইব্রাহিম প্রিয় পুত্র ইসমাইলকে কোরবানীর আয়োজন করেছেন। মুসলমানরা এই মহৎ দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে। তারা প্রভাতে সুন্দর কাপড়চোপড় পরিধান করে এবং তকবীর উচ্চারণ করতে করতে ঈদগাহ ময়দানের দিকে গমন করে। সেখানে নামাজ আদায় করে এবং ভ্রাতৃত্বপূর্ণ মনোভাব নিয়ে আনন্দ প্রকাশ করে, পরস্পরকে আলিঙ্গন করে ও সম্ভাষণ জানায়। অতঃপর তারা গৃহে প্রত্যাবর্তন করে এবং তাদের সাধ্যানুসারে তারা কোনো পশু, যেমন—গরু, ছাগল, মহিশ বা উট কোরবানী করে। তারা গরীব, দুঃখী, বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে মাংস বিতরণ করে ও গৃহে ভোজের অনুষ্ঠান করে। প্রত্যেক গৃহ ভোজানুষ্ঠান ও আনন্দ স্ফুর্তিতে মুখরিত হয়ে ওঠে।’
কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য যাদের ছিল না, তারা কী করত? কেমন ছিল তাদের জীবন? আনিসুজ্জামানের কাছেই এই প্রশ্নের উত্তর পাব আমরা। তিনি লিখছেন, ‘বকরিদে আমরা প্রতি বছর কোরবানি দিতাম না—মাঝমধ্যে তা বাদ পড়ত—ভক্তির অভাবে অতোটা নয়—যতোটা সামর্থ্যর অভাবে। বড়োরা চেষ্টা করতেন পশু জবাই থেকে আমাদের আড়াল করতে। আমরা ছোটরা ততোধিক উৎসাহে ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে জবাই দেখে ফেলতাম। দেখার পর কিন্তু অনেকক্ষণ বিষাদে মন ছেয়ে যেত তবে শেষ পর্যন্ত এই বিষণ্নতা পিছনে ফেলে দেখা দিত কোরবানির গোশত খাওয়ার উৎসাহ।’
পুরোনো দিনের ঈদের আলোচনা করতে গিয়ে একুশের প্রথম কবিতার লেখক মাহবুব-উল-আলম চৌধুরী লিখেছেন, ‘কোরবানি মানে ত্যাগ। সবচেয়ে প্রিয় জিনিস আল্লাহর নামে উৎসর্গ করা। কিন্তু আজ সন্ত্রাস, খুন, রাহাজানি এবং ইসলামের নামে যে জঙ্গীবাদের উদ্ভব ঘটেছে, তার বিপরীতে যদি আমরা ক্রোধ, প্রতিহিংসা, ঈর্ষা, পরশ্রীকাতরতা, মিথ্যাচার, নিষ্ঠুরতা প্রভৃতি দুষ্ট রিপুর প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারতাম, সেটাই কি হতো না সর্বশ্রেষ্ঠ ত্যাগ, সবচেয়ে বড় কোরবানি? এই পরিস্থিতিতে যদি আমরা ঈদকে আনন্দোৎসবে পরিণত করতে চাই, তাহলে আমাদের শ্রেয়বোধকে জাগ্রত করতে হবে। বন্ধ করতে হবে অপরাধমূলক আচার-আচরণ এবং নিজের ভেতরের পশুটিকে বধ করে প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠতে হবে।’
৩.
আরেকটি তথ্য এখানে যোগ করা যায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় শুধু একটি ঈদই হয়েছিল। সেটি ছিল ঈদুল ফিতর। ২০ নভেম্বর হয়েছিল সেই ঈদ। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম ঈদটিই ছিল ঈদুল আজহা। ১৯৭২ সালের ২৭ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার বিধ্বস্ত বাংলার বুকে নেমে এসেছিল ঈদ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার আগে পাকিস্তানের জেল থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঈদের নামাজ আদায় করেছিলেন ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডে তাঁর বাড়ির কাছাকাছি অবস্থিত ধানমন্ডি ক্লাব মাঠে।
বাংলাদেশের প্রথম ঈদের অভিজ্ঞতা অনেকের কাছেই ছিল করুণ। পাকিস্তানি বর্বর ও এদেশীয় আলবদরদের বীভৎস নৃশংসতায় বহু মানুষ শহীদ হয়েছিলেন। লাখ লাখ শহীদ পরিবারের কাছে এই ঈদ কোনো তাৎপর্য নিয়ে আসেনি। স্বজন হারানোর ধাক্কা সামলানো কঠিন ছিল।
বাংলাদেশের প্রথম ঈদে দেশের রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী আউটার স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ঈদের প্রধান জামাতে অংশ নেন। এই জামাতে ইমামতি করেছিলেন মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ। তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো, ঈদের দিন সর্বত্রই ঈদের জামাতের পর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত ব্যক্তিদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়েছিল।
তথ্যসূত্র
১. ডক্টর এম এ রহিম, বাংলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস, প্রকাশক: বাংলা একাডেমি, জুন, ১৯৮২
২. এ এস এম বোরহান উদ্দীন, স্মৃতিকথায় বাংলার মুসলিম সমাজ, প্রকাশক: বাংলা একাডেমি, ফেব্রুয়ারি, ২০১৬
৩. বাংলাপিডিয়া
৪. বাশার খান, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ঈদ, প্রথম আলো, ৩১ মে, ২০১৯
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

বাংলার ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, ঈদসহ ধর্মীয় উৎসবগুলো বরাবরই ঘটা করে পালন করা হতো। বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করতে গেলে মীর্জা নাথানের বর্ণনার কাছে যেতে হয়।
তার আগে মীর্জা নাথান রচিত ‘বাহারিস্তান-ই-গায়েবী’ বইটি নিয়ে দু-একটি কথা বলতে হয়। বইটির লেখক বাংলার মোগল সেনাপতি আলাউদ্দীন ইসফাহানকেই মীর্জা নাথান বলে ডাকা হতো। এই বই সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে (১৬০৫-১৬২৭) বাংলার ইতিহাস পুনর্গঠনের জন্য খুবই দামি একটি উৎস। মোগল সাম্রাজ্যের অন্য সব গতানুগতিক ইতিহাস থেকে ‘বাহারিস্তান-ই-গায়েবী’ ছিল ভিন্নধর্মী। মীর্জা নাথান সমগ্র সাম্রাজ্য নিয়ে লেখেননি, লিখেছেন শুধু বাংলা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের ঘটনাবলি নিয়ে।
মীর্জা নাথানের বাবা মালিক আলী ছিলেন সুবাদার ইসলাম খানের নৌবহরের প্রধান। ১৬০৮ সালে ইসলাম খাঁর সঙ্গে যখন মালিক আলী ঢাকায় আসেন, মীর্জা নাথানও তখন ঢাকায় এসেছিলেন। তিনিও পিতার সঙ্গে রাজকীয় বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। সুবাদার ইসলাম খানের শাসনকালে তিনি মুসা খান, খাজা উসমান ও প্রতাপাদিত্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেন। শাহজাদা শাহজাহান পিতা মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বাংলায় এসেছিলেন। সে সময় মীর্জা নাথান শাহজাহানের দলে যোগ দেন। শাহজাহান বাংলা থেকে দাক্ষিণাত্যে যাওয়ার পর মীর্জা নাথান সম্পর্কে আর কিছু জানা যায় না। সম্ভবত অবসরজীবনে তিনি তাঁর বিপুলায়তন ‘বাহারিস্তান-ই-গায়েবী’ নামের মূল্যবান বইটি লিখেছিলেন।
ঈদ নিয়ে মীর্জা নাথান লিখেছেন, ‘ঈদের আনন্দ-উৎসবের সূচনা হতো নতুন চাঁদকে স্বাগত জানানোর মাধ্যমে। দিনের শেষে সন্ধ্যা সমাগমে নতুন চাঁদ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজকীয় নাকাড়া বেজে ওঠে এবং গোলন্দাজ সেনাদলের সকল আগ্নেয়াস্ত্র থেকে ক্রমাগত তোপ দাগানো হয়। রাত্রির শেষ ভাগে কামানের অগ্ন্যুদ্গিরণ শেষ হয় এবং এরপর শোনা যায় ভারী কামানের আওয়াজ। এটা ছিল দস্তুরমতো ভূমিকম্প।’
মীর্জা নাথানের এই বর্ণনা থেকেই বোঝা যায়, ঈদের আগমনে কেমন খুশির উল্লাস বয়ে যেত মুসলমানদের মনে।
ঈদের সময় স্ত্রী-পুরুষ, বালক-বালিকানির্বিশেষে প্রত্যেকেই নতুন ও ভালো কাপড় পরত। সকালেই ঈদের নামাজের স্থানে শোভাযাত্রা করে যেত। যারা অবস্থাপন্ন, তারা পথে পথে টাকা-পয়সা ও উপহারদ্রব্য ছড়িয়ে দিত। সাধারণ মুসলমান গরিবদের ভিক্ষা দিত। এই বর্ণনা পাওয়া যায় ‘নওবাহার-ই-মুর্শিদকুলী খান’ বইয়ের লেখক আজাদ হোসেন বিলগ্রামীর বর্ণনায়। এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা যাক, নবাব আলিবর্দী ভ্রাতুষ্পুত্র ও জামাতা নওয়াজিশ মুহম্মদ খান প্রিয়জনের মৃত্যুর কারণে ঈদুল আজহার দিন নিরানন্দভাবে সময় কাটাতেন। বৃদ্ধ নবাব চেষ্টা করতেন তাঁকে নতুন কাপড়-চোপড় পরাতে। কিন্তু তিনি তাতে ব্যর্থ হয়ে হারেমের বেগম ও নারীদের ঈদের আনন্দ-উৎসব উপযোগী কাপড় নিয়ে তাঁকে উৎফুল্ল করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
আবার ফিরি মীর্জা নাথানের কাছে। ঈদুল আজহা নিয়ে মীর্জা নাথান লিখেছেন, ‘নামাজান্তে খতিবের খুৎবাহ পাঠ শেষ হলে লোকেরা তাঁকে কাপড়-চোপড় ও টাকা-পয়সা উপহার দেয়। গরিব-দুঃখীদের সাহায্যের জন্য তার সম্মুখে টাকা-পয়সা ছড়িয়ে দেওয়া হয়। দুস্থ লোকদের অনেকে এর দ্বারা তাদের অভাব দূর করে এবং সুখী হয়। পরস্পরের প্রতি সম্বোধনে আকাশ-বাতাস মুখরিত হয়ে ওঠে।’
এরপর লিখেছেন, ‘কোরবানি সম্পন্ন হওয়ার পর বিরাট ভোজের ব্যবস্থা করা হয়। সুন্দর গায়ক, মোহনী নর্তকী এবং নম্র স্বভাবের গল্পকথকদের মধুর আপ্যায়নের সঙ্গে দিনরাত ভোজানুষ্ঠান চলতে থাকে। শিল্পকারখানার বহু শ্রমিককে উপহারসামগ্রী প্রদানে তুষ্ট করা হয়।’
সে সময় সেনাপতি শুজাত খান ঈদের দিন বন্ধুবান্ধবকে আপ্যায়নের জন্য সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন। দু-তিন দিন ধরে সংগীত ও নৃত্য পরিবেশনের ব্যবস্থা থাকত তাতে। এ থেকে অনুমান করে নেওয়া কঠিন নয় যে, ঈদের সঙ্গে সামাজিক-সাংস্কৃতিক বন্ধন ছিল পোক্ত। খাদ্য ও সাংস্কৃতিক উৎসব ছিল ঈদের অন্যতম আকর্ষণ।
২.
ঢাকা শহর বাংলার রাজধানী হওয়ার সময়কার ঈদের বর্ণনা তো পাওয়া গেল। পরবর্তীকালের কথা জানা যাবে আবুল মনসুর আহমদ, আনিসুজ্জামান, মাহবুব-উল-আলম চৌধুরীর কাছ থেকে। এবং দেখা যাবে, ঈদের আনন্দ আসলে কালের বিবর্তনে ম্লান হয়নি মোটেও। সংগীত যে ঈদের একটা অনুষঙ্গ ছিল, সেটাও পাওয়া যাবে পরবর্তী বর্ণনায়।
আবুল মনসুর আহমদ বলছেন, ‘বছরে দুইবার ঈদের জমাত হইত বটে, কিন্তু তাতে বড়রাই শামিল হইত। কাজেই জমাতে খুব অল্প লোক হইত। ঈদের মাঠে লোক না হইলেও বাড়ি-বাড়ি আমোদ-সামুদ হইত খুব। সাধ্যমতো লোকেরা নতুন কাপড়-চোপড় পরিয়া বেদম গান-বাজনা করিত। সারা রাত ঢোলের আওয়াজ পাওয়া যাইত। প্রায়ই বাড়ি বাড়ি ঢোল-ডগর দেখা যাইত।’
ঈদুল আজহা সম্পর্কে আনিসুজ্জামান লিখছেন, ‘মুসলমানরা ত্যাগের উৎসরূপে ঈদ-উল আজহা উদ্যাপন করে। এর উৎপত্তি হয়েছে হযরত ইব্রাহিমের সময় থেকে। আল্লাহর উদ্দেশ্যে হযরত ইব্রাহিম প্রিয় পুত্র ইসমাইলকে কোরবানীর আয়োজন করেছেন। মুসলমানরা এই মহৎ দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে। তারা প্রভাতে সুন্দর কাপড়চোপড় পরিধান করে এবং তকবীর উচ্চারণ করতে করতে ঈদগাহ ময়দানের দিকে গমন করে। সেখানে নামাজ আদায় করে এবং ভ্রাতৃত্বপূর্ণ মনোভাব নিয়ে আনন্দ প্রকাশ করে, পরস্পরকে আলিঙ্গন করে ও সম্ভাষণ জানায়। অতঃপর তারা গৃহে প্রত্যাবর্তন করে এবং তাদের সাধ্যানুসারে তারা কোনো পশু, যেমন—গরু, ছাগল, মহিশ বা উট কোরবানী করে। তারা গরীব, দুঃখী, বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে মাংস বিতরণ করে ও গৃহে ভোজের অনুষ্ঠান করে। প্রত্যেক গৃহ ভোজানুষ্ঠান ও আনন্দ স্ফুর্তিতে মুখরিত হয়ে ওঠে।’
কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য যাদের ছিল না, তারা কী করত? কেমন ছিল তাদের জীবন? আনিসুজ্জামানের কাছেই এই প্রশ্নের উত্তর পাব আমরা। তিনি লিখছেন, ‘বকরিদে আমরা প্রতি বছর কোরবানি দিতাম না—মাঝমধ্যে তা বাদ পড়ত—ভক্তির অভাবে অতোটা নয়—যতোটা সামর্থ্যর অভাবে। বড়োরা চেষ্টা করতেন পশু জবাই থেকে আমাদের আড়াল করতে। আমরা ছোটরা ততোধিক উৎসাহে ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে জবাই দেখে ফেলতাম। দেখার পর কিন্তু অনেকক্ষণ বিষাদে মন ছেয়ে যেত তবে শেষ পর্যন্ত এই বিষণ্নতা পিছনে ফেলে দেখা দিত কোরবানির গোশত খাওয়ার উৎসাহ।’
পুরোনো দিনের ঈদের আলোচনা করতে গিয়ে একুশের প্রথম কবিতার লেখক মাহবুব-উল-আলম চৌধুরী লিখেছেন, ‘কোরবানি মানে ত্যাগ। সবচেয়ে প্রিয় জিনিস আল্লাহর নামে উৎসর্গ করা। কিন্তু আজ সন্ত্রাস, খুন, রাহাজানি এবং ইসলামের নামে যে জঙ্গীবাদের উদ্ভব ঘটেছে, তার বিপরীতে যদি আমরা ক্রোধ, প্রতিহিংসা, ঈর্ষা, পরশ্রীকাতরতা, মিথ্যাচার, নিষ্ঠুরতা প্রভৃতি দুষ্ট রিপুর প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারতাম, সেটাই কি হতো না সর্বশ্রেষ্ঠ ত্যাগ, সবচেয়ে বড় কোরবানি? এই পরিস্থিতিতে যদি আমরা ঈদকে আনন্দোৎসবে পরিণত করতে চাই, তাহলে আমাদের শ্রেয়বোধকে জাগ্রত করতে হবে। বন্ধ করতে হবে অপরাধমূলক আচার-আচরণ এবং নিজের ভেতরের পশুটিকে বধ করে প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠতে হবে।’
৩.
আরেকটি তথ্য এখানে যোগ করা যায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় শুধু একটি ঈদই হয়েছিল। সেটি ছিল ঈদুল ফিতর। ২০ নভেম্বর হয়েছিল সেই ঈদ। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম ঈদটিই ছিল ঈদুল আজহা। ১৯৭২ সালের ২৭ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার বিধ্বস্ত বাংলার বুকে নেমে এসেছিল ঈদ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার আগে পাকিস্তানের জেল থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঈদের নামাজ আদায় করেছিলেন ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডে তাঁর বাড়ির কাছাকাছি অবস্থিত ধানমন্ডি ক্লাব মাঠে।
বাংলাদেশের প্রথম ঈদের অভিজ্ঞতা অনেকের কাছেই ছিল করুণ। পাকিস্তানি বর্বর ও এদেশীয় আলবদরদের বীভৎস নৃশংসতায় বহু মানুষ শহীদ হয়েছিলেন। লাখ লাখ শহীদ পরিবারের কাছে এই ঈদ কোনো তাৎপর্য নিয়ে আসেনি। স্বজন হারানোর ধাক্কা সামলানো কঠিন ছিল।
বাংলাদেশের প্রথম ঈদে দেশের রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী আউটার স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ঈদের প্রধান জামাতে অংশ নেন। এই জামাতে ইমামতি করেছিলেন মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ। তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো, ঈদের দিন সর্বত্রই ঈদের জামাতের পর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত ব্যক্তিদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়েছিল।
তথ্যসূত্র
১. ডক্টর এম এ রহিম, বাংলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস, প্রকাশক: বাংলা একাডেমি, জুন, ১৯৮২
২. এ এস এম বোরহান উদ্দীন, স্মৃতিকথায় বাংলার মুসলিম সমাজ, প্রকাশক: বাংলা একাডেমি, ফেব্রুয়ারি, ২০১৬
৩. বাংলাপিডিয়া
৪. বাশার খান, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ঈদ, প্রথম আলো, ৩১ মে, ২০১৯
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
জাহীদ রেজা নূর

বাংলার ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, ঈদসহ ধর্মীয় উৎসবগুলো বরাবরই ঘটা করে পালন করা হতো। বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করতে গেলে মীর্জা নাথানের বর্ণনার কাছে যেতে হয়।
তার আগে মীর্জা নাথান রচিত ‘বাহারিস্তান-ই-গায়েবী’ বইটি নিয়ে দু-একটি কথা বলতে হয়। বইটির লেখক বাংলার মোগল সেনাপতি আলাউদ্দীন ইসফাহানকেই মীর্জা নাথান বলে ডাকা হতো। এই বই সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে (১৬০৫-১৬২৭) বাংলার ইতিহাস পুনর্গঠনের জন্য খুবই দামি একটি উৎস। মোগল সাম্রাজ্যের অন্য সব গতানুগতিক ইতিহাস থেকে ‘বাহারিস্তান-ই-গায়েবী’ ছিল ভিন্নধর্মী। মীর্জা নাথান সমগ্র সাম্রাজ্য নিয়ে লেখেননি, লিখেছেন শুধু বাংলা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের ঘটনাবলি নিয়ে।
মীর্জা নাথানের বাবা মালিক আলী ছিলেন সুবাদার ইসলাম খানের নৌবহরের প্রধান। ১৬০৮ সালে ইসলাম খাঁর সঙ্গে যখন মালিক আলী ঢাকায় আসেন, মীর্জা নাথানও তখন ঢাকায় এসেছিলেন। তিনিও পিতার সঙ্গে রাজকীয় বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। সুবাদার ইসলাম খানের শাসনকালে তিনি মুসা খান, খাজা উসমান ও প্রতাপাদিত্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেন। শাহজাদা শাহজাহান পিতা মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বাংলায় এসেছিলেন। সে সময় মীর্জা নাথান শাহজাহানের দলে যোগ দেন। শাহজাহান বাংলা থেকে দাক্ষিণাত্যে যাওয়ার পর মীর্জা নাথান সম্পর্কে আর কিছু জানা যায় না। সম্ভবত অবসরজীবনে তিনি তাঁর বিপুলায়তন ‘বাহারিস্তান-ই-গায়েবী’ নামের মূল্যবান বইটি লিখেছিলেন।
ঈদ নিয়ে মীর্জা নাথান লিখেছেন, ‘ঈদের আনন্দ-উৎসবের সূচনা হতো নতুন চাঁদকে স্বাগত জানানোর মাধ্যমে। দিনের শেষে সন্ধ্যা সমাগমে নতুন চাঁদ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজকীয় নাকাড়া বেজে ওঠে এবং গোলন্দাজ সেনাদলের সকল আগ্নেয়াস্ত্র থেকে ক্রমাগত তোপ দাগানো হয়। রাত্রির শেষ ভাগে কামানের অগ্ন্যুদ্গিরণ শেষ হয় এবং এরপর শোনা যায় ভারী কামানের আওয়াজ। এটা ছিল দস্তুরমতো ভূমিকম্প।’
মীর্জা নাথানের এই বর্ণনা থেকেই বোঝা যায়, ঈদের আগমনে কেমন খুশির উল্লাস বয়ে যেত মুসলমানদের মনে।
ঈদের সময় স্ত্রী-পুরুষ, বালক-বালিকানির্বিশেষে প্রত্যেকেই নতুন ও ভালো কাপড় পরত। সকালেই ঈদের নামাজের স্থানে শোভাযাত্রা করে যেত। যারা অবস্থাপন্ন, তারা পথে পথে টাকা-পয়সা ও উপহারদ্রব্য ছড়িয়ে দিত। সাধারণ মুসলমান গরিবদের ভিক্ষা দিত। এই বর্ণনা পাওয়া যায় ‘নওবাহার-ই-মুর্শিদকুলী খান’ বইয়ের লেখক আজাদ হোসেন বিলগ্রামীর বর্ণনায়। এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা যাক, নবাব আলিবর্দী ভ্রাতুষ্পুত্র ও জামাতা নওয়াজিশ মুহম্মদ খান প্রিয়জনের মৃত্যুর কারণে ঈদুল আজহার দিন নিরানন্দভাবে সময় কাটাতেন। বৃদ্ধ নবাব চেষ্টা করতেন তাঁকে নতুন কাপড়-চোপড় পরাতে। কিন্তু তিনি তাতে ব্যর্থ হয়ে হারেমের বেগম ও নারীদের ঈদের আনন্দ-উৎসব উপযোগী কাপড় নিয়ে তাঁকে উৎফুল্ল করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
আবার ফিরি মীর্জা নাথানের কাছে। ঈদুল আজহা নিয়ে মীর্জা নাথান লিখেছেন, ‘নামাজান্তে খতিবের খুৎবাহ পাঠ শেষ হলে লোকেরা তাঁকে কাপড়-চোপড় ও টাকা-পয়সা উপহার দেয়। গরিব-দুঃখীদের সাহায্যের জন্য তার সম্মুখে টাকা-পয়সা ছড়িয়ে দেওয়া হয়। দুস্থ লোকদের অনেকে এর দ্বারা তাদের অভাব দূর করে এবং সুখী হয়। পরস্পরের প্রতি সম্বোধনে আকাশ-বাতাস মুখরিত হয়ে ওঠে।’
এরপর লিখেছেন, ‘কোরবানি সম্পন্ন হওয়ার পর বিরাট ভোজের ব্যবস্থা করা হয়। সুন্দর গায়ক, মোহনী নর্তকী এবং নম্র স্বভাবের গল্পকথকদের মধুর আপ্যায়নের সঙ্গে দিনরাত ভোজানুষ্ঠান চলতে থাকে। শিল্পকারখানার বহু শ্রমিককে উপহারসামগ্রী প্রদানে তুষ্ট করা হয়।’
সে সময় সেনাপতি শুজাত খান ঈদের দিন বন্ধুবান্ধবকে আপ্যায়নের জন্য সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন। দু-তিন দিন ধরে সংগীত ও নৃত্য পরিবেশনের ব্যবস্থা থাকত তাতে। এ থেকে অনুমান করে নেওয়া কঠিন নয় যে, ঈদের সঙ্গে সামাজিক-সাংস্কৃতিক বন্ধন ছিল পোক্ত। খাদ্য ও সাংস্কৃতিক উৎসব ছিল ঈদের অন্যতম আকর্ষণ।
২.
ঢাকা শহর বাংলার রাজধানী হওয়ার সময়কার ঈদের বর্ণনা তো পাওয়া গেল। পরবর্তীকালের কথা জানা যাবে আবুল মনসুর আহমদ, আনিসুজ্জামান, মাহবুব-উল-আলম চৌধুরীর কাছ থেকে। এবং দেখা যাবে, ঈদের আনন্দ আসলে কালের বিবর্তনে ম্লান হয়নি মোটেও। সংগীত যে ঈদের একটা অনুষঙ্গ ছিল, সেটাও পাওয়া যাবে পরবর্তী বর্ণনায়।
আবুল মনসুর আহমদ বলছেন, ‘বছরে দুইবার ঈদের জমাত হইত বটে, কিন্তু তাতে বড়রাই শামিল হইত। কাজেই জমাতে খুব অল্প লোক হইত। ঈদের মাঠে লোক না হইলেও বাড়ি-বাড়ি আমোদ-সামুদ হইত খুব। সাধ্যমতো লোকেরা নতুন কাপড়-চোপড় পরিয়া বেদম গান-বাজনা করিত। সারা রাত ঢোলের আওয়াজ পাওয়া যাইত। প্রায়ই বাড়ি বাড়ি ঢোল-ডগর দেখা যাইত।’
ঈদুল আজহা সম্পর্কে আনিসুজ্জামান লিখছেন, ‘মুসলমানরা ত্যাগের উৎসরূপে ঈদ-উল আজহা উদ্যাপন করে। এর উৎপত্তি হয়েছে হযরত ইব্রাহিমের সময় থেকে। আল্লাহর উদ্দেশ্যে হযরত ইব্রাহিম প্রিয় পুত্র ইসমাইলকে কোরবানীর আয়োজন করেছেন। মুসলমানরা এই মহৎ দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে। তারা প্রভাতে সুন্দর কাপড়চোপড় পরিধান করে এবং তকবীর উচ্চারণ করতে করতে ঈদগাহ ময়দানের দিকে গমন করে। সেখানে নামাজ আদায় করে এবং ভ্রাতৃত্বপূর্ণ মনোভাব নিয়ে আনন্দ প্রকাশ করে, পরস্পরকে আলিঙ্গন করে ও সম্ভাষণ জানায়। অতঃপর তারা গৃহে প্রত্যাবর্তন করে এবং তাদের সাধ্যানুসারে তারা কোনো পশু, যেমন—গরু, ছাগল, মহিশ বা উট কোরবানী করে। তারা গরীব, দুঃখী, বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে মাংস বিতরণ করে ও গৃহে ভোজের অনুষ্ঠান করে। প্রত্যেক গৃহ ভোজানুষ্ঠান ও আনন্দ স্ফুর্তিতে মুখরিত হয়ে ওঠে।’
কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য যাদের ছিল না, তারা কী করত? কেমন ছিল তাদের জীবন? আনিসুজ্জামানের কাছেই এই প্রশ্নের উত্তর পাব আমরা। তিনি লিখছেন, ‘বকরিদে আমরা প্রতি বছর কোরবানি দিতাম না—মাঝমধ্যে তা বাদ পড়ত—ভক্তির অভাবে অতোটা নয়—যতোটা সামর্থ্যর অভাবে। বড়োরা চেষ্টা করতেন পশু জবাই থেকে আমাদের আড়াল করতে। আমরা ছোটরা ততোধিক উৎসাহে ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে জবাই দেখে ফেলতাম। দেখার পর কিন্তু অনেকক্ষণ বিষাদে মন ছেয়ে যেত তবে শেষ পর্যন্ত এই বিষণ্নতা পিছনে ফেলে দেখা দিত কোরবানির গোশত খাওয়ার উৎসাহ।’
পুরোনো দিনের ঈদের আলোচনা করতে গিয়ে একুশের প্রথম কবিতার লেখক মাহবুব-উল-আলম চৌধুরী লিখেছেন, ‘কোরবানি মানে ত্যাগ। সবচেয়ে প্রিয় জিনিস আল্লাহর নামে উৎসর্গ করা। কিন্তু আজ সন্ত্রাস, খুন, রাহাজানি এবং ইসলামের নামে যে জঙ্গীবাদের উদ্ভব ঘটেছে, তার বিপরীতে যদি আমরা ক্রোধ, প্রতিহিংসা, ঈর্ষা, পরশ্রীকাতরতা, মিথ্যাচার, নিষ্ঠুরতা প্রভৃতি দুষ্ট রিপুর প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারতাম, সেটাই কি হতো না সর্বশ্রেষ্ঠ ত্যাগ, সবচেয়ে বড় কোরবানি? এই পরিস্থিতিতে যদি আমরা ঈদকে আনন্দোৎসবে পরিণত করতে চাই, তাহলে আমাদের শ্রেয়বোধকে জাগ্রত করতে হবে। বন্ধ করতে হবে অপরাধমূলক আচার-আচরণ এবং নিজের ভেতরের পশুটিকে বধ করে প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠতে হবে।’
৩.
আরেকটি তথ্য এখানে যোগ করা যায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় শুধু একটি ঈদই হয়েছিল। সেটি ছিল ঈদুল ফিতর। ২০ নভেম্বর হয়েছিল সেই ঈদ। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম ঈদটিই ছিল ঈদুল আজহা। ১৯৭২ সালের ২৭ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার বিধ্বস্ত বাংলার বুকে নেমে এসেছিল ঈদ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার আগে পাকিস্তানের জেল থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঈদের নামাজ আদায় করেছিলেন ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডে তাঁর বাড়ির কাছাকাছি অবস্থিত ধানমন্ডি ক্লাব মাঠে।
বাংলাদেশের প্রথম ঈদের অভিজ্ঞতা অনেকের কাছেই ছিল করুণ। পাকিস্তানি বর্বর ও এদেশীয় আলবদরদের বীভৎস নৃশংসতায় বহু মানুষ শহীদ হয়েছিলেন। লাখ লাখ শহীদ পরিবারের কাছে এই ঈদ কোনো তাৎপর্য নিয়ে আসেনি। স্বজন হারানোর ধাক্কা সামলানো কঠিন ছিল।
বাংলাদেশের প্রথম ঈদে দেশের রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী আউটার স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ঈদের প্রধান জামাতে অংশ নেন। এই জামাতে ইমামতি করেছিলেন মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ। তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো, ঈদের দিন সর্বত্রই ঈদের জামাতের পর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত ব্যক্তিদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়েছিল।
তথ্যসূত্র
১. ডক্টর এম এ রহিম, বাংলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস, প্রকাশক: বাংলা একাডেমি, জুন, ১৯৮২
২. এ এস এম বোরহান উদ্দীন, স্মৃতিকথায় বাংলার মুসলিম সমাজ, প্রকাশক: বাংলা একাডেমি, ফেব্রুয়ারি, ২০১৬
৩. বাংলাপিডিয়া
৪. বাশার খান, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ঈদ, প্রথম আলো, ৩১ মে, ২০১৯
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

বাংলার ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, ঈদসহ ধর্মীয় উৎসবগুলো বরাবরই ঘটা করে পালন করা হতো। বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করতে গেলে মীর্জা নাথানের বর্ণনার কাছে যেতে হয়।
তার আগে মীর্জা নাথান রচিত ‘বাহারিস্তান-ই-গায়েবী’ বইটি নিয়ে দু-একটি কথা বলতে হয়। বইটির লেখক বাংলার মোগল সেনাপতি আলাউদ্দীন ইসফাহানকেই মীর্জা নাথান বলে ডাকা হতো। এই বই সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে (১৬০৫-১৬২৭) বাংলার ইতিহাস পুনর্গঠনের জন্য খুবই দামি একটি উৎস। মোগল সাম্রাজ্যের অন্য সব গতানুগতিক ইতিহাস থেকে ‘বাহারিস্তান-ই-গায়েবী’ ছিল ভিন্নধর্মী। মীর্জা নাথান সমগ্র সাম্রাজ্য নিয়ে লেখেননি, লিখেছেন শুধু বাংলা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের ঘটনাবলি নিয়ে।
মীর্জা নাথানের বাবা মালিক আলী ছিলেন সুবাদার ইসলাম খানের নৌবহরের প্রধান। ১৬০৮ সালে ইসলাম খাঁর সঙ্গে যখন মালিক আলী ঢাকায় আসেন, মীর্জা নাথানও তখন ঢাকায় এসেছিলেন। তিনিও পিতার সঙ্গে রাজকীয় বাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। সুবাদার ইসলাম খানের শাসনকালে তিনি মুসা খান, খাজা উসমান ও প্রতাপাদিত্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেন। শাহজাদা শাহজাহান পিতা মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বাংলায় এসেছিলেন। সে সময় মীর্জা নাথান শাহজাহানের দলে যোগ দেন। শাহজাহান বাংলা থেকে দাক্ষিণাত্যে যাওয়ার পর মীর্জা নাথান সম্পর্কে আর কিছু জানা যায় না। সম্ভবত অবসরজীবনে তিনি তাঁর বিপুলায়তন ‘বাহারিস্তান-ই-গায়েবী’ নামের মূল্যবান বইটি লিখেছিলেন।
ঈদ নিয়ে মীর্জা নাথান লিখেছেন, ‘ঈদের আনন্দ-উৎসবের সূচনা হতো নতুন চাঁদকে স্বাগত জানানোর মাধ্যমে। দিনের শেষে সন্ধ্যা সমাগমে নতুন চাঁদ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজকীয় নাকাড়া বেজে ওঠে এবং গোলন্দাজ সেনাদলের সকল আগ্নেয়াস্ত্র থেকে ক্রমাগত তোপ দাগানো হয়। রাত্রির শেষ ভাগে কামানের অগ্ন্যুদ্গিরণ শেষ হয় এবং এরপর শোনা যায় ভারী কামানের আওয়াজ। এটা ছিল দস্তুরমতো ভূমিকম্প।’
মীর্জা নাথানের এই বর্ণনা থেকেই বোঝা যায়, ঈদের আগমনে কেমন খুশির উল্লাস বয়ে যেত মুসলমানদের মনে।
ঈদের সময় স্ত্রী-পুরুষ, বালক-বালিকানির্বিশেষে প্রত্যেকেই নতুন ও ভালো কাপড় পরত। সকালেই ঈদের নামাজের স্থানে শোভাযাত্রা করে যেত। যারা অবস্থাপন্ন, তারা পথে পথে টাকা-পয়সা ও উপহারদ্রব্য ছড়িয়ে দিত। সাধারণ মুসলমান গরিবদের ভিক্ষা দিত। এই বর্ণনা পাওয়া যায় ‘নওবাহার-ই-মুর্শিদকুলী খান’ বইয়ের লেখক আজাদ হোসেন বিলগ্রামীর বর্ণনায়। এখানে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা যাক, নবাব আলিবর্দী ভ্রাতুষ্পুত্র ও জামাতা নওয়াজিশ মুহম্মদ খান প্রিয়জনের মৃত্যুর কারণে ঈদুল আজহার দিন নিরানন্দভাবে সময় কাটাতেন। বৃদ্ধ নবাব চেষ্টা করতেন তাঁকে নতুন কাপড়-চোপড় পরাতে। কিন্তু তিনি তাতে ব্যর্থ হয়ে হারেমের বেগম ও নারীদের ঈদের আনন্দ-উৎসব উপযোগী কাপড় নিয়ে তাঁকে উৎফুল্ল করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
আবার ফিরি মীর্জা নাথানের কাছে। ঈদুল আজহা নিয়ে মীর্জা নাথান লিখেছেন, ‘নামাজান্তে খতিবের খুৎবাহ পাঠ শেষ হলে লোকেরা তাঁকে কাপড়-চোপড় ও টাকা-পয়সা উপহার দেয়। গরিব-দুঃখীদের সাহায্যের জন্য তার সম্মুখে টাকা-পয়সা ছড়িয়ে দেওয়া হয়। দুস্থ লোকদের অনেকে এর দ্বারা তাদের অভাব দূর করে এবং সুখী হয়। পরস্পরের প্রতি সম্বোধনে আকাশ-বাতাস মুখরিত হয়ে ওঠে।’
এরপর লিখেছেন, ‘কোরবানি সম্পন্ন হওয়ার পর বিরাট ভোজের ব্যবস্থা করা হয়। সুন্দর গায়ক, মোহনী নর্তকী এবং নম্র স্বভাবের গল্পকথকদের মধুর আপ্যায়নের সঙ্গে দিনরাত ভোজানুষ্ঠান চলতে থাকে। শিল্পকারখানার বহু শ্রমিককে উপহারসামগ্রী প্রদানে তুষ্ট করা হয়।’
সে সময় সেনাপতি শুজাত খান ঈদের দিন বন্ধুবান্ধবকে আপ্যায়নের জন্য সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন। দু-তিন দিন ধরে সংগীত ও নৃত্য পরিবেশনের ব্যবস্থা থাকত তাতে। এ থেকে অনুমান করে নেওয়া কঠিন নয় যে, ঈদের সঙ্গে সামাজিক-সাংস্কৃতিক বন্ধন ছিল পোক্ত। খাদ্য ও সাংস্কৃতিক উৎসব ছিল ঈদের অন্যতম আকর্ষণ।
২.
ঢাকা শহর বাংলার রাজধানী হওয়ার সময়কার ঈদের বর্ণনা তো পাওয়া গেল। পরবর্তীকালের কথা জানা যাবে আবুল মনসুর আহমদ, আনিসুজ্জামান, মাহবুব-উল-আলম চৌধুরীর কাছ থেকে। এবং দেখা যাবে, ঈদের আনন্দ আসলে কালের বিবর্তনে ম্লান হয়নি মোটেও। সংগীত যে ঈদের একটা অনুষঙ্গ ছিল, সেটাও পাওয়া যাবে পরবর্তী বর্ণনায়।
আবুল মনসুর আহমদ বলছেন, ‘বছরে দুইবার ঈদের জমাত হইত বটে, কিন্তু তাতে বড়রাই শামিল হইত। কাজেই জমাতে খুব অল্প লোক হইত। ঈদের মাঠে লোক না হইলেও বাড়ি-বাড়ি আমোদ-সামুদ হইত খুব। সাধ্যমতো লোকেরা নতুন কাপড়-চোপড় পরিয়া বেদম গান-বাজনা করিত। সারা রাত ঢোলের আওয়াজ পাওয়া যাইত। প্রায়ই বাড়ি বাড়ি ঢোল-ডগর দেখা যাইত।’
ঈদুল আজহা সম্পর্কে আনিসুজ্জামান লিখছেন, ‘মুসলমানরা ত্যাগের উৎসরূপে ঈদ-উল আজহা উদ্যাপন করে। এর উৎপত্তি হয়েছে হযরত ইব্রাহিমের সময় থেকে। আল্লাহর উদ্দেশ্যে হযরত ইব্রাহিম প্রিয় পুত্র ইসমাইলকে কোরবানীর আয়োজন করেছেন। মুসলমানরা এই মহৎ দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে। তারা প্রভাতে সুন্দর কাপড়চোপড় পরিধান করে এবং তকবীর উচ্চারণ করতে করতে ঈদগাহ ময়দানের দিকে গমন করে। সেখানে নামাজ আদায় করে এবং ভ্রাতৃত্বপূর্ণ মনোভাব নিয়ে আনন্দ প্রকাশ করে, পরস্পরকে আলিঙ্গন করে ও সম্ভাষণ জানায়। অতঃপর তারা গৃহে প্রত্যাবর্তন করে এবং তাদের সাধ্যানুসারে তারা কোনো পশু, যেমন—গরু, ছাগল, মহিশ বা উট কোরবানী করে। তারা গরীব, দুঃখী, বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে মাংস বিতরণ করে ও গৃহে ভোজের অনুষ্ঠান করে। প্রত্যেক গৃহ ভোজানুষ্ঠান ও আনন্দ স্ফুর্তিতে মুখরিত হয়ে ওঠে।’
কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য যাদের ছিল না, তারা কী করত? কেমন ছিল তাদের জীবন? আনিসুজ্জামানের কাছেই এই প্রশ্নের উত্তর পাব আমরা। তিনি লিখছেন, ‘বকরিদে আমরা প্রতি বছর কোরবানি দিতাম না—মাঝমধ্যে তা বাদ পড়ত—ভক্তির অভাবে অতোটা নয়—যতোটা সামর্থ্যর অভাবে। বড়োরা চেষ্টা করতেন পশু জবাই থেকে আমাদের আড়াল করতে। আমরা ছোটরা ততোধিক উৎসাহে ফাঁকফোকর দিয়ে বেরিয়ে জবাই দেখে ফেলতাম। দেখার পর কিন্তু অনেকক্ষণ বিষাদে মন ছেয়ে যেত তবে শেষ পর্যন্ত এই বিষণ্নতা পিছনে ফেলে দেখা দিত কোরবানির গোশত খাওয়ার উৎসাহ।’
পুরোনো দিনের ঈদের আলোচনা করতে গিয়ে একুশের প্রথম কবিতার লেখক মাহবুব-উল-আলম চৌধুরী লিখেছেন, ‘কোরবানি মানে ত্যাগ। সবচেয়ে প্রিয় জিনিস আল্লাহর নামে উৎসর্গ করা। কিন্তু আজ সন্ত্রাস, খুন, রাহাজানি এবং ইসলামের নামে যে জঙ্গীবাদের উদ্ভব ঘটেছে, তার বিপরীতে যদি আমরা ক্রোধ, প্রতিহিংসা, ঈর্ষা, পরশ্রীকাতরতা, মিথ্যাচার, নিষ্ঠুরতা প্রভৃতি দুষ্ট রিপুর প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারতাম, সেটাই কি হতো না সর্বশ্রেষ্ঠ ত্যাগ, সবচেয়ে বড় কোরবানি? এই পরিস্থিতিতে যদি আমরা ঈদকে আনন্দোৎসবে পরিণত করতে চাই, তাহলে আমাদের শ্রেয়বোধকে জাগ্রত করতে হবে। বন্ধ করতে হবে অপরাধমূলক আচার-আচরণ এবং নিজের ভেতরের পশুটিকে বধ করে প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠতে হবে।’
৩.
আরেকটি তথ্য এখানে যোগ করা যায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় শুধু একটি ঈদই হয়েছিল। সেটি ছিল ঈদুল ফিতর। ২০ নভেম্বর হয়েছিল সেই ঈদ। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম ঈদটিই ছিল ঈদুল আজহা। ১৯৭২ সালের ২৭ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার বিধ্বস্ত বাংলার বুকে নেমে এসেছিল ঈদ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার আগে পাকিস্তানের জেল থেকে মুক্তি পেয়ে দেশে ফিরেছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঈদের নামাজ আদায় করেছিলেন ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডে তাঁর বাড়ির কাছাকাছি অবস্থিত ধানমন্ডি ক্লাব মাঠে।
বাংলাদেশের প্রথম ঈদের অভিজ্ঞতা অনেকের কাছেই ছিল করুণ। পাকিস্তানি বর্বর ও এদেশীয় আলবদরদের বীভৎস নৃশংসতায় বহু মানুষ শহীদ হয়েছিলেন। লাখ লাখ শহীদ পরিবারের কাছে এই ঈদ কোনো তাৎপর্য নিয়ে আসেনি। স্বজন হারানোর ধাক্কা সামলানো কঠিন ছিল।
বাংলাদেশের প্রথম ঈদে দেশের রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরী আউটার স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ঈদের প্রধান জামাতে অংশ নেন। এই জামাতে ইমামতি করেছিলেন মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ। তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হলো, ঈদের দিন সর্বত্রই ঈদের জামাতের পর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত ব্যক্তিদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়েছিল।
তথ্যসূত্র
১. ডক্টর এম এ রহিম, বাংলার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস, প্রকাশক: বাংলা একাডেমি, জুন, ১৯৮২
২. এ এস এম বোরহান উদ্দীন, স্মৃতিকথায় বাংলার মুসলিম সমাজ, প্রকাশক: বাংলা একাডেমি, ফেব্রুয়ারি, ২০১৬
৩. বাংলাপিডিয়া
৪. বাশার খান, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ঈদ, প্রথম আলো, ৩১ মে, ২০১৯
লেখক: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

বাংলার ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, ঈদসহ ধর্মীয় উৎসবগুলো বরাবরই ঘটা করে পালন করা হতো। বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করতে গেলে মীর্জা নাথানের বর্ণনার কাছে যেতে হয়।
১৬ জুন ২০২৪
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

বাংলার ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, ঈদসহ ধর্মীয় উৎসবগুলো বরাবরই ঘটা করে পালন করা হতো। বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করতে গেলে মীর্জা নাথানের বর্ণনার কাছে যেতে হয়।
১৬ জুন ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

বাংলার ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, ঈদসহ ধর্মীয় উৎসবগুলো বরাবরই ঘটা করে পালন করা হতো। বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করতে গেলে মীর্জা নাথানের বর্ণনার কাছে যেতে হয়।
১৬ জুন ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

বাংলার ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, ঈদসহ ধর্মীয় উৎসবগুলো বরাবরই ঘটা করে পালন করা হতো। বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করতে গেলে মীর্জা নাথানের বর্ণনার কাছে যেতে হয়।
১৬ জুন ২০২৪
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
০৬ অক্টোবর ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫