Ajker Patrika

ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ভাটায়

আনোয়ার সাদাৎ, মধুপুর
আপডেট : ০২ জানুয়ারি ২০২২, ১৭: ০৯
ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ভাটায়

প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাতে ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নিচ্ছে প্রভাবশালী একটি মহল। তারা বিভিন্ন এলাকা থেকে সাত-আট ফুট গর্ত করে মাটি কেটে ইটভাটা ও সিরামিক কোম্পানিতে সরবরাহ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফসলি জমি, পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ রাস্তা। প্রভাবশালীদের ভয়ে প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছেন না স্থানীয় বাসিন্দারা। এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে মধুপুর উপজেলার মির্জাবাড়ী ইউনিয়নের ব্রাহ্মণবাড়ী ও ভবানীটেকি এলাকায়।

জানা গেছে, উপজেলার হাওদা বিলের আশপাশের এলাকাগুলোতে সিরামিক পণ্য তৈরির উপযোগী বিপুল পরিমাণ সাদা মাটি রয়েছে। সম্প্রতি মির্জাবাড়ী ইউনিয়নের ভবানিটেকি, ব্রাহ্মণবাড়ী, খৈলাকুড়াসহ বেশ কিছু এলাকার মাটি লুটেরাদের নজরে পড়েছে। তারা সংঘবদ্ধ হয়ে কোম্পানির লোকজনের সঙ্গে চুক্তি করে রাতে মাটি কেটে পাচার করছে। এতে পরিবেশ বিপর্যয় হচ্ছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, ভবানীটেকি মৌজার খৈলাকুড়া গ্রামের ফসলি জমিগুলো কেটে গভীর গর্ত করা হয়েছে। কোথাও লালচে মাটি আবার কোথাও সাদা মাটি। সাদা মাটিগুলো বেশি মূল্যে সিরামিক কোম্পানির কাছে এবং লাল মাটি ইটভাটায় সরবরাহ করা হচ্ছে। এলাকাবাসীর বাধার কারণে দিনের বেলায় কাজ বন্ধ রাখলেও রাতের বেলায় মাটি পাচার করা হচ্ছে। প্রতি রাতে ১৫-২০ ট্রাক মাটি পাচার হয় বলে জানা গেছে। গ্রামের রাস্তায় ভারী যানবাহন চলাচলের স্পষ্ট ছাপ রয়েছে। মাঠে রাখা রয়েছে মাটি কাটার যন্ত্র (ভেকু মেশিন)। তবে খোঁজ করেও চালককে পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিস্তব্ধ গ্রাম খৈলাকুড়া চঞ্চল হয়ে ওঠে। ওই এলাকার ফাঁকা মাঠ ট্রাকস্ট্যান্ডে পরিণত হয়। মিনিট্রাক, ড্রামট্রাক ও বিশালাকারের টাটা ট্রাক ভরে রাতভর মাটি পাচার চলতে থাকে। ভোর হলেই সব হয়ে যায় ফাঁকা। পাচারকারীদের ভয়ে মুখ খুলতে সাহস দেখান না গ্রামবাসী।

খৈলাকুড়া ইউপির সাবেক সদস্য আরশেদ আলী বলেন, মধুপুরের মির্জাবাড়ীর বিভিন্ন এলাকা থেকে মাটি পাচার হয়ে থাকে। কেউ ইটভাটায় মাটি পাঠায়, কেউ পাঠায় কোম্পানিতে। প্রতি ট্রাক মাটি সাত থেকে আট হাজার টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। আর ইটভাটায় ট্রাকভেদে ৭০০ থেকে ১২০০ টাকায় মাটি বিক্রি করা হয়।

মির্জাবাড়ী ইউপির নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ও মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সাদিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত মঙ্গলবার রাতে আমার প্রতিনিধি পাঠিয়েছিলাম খৈলাকুড়া এলাকায়। রাত ১২টার দিকে ২০-২২টি ট্রাক দাঁড় করানো ছিল। এগুলোতে পর্যায়ক্রমে মাটি ভরে পাচার করতে দেখেছে আমার লোকজন।’

সাদিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘সাদা মাটি পেয়ে মাটি পাচারকারীরা সাত-আট ফুট গভীর গর্ত করে মাটি কাটা হচ্ছে। এভাবে মাটি পাচারের ফলে পাশের জমির মালিকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। বর্ষা মৌসুমে ফসলি জমি ভেঙে গর্তে মিশে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া ভারী যানবাহন চলাচলের ফলে গ্রামীণ সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। আমি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মহলকে অবহিত করব।’

এ বিষয়ে মধুপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীমা ইয়াসমিন বলেন, ‘ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির মাটি কেটে বিক্রি করলে আমার তেমন কিছু করার থাকে না। তবে ক্ষতিগ্রস্ত ভূমির মালিকেরা সুনির্দিষ্ট করে অভিযোগ করলে আমি তাঁদের ডেকে আলোচনা করতে পারি। যদি খাস জমির মাটি সরবরাহ করা হয় তাহলে আমি বিধি অনুসারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত