Ajker Patrika

শিশুর চোখ সুরক্ষিত রাখতে

ডা. মো. আরমান বিন আজিজ  
আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০২২, ১২: ৩৬
শিশুর চোখ সুরক্ষিত রাখতে

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৬ কোটি ৪০ লাখ শিশু রয়েছে। তাদের মধ্যে ৪৮ হাজার শিশু অন্ধ এবং ১৩ লাখ শিশু দৃষ্টি সমস্যায় ভুগছে। আরও ১ লাখ ৫৩ হাজার ৬০০ শিশু ক্ষীণদৃষ্টি সমস্যায় আক্রান্ত; যাদের মধ্যে ৭৮ হাজার ৩৩৬ জনের সমস্যাকে এড়ানো সম্ভব ছিল। দৃষ্টিহীনতা এবং দৃষ্টি সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে এই শিশুরা সামাজিক জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয় এবং বড় হয়ে কর্মজীবনেও প্রবেশ করতে পারে না।

গর্ভাবস্থায় মায়ের যথাযথ পুষ্টির অভাব, স্বাস্থ্যগত জটিলতা, ভারী কাজ করা, রোগাক্রান্ত হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে ৩৫ সপ্তাহের আগেই শিশু ভূমিষ্ঠ হতে পারে। এদের অপরিণত নবজাতক বলা হয়। অপরিণত নবজাতকের শারীরিক গঠন সম্পূর্ণ হয় না। ৩৫ সপ্তাহের আগে ভূমিষ্ঠ শিশু বা অপরিণত নবজাতকের মৃত্যুর ঝুঁকি যেমন বেশি, তেমনি তার অন্ধ হওয়ার আশঙ্কাও বেশি। গর্ভবতী ও প্রসূতি মাকে যথাযথ পুষ্টিকর খাদ্য দিলে এবং তাঁর প্রয়োজনীয় যত্ন ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে পারলে অপরিণত শিশুর জন্মের আশঙ্কা অনেকাংশেই কমে যায়। চিকিৎসাসেবায় উন্নতির ফলে অপরিণত নবজাতকের মৃত্যুর আশঙ্কা কমেছে। কিন্তু তাদের রেটিনায় ত্রুটি থেকে যাওয়ায় বেড়েছে অন্ধত্বের আশঙ্কা।

শিশুর দৃষ্টিশক্তি হারানোর কারণ
শিশুদের অন্ধত্বের অন্যতম কারণ রেটিনোপ্যাথি অব প্রিম্যাচুরিটি বা আরওপি। যেসব শিশু নির্দিষ্ট সময়ের আগে ভূমিষ্ঠ হয়, তাদের মধ্যে আরওপির আশঙ্কা বেশি। অপরিণত নবজাতক ও দুই কেজি বা এর কম ওজনের নবজাতকেরা আরওপি ঝুঁকির মধ্যে থাকে। জন্মের ২০ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে চোখের রেটিনা স্ক্যানিংসহ দ্রুত চিকিৎসা দিতে পারলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। আর যদি তা না করা হয়, তাহলে এ ধরনের শিশুর জন্মের ছয় মাসের মধ্যে অন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। মা-বাবা তো বটেই, শিশু চিকিৎসকদেরও অনেকের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে।

শিশুর জন্মের সময় বা যেকোনো বয়সেই চোখে ছানি পড়তে পারে। চোখের মণিতে ছানি বা সাদা পর্দা বা দাগ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসককে দেখাতে হবে। অনেক শিশুর চোখ কিছুটা বাঁকা বা ট্যারা থাকে। ট্যারা চোখের চিকিৎসা না হলে ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি কমতে থাকে এবং এক সময় চোখ অন্ধ হয়ে যেতে পারে। এ জন্য ট্যারা চোখের উপযুক্ত চিকিৎসা করতে হবে।

শিশুদের চোখে অনেক সময় আঘাত লাগে। এমনকি ধানগাছের ধারালো পাতা দিয়েও চোখ কেটে যেতে পারে। শিশুর চোখে যেকোনো রকম আঘাত লাগলে তাকে দ্রুত চক্ষু চিকিৎসকের কাছে নেওয়া দরকার।

অপরিণত বয়সের খিঁচুনি বা এপিলেপসি থেকে শিশুর মস্তিষ্কের বৃদ্ধি ব্যাহত, মানসিক বৈকল্য ও শারীরিক বিকলাঙ্গ, এমনকি দৃষ্টিহীনতা দেখা দিতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দুই থেকে তিন বছরের আগে এ ধরনের অবস্থার লক্ষণ প্রকাশ পায় না। এ জন্য নিউরোলজিস্ট, পেডিয়াট্রিশিয়ানদের যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ এবং তাঁদের মানোন্নয়নের পাশাপাশি অভিভাবক মহলেরও জরুরি সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। 

শিশুর অন্ধত্ব প্রতিরোধে করণীয়
বাড়ন্ত শিশুর জন্য ভিটামিন এ ক্যাপসুল এবং সবুজ ও রঙিন শাকসবজি, ছোট মাছ, ডিম ও হলুদ ফলমূল খাওয়ানো প্রয়োজন। শিশুর জন্মের প্রথম বছরে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির আওতায় প্রয়োজনীয় সব টিকা দিয়ে নিতে হবে। চোখের কোনো সমস্যায় হাতুড়ে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া যাবে না এবং তাঁদের চিকিৎসা নেওয়া যাবে না। এগুলো চোখের জন্য গুরুতর ক্ষতিকর।

শিশুর জন্মের তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে চোখ পরীক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করে বহু শিশুকে অন্ধত্ব থেকে রক্ষা করা সম্ভব। 
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বারডেম, ইস্পাহানি ইসলামিয়া চক্ষু ইনস্টিটিউট এবং চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণকেন্দ্রসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে নবজাতকের চোখ স্ক্যানিংয়ের ব্যবস্থা রয়েছে।

ডা. মো. আরমান বিন আজিজ, কনসালট্যান্ট, আঞ্জুমান ভিশন কেয়ার, চট্টগ্রাম

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত