কারওয়ান বাজার পেরোলেই সবজির দাম দ্বিগুণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০১ অক্টোবর ২০২২, ০৮: ৩৮
Thumbnail image

কারওয়ান বাজারে এক কেজি বেগুন পাইকারি দরে বিক্রি হয় ৪০ টাকায়, আর খুচরা ৪৫ টাকায়। এই বেগুনই রাজধানীর হাতিরপুল বাজারে ১০০ টাকা, পলাশী বাজারে ৯০ টাকা এবং কেল্লার মোড় বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। শুধু বেগুন নয়, সব ধরনের সবজিই রাজধানীর অন্যান্য বাজারে বেশি দামে বিক্রি হয়। গতকাল শুক্রবার সরেজমিনে এমন চিত্র দেখা গেছে।

রাজধানীর পাইকারি কাঁচাবাজারগুলোর মধ্যে অন্যতম কারওয়ান বাজার। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা কাঁচা পণ্য এখান থেকে খুচরা বিক্রেতারা সংগ্রহ করেন ভোরে। আর সকালে বিক্রি করেন রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে।

ক্রেতারা বলছেন, খুচরা বিক্রেতাদের হাঁকানো দামের সঙ্গে পত্রিকা বা টিভিতে দেখা দামের কোনো মিল নেই। সকালে পত্রিকায় বাজারদর দেখে বাজারে এসে দাম শুনে হতভম্ব হয়ে যেতে হয়। দাম বাড়িয়ে যাঁরা কারসাজি করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

হারুনুর রশিদ। সরকারি চাকরি করেন। গতকাল সকালে হাতিরপুল বাজারে তাঁর সঙ্গে দেখা। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘৫০-৬০ টাকার নিচে এখানে কোনো সবজি নাই। রাজধানীর অন্যান্য বাজারের তুলনায় এ বাজারে সবকিছুর গলাকাটা দাম। সাংবাদিকেরা গণমাধ্যমে কারওয়ান বাজারে দেখা দাম লিখে দেন। বাস্তবে অন্য বাজারগুলোতে এ দ্বিগুণের বেশি দামে আমাদের সবজি কিনতে হয়।’

পলাশী বাজারে আরেক ক্রেতা তসলিম হোসেন বলেন, ‘বিক্রেতারা যেমন ইচ্ছা দাম আদায় করছেন। আমরা তো বাধ্য হয়ে কিনছি। কিন্তু বাজার নিয়ন্ত্রণ করার নানা কর্তৃপক্ষ থাকলেও এসব দেখার কেউ নেই।’

খুচরা বিক্রেতারা বলেন, ‘সবজি পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজারে আনতে গাড়িভাড়া, লেবার খরচ, পলিথিনের ব্যাগ কেনার খরচ, জায়গা ভাড়া, বিদ্যুৎ বিলসহ আরও অনেক খরচ থাকে। এসব খরচ তুলে লাভ করতে হলে বেশি দামে বিক্রি করা ছাড়া উপায় নাই।’

রাজধানীর কেল্লার মোড় কাঁচাবাজারের খুচরা ব্যবসায়ী রেজাউল করিম বলেন, ‘সবাই শুধু বলে আমরা বেশি দাম রাখছি। কিন্তু আমাদের যেসব অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে, এগুলো তো সবজির দামের সঙ্গেই রাখতে হবে। নইলে ব্যবসা করব কীভাবে। আপনারা শুধু পাইকারি বাজারের দামই দেখেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘সারা রাত এক-দুজন লোক কারওয়ান বাজারে ঘুরে ঘুরে সবজি কেনেন, তাঁদের হাজিরা দুই হাজার টাকা, লেবার খরচ ৫০০-৬০০ টাকা, সেখানে সবজি রাখার জায়গার ভাড়া ১৫০ টাকা, সবজি বাজার পর্যন্ত আনতে ভ্যান ভাড়া ৮০০ টাকা লাগে। এ ছাড়া সারা দিনের পলিথিন খরচ ৩০০ টাকা, দোকান ভাড়া ৩৫০ টাকা, বিদ্যুৎ বিল ৫০ টাকা, পানি ও ঝাড়ুদারের খরচ ৭০ টাকা, দোকান কর্মচারীর বেতন ৫০০ টাকা দিতে হয়।’

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘আমাদের এখানে বাজার ব্যবস্থাপনা বলতে আসলে কিছু নেই। সার্বিক বাজার ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজাতে না পারলে ভোক্তারা এভাবে ঠকেই যাবেন। আমাদের বাজার ব্যবস্থাপনা নীতিমালার মাধ্যমে পাইকারি পর্যায়ে কত শতাংশ ও খুচরা বিক্রেতারা কত শতাংশ লাভ করবেন, তা ঠিক করে দিতে হবে। এ বিষয়ে তদারকি থাকতে হবে। না হলে ব্যবসায়ীরা ভোক্তার পকেট কাটতেই থাকবেন।’ 
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের অফিস প্রধান আবদুল জব্বার মণ্ডল বলেন, ‘বাজারে পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে প্রতিদিন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বাজার তদারকি করছেন। চালের বাজার থেকে শুরু করে ভোজ্যতেলের বাজার এমনকি ডিমের বাজারে অস্থিরতা দূর করতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। আমরা সবজির বাজারেও বিশেষ অভিযান পরিচালনা করব। অসাধু ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত