Ajker Patrika

স্বর্ণপদক আনা ছেলেটিকে নিয়ে যুদ্ধ করছেন মা

অর্চি হক, ঢাকা
স্বর্ণপদক আনা ছেলেটিকে নিয়ে যুদ্ধ করছেন মা

‘ওর ক্লাসের সবাইর ল্যাপটপ আছে। ওরই শুধু নাই। ল্যাপটপ নাই দেইখা স্কলারশিপও পায় নাই ও।’ বলছিলেন অটিজমে আক্রান্ত বাক্‌ ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী মেহেদী হাসানের মা তাসলিমা বেগম।

নিজের অনুভূতি মুখ ফুটে জানাতে পারেন না মেহেদী। শুনতেও পান না কিছু। কিন্তু চমৎকার অ্যাথলেট তিনি। ২০১৯ সালে আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত স্পেশাল অলিম্পিকস থেকে দেশের জন্য স্বর্ণপদক জয় করে আনেন মেহেদী।

অটিজমে আক্রান্ত এই তরুণ পড়াশোনায়ও কম যান না। ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কম্পিউটার টেকনোলজি বিভাগের সপ্তম সেমিস্টারের ছাত্র তিনি। কিন্তু ল্যাপটপের অভাবে বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে তাঁর পড়াশোনা। 

মেহেদীর মা তাসলিমা বেগম জানান, তৃতীয় সেমিস্টার পর্যন্ত স্কলারশিপ পেয়ে পড়াশোনা করেছেন মেহেদী। চতুর্থ সেমিস্টার থেকে কম্পিউটার টেকনোলজি বিষয়ভিত্তিক প্র্যাকটিক্যাল বাড়তে থাকে। নিজের ল্যাপটপ ও কম্পিউটার না থাকায় চতুর্থ সেমিস্টার থেকে তাঁর পরীক্ষার ফল খারাপ হতে থাকে। যে কারণে স্কলারশিপও মেলেনি। 

মেহেদীর বাবা একটি মসজিদ ও মাদ্রাসায় খাদেম হিসেবে কাজ করেন। মা গৃহিণী। ছেলেকে ল্যাপটপ কিনে দেওয়ার সামর্থ্য নেই তাঁদের। একটি ল্যাপটপের জন্য বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল, সমাজসেবা অধিদপ্তর, আইসিটি মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করেছেন মেহেদী। কিন্তু ল্যাপটপ মেলেনি।

সরকারিভাবে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সময় ল্যাপটপ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরাও পেয়েছেন ল্যাপটপ। কিন্তু দেশকে স্বর্ণপদক এনে দেওয়া মেহেদী দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কেন একটা ল্যাপটপ পেলেন না, প্রশ্ন তাঁর মায়ের। 

তাসলিমা বেগম বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকে ওরে নিয়া যুদ্ধ করতেছি। মানুষের নানা কথা শুনছি। সারা রাস্তা কানছি। এত কষ্ট কইরা পড়াশোনা করাইয়া এত দূর আনছি। এহন একটা ল্যাপটপের জন্য ওর পড়াশোনা বন্ধ হইয়া যাবে?’

২০১৯ সালে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলে (বিসিসি) গ্রাফিকস ডিজাইনিংয়ের ওপর প্রশিক্ষণ নেন মেহেদী হাসান। বিসিসি থেকে প্রশিক্ষণ পাওয়া অনেকেই  ল্যাপটপ পেলেও মেহেদী পাননি। তাসলিমা বেগম বলেন, ‘বিসিসিতে অনেক দিন দৌড়াইছি। কিন্তু কোনো কাজ হয় নাই। অফিসারদের বদলি, নির্বাচনী পালাবদল—এই সব কারণ দেখাইছে তারা।’

বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের পরিচালক অশোক কুমার রায় এ বিষয়ে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় বিসিসি থেকে বিভিন্ন সময় ল্যাপটপ দেওয়া হয়। মেহেদী হাসানের বিষয়টি আমরা দেখব।’

বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস আজ
সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও আজ ২ এপ্রিল পালিত হচ্ছে বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘সচেতনতা-স্বীকৃতি-মূল্যায়ন: শুধু বেঁচে থাকা থেকে সমৃদ্ধির পথে যাত্রা’। 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব পেডিয়াট্রিক নিউরো ডিজঅর্ডার অ্যান্ড অটিজম-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে গ্রামের তুলনায় শহরে অটিস্টিক শিশু জন্মের হার বেশি। গ্রামে প্রতি ১০ হাজারে ১৪ জন এবং শহর এলাকায় প্রতি ১০ হাজারে ২৫ জন শিশু অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন।

মেয়েশিশুর চেয়ে ছেলেশিশুর মধ্যে অটিজমে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় আড়াই গুণ বেশি। অটিজম বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি ও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করা হচ্ছে। এ উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত