আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা

দুর্বল, অচল ও লোকসানি কোম্পানির শেয়ারের ফাঁদে পড়েছে দেশের পুঁজিবাজার। কিছু কোম্পানি আছে উৎপাদন সীমিত কিংবা একেবারেই উৎপাদনে নেই, অথচ শেয়ারদর বেশ চাঙা। আবার লোকসানে ব্যবসায় টিকে থাকা অনিশ্চিত এমন কোম্পানিও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শেয়ারবাজারে। বিষয়টিকে অস্বাভাবিক এবং পুঁজিবাজারের জন্য শুভ নয় বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকেরা।
উৎপাদন ও ব্যবসায়ে দুর্বল, অথচ পুঁজিবাজারে শক্তিশালী—এমন ১০টি কোম্পানির হালনাগাদ নিরীক্ষা প্রতিবেদন এবং লেনদেন পর্যালোচনা করেছে আজকের পত্রিকা। এতে দেখা যায়, কোনোটির উৎপাদন নেই, কোনোটির কার্যক্রম সীমিত, আবার কোনোটি নিয়ন্ত্রক সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে বাজারে লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে শেয়ারের দাম। কোম্পানিগুলো হলো জুট স্পিনার্স, লিগ্যাসি ফুটওয়ার, জিলবাংলা, শ্যামপুর সুগার মিল, আজিজ পাইপস, দেশ গার্মেন্টস, এটলাস বাংলাদেশ, সমতা লেদার, উসমানিয়া গ্লাস ও ইস্টার্ন কেব্লস।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, কোনো কারণ ছাড়াই দুর্বল প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ছে আর ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা লাভের আসায় মরীচিকার পেছনে ছুটে নিজের বিনিয়োগকে ঝুঁকিতে ফেলছেন। মূলত কারসাজি আর সিন্ডিকেটের কারণে এসব শেয়ারের দর বাড়ে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত তদন্ত করে এ ধরনের কোম্পানির লেনদেন বন্ধ করে দেওয়া।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, লোকসানি কোম্পানির দাম বাড়ে, এটা জুয়া খেলা। জুয়াড়িরা সিন্ডিকেট ট্রেডিং করে। এটা এখন ওপেন সিক্রেট। এ জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দায়ী করে তিনি বলেন, অকারণ মূল্যবৃদ্ধি বিএসইসি ঠেকাতে পারত। ওদের ট্রেডিং সাসপেন্ড করা উচিত; কিন্তু করা হচ্ছে না।
লোকসান ও বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মের পরেও সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধি দেখা গেছে লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের শেয়ারের। ১২ কর্মদিবসে ৪৯ টাকা ৯০ পয়সা বা ১১৮ শতাংশ বেড়ে গত সোমবার কোম্পানিটির শেয়ারের মূল্য দাঁড়ায় ৯২ টাকা ৪০ পয়সা।
অথচ নিরীক্ষা প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের মোট নগদ তহবিল ছিল মাত্র ৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। এ ছাড়া কোম্পানিটি আইন ভঙ্গ করে সব লেনদেন ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে গিয়ে নগদে করেছে। এ ক্ষেত্রে উৎসে কর কাটা হয়নি। এ জন্য ভবিষ্যতে অতিরিক্ত কর দায়ের ঝুঁকিতে প্রতিষ্ঠানটি। বিএসইসির নির্দেশনা মেনে অবণ্টিত লভ্যাংশও হস্তান্তর করেনি লিগ্যাসি ফুটওয়্যার।
এসব বিষয়ে জানতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে দেওয়া নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের কোম্পানি সচিব আব্দুল বাতেন ভূঁইয়ার সঙ্গে। কিন্তু ফোন ধরে অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তি জানালেন, তিনি ওই কোম্পানির কেউ নন।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আরেক লোকসানি কোম্পানি জুট স্পিনার্স। লোকসানের কারণে এখন ব্যবসায় টিকে থাকা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটির। অথচ কোম্পানির শেয়ারদর এখন ২৩৮ টাকার ওপরে। নিরীক্ষা প্রতিবেদন বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছে জুট স্পিনার্স।
এর পুঞ্জীভূত লোকসান বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৬ কোটি ২৩ লাখ টাকায়। চলতি হিসাবে দায় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা, যা কোম্পানিটির মোট সম্পত্তির তুলনায় ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বেশি। অর্থাৎ কোম্পানিটির পক্ষে বর্তমানে দায় মেটানোর কোনো সক্ষমতা নেই। কোম্পানিটির কাছে জনতা ব্যাংকের পাওনা ৪৮ কোটি টাকা। টাকা ফেরত পেতে আইনি লড়াই শুরু করেছে ব্যাংকটি।
এ নিয়ে জানতে চাইলে জুট স্পিনার্সের কোম্পানি সচিব এ টি এম মোস্তফা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। যা আছে, রিপোর্টেই আছে।’
অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আরেক কোম্পানি সমতা লেদার। নিরীক্ষা প্রতিবেদন বলছে, কোম্পানিটির আর্থিক হিসাবে ১ কোটি ৬৪ লাখ টাকার মজুত পণ্য দেখিয়েছে। কিন্তু সরেজমিনে পরিদর্শনে কোনো আইটেমভিত্তিক তালিকা ও পণ্যমূল্য পাওয়া যায়নি। গায়েবি মজুত পণ্য দেখিয়েছে কোম্পানিটি। এর বাইরেও কোম্পানি পরিচালনায় কোনো নিয়মনীতি মানেনি সমতা লেদার। তারপরও এর শেয়ারদর বাড়ছে। গত ২২ মার্চ কোম্পানির শেয়ারের দাম ছিল ৫৩ টাকা ৭০ পয়সায়। পরে ৭ কর্মদিবসে ২৩ টাকার বেশি বেড়ে গত সোমবার এর দর ৭৭ টাকায় পৌঁছে যায়।
দেশের তৈরি পোশাক খাতের পথিকৃৎ বলা হয় দেশ গার্মেন্টসকে। রপ্তানিতে ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করলেও প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসা এখন তলানিতে। সেই সঙ্গে আইনভঙ্গ ও আর্থিক প্রতিবেদনে অসংগতির তথ্য উঠে এসেছে কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে। তাতে দেখা যায়, শ্রম আইন লঙ্ঘন করেছে দেশ গার্মেন্টস লিমিটেড। কোম্পানির ব্যাংক হিসাব ও পরিচালকদের দেওয়া ঋণের ক্ষেত্রেও পূর্ণাঙ্গ নথি পায়নি নিরীক্ষক। এ ছাড়া ৩৩ বছর ধরে অবণ্টিত লভ্যাংশও বিতরণ করেনি কোম্পানি। ডিএসইর তথ্য বলছে, গত ৫ বছরের ব্যবধানে দেশ গার্মেন্টসের আয় কমেছে ৯৯ শতাংশ। অথচ শেয়ারের দর বেড়ে গত বৃহস্পতিবার ১১৯ টাকা ৯০ পয়সায় ঠেকেছে।
কোম্পানি সচিব ড. কে মৌলিক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সামান্য ত্রুটি বিচ্যুতি হলেও অডিটররা ধরে।’ অবণ্টিত লভ্যাংশ না দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি চালাতে গেলে অনেক খরচ। দিচ্ছি না এমন নয়। দিতে পারিনি, দেব।’
শেয়ার দরে বেশ ভালো অবস্থানে আছে এটলাস বাংলাদেশ। ডিএসইতে প্রতিষ্ঠানটির সর্বশেষ শেয়ার দর ১০৪ টাকা ২০ পয়সায় উঠতে দেখা গেছে। অথচ ২০২১-২২ অর্থবছরের নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাত বছরে এটলাস বাংলাদেশের পুঞ্জীভূত লোকসান দাঁড়িয়েছে ৩৬ কোটি ৯৬ লাখ ৪৯ হাজার ৬১৯ টাকা। প্রতিবেদনে কোম্পানিটির ব্যবসায়িক ঝুঁকির বিষয়টিও উঠে এসেছে। তাতে বলা হয়েছে, লোকসানে নিমজ্জিত এটলাস বাংলাদেশের মূল ফাইন্যান্সিয়াল বিষয়গুলো খারাপ অবস্থায় চলে গেছে।
ব্যবসার হাল সম্পর্কে জানতে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আজিবর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, হিরো হোন্ডা চলে যাওয়ার পর লোকসান শুরু হয়। জংশেনের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছিল। কিন্তু বাইক বিক্রি না হওয়ায় আর আমদানি করা হয়নি। ঘুরে দাঁড়াতে ইলেকট্রিক বাইক উৎপাদন এবং সে বিষয়ে চুক্তির প্রক্রিয়া চলমান।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আরেক কোম্পানি জিলবাংলা সুগার মিল। গত বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির শেয়ার দর ১২৭ টাকা ৪০ পয়সায় ঠেকেছে। যদিও নিরীক্ষা প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে এসে জিলবাংলা সুগার মিলের পুঞ্জীভূত লোকসান দাঁড়িয়েছে ৫৫৮ কোটি ৬৭ লাখ ৬৮ হাজার ৫৭৬ টাকা। এর বিপরীতে ওই সময়ে কোম্পানির দায় ৫৪৩ কোটি ৪২ লাখ ২৭ হাজার ৮৭৯ টাকা ছাড়িয়েছে।
এ বিষয়ে কোম্পানি সচিব নাজমুল হুদা বলেন, বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকা করতে আইসিবিকে কনসালট্যান্ট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা কাজ করছে। আর দক্ষ ব্যবস্থাপনার জন্য সরকার উদ্যোগ নিচ্ছে। আস্তে আস্তে ভালো হবে।’
দেশের শিল্প খাতের অন্যতম পুরোনো প্রতিষ্ঠান উসমানিয়া গ্লাস শিট কারখানা লিমিটেড। পুঁজিবাজারে জেড ক্যাটাগরিতে লেনদেন করছে উসমানিয়া গ্লাস। ডিএসইর ওয়েবসাইট থেকে ৫ বছরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ধারাবাহিকভাবে লোকসানে রয়েছে কোম্পানি। ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৭ টাকা ২১ পয়সা পর্যন্ত লোকসান করেছে। গত বৃহস্পতিবার শেয়ারদর দাঁড়িয়েছে ৫৯ টাকা ৬০ পয়সায়।
আরও যেসব লোকসানি কোম্পানি
টানা লোকসানে থাকা শ্যামপুর সুগার মিলের শেয়ারদর মার্চের শুরুতে ৬৩ টাকা ১০ পয়সা ছিল। ২৩ দিনে ৩০ টাকার মতো বেড়ে ২৩ মার্চ তা ৯৬ টাকা ৫০ পয়সায় দাঁড়ায়। এরপর চার দিন উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার ৮৫ টাকা ৮০ পয়সায় নেমেছে দর। শ্যামপুর সুগার মিলের কোম্পানি সচিব কায়েস খান বলেন, সম্প্রতি শেয়ারদর বেড়েছে। এটা লোকসানের কারণে আপাতত কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। এটা নিয়ে হয়তো অন্যভাবে পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
২০২২ সালে ৪ টাকা ৫৪ পয়সা লোকসান দেওয়া আজিজ পাইপসের দর বাড়ছে ২২ মার্চ থেকে। ধারাবাহিক দর বেড়ে ১০২ টাকা ১০ পয়সায় যাওয়ার পর বৃহস্পতিবার ৫ টাকা ৯০ পয়সা কমে শেয়ারদর নেমেছে ৯৬ টাকা ৯০ পয়সায়।
আজিজ পাইপসের কোম্পানি সচিব এ এইচ এম জাকারিয়াকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। আগের চার বছর বড় লোকসান দেওয়ার পর ২০২২ সালে শেয়ারপ্রতি কেবল ৩৪ পয়সা আয় করতে পেরেছে ইস্টার্ন ক্যাবলস। বিভিন্ন সময় কারসাজিতে এর শেয়ারদরে ব্যাপক উত্থান-পতন দেখা যায়। গত সোমবার ১৮১ টাকা ৩০ পয়সায় লেনদেন হওয়া শেয়ারটি তিন দিনে বেড়ে হয়েছে ১৯১ টাকা ৫০ পয়সা।
ডিএসইর ওয়েবসাইটে দেওয়া ইস্টার্ন কেবলসের নম্বরে কল করলে কোম্পানি সচিব গোলাম মওলা জানান, তিনি এখন আর সেখানে নেই। লোকসানি কোম্পানির পুঁজিবাজারে ভালো অবস্থানে থাকা প্রসঙ্গে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যেসব জায়গায় কারসাজি হচ্ছে বা আশঙ্কা মনে হচ্ছে, সেসব জায়গায় আরও তদন্ত হওয়া উচিত।’ কৃত্রিমভাবে সূচক ঠেকিয়ে রাখা ও পুঁজিবাজারের মন্দাবস্থা কারসাজির প্রবণতা বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে মনে করেন বিএসইসির সাবেক এই চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘প্র্যাকটিক্যালি স্টক মার্কেট বন্ধ প্রায়। কয়েকটা ছোটখাটো কোম্পানি নাড়াচাড়া হচ্ছে মাত্র। এই পরিস্থিতিতে কারসাজি হবে, সেটাই স্বাভাবিক।’
এসব বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এত নন-কমপ্লায়েন্স, লো ফান্ডামেন্টালের পরেও যাঁরা কিনছেন, তাঁরাই বলতে পারবেন, কেন কিনছেন? তবে কোনো ম্যানুপুলেটিভ অ্যাটেম্পট পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর বাইরে রেগুলেটর হিসেবে বেশি কিছু করার নেই।’

দুর্বল, অচল ও লোকসানি কোম্পানির শেয়ারের ফাঁদে পড়েছে দেশের পুঁজিবাজার। কিছু কোম্পানি আছে উৎপাদন সীমিত কিংবা একেবারেই উৎপাদনে নেই, অথচ শেয়ারদর বেশ চাঙা। আবার লোকসানে ব্যবসায় টিকে থাকা অনিশ্চিত এমন কোম্পানিও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শেয়ারবাজারে। বিষয়টিকে অস্বাভাবিক এবং পুঁজিবাজারের জন্য শুভ নয় বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকেরা।
উৎপাদন ও ব্যবসায়ে দুর্বল, অথচ পুঁজিবাজারে শক্তিশালী—এমন ১০টি কোম্পানির হালনাগাদ নিরীক্ষা প্রতিবেদন এবং লেনদেন পর্যালোচনা করেছে আজকের পত্রিকা। এতে দেখা যায়, কোনোটির উৎপাদন নেই, কোনোটির কার্যক্রম সীমিত, আবার কোনোটি নিয়ন্ত্রক সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে বাজারে লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে শেয়ারের দাম। কোম্পানিগুলো হলো জুট স্পিনার্স, লিগ্যাসি ফুটওয়ার, জিলবাংলা, শ্যামপুর সুগার মিল, আজিজ পাইপস, দেশ গার্মেন্টস, এটলাস বাংলাদেশ, সমতা লেদার, উসমানিয়া গ্লাস ও ইস্টার্ন কেব্লস।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, কোনো কারণ ছাড়াই দুর্বল প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ছে আর ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা লাভের আসায় মরীচিকার পেছনে ছুটে নিজের বিনিয়োগকে ঝুঁকিতে ফেলছেন। মূলত কারসাজি আর সিন্ডিকেটের কারণে এসব শেয়ারের দর বাড়ে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত তদন্ত করে এ ধরনের কোম্পানির লেনদেন বন্ধ করে দেওয়া।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, লোকসানি কোম্পানির দাম বাড়ে, এটা জুয়া খেলা। জুয়াড়িরা সিন্ডিকেট ট্রেডিং করে। এটা এখন ওপেন সিক্রেট। এ জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দায়ী করে তিনি বলেন, অকারণ মূল্যবৃদ্ধি বিএসইসি ঠেকাতে পারত। ওদের ট্রেডিং সাসপেন্ড করা উচিত; কিন্তু করা হচ্ছে না।
লোকসান ও বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মের পরেও সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধি দেখা গেছে লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের শেয়ারের। ১২ কর্মদিবসে ৪৯ টাকা ৯০ পয়সা বা ১১৮ শতাংশ বেড়ে গত সোমবার কোম্পানিটির শেয়ারের মূল্য দাঁড়ায় ৯২ টাকা ৪০ পয়সা।
অথচ নিরীক্ষা প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের মোট নগদ তহবিল ছিল মাত্র ৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। এ ছাড়া কোম্পানিটি আইন ভঙ্গ করে সব লেনদেন ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে গিয়ে নগদে করেছে। এ ক্ষেত্রে উৎসে কর কাটা হয়নি। এ জন্য ভবিষ্যতে অতিরিক্ত কর দায়ের ঝুঁকিতে প্রতিষ্ঠানটি। বিএসইসির নির্দেশনা মেনে অবণ্টিত লভ্যাংশও হস্তান্তর করেনি লিগ্যাসি ফুটওয়্যার।
এসব বিষয়ে জানতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে দেওয়া নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের কোম্পানি সচিব আব্দুল বাতেন ভূঁইয়ার সঙ্গে। কিন্তু ফোন ধরে অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তি জানালেন, তিনি ওই কোম্পানির কেউ নন।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আরেক লোকসানি কোম্পানি জুট স্পিনার্স। লোকসানের কারণে এখন ব্যবসায় টিকে থাকা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটির। অথচ কোম্পানির শেয়ারদর এখন ২৩৮ টাকার ওপরে। নিরীক্ষা প্রতিবেদন বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছে জুট স্পিনার্স।
এর পুঞ্জীভূত লোকসান বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৬ কোটি ২৩ লাখ টাকায়। চলতি হিসাবে দায় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা, যা কোম্পানিটির মোট সম্পত্তির তুলনায় ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বেশি। অর্থাৎ কোম্পানিটির পক্ষে বর্তমানে দায় মেটানোর কোনো সক্ষমতা নেই। কোম্পানিটির কাছে জনতা ব্যাংকের পাওনা ৪৮ কোটি টাকা। টাকা ফেরত পেতে আইনি লড়াই শুরু করেছে ব্যাংকটি।
এ নিয়ে জানতে চাইলে জুট স্পিনার্সের কোম্পানি সচিব এ টি এম মোস্তফা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। যা আছে, রিপোর্টেই আছে।’
অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আরেক কোম্পানি সমতা লেদার। নিরীক্ষা প্রতিবেদন বলছে, কোম্পানিটির আর্থিক হিসাবে ১ কোটি ৬৪ লাখ টাকার মজুত পণ্য দেখিয়েছে। কিন্তু সরেজমিনে পরিদর্শনে কোনো আইটেমভিত্তিক তালিকা ও পণ্যমূল্য পাওয়া যায়নি। গায়েবি মজুত পণ্য দেখিয়েছে কোম্পানিটি। এর বাইরেও কোম্পানি পরিচালনায় কোনো নিয়মনীতি মানেনি সমতা লেদার। তারপরও এর শেয়ারদর বাড়ছে। গত ২২ মার্চ কোম্পানির শেয়ারের দাম ছিল ৫৩ টাকা ৭০ পয়সায়। পরে ৭ কর্মদিবসে ২৩ টাকার বেশি বেড়ে গত সোমবার এর দর ৭৭ টাকায় পৌঁছে যায়।
দেশের তৈরি পোশাক খাতের পথিকৃৎ বলা হয় দেশ গার্মেন্টসকে। রপ্তানিতে ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করলেও প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসা এখন তলানিতে। সেই সঙ্গে আইনভঙ্গ ও আর্থিক প্রতিবেদনে অসংগতির তথ্য উঠে এসেছে কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে। তাতে দেখা যায়, শ্রম আইন লঙ্ঘন করেছে দেশ গার্মেন্টস লিমিটেড। কোম্পানির ব্যাংক হিসাব ও পরিচালকদের দেওয়া ঋণের ক্ষেত্রেও পূর্ণাঙ্গ নথি পায়নি নিরীক্ষক। এ ছাড়া ৩৩ বছর ধরে অবণ্টিত লভ্যাংশও বিতরণ করেনি কোম্পানি। ডিএসইর তথ্য বলছে, গত ৫ বছরের ব্যবধানে দেশ গার্মেন্টসের আয় কমেছে ৯৯ শতাংশ। অথচ শেয়ারের দর বেড়ে গত বৃহস্পতিবার ১১৯ টাকা ৯০ পয়সায় ঠেকেছে।
কোম্পানি সচিব ড. কে মৌলিক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সামান্য ত্রুটি বিচ্যুতি হলেও অডিটররা ধরে।’ অবণ্টিত লভ্যাংশ না দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি চালাতে গেলে অনেক খরচ। দিচ্ছি না এমন নয়। দিতে পারিনি, দেব।’
শেয়ার দরে বেশ ভালো অবস্থানে আছে এটলাস বাংলাদেশ। ডিএসইতে প্রতিষ্ঠানটির সর্বশেষ শেয়ার দর ১০৪ টাকা ২০ পয়সায় উঠতে দেখা গেছে। অথচ ২০২১-২২ অর্থবছরের নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাত বছরে এটলাস বাংলাদেশের পুঞ্জীভূত লোকসান দাঁড়িয়েছে ৩৬ কোটি ৯৬ লাখ ৪৯ হাজার ৬১৯ টাকা। প্রতিবেদনে কোম্পানিটির ব্যবসায়িক ঝুঁকির বিষয়টিও উঠে এসেছে। তাতে বলা হয়েছে, লোকসানে নিমজ্জিত এটলাস বাংলাদেশের মূল ফাইন্যান্সিয়াল বিষয়গুলো খারাপ অবস্থায় চলে গেছে।
ব্যবসার হাল সম্পর্কে জানতে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আজিবর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, হিরো হোন্ডা চলে যাওয়ার পর লোকসান শুরু হয়। জংশেনের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছিল। কিন্তু বাইক বিক্রি না হওয়ায় আর আমদানি করা হয়নি। ঘুরে দাঁড়াতে ইলেকট্রিক বাইক উৎপাদন এবং সে বিষয়ে চুক্তির প্রক্রিয়া চলমান।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আরেক কোম্পানি জিলবাংলা সুগার মিল। গত বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির শেয়ার দর ১২৭ টাকা ৪০ পয়সায় ঠেকেছে। যদিও নিরীক্ষা প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে এসে জিলবাংলা সুগার মিলের পুঞ্জীভূত লোকসান দাঁড়িয়েছে ৫৫৮ কোটি ৬৭ লাখ ৬৮ হাজার ৫৭৬ টাকা। এর বিপরীতে ওই সময়ে কোম্পানির দায় ৫৪৩ কোটি ৪২ লাখ ২৭ হাজার ৮৭৯ টাকা ছাড়িয়েছে।
এ বিষয়ে কোম্পানি সচিব নাজমুল হুদা বলেন, বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকা করতে আইসিবিকে কনসালট্যান্ট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা কাজ করছে। আর দক্ষ ব্যবস্থাপনার জন্য সরকার উদ্যোগ নিচ্ছে। আস্তে আস্তে ভালো হবে।’
দেশের শিল্প খাতের অন্যতম পুরোনো প্রতিষ্ঠান উসমানিয়া গ্লাস শিট কারখানা লিমিটেড। পুঁজিবাজারে জেড ক্যাটাগরিতে লেনদেন করছে উসমানিয়া গ্লাস। ডিএসইর ওয়েবসাইট থেকে ৫ বছরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ধারাবাহিকভাবে লোকসানে রয়েছে কোম্পানি। ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৭ টাকা ২১ পয়সা পর্যন্ত লোকসান করেছে। গত বৃহস্পতিবার শেয়ারদর দাঁড়িয়েছে ৫৯ টাকা ৬০ পয়সায়।
আরও যেসব লোকসানি কোম্পানি
টানা লোকসানে থাকা শ্যামপুর সুগার মিলের শেয়ারদর মার্চের শুরুতে ৬৩ টাকা ১০ পয়সা ছিল। ২৩ দিনে ৩০ টাকার মতো বেড়ে ২৩ মার্চ তা ৯৬ টাকা ৫০ পয়সায় দাঁড়ায়। এরপর চার দিন উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার ৮৫ টাকা ৮০ পয়সায় নেমেছে দর। শ্যামপুর সুগার মিলের কোম্পানি সচিব কায়েস খান বলেন, সম্প্রতি শেয়ারদর বেড়েছে। এটা লোকসানের কারণে আপাতত কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। এটা নিয়ে হয়তো অন্যভাবে পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
২০২২ সালে ৪ টাকা ৫৪ পয়সা লোকসান দেওয়া আজিজ পাইপসের দর বাড়ছে ২২ মার্চ থেকে। ধারাবাহিক দর বেড়ে ১০২ টাকা ১০ পয়সায় যাওয়ার পর বৃহস্পতিবার ৫ টাকা ৯০ পয়সা কমে শেয়ারদর নেমেছে ৯৬ টাকা ৯০ পয়সায়।
আজিজ পাইপসের কোম্পানি সচিব এ এইচ এম জাকারিয়াকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। আগের চার বছর বড় লোকসান দেওয়ার পর ২০২২ সালে শেয়ারপ্রতি কেবল ৩৪ পয়সা আয় করতে পেরেছে ইস্টার্ন ক্যাবলস। বিভিন্ন সময় কারসাজিতে এর শেয়ারদরে ব্যাপক উত্থান-পতন দেখা যায়। গত সোমবার ১৮১ টাকা ৩০ পয়সায় লেনদেন হওয়া শেয়ারটি তিন দিনে বেড়ে হয়েছে ১৯১ টাকা ৫০ পয়সা।
ডিএসইর ওয়েবসাইটে দেওয়া ইস্টার্ন কেবলসের নম্বরে কল করলে কোম্পানি সচিব গোলাম মওলা জানান, তিনি এখন আর সেখানে নেই। লোকসানি কোম্পানির পুঁজিবাজারে ভালো অবস্থানে থাকা প্রসঙ্গে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যেসব জায়গায় কারসাজি হচ্ছে বা আশঙ্কা মনে হচ্ছে, সেসব জায়গায় আরও তদন্ত হওয়া উচিত।’ কৃত্রিমভাবে সূচক ঠেকিয়ে রাখা ও পুঁজিবাজারের মন্দাবস্থা কারসাজির প্রবণতা বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে মনে করেন বিএসইসির সাবেক এই চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘প্র্যাকটিক্যালি স্টক মার্কেট বন্ধ প্রায়। কয়েকটা ছোটখাটো কোম্পানি নাড়াচাড়া হচ্ছে মাত্র। এই পরিস্থিতিতে কারসাজি হবে, সেটাই স্বাভাবিক।’
এসব বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এত নন-কমপ্লায়েন্স, লো ফান্ডামেন্টালের পরেও যাঁরা কিনছেন, তাঁরাই বলতে পারবেন, কেন কিনছেন? তবে কোনো ম্যানুপুলেটিভ অ্যাটেম্পট পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর বাইরে রেগুলেটর হিসেবে বেশি কিছু করার নেই।’
আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা

দুর্বল, অচল ও লোকসানি কোম্পানির শেয়ারের ফাঁদে পড়েছে দেশের পুঁজিবাজার। কিছু কোম্পানি আছে উৎপাদন সীমিত কিংবা একেবারেই উৎপাদনে নেই, অথচ শেয়ারদর বেশ চাঙা। আবার লোকসানে ব্যবসায় টিকে থাকা অনিশ্চিত এমন কোম্পানিও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শেয়ারবাজারে। বিষয়টিকে অস্বাভাবিক এবং পুঁজিবাজারের জন্য শুভ নয় বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকেরা।
উৎপাদন ও ব্যবসায়ে দুর্বল, অথচ পুঁজিবাজারে শক্তিশালী—এমন ১০টি কোম্পানির হালনাগাদ নিরীক্ষা প্রতিবেদন এবং লেনদেন পর্যালোচনা করেছে আজকের পত্রিকা। এতে দেখা যায়, কোনোটির উৎপাদন নেই, কোনোটির কার্যক্রম সীমিত, আবার কোনোটি নিয়ন্ত্রক সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে বাজারে লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে শেয়ারের দাম। কোম্পানিগুলো হলো জুট স্পিনার্স, লিগ্যাসি ফুটওয়ার, জিলবাংলা, শ্যামপুর সুগার মিল, আজিজ পাইপস, দেশ গার্মেন্টস, এটলাস বাংলাদেশ, সমতা লেদার, উসমানিয়া গ্লাস ও ইস্টার্ন কেব্লস।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, কোনো কারণ ছাড়াই দুর্বল প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ছে আর ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা লাভের আসায় মরীচিকার পেছনে ছুটে নিজের বিনিয়োগকে ঝুঁকিতে ফেলছেন। মূলত কারসাজি আর সিন্ডিকেটের কারণে এসব শেয়ারের দর বাড়ে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত তদন্ত করে এ ধরনের কোম্পানির লেনদেন বন্ধ করে দেওয়া।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, লোকসানি কোম্পানির দাম বাড়ে, এটা জুয়া খেলা। জুয়াড়িরা সিন্ডিকেট ট্রেডিং করে। এটা এখন ওপেন সিক্রেট। এ জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দায়ী করে তিনি বলেন, অকারণ মূল্যবৃদ্ধি বিএসইসি ঠেকাতে পারত। ওদের ট্রেডিং সাসপেন্ড করা উচিত; কিন্তু করা হচ্ছে না।
লোকসান ও বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মের পরেও সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধি দেখা গেছে লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের শেয়ারের। ১২ কর্মদিবসে ৪৯ টাকা ৯০ পয়সা বা ১১৮ শতাংশ বেড়ে গত সোমবার কোম্পানিটির শেয়ারের মূল্য দাঁড়ায় ৯২ টাকা ৪০ পয়সা।
অথচ নিরীক্ষা প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের মোট নগদ তহবিল ছিল মাত্র ৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। এ ছাড়া কোম্পানিটি আইন ভঙ্গ করে সব লেনদেন ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে গিয়ে নগদে করেছে। এ ক্ষেত্রে উৎসে কর কাটা হয়নি। এ জন্য ভবিষ্যতে অতিরিক্ত কর দায়ের ঝুঁকিতে প্রতিষ্ঠানটি। বিএসইসির নির্দেশনা মেনে অবণ্টিত লভ্যাংশও হস্তান্তর করেনি লিগ্যাসি ফুটওয়্যার।
এসব বিষয়ে জানতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে দেওয়া নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের কোম্পানি সচিব আব্দুল বাতেন ভূঁইয়ার সঙ্গে। কিন্তু ফোন ধরে অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তি জানালেন, তিনি ওই কোম্পানির কেউ নন।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আরেক লোকসানি কোম্পানি জুট স্পিনার্স। লোকসানের কারণে এখন ব্যবসায় টিকে থাকা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটির। অথচ কোম্পানির শেয়ারদর এখন ২৩৮ টাকার ওপরে। নিরীক্ষা প্রতিবেদন বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছে জুট স্পিনার্স।
এর পুঞ্জীভূত লোকসান বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৬ কোটি ২৩ লাখ টাকায়। চলতি হিসাবে দায় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা, যা কোম্পানিটির মোট সম্পত্তির তুলনায় ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বেশি। অর্থাৎ কোম্পানিটির পক্ষে বর্তমানে দায় মেটানোর কোনো সক্ষমতা নেই। কোম্পানিটির কাছে জনতা ব্যাংকের পাওনা ৪৮ কোটি টাকা। টাকা ফেরত পেতে আইনি লড়াই শুরু করেছে ব্যাংকটি।
এ নিয়ে জানতে চাইলে জুট স্পিনার্সের কোম্পানি সচিব এ টি এম মোস্তফা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। যা আছে, রিপোর্টেই আছে।’
অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আরেক কোম্পানি সমতা লেদার। নিরীক্ষা প্রতিবেদন বলছে, কোম্পানিটির আর্থিক হিসাবে ১ কোটি ৬৪ লাখ টাকার মজুত পণ্য দেখিয়েছে। কিন্তু সরেজমিনে পরিদর্শনে কোনো আইটেমভিত্তিক তালিকা ও পণ্যমূল্য পাওয়া যায়নি। গায়েবি মজুত পণ্য দেখিয়েছে কোম্পানিটি। এর বাইরেও কোম্পানি পরিচালনায় কোনো নিয়মনীতি মানেনি সমতা লেদার। তারপরও এর শেয়ারদর বাড়ছে। গত ২২ মার্চ কোম্পানির শেয়ারের দাম ছিল ৫৩ টাকা ৭০ পয়সায়। পরে ৭ কর্মদিবসে ২৩ টাকার বেশি বেড়ে গত সোমবার এর দর ৭৭ টাকায় পৌঁছে যায়।
দেশের তৈরি পোশাক খাতের পথিকৃৎ বলা হয় দেশ গার্মেন্টসকে। রপ্তানিতে ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করলেও প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসা এখন তলানিতে। সেই সঙ্গে আইনভঙ্গ ও আর্থিক প্রতিবেদনে অসংগতির তথ্য উঠে এসেছে কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে। তাতে দেখা যায়, শ্রম আইন লঙ্ঘন করেছে দেশ গার্মেন্টস লিমিটেড। কোম্পানির ব্যাংক হিসাব ও পরিচালকদের দেওয়া ঋণের ক্ষেত্রেও পূর্ণাঙ্গ নথি পায়নি নিরীক্ষক। এ ছাড়া ৩৩ বছর ধরে অবণ্টিত লভ্যাংশও বিতরণ করেনি কোম্পানি। ডিএসইর তথ্য বলছে, গত ৫ বছরের ব্যবধানে দেশ গার্মেন্টসের আয় কমেছে ৯৯ শতাংশ। অথচ শেয়ারের দর বেড়ে গত বৃহস্পতিবার ১১৯ টাকা ৯০ পয়সায় ঠেকেছে।
কোম্পানি সচিব ড. কে মৌলিক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সামান্য ত্রুটি বিচ্যুতি হলেও অডিটররা ধরে।’ অবণ্টিত লভ্যাংশ না দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি চালাতে গেলে অনেক খরচ। দিচ্ছি না এমন নয়। দিতে পারিনি, দেব।’
শেয়ার দরে বেশ ভালো অবস্থানে আছে এটলাস বাংলাদেশ। ডিএসইতে প্রতিষ্ঠানটির সর্বশেষ শেয়ার দর ১০৪ টাকা ২০ পয়সায় উঠতে দেখা গেছে। অথচ ২০২১-২২ অর্থবছরের নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাত বছরে এটলাস বাংলাদেশের পুঞ্জীভূত লোকসান দাঁড়িয়েছে ৩৬ কোটি ৯৬ লাখ ৪৯ হাজার ৬১৯ টাকা। প্রতিবেদনে কোম্পানিটির ব্যবসায়িক ঝুঁকির বিষয়টিও উঠে এসেছে। তাতে বলা হয়েছে, লোকসানে নিমজ্জিত এটলাস বাংলাদেশের মূল ফাইন্যান্সিয়াল বিষয়গুলো খারাপ অবস্থায় চলে গেছে।
ব্যবসার হাল সম্পর্কে জানতে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আজিবর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, হিরো হোন্ডা চলে যাওয়ার পর লোকসান শুরু হয়। জংশেনের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছিল। কিন্তু বাইক বিক্রি না হওয়ায় আর আমদানি করা হয়নি। ঘুরে দাঁড়াতে ইলেকট্রিক বাইক উৎপাদন এবং সে বিষয়ে চুক্তির প্রক্রিয়া চলমান।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আরেক কোম্পানি জিলবাংলা সুগার মিল। গত বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির শেয়ার দর ১২৭ টাকা ৪০ পয়সায় ঠেকেছে। যদিও নিরীক্ষা প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে এসে জিলবাংলা সুগার মিলের পুঞ্জীভূত লোকসান দাঁড়িয়েছে ৫৫৮ কোটি ৬৭ লাখ ৬৮ হাজার ৫৭৬ টাকা। এর বিপরীতে ওই সময়ে কোম্পানির দায় ৫৪৩ কোটি ৪২ লাখ ২৭ হাজার ৮৭৯ টাকা ছাড়িয়েছে।
এ বিষয়ে কোম্পানি সচিব নাজমুল হুদা বলেন, বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকা করতে আইসিবিকে কনসালট্যান্ট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা কাজ করছে। আর দক্ষ ব্যবস্থাপনার জন্য সরকার উদ্যোগ নিচ্ছে। আস্তে আস্তে ভালো হবে।’
দেশের শিল্প খাতের অন্যতম পুরোনো প্রতিষ্ঠান উসমানিয়া গ্লাস শিট কারখানা লিমিটেড। পুঁজিবাজারে জেড ক্যাটাগরিতে লেনদেন করছে উসমানিয়া গ্লাস। ডিএসইর ওয়েবসাইট থেকে ৫ বছরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ধারাবাহিকভাবে লোকসানে রয়েছে কোম্পানি। ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৭ টাকা ২১ পয়সা পর্যন্ত লোকসান করেছে। গত বৃহস্পতিবার শেয়ারদর দাঁড়িয়েছে ৫৯ টাকা ৬০ পয়সায়।
আরও যেসব লোকসানি কোম্পানি
টানা লোকসানে থাকা শ্যামপুর সুগার মিলের শেয়ারদর মার্চের শুরুতে ৬৩ টাকা ১০ পয়সা ছিল। ২৩ দিনে ৩০ টাকার মতো বেড়ে ২৩ মার্চ তা ৯৬ টাকা ৫০ পয়সায় দাঁড়ায়। এরপর চার দিন উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার ৮৫ টাকা ৮০ পয়সায় নেমেছে দর। শ্যামপুর সুগার মিলের কোম্পানি সচিব কায়েস খান বলেন, সম্প্রতি শেয়ারদর বেড়েছে। এটা লোকসানের কারণে আপাতত কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। এটা নিয়ে হয়তো অন্যভাবে পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
২০২২ সালে ৪ টাকা ৫৪ পয়সা লোকসান দেওয়া আজিজ পাইপসের দর বাড়ছে ২২ মার্চ থেকে। ধারাবাহিক দর বেড়ে ১০২ টাকা ১০ পয়সায় যাওয়ার পর বৃহস্পতিবার ৫ টাকা ৯০ পয়সা কমে শেয়ারদর নেমেছে ৯৬ টাকা ৯০ পয়সায়।
আজিজ পাইপসের কোম্পানি সচিব এ এইচ এম জাকারিয়াকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। আগের চার বছর বড় লোকসান দেওয়ার পর ২০২২ সালে শেয়ারপ্রতি কেবল ৩৪ পয়সা আয় করতে পেরেছে ইস্টার্ন ক্যাবলস। বিভিন্ন সময় কারসাজিতে এর শেয়ারদরে ব্যাপক উত্থান-পতন দেখা যায়। গত সোমবার ১৮১ টাকা ৩০ পয়সায় লেনদেন হওয়া শেয়ারটি তিন দিনে বেড়ে হয়েছে ১৯১ টাকা ৫০ পয়সা।
ডিএসইর ওয়েবসাইটে দেওয়া ইস্টার্ন কেবলসের নম্বরে কল করলে কোম্পানি সচিব গোলাম মওলা জানান, তিনি এখন আর সেখানে নেই। লোকসানি কোম্পানির পুঁজিবাজারে ভালো অবস্থানে থাকা প্রসঙ্গে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যেসব জায়গায় কারসাজি হচ্ছে বা আশঙ্কা মনে হচ্ছে, সেসব জায়গায় আরও তদন্ত হওয়া উচিত।’ কৃত্রিমভাবে সূচক ঠেকিয়ে রাখা ও পুঁজিবাজারের মন্দাবস্থা কারসাজির প্রবণতা বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে মনে করেন বিএসইসির সাবেক এই চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘প্র্যাকটিক্যালি স্টক মার্কেট বন্ধ প্রায়। কয়েকটা ছোটখাটো কোম্পানি নাড়াচাড়া হচ্ছে মাত্র। এই পরিস্থিতিতে কারসাজি হবে, সেটাই স্বাভাবিক।’
এসব বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এত নন-কমপ্লায়েন্স, লো ফান্ডামেন্টালের পরেও যাঁরা কিনছেন, তাঁরাই বলতে পারবেন, কেন কিনছেন? তবে কোনো ম্যানুপুলেটিভ অ্যাটেম্পট পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর বাইরে রেগুলেটর হিসেবে বেশি কিছু করার নেই।’

দুর্বল, অচল ও লোকসানি কোম্পানির শেয়ারের ফাঁদে পড়েছে দেশের পুঁজিবাজার। কিছু কোম্পানি আছে উৎপাদন সীমিত কিংবা একেবারেই উৎপাদনে নেই, অথচ শেয়ারদর বেশ চাঙা। আবার লোকসানে ব্যবসায় টিকে থাকা অনিশ্চিত এমন কোম্পানিও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শেয়ারবাজারে। বিষয়টিকে অস্বাভাবিক এবং পুঁজিবাজারের জন্য শুভ নয় বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকেরা।
উৎপাদন ও ব্যবসায়ে দুর্বল, অথচ পুঁজিবাজারে শক্তিশালী—এমন ১০টি কোম্পানির হালনাগাদ নিরীক্ষা প্রতিবেদন এবং লেনদেন পর্যালোচনা করেছে আজকের পত্রিকা। এতে দেখা যায়, কোনোটির উৎপাদন নেই, কোনোটির কার্যক্রম সীমিত, আবার কোনোটি নিয়ন্ত্রক সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে বাজারে লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে শেয়ারের দাম। কোম্পানিগুলো হলো জুট স্পিনার্স, লিগ্যাসি ফুটওয়ার, জিলবাংলা, শ্যামপুর সুগার মিল, আজিজ পাইপস, দেশ গার্মেন্টস, এটলাস বাংলাদেশ, সমতা লেদার, উসমানিয়া গ্লাস ও ইস্টার্ন কেব্লস।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, কোনো কারণ ছাড়াই দুর্বল প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ছে আর ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা লাভের আসায় মরীচিকার পেছনে ছুটে নিজের বিনিয়োগকে ঝুঁকিতে ফেলছেন। মূলত কারসাজি আর সিন্ডিকেটের কারণে এসব শেয়ারের দর বাড়ে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত তদন্ত করে এ ধরনের কোম্পানির লেনদেন বন্ধ করে দেওয়া।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, লোকসানি কোম্পানির দাম বাড়ে, এটা জুয়া খেলা। জুয়াড়িরা সিন্ডিকেট ট্রেডিং করে। এটা এখন ওপেন সিক্রেট। এ জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে দায়ী করে তিনি বলেন, অকারণ মূল্যবৃদ্ধি বিএসইসি ঠেকাতে পারত। ওদের ট্রেডিং সাসপেন্ড করা উচিত; কিন্তু করা হচ্ছে না।
লোকসান ও বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মের পরেও সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধি দেখা গেছে লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের শেয়ারের। ১২ কর্মদিবসে ৪৯ টাকা ৯০ পয়সা বা ১১৮ শতাংশ বেড়ে গত সোমবার কোম্পানিটির শেয়ারের মূল্য দাঁড়ায় ৯২ টাকা ৪০ পয়সা।
অথচ নিরীক্ষা প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের মোট নগদ তহবিল ছিল মাত্র ৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। এ ছাড়া কোম্পানিটি আইন ভঙ্গ করে সব লেনদেন ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে গিয়ে নগদে করেছে। এ ক্ষেত্রে উৎসে কর কাটা হয়নি। এ জন্য ভবিষ্যতে অতিরিক্ত কর দায়ের ঝুঁকিতে প্রতিষ্ঠানটি। বিএসইসির নির্দেশনা মেনে অবণ্টিত লভ্যাংশও হস্তান্তর করেনি লিগ্যাসি ফুটওয়্যার।
এসব বিষয়ে জানতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে দেওয়া নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় লিগ্যাসি ফুটওয়্যারের কোম্পানি সচিব আব্দুল বাতেন ভূঁইয়ার সঙ্গে। কিন্তু ফোন ধরে অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তি জানালেন, তিনি ওই কোম্পানির কেউ নন।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আরেক লোকসানি কোম্পানি জুট স্পিনার্স। লোকসানের কারণে এখন ব্যবসায় টিকে থাকা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটির। অথচ কোম্পানির শেয়ারদর এখন ২৩৮ টাকার ওপরে। নিরীক্ষা প্রতিবেদন বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছে জুট স্পিনার্স।
এর পুঞ্জীভূত লোকসান বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৬ কোটি ২৩ লাখ টাকায়। চলতি হিসাবে দায় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা, যা কোম্পানিটির মোট সম্পত্তির তুলনায় ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা বেশি। অর্থাৎ কোম্পানিটির পক্ষে বর্তমানে দায় মেটানোর কোনো সক্ষমতা নেই। কোম্পানিটির কাছে জনতা ব্যাংকের পাওনা ৪৮ কোটি টাকা। টাকা ফেরত পেতে আইনি লড়াই শুরু করেছে ব্যাংকটি।
এ নিয়ে জানতে চাইলে জুট স্পিনার্সের কোম্পানি সচিব এ টি এম মোস্তফা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এসব বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। যা আছে, রিপোর্টেই আছে।’
অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আরেক কোম্পানি সমতা লেদার। নিরীক্ষা প্রতিবেদন বলছে, কোম্পানিটির আর্থিক হিসাবে ১ কোটি ৬৪ লাখ টাকার মজুত পণ্য দেখিয়েছে। কিন্তু সরেজমিনে পরিদর্শনে কোনো আইটেমভিত্তিক তালিকা ও পণ্যমূল্য পাওয়া যায়নি। গায়েবি মজুত পণ্য দেখিয়েছে কোম্পানিটি। এর বাইরেও কোম্পানি পরিচালনায় কোনো নিয়মনীতি মানেনি সমতা লেদার। তারপরও এর শেয়ারদর বাড়ছে। গত ২২ মার্চ কোম্পানির শেয়ারের দাম ছিল ৫৩ টাকা ৭০ পয়সায়। পরে ৭ কর্মদিবসে ২৩ টাকার বেশি বেড়ে গত সোমবার এর দর ৭৭ টাকায় পৌঁছে যায়।
দেশের তৈরি পোশাক খাতের পথিকৃৎ বলা হয় দেশ গার্মেন্টসকে। রপ্তানিতে ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করলেও প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসা এখন তলানিতে। সেই সঙ্গে আইনভঙ্গ ও আর্থিক প্রতিবেদনে অসংগতির তথ্য উঠে এসেছে কোম্পানির ২০২১-২২ অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদনে। তাতে দেখা যায়, শ্রম আইন লঙ্ঘন করেছে দেশ গার্মেন্টস লিমিটেড। কোম্পানির ব্যাংক হিসাব ও পরিচালকদের দেওয়া ঋণের ক্ষেত্রেও পূর্ণাঙ্গ নথি পায়নি নিরীক্ষক। এ ছাড়া ৩৩ বছর ধরে অবণ্টিত লভ্যাংশও বিতরণ করেনি কোম্পানি। ডিএসইর তথ্য বলছে, গত ৫ বছরের ব্যবধানে দেশ গার্মেন্টসের আয় কমেছে ৯৯ শতাংশ। অথচ শেয়ারের দর বেড়ে গত বৃহস্পতিবার ১১৯ টাকা ৯০ পয়সায় ঠেকেছে।
কোম্পানি সচিব ড. কে মৌলিক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সামান্য ত্রুটি বিচ্যুতি হলেও অডিটররা ধরে।’ অবণ্টিত লভ্যাংশ না দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি চালাতে গেলে অনেক খরচ। দিচ্ছি না এমন নয়। দিতে পারিনি, দেব।’
শেয়ার দরে বেশ ভালো অবস্থানে আছে এটলাস বাংলাদেশ। ডিএসইতে প্রতিষ্ঠানটির সর্বশেষ শেয়ার দর ১০৪ টাকা ২০ পয়সায় উঠতে দেখা গেছে। অথচ ২০২১-২২ অর্থবছরের নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাত বছরে এটলাস বাংলাদেশের পুঞ্জীভূত লোকসান দাঁড়িয়েছে ৩৬ কোটি ৯৬ লাখ ৪৯ হাজার ৬১৯ টাকা। প্রতিবেদনে কোম্পানিটির ব্যবসায়িক ঝুঁকির বিষয়টিও উঠে এসেছে। তাতে বলা হয়েছে, লোকসানে নিমজ্জিত এটলাস বাংলাদেশের মূল ফাইন্যান্সিয়াল বিষয়গুলো খারাপ অবস্থায় চলে গেছে।
ব্যবসার হাল সম্পর্কে জানতে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আজিবর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, হিরো হোন্ডা চলে যাওয়ার পর লোকসান শুরু হয়। জংশেনের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছিল। কিন্তু বাইক বিক্রি না হওয়ায় আর আমদানি করা হয়নি। ঘুরে দাঁড়াতে ইলেকট্রিক বাইক উৎপাদন এবং সে বিষয়ে চুক্তির প্রক্রিয়া চলমান।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আরেক কোম্পানি জিলবাংলা সুগার মিল। গত বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির শেয়ার দর ১২৭ টাকা ৪০ পয়সায় ঠেকেছে। যদিও নিরীক্ষা প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে এসে জিলবাংলা সুগার মিলের পুঞ্জীভূত লোকসান দাঁড়িয়েছে ৫৫৮ কোটি ৬৭ লাখ ৬৮ হাজার ৫৭৬ টাকা। এর বিপরীতে ওই সময়ে কোম্পানির দায় ৫৪৩ কোটি ৪২ লাখ ২৭ হাজার ৮৭৯ টাকা ছাড়িয়েছে।
এ বিষয়ে কোম্পানি সচিব নাজমুল হুদা বলেন, বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী পরিশোধিত মূলধন ৩০ কোটি টাকা করতে আইসিবিকে কনসালট্যান্ট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা কাজ করছে। আর দক্ষ ব্যবস্থাপনার জন্য সরকার উদ্যোগ নিচ্ছে। আস্তে আস্তে ভালো হবে।’
দেশের শিল্প খাতের অন্যতম পুরোনো প্রতিষ্ঠান উসমানিয়া গ্লাস শিট কারখানা লিমিটেড। পুঁজিবাজারে জেড ক্যাটাগরিতে লেনদেন করছে উসমানিয়া গ্লাস। ডিএসইর ওয়েবসাইট থেকে ৫ বছরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ধারাবাহিকভাবে লোকসানে রয়েছে কোম্পানি। ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত শেয়ারপ্রতি ১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৭ টাকা ২১ পয়সা পর্যন্ত লোকসান করেছে। গত বৃহস্পতিবার শেয়ারদর দাঁড়িয়েছে ৫৯ টাকা ৬০ পয়সায়।
আরও যেসব লোকসানি কোম্পানি
টানা লোকসানে থাকা শ্যামপুর সুগার মিলের শেয়ারদর মার্চের শুরুতে ৬৩ টাকা ১০ পয়সা ছিল। ২৩ দিনে ৩০ টাকার মতো বেড়ে ২৩ মার্চ তা ৯৬ টাকা ৫০ পয়সায় দাঁড়ায়। এরপর চার দিন উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার ৮৫ টাকা ৮০ পয়সায় নেমেছে দর। শ্যামপুর সুগার মিলের কোম্পানি সচিব কায়েস খান বলেন, সম্প্রতি শেয়ারদর বেড়েছে। এটা লোকসানের কারণে আপাতত কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। এটা নিয়ে হয়তো অন্যভাবে পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
২০২২ সালে ৪ টাকা ৫৪ পয়সা লোকসান দেওয়া আজিজ পাইপসের দর বাড়ছে ২২ মার্চ থেকে। ধারাবাহিক দর বেড়ে ১০২ টাকা ১০ পয়সায় যাওয়ার পর বৃহস্পতিবার ৫ টাকা ৯০ পয়সা কমে শেয়ারদর নেমেছে ৯৬ টাকা ৯০ পয়সায়।
আজিজ পাইপসের কোম্পানি সচিব এ এইচ এম জাকারিয়াকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। আগের চার বছর বড় লোকসান দেওয়ার পর ২০২২ সালে শেয়ারপ্রতি কেবল ৩৪ পয়সা আয় করতে পেরেছে ইস্টার্ন ক্যাবলস। বিভিন্ন সময় কারসাজিতে এর শেয়ারদরে ব্যাপক উত্থান-পতন দেখা যায়। গত সোমবার ১৮১ টাকা ৩০ পয়সায় লেনদেন হওয়া শেয়ারটি তিন দিনে বেড়ে হয়েছে ১৯১ টাকা ৫০ পয়সা।
ডিএসইর ওয়েবসাইটে দেওয়া ইস্টার্ন কেবলসের নম্বরে কল করলে কোম্পানি সচিব গোলাম মওলা জানান, তিনি এখন আর সেখানে নেই। লোকসানি কোম্পানির পুঁজিবাজারে ভালো অবস্থানে থাকা প্রসঙ্গে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যেসব জায়গায় কারসাজি হচ্ছে বা আশঙ্কা মনে হচ্ছে, সেসব জায়গায় আরও তদন্ত হওয়া উচিত।’ কৃত্রিমভাবে সূচক ঠেকিয়ে রাখা ও পুঁজিবাজারের মন্দাবস্থা কারসাজির প্রবণতা বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে মনে করেন বিএসইসির সাবেক এই চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘প্র্যাকটিক্যালি স্টক মার্কেট বন্ধ প্রায়। কয়েকটা ছোটখাটো কোম্পানি নাড়াচাড়া হচ্ছে মাত্র। এই পরিস্থিতিতে কারসাজি হবে, সেটাই স্বাভাবিক।’
এসব বিষয়ে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এত নন-কমপ্লায়েন্স, লো ফান্ডামেন্টালের পরেও যাঁরা কিনছেন, তাঁরাই বলতে পারবেন, কেন কিনছেন? তবে কোনো ম্যানুপুলেটিভ অ্যাটেম্পট পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর বাইরে রেগুলেটর হিসেবে বেশি কিছু করার নেই।’

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫বাসস, ঢাকা

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।
এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।
পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।
মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

দুর্বল, অচল ও লোকসানি কোম্পানির শেয়ারের ফাঁদে পড়েছে দেশের পুঁজিবাজার। কিছু কোম্পানি আছে উৎপাদন সীমিত কিংবা একেবারেই উৎপাদনে নেই, অথচ শেয়ারদর বেশ চাঙা। আবার লোকসানে ব্যবসায় টিকে থাকা অনিশ্চিত এমন কোম্পানিও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শেয়ারবাজারে।
০৯ এপ্রিল ২০২৩
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।
বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’
জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’
নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’
সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’
পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।
কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।
একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

দুর্বল, অচল ও লোকসানি কোম্পানির শেয়ারের ফাঁদে পড়েছে দেশের পুঁজিবাজার। কিছু কোম্পানি আছে উৎপাদন সীমিত কিংবা একেবারেই উৎপাদনে নেই, অথচ শেয়ারদর বেশ চাঙা। আবার লোকসানে ব্যবসায় টিকে থাকা অনিশ্চিত এমন কোম্পানিও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শেয়ারবাজারে।
০৯ এপ্রিল ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।
গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।
বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।
জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’
বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।
এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।
স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।
মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

দুর্বল, অচল ও লোকসানি কোম্পানির শেয়ারের ফাঁদে পড়েছে দেশের পুঁজিবাজার। কিছু কোম্পানি আছে উৎপাদন সীমিত কিংবা একেবারেই উৎপাদনে নেই, অথচ শেয়ারদর বেশ চাঙা। আবার লোকসানে ব্যবসায় টিকে থাকা অনিশ্চিত এমন কোম্পানিও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শেয়ারবাজারে।
০৯ এপ্রিল ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।
গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?
১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।
ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

দুর্বল, অচল ও লোকসানি কোম্পানির শেয়ারের ফাঁদে পড়েছে দেশের পুঁজিবাজার। কিছু কোম্পানি আছে উৎপাদন সীমিত কিংবা একেবারেই উৎপাদনে নেই, অথচ শেয়ারদর বেশ চাঙা। আবার লোকসানে ব্যবসায় টিকে থাকা অনিশ্চিত এমন কোম্পানিও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শেয়ারবাজারে।
০৯ এপ্রিল ২০২৩
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।
২১ দিন আগে
‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর...
১২ জুন ২০২৫
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৯ মে ২০২৫