Ajker Patrika

ট্রেনে অ্যাটেনডেন্টরা বেপরোয়া

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০২১, ১২: ১৯
ট্রেনে অ্যাটেনডেন্টরা বেপরোয়া

ময়মনসিংহ অঞ্চলের একটি আন্তনগর ট্রেনের অ্যাটেনডেন্টদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও যাত্রী হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। এসবের সুবিধা নিচ্ছেন টিটিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। অথচ নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যে ভ্রমণ করতে ময়মনসিংহ অঞ্চলের যাত্রীদের প্রথম পছন্দ ট্রেন। তবে এসব ট্রেনে যাত্রী হয়রানির পাশাপাশি রয়েছে চাঁদাবাজির অভিযোগ। এ বিষয়ে অসহায়ত্ব প্রকাশ করে সংবাদ প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন স্টেশন সুপারিনটেনডেন্ট।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভাটি অঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম হাওর এক্সপ্রেস। মোহনগঞ্জ থেকে প্রতিদিন সকাল আটটায় ট্রেনটি ছেড়ে যায় ঢাকার উদ্দেশ্যে। ১৪ বগির ট্রেনটিতে প্রতি বগিতে ৬০ জনের ধারণ ক্ষমতা থাকলেও দ্বিগুণ যাত্রী নিয়ে মোহনগঞ্জ স্টেশন থেকে ছেড়ে যায়।

গতকাল সোমবার মোহণগঞ্জ থেকে ময়মনসিংহে ট্রেন যোগে আসার পথে চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া যায় যাত্রীদের কাছ থেকে। তাঁরা বলছেন, অ্যাটেনডেন্টদের হাতে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে যাত্রীদের। ট্রেনে টিটি থাকলেও তাঁকে কোনো বগিতে দেখা যায়নি। টিটির কাজ করতে দেখা যায় অ্যাটেনডেন্টদের। স্ট্যান্ডিং টিকিট বন্ধ থাকলেও যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা তুলতে দেখা গেছে অ্যাটেনডেন্টদের। অনেক যাত্রীকে বসানো হয় ট্রেনের নামাজের স্থান, রেস্তোরাঁ এবং মেঝেতে।

যাত্রীদের অভিযোগ, টিটি টিকিট না দেখলেও অ্যাটেনডেন্টরা টাকা নিচ্ছে। অন্যথায় মোটা অঙ্কের টাকা জরিমানার ভয় দেখানো হচ্ছে। বাধ্য হয়েই তাঁরা যা চায়, তা কমবেশি করে দেওয়া হচ্ছে।

বারহাট্টা স্টেশন থেকে হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনে ওঠেন আব্দুল বাকী এবং আদিল হোসেন। গন্তব্য ছিল ময়মনসিংহ। টিকিট না থাকায় তাঁদের জরিমানার ভয় দেখিয়ে ২০০ টাকা নিতে দেখা যায় অ্যাটেনডেন্ট মাহবুবুর রহমানকে। আব্দুল বাকী বলেন, তাদের এক আত্মীয় অসুস্থ অবস্থায় মমেক হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাঁকে দেখতে ট্রেনযোগে যাত্রা। ট্রেনে ওঠার কিছুক্ষণ পরেই একজন টিকিট দেখতে চান। টিকিট নেই জানালে ২০০ টাকা দাবি করেন। পরে আত্মসম্মানের ভয়ে ২০০ টাকা দিতে বাধ্য হই। যদিও ভাড়া ১০০ টাকা।

নেত্রকোনা স্টেশন থেকে ঢাকার কমলাপুরে যাচ্ছিলেন ১০ জন শ্রমিক। তাঁদের ঢাকা যাওয়ার ভাড়ার চুক্তি হয় অ্যাটেনডেন্ট আব্দুল আউয়ালের সঙ্গে। টিকিট জনপ্রতি ১৬৫ টাকা করে হলেও ১৫০ টাকায় আব্দুল আউয়াল তাঁদের ট্রেনে তোলেন।

নেত্রকোনার সদর উপজেলার মো. হৃদয় বলেন, তাঁরা মজুরির কাজ করতে ঢাকায় যাচ্ছেন। নামাজের স্থানে বসে ১০ জনকে ১ হাজার ৫০০ টাকা দিতে হচ্ছে অ্যাটেনডেন্ট আব্দুল আউয়ালকে। তিনি বলেন, ‘আমরা মূর্খ মানুষ, পুলিশের ভয় আছে। তাই ট্রেনের লোক যায় বলে তাই করা ভালো।’

এ বিষয়ে অ্যাটেনডেন্ট আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘স্ট্যান্ডিং টিকিট না থাকায় অনেক যাত্রী টিকিট ছাড়াই ট্রেনে ওঠে। টিটি টিকিট চেক করলে জরিমানায় পড়তে হবে। তাই সকলকে ম্যানেজ করে কিছু যাত্রী নেওয়া হচ্ছে। আমাদের বেতন অল্প, তাই এভাবেই চলতে হয়।’

অপর অ্যাটেনডেন্ট মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আপনারা লিখলে আমাদের সমস্যা হবে। যাত্রীদের ভালোর কথা চিন্তা করেই ব্ল্যাকে টিকিট কিনে তাদের দিয়ে থাকি। এতে আমাদের অল্প টাকা আয় হয়। আয়ের টাকা আবার ভাগ-বাঁটোয়ারা হয়।’

যাত্রী হাবিবুর রহমান বলেন, ‘কিছুদিন ধরে ট্রেনে টিটির দেখা পাওয়া যায় না। সবকিছুই অ্যাটেনডেন্টরা করছেন। এমন কোনো যাত্রী নাই যে, তাঁরা টাকা নেয় না। লুঙ্গি পরা যাত্রীই তাঁদের হয়রানির শিকার হচ্ছে বেশি।’

হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনের জুনিয়র ট্রাভেলিং ইন্সপেক্টর অব অ্যাকাউন্টস জিল্লুর রহমান বলেন, ‘শুধু আমার ট্রেন নয়, সকল ট্রেনেই অনিয়ম হচ্ছে। আমি আপনি কেউ নিয়মের মধ্যে নেই। আজকে ভালো লাগছে না তাই টিকিট চেক করতে যাইনি। টিকিট চেক করতে গেলেই সমস্যা। জরিমানা করলে সৃষ্টি হয় বিবাদ। তাই অ্যাটেনডেন্টরাই দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছে।’

ট্রেনের পরিচালক এবি সিদ্দিক বলেন, ‘করোনার কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ট্রেন চালু হলেও স্ট্যান্ডিং টিকিট দেওয়া বন্ধ রয়েছে। লোকজনও টিকিট ছাড়া ট্রেনে উঠছে। তাঁদের দু-একজনের কাছ থেকে হয়তো কিছু টাকা পয়সা অ্যাটেনডেন্টরা নিতে পারে। তবে টিকিটও দিচ্ছে যাত্রীদের।’ সোমবার মোহনগঞ্জ থেকে ময়মনসিংহ স্টেশন পর্যন্ত ৩৫টি মামলায় যাত্রীদের ৮ হাজার ১৮০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

ময়মনসিংহ স্টেশন সুপারিনটেনডেন্ট জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ট্রেনের ভেতরে কি হয় না হয় সেটা আমার দেখার বিষয় না। কেউ যদি তাঁর দায়িত্ব ঠিকমতো পালন না করে, তাহলে কি করার আছে বলেন? সব মিলিয়ে আমি অনেক চাপের মধ্যে আছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত