Ajker Patrika

এ শুধু গানের দিন

আপডেট : ২১ জুন ২০২২, ১২: ২৫
এ শুধু গানের দিন

যেভাবে শুরু
১৯৮১ সালে ফ্রান্সের সংস্কৃতিমন্ত্রী জ্যাক ল্যাং সংগীত ব্যক্তিত্ব মরিস ফ্লুরেকে সংগীত ও নৃত্য শাখার পরিচালক নিয়োগ করেন। এক জরিপ থেকে তিনি জানতে পারেন, ফ্রান্সের ৫০ লাখ মানুষ কোনো না কোনো সংগীত যন্ত্র বাজাতে পারেন। তাঁর মনে হতে থাকে, আহা এদের সবাইকে যদি একটা দিনে রাস্তায় বের করে আনা যেত। ১৯৮২ সালের ২১ জুন ‘ফেট দে লা মিউজিক’ বা ‘মেক মিউজিক ডে’তে ঠিক তা-ই ঘটানোর চেষ্টা হয়েছিল। জ্যাক ল্যাং, প্রকৌশলী ক্রিস্টিয়ান ডুপাভিলন আর মরিস ফ্লুরের সম্মিলিত চেষ্টায় সম্ভব হয়েছিল এই উদ্যোগ। বিশেষ এই দিনটি ‘ওয়ার্ল্ড মিউজিক ডে’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
বর্তমানে ফ্রান্স, বাংলাদেশ ছাড়াও চীন, ভারত, ব্রিটেন, জার্মানি, ইতালি, গ্রিস, রাশিয়া, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ড, কোস্টারিকাসহ প্রায় ১২০টি দেশে এবং ৪৫০টি শহরে উদ্‌যাপিত হয় এই দিবস। দিনটিতে রেস্তোরাঁ, পার্ক, যানবাহন—সর্বত্র বিনা মূল্যে গান পরিবেশন করেন শিল্পীরা। শান্তি ও ইতিবাচক চিন্তাকে ছড়িয়ে দিতে দিবসটিকে ব্যবহার করা হয়।  

বাংলাদেশে আয়োজন
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বর্ণাঢ্যভাবে দিবসটি পালন করা হয়। তবে দেশের বন্যা পরিস্থিতির জন্য এ বছর অনেক অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে।

বিশ্ব সংগীত দিবস উপলক্ষে আজ বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তনে বাংলাদেশ সংগীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদের উদ্যোগে রয়েছে বিশেষ সংগীতায়োজন। এবারের স্লোগান ‘বিশ্বজনের বিচিত্র গান/ এক সপ্তকে বেঁধেছে প্রাণ।’ বেলা ৩টায় শিল্পী সমাবেশের মাধ্যমে আয়োজন শুরু হবে। বিকেল ৪টায় লোকশিল্পী আকরামুল ইসলাম বেলুন উড়িয়ে উৎসবের আনুষ্ঠানিক সূচনা করবেন।

 অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি। আলোচনায় যুক্ত হবেন সুরকার শেখ সাদী খান। সভাপতিত্ব করবেন সমন্বয় পরিষদের সহসভাপতি শিল্পী মাহমুদ সেলিম। শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করবেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সচিব মো. আছাদুজ্জামান।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে দলীয় সংগীত, একক সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন করবেন শিল্পীরা। সুরের ধারা, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, নিবেদন, গীতশতদল, বিশ্ববীণা, সপ্তরেখা একাডেমি, বাঁশুরিয়া, লোকাঙ্গন, মহিরুহ, নির্ঝরিণী একাডেমিসহ বেশ কয়েকটি সংগঠনের শিল্পীরা অংশ নেবেন।
এছাড়া শিল্পকলার প্রযোজনা

বিভাগের ব্যবস্থাপনায় জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে বিকেল ৫টায় পরিবেশন করা হবে গীতিআলেখ্য ‘চর্যালেখ্য’ ও সন্ধ্যা ৭টায় ‘আবহমান বাংলা’। 
ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজে পারফর্ম করবে ব্যান্ড চিরকুট। ব্যান্ডটির দলনেতা সুমি বলেন, ‘আমরা আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলেছি, সিলেটসহ সারা দেশের বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য এই কনসার্টের মাধ্যমে যতটুকু সম্ভব একটা ফান্ড সংগ্রহ করা যায় কি না। তাঁরা আমাদের সঙ্গে সম্মত হয়েছেন। আমরা এই কনসার্টের মাধ্যমে বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করব।’

কুমার বিশ্বজিৎপ্রত্যাশা আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফরম

কুমার বিশ্বজিৎ, সংগীতশিল্পী

সংগীত দিবস উপলক্ষে একবার  ইন্টারন্যাশনাল মিউজিক ফেস্টিভ্যাল হয়েছিল বেসরকারিভাবে। এটা সরকারিভাবে প্রতিবছর হওয়া উচিত। আমাদের প্রত্যাশা এমন একটা আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফরম, যেখানে  বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিল্পীরা আসবেন। একে অপরের মিউজিক সম্পর্কে জানবেন, বুঝবেন, সমৃদ্ধ হবেন। এটাই হওয়া উচিত। আমাদের সংগঠন ‘সংগীত ঐক্য বাংলাদেশ’ থেকে সংগীতের উন্নয়নে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে নানা প্রস্তাব দিয়েছি। মন্ত্রণালয় আমাদের সঙ্গে একমতও হয়েছে। তবে তার ফল তেমন একটা কিছু দেখতে পাচ্ছি না।

সংগীতে আমরা ক্রমেই পরনির্ভরশীল হয়ে উঠছি। আমাদের অস্তিত্ব থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত আমরা একটা প্রজন্ম তৈরি করতে পেরেছি। নিজেদের বলতে কিছু ছিল। এখন তো বাইরের সংগীতের ধারাই বেশি অনুসরণ করা হচ্ছে। আমাদের ফোক গানের বিদেশি আয়োজনটাই বেশি শোনে এখনকার ছেলেমেয়েরা। কলকাতায় রিয়েলিটি শোয়ে ফোক গান ব্যবহার করা হচ্ছে। অধিকাংশই আমাদের ফোক। মানুষ সেগুলো আগ্রহ নিয়ে শুনছেন। আমাদের সম্পদ নিয়ে অন্যরা কাজ করছে অথচ আমরা পারছি না। বিদেশি প্রতিষ্ঠান এসে নতুন আয়োজনে আমাদের গানগুলো তাদের করে নিচ্ছে। এসব আমাদের জন্য অনেক অ্যালার্মিং। এসব চলতে থাকলে আমরা সাংস্কৃতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে পড়ব, যা হবে সবচেয়ে ভয়ানক!
আমরা নিজেরা কিছু করছি না, বরং নিজের জমি অন্যের কাছে বর্গা দিয়ে প্রতিনিয়ত লুজার হচ্ছি! দেশের মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোর এগিয়ে আসা উচিত। আমরা এখন গ্লোবালাইজেশনের যুগে আছি। আমাদের গানগুলো আরও অলংকৃত করে বহির্বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষীদের কাছে উপস্থাপন করা উচিত।

গানের মানুষ ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। শিল্পীদের মধ্যে বাউলিয়ানা ভাব থাকে। অর্থ-বৈভবের দিকে তাঁরা ছোটেন না। সারাক্ষণ সৃষ্টির পেছনে পড়ে থাকেন। শেষ বয়সে গিয়ে প্রশ্ন জাগে—আমি কী করলাম? কী পেলাম? নিজের জন্য বা পরিবারের জন্য তো কিছুই করিনি! অথচ দেখা যায় তিনি সংগীতের বিশাল ভান্ডার করে গেছেন। এই শিল্পীরা কেন শেষ বয়সে দুস্থ হবেন? একটি নিয়মে আসতে হবে, যেন শিল্পীদের এই ন্যায্য প্রাপ্য তাঁদের বুঝিয়ে দেওয়া যায়।
—অনুলিখন

 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত