Ajker Patrika

বদলের বাঁকে বিয়ের শাড়ি

ফারিয়া রহমান খান
আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০২২, ১১: ২৯
বদলের বাঁকে বিয়ের শাড়ি

‘অগ্নি-পাটের শাড়ি কন্যা 
যখন নাকি পরে
স্বর্গের তারা লাজ পায় 
দেখিয়া কন্যারে।’ […]

‘অগ্নি-পাটের শাড়ি’ পরা কমলাকে দেখে আকাশের তারারাও নাকি লজ্জা পেত! দ্বিজ ঈশান সে রকমই লিখেছিলেন মৈমনসিংহ গীতিকার ‘কমলা’ পালায়।
‘অগ্নি-পাটের শাড়ি’ পরা কনে কমলা দেখতে কেমন ছিল, সে ভাবনায় না গিয়ে বরং ‘লক্ষ্মীবিলাস’ শাড়ির কথা শোনা যাক। ‘গোপী চন্দ্রের গান’-এ এই লক্ষ্মীবিলাস শাড়ির নকশার যে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, তা অত্যন্ত মনোরম। কবি আমাদের জানিয়েছেন, দরিয়ার যত মাছ আর পৃথিবীর যত পাখি, সবই ছিল সেই শাড়ির নকশায়। রাজহাঁস, বালিহাঁস, সরালি, চকোর, বুলবুলের নকশা তোলা সেই শাড়ি পরতেন রাজা গোপী চন্দ্রের বড় স্ত্রী ‘রদুনা রানি’ বা অদুনা।

এসব উদাহরণ থেকে জানা যায়, বিয়ের শাড়ি ছিল নকশাদার আর উজ্জ্বল রঙের। সেই পরম্পরার জন্যই হয়তো অনেক পরে বিয়ের শাড়ি হিসেবে লাল টুকটুকে বেনারসি পরার রেওয়াজ শুরু হয়েছিল। কনের জন্য লাল রঙের বেনারসি শাড়ি বেছে নেওয়ার অন্যতম কারণ এর ভারী ও অভিজাত নকশা। বিয়ের বেনারসি শাড়ির পাড় ও জমিনে জরির কাজ; ঘন নকশার আঁচলে সোনালি, রুপালি সুতার কাজ, বিভিন্ন মোটিফের ব্যবহার ইত্যাদি শাড়ির সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তোলে। কারুকাজপূর্ণ বেনারসিতে বিয়ের কনে হয়ে ওঠেন সবার মধ্যমণি!

কিন্তু যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে কনেরা ভারী ও জাঁকজমকপূর্ণ বেনারসিকে একপাশে সরিয়ে নিজেদের ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মিল রেখে বিভিন্ন ধরনের শাড়ি পরা শুরু করেছেন। বিয়ের দিন সহজ সাবলীল থাকতে এখন অনেকেই বেনারসির বদলে বেছে নিচ্ছেন কাঞ্জিভরম, জামদানি, জর্জেট, মসলিন, বালুচরি, কাতান, এমনকি সুতি শাড়িও। 

জামদানির আবেদন
জামদানি আমাদের দেশি শাড়ি। বর্তমানে অনেক তরুণীই বিয়েতে পরার জন্য জামদানি শাড়িকে প্রাধান্য দেন। ঐতিহ্য আর নকশার কারণে এ শাড়ি নিজেই অনন্য। আর এটি পরবর্তী সময়েও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পরা যায় বলে উপযোগিতা অনেক বেশি। জামদানি শাড়ি তৈরি হয় সুতি ও হাফসিল্ক সুতার ব্যবহারে। ফলে এ শাড়ি সামলানো সহজ এবং দীর্ঘ সময় পরে থাকার জন্য অনেক আরামদায়ক। নকশাদার জামদানি বিয়েতে কনেকে দেয় স্নিগ্ধ লুক।
বিয়েতে পরার উপযোগী জামদানি শাড়ি নিয়ে কাজ করছে কারুতন্ত্র। কারুতন্ত্রের স্বত্বাধিকারী নুসরাত মার্জিয়া বলেন, ‘বিয়েতে কীভাবে নিজেকে উপস্থাপন করবেন তা নিয়ে সব নারীর পরিকল্পনা থাকে। পাশাপাশি বিয়ের দিন যে পোশাকটি পরবেন তা যেন আরামদায়ক হয়, সেটাও ভাবতে হয়। জামদানি এমন একটি শাড়ি, যা হালকা আবার একই সঙ্গে জমকালো এবং এটি আমাদের স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী পণ্য।’

এ ছাড়াও বিয়ের শাড়ির রঙের ক্ষেত্রে যে লাল রংই বেছে নিতে হবে, এ ধারণা থেকেও এখন অনেক মেয়ে সরে এসেছেন। তাঁরা অন্য রঙের শাড়িও বেছে নিচ্ছেন। সেদিক থেকে জামদানিতে লালসহ বিভিন্ন রং দারুণভাবে ফুটো ওঠে—যোগ করেন নুসরাত মার্জিয়া।নকশার ওপর নির্ভর করে এই শাড়িগুলোর একেকটি তৈরি করতে কমপক্ষে চার থেকে পাঁচ মাস সময় লাগে। তা ছাড়া কেউ যদি বিয়েতে জামদানি শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে ওড়না বানিয়ে নিতে চান তাহলে সেটাও কাস্টমাইজ করার সুযোগ রয়েছে কারুতন্ত্র থেকে। 

দরদাম: জামদানি শাড়ির দাম নির্ভর করে নকশার ঘনত্বের ওপর। স্বাভাবিকভাবে বিয়ের জামদানির নকশা থাকে ভারী এবং এর দাম বেশি। বিয়ের জামদানির দাম সাধারণত ১৪ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা। কেউ চাইলে কারুতন্ত্রের মহাখালী ডিওএইচএসের স্টুডিওতে গিয়ে পছন্দ করে শাড়ি কিনতে পারেন বা কাস্টমাইজ করে নিতে পারেন।

 বিয়েতে পরার জন্য জামদানি এমন একটি শাড়ি, যা হালকা আবার একই সঙ্গে জমকালো এবং এটি আমাদের স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী পণ্য।

অন্যান্য শাড়ি

কাতান 
কাতান শাড়ির অনেকগুলো ধরন আছে। যেমন অপেরা কাতান, সাউথ কাতান, ইন্ডিয়ান কাতান, সিল্ক কাতান, নেট কাতান, বেনারসি কাতান, স্বর্ণ কাতান ইত্যাদি। এর বাইরে আরও অন্তত ২০ রকমের কাতান শাড়ি বাজার খুঁজলে পাওয়া যায়। সবগুলো শাড়িরই নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও বিশেষ নকশা রয়েছে। ফলে যে কেউই নিজের পছন্দ অনুযায়ী এই শাড়ি বেছে নিতে পারেন। 

কাঞ্জিভরম 
দক্ষিণ ভারতের এই সিল্ক শাড়ি বিশেষ প্রক্রিয়ায় প্রস্তুত করা হয়। উজ্জ্বল রং ও উন্নতমানের সিল্কের জন্য অনেকেই এখন বিয়েতে কাঞ্জিভরম শাড়ি পরতে পছন্দ করেন। জরির কারুকাজ থাকা সত্ত্বেও এই শাড়ি খুব বেশি ভারী হয় না। ফলে সামলানো সুবিধা। এর অনন্য কারুকাজ বিয়ের কনের সৌন্দর্য বিশেষভাবে ফুটিয়ে তোলে। 

মডেল: অন্তরা, শাড়ি: কারুতন্ত্র, জুয়েলারি: সিক্স ইয়ার্ডস স্টোরি, মেকআপ: শরীফ আর্টিস্ট্রি বাই সাফা শরীফ, ছবি: তানভীর আলীজর্জেট 
অন্যান্য শাড়ির তুলনায় জর্জেট খুবই হালকা এবং আরামদায়ক। ফলে অনেকে আজকাল বিয়ের দিনের জন্য জর্জেট শাড়ি বেছে নিচ্ছেন। তা ছাড়া এখন বিভিন্ন নকশা ও কারুকাজের জর্জেট শাড়ি বাজারে পাওয়া যায়। শুধু বিয়েতেই নয়, পানচিনি বা বউভাতের মতো অনুষ্ঠানেও অনেকে জর্জেট শাড়ি পরেন।

মসলিন
বর্তমানে বাজারে মসলিন শাড়ির খুব চল। এর প্রভাব বিয়ের শাড়ি নির্বাচনের ক্ষেত্রেও দেখা যায়। এমব্রয়ডারি বা জারকন পাথরের কারুকাজ শাড়িগুলোকে অনন্য করে তোলে। এসব শাড়ি অনায়াসে বিয়ের কনের অসাধারণ রুচির পরিচয় দেয়। 

বালুচরি 
বালুচরি হলো পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া অঞ্চলের প্রসিদ্ধ শাড়ি। এটি উজ্জ্বল রঙের হয়ে থাকে। এর আঁচল ও পাড়ে ফুটে ওঠে পৌরাণিক কাহিনি। উজ্জ্বল রঙের এই শাড়ি এখনকার সময়ে অনেকেই বিয়েতে পরে থাকেন। 

সুতি শাড়ি 
প্রথাগতভাবে, সুতির শাড়ি বিয়ের জন্য ব্যবহার করা হয় না। তবে এখন অনেকেই নিজের পছন্দমতো রং ও নকশায় তৈরি করে নেওয়া সুতি শাড়ি ব্যবহার করছেন। এখানে ঐতিহ্য বা পরম্পরার চেয়েও প্রাধান্য পায় পছন্দ ও আরামের বিষয়টি। ফুল কটন বা হাফসিল্ক শাড়ি এখন ইচ্ছেমতো তৈরি করে নেওয়া যায় বিভিন্ন জায়গায় অর্ডার দিয়ে। ফলে আধুনিক সময়ে নিজের পছন্দকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে বেছে নিচ্ছেন নকশাদার সুতির শাড়ি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত