Ajker Patrika

ইজারার মেয়াদ ফুরালেও দখল ছাড়ছে না বিমান

সাইফুল মাসুম, ঢাকা
Thumbnail image

ইজারার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) জায়গা ছাড়ছে না বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পার্শ্ববর্তী হজ ক্যাম্পের উল্টো পাশের পেছনে ওই জায়গাতে বিমান দুটি ছয়তলা আবাসিক ভবন বানিয়েছে। বাকি অংশে আরও আবাসিক ভবন বানানোর পরিকল্পনা আছে। অপর দিকে বেবিচক জায়গাটি উদ্ধার করে সেখানে সিভিল এভিয়েশন একাডেমি কমপ্লেক্স বানাতে চায়। বেবিচক ও বিমান সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্রমতে, ১৯৯১ সালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে সাময়িকভাবে ব্যবহারের জন্য বেবিচক সাড়ে ৯ একর জায়গা ২০ বছরের জন্য ইজারা দিয়েছিল। জায়গার একাংশে বিমান ছয়তলা দুটি স্থায়ী আবাসিক ভবন বানিয়েছে। বিমানকে দেওয়া ইজারার মেয়াদ ২০১২ সালে শেষ হলে তা আর নবায়ন করেনি বেবিচক। জায়গাটি ছেড়ে দেওয়ার জন্য বেবিচক থেকে বারবার তাগাদা দিলেও বিমান সাড়া দেয়নি।

সম্প্রতি বেবিচকের মাসিক সমন্বয় সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস রাষ্ট্রীয় উড়োজাহাজ সংস্থা হওয়ায় যাত্রা শুরুর লগ্নে যখন তাদের জায়গা ছিল না, তখন বিভিন্ন মেয়াদে বেবিচক তাদের জায়গা লিজ (ইজারা) দিয়েছে। সরকার থেকে এখন তাদের উত্তরা, ধানমন্ডি, পূর্বাচল ও সাভারে অনেক জায়গা দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে বিমান ওই সব জায়গা ব্যবহার করতে পারে। ইজারার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় বিমানকে জায়গা ছেড়ে দিতে হবে। দিন দিন বেবিচকের আকার বাড়ছে এবং ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে। এ পরিস্থিতিতে জায়গার অভাবে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

গত সপ্তাহে বিমানবন্দরের পাশের ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিমানের ইজারা নেওয়া জমিটির পূর্বাংশে প্রায় এক একর জায়গায় বিমানের আবাসিক এলাকা। সেখানে দুটি ছয়তলা ভবন। বাকি সাড়ে আট একর জায়গার ফাঁকা অংশে বিমানের একটি সাইনবোর্ডে লেখা—‘বিমান মাল্টি অপারেশনাল এরিয়া। অকশন ইয়ার্ড, পাইলট অবকাশ কেন্দ্র, সমন্বিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং কেবিন ক্রু আবাসিক প্রকল্প।’ জায়গাটির কিছু অংশে আছে জলাধার। পশ্চিমাংশের কিছু জায়গায় তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশনের একটি স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে।

জমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালক (প্রশাসন) মো. ছিদ্দিকুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘জায়গাটিতে বিমানের আবাসিক ভবন আছে। ওখানে বিমানের অপারেশনাল স্টাফরা থাকেন। জায়গা ছাড়ার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিমানের নামে বরাদ্দ আছে, সংগত কারণেই আমরা রাখার চেষ্টা করব।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের আরও আবাসিক ভবন করতে হবে। বিমানের মাস্টারপ্ল্যানে এই পরিকল্পনা রয়েছে। কারণ, অপারেশনাল স্টাফরা দূরে থাকলে তাঁদের জন্য দায়িত্ব পালন করা কঠিন হবে।’

সাময়িকভাবে ব্যবহারের জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে সাড়ে ৯ একর জায়গা ২০ বছরের জন্য ইজারা দিয়েছিল বেবিচক। জায়গার একাংশে ছয়তলা দুটি স্থায়ী আবাসিক ভবন বানিয়েছে বিমান

বেবিচকের একাধিক কর্মকর্তা জানান, বিমানকে অবশ্যই জায়গাটি ছাড়তে হবে। কারণ, ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর জায়গাটি দখলে রাখার আর কোনো বৈধতা নেই। তা ছাড়া পুরো জায়গাটি ঘিরে সিভিল এভিয়েশন একাডেমি কমপ্লেক্স তৈরি করার প্রকল্প হাতে নিয়েছে বেবিচক। কমপ্লেক্সের ডিজাইন করা হয়েছে। শিগগির সেখানে সিভিল এভিয়েশন একাডেমির সাইনবোর্ড লাগানো হবে। একাডেমির দ্রুত সম্প্রসারণ করতে না পারলে বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের বিশাল কর্মী বাহিনীর প্রশিক্ষণ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে।

জানা যায়, বর্তমানে সিভিল এভিয়েশন একাডেমির কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে বিমানবন্দরের ভেতরে বেবিচকের প্রধান কার্যালয়ের পাশে। সেখানে একাডেমির পর্যাপ্ত ক্লাসরুম নেই। প্রশিক্ষণার্থীদের থাকার ব্যবস্থাও নেই।

সিভিল এভিয়েশন একাডেমির পরিচালক প্রশান্ত কুমার চক্রবর্তী আজকের পত্রিকাকে বলেন, সংকট কাটিয়ে উঠতে অত্যাধুনিক সুবিধাসংবলিত সিভিল এভিয়েশন একাডেমি কমপ্লেক্স করার কোনো বিকল্প নেই। তা ছাড়া সিভিল এভিয়েশন একাডেমি বর্তমানে আইকাও ট্রেইনার প্লাস অ্যাসোসিয়েট সদস্য। তবে গোল্ডেন মেম্বারশিপ অর্জনের জন্য একাডেমির আধুনিকায়ন ও সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে।

প্রশান্ত কুমার চক্রবর্তী জানান, প্রতিবছর একাডেমিতে প্রায় তিন হাজার দেশি-বিদেশি এভিয়েশন প্রফেশনাল প্রশিক্ষণ নেন। নতুন একাডেমি কমপ্লেক্স হলে দ্বিগুণ প্রশিক্ষণার্থী প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত