Ajker Patrika

রহস্যঘেরা এক স্থাপনা

মোমেনুর রশীদ সাগর,পলাশবাড়ী (গাইবান্ধা)
আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১০: ১৫
রহস্যঘেরা এক স্থাপনা

দেয়ালের কারুকাজ নষ্ট হয়ে গেছে। বের হয়ে এসেছে ভেতরের লাল ইটগুলো। খসে পড়েছে জায়গায় জায়গায়। বিবর্ণ দেয়ালজুড়ে পড়েছে শেওলা, জন্ম নিয়েছে আগাছা। এর মধ্যেও ফারসি ভাষায় অস্পষ্ট কিছু লেখা চোখে পড়ে দেয়ালের গায়ে। আর তিনটি দরজা, গম্বুজ ও এক পাশের একটি ছোট মিনারও কোনোরকমে টিকে আছে। তা দেখেই গ্রামবাসীর ধারণা স্থাপনাটি মধ্যযুগে তৈরি। কিন্তু কবে, কে, কী কাজে এটি নির্মাণ করেছেন, তা এখনো রহস্যই থেকে গেল। বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও সে রহস্য উন্মোচন হয়নি। এমনকি অতি পুরোনো স্থাপনাটি সুরক্ষায় এগিয়েও আসেনি কেউ।

গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলা শহর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরে বরিশাল ইউনিয়নের কয়ারপাড়ায় অবস্থিত এ স্থাপনাটি দেখতে গিয়েছিলাম সম্প্রতি। বিস্তারিত তথ্য জানতে কথা বলেছিলাম স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে। কিন্তু তাঁদের কেউই মসজিদসদৃশ এই পুরাকীর্তি নিয়ে নির্ভরযোগ্য কোনো তথ্য দিতে পারেননি। তাঁরা শুধু এটুকুই জানিয়েছেন, যুগের পর যুগ এভাবে এটি দেখে আসছেন তাঁরা। আর বাপ-দাদার কাছ থেকে শুনেছেন, পশ্চিম দিক থেকে আসা এক দরবেশ সাহেব এই জায়গায় একসময় নামাজ পড়তেন। তিনি মসজিদ হিসেবেই এটি নির্মাণ করেছিলেন।

পশ্চিম থেকে আসা দরবেশের এই কথাটি রীতিমতো একটি মিথ হয়ে দাঁড়িয়েছে কয়ারপাড়ায়। বংশপরম্পরায় লোকমুখে চলে আসছে এই মিথ। ছেলে শুনেছেন বাবার মুখে, বাবা শুনেছেন দাদার মুখে, আর দাদা শুনেছেন তাঁর বাপ-দাদার মুখে। এভাবে লোকমুখে ভেসে বেড়ানো গল্পে রহস্যময় হয়ে ওঠে তা।

বহু পুরোনো এই অজানা স্থাপনা নিয়ে কথা হয় কয়ারপাড়া গ্রামের অন্যতম বয়োজ্যেষ্ঠ বাসিন্দা কাজী আব্দুর লতিফের (৮৭) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা এটাকে পবিত্র স্থান জেনে আসছি। এখানে মাঝেমধ্যেই দরিদ্রদের মাঝে খাদ্য বিতরণ করা হয়।’

ওই গ্রামের আরেক বাসিন্দা মহসীন আলী (৭৫) বলেন, ‘আমার পূর্বপুরুষেরা কেউ এটা নিয়ে সঠিক কোনো তথ্য দিতে পারেননি। তবু তাঁদের অনেকে বলে গেছেন, স্থাপনাটি অন্তত চার শ বছরের পুরোনো, এটা মসজিদের মতো দেখতে। তাঁদের কথা শুনে আমাদেরও মনে হয়েছে মসজিদই হবে। যে কারণে অনেক আগে থেকেই আমরা গ্রামবাসী এখানে দুই ঈদে নামাজ আদায় করে আসছি।’

জনশ্রুতি আছে, মসজিদ যখন নির্মাণ করা হচ্ছিল তখন ঘন জঙ্গলে পূর্ণ ছিল এই এলাকা। এখানে কেউ চুরি বা অসম্মানজনক কিছু করলে অলৌকিকভাবে সে শাস্তি পায়। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এখানে তবারক নিয়ে আসেন। ভালো নিয়তে মানত করলে নাকি পূরণ হয়ে যায় সেটাও।

গ্রামবাসীর কাছে ক্রমেই পবিত্র স্থানের মর্যাদা পাওয়া এই স্থাপনাটি রক্ষায় কোনো পদক্ষেপ নেই কেন? এই প্রশ্ন করেছিলাম বরিশাল ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মশিউর রহমান রানাকে। তাঁর জবাব, ‘সরকারি সহায়তা ছাড়া পবিত্র এই স্থানের সংস্কার করা কঠিন। এখন তো জায়গাটি উন্মুক্তভাবে পড়ে আছে।’

তবে স্থাপনাটি রক্ষা নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল বরিশাল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের। তিনি বলেন, ‘আমি আমার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী স্থাপনাটির চারপাশে দেয়াল দিয়ে দেব। যাতে লোকজন এখানে নামাজ আদায় করতে পারেন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১০০ বছর পর জানা গেল, ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস মোয়াজ্জেমকে অব্যাহতি

ঘন ঘন নাক খুঁটিয়ে স্মৃতিভ্রংশ ডেকে আনছেন না তো!

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত