Ajker Patrika

দুই পা নিশ্চল, তবু রক্ত দিতে হাসপাতালে

জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম
আপডেট : ০৯ জুন ২০২২, ০৯: ০৫
দুই পা নিশ্চল, তবু রক্ত দিতে হাসপাতালে

কিছু মানুষ অন্ধকার ছিঁড়ে উজ্জ্বল আলোর পথ দেখান। এ মানুষটির গল্প সে রকমই। দেখিয়েছেন অন্যরকম মহানুভবতা। যাঁর দুই পা পুরোপুরি নিশ্চল। হাতে ভর করে নড়াচড়া করতে হয়। সেই তিনিই চারটি গাড়ি বদলে ১৩ কিলোমিটার দূর থেকে ছুটে আসেন রক্ত দিতে। বাঁচান মুমূর্ষু মানুষকে। তিনি মো. নাজিম উদ্দিন। যিনি জন্ম থেকে প্রতিবন্ধী হয়েও সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণে আহত রোগীর পাশে এসে দাঁড়ান।

বিস্ফোরণের ঘটনাটি শনিবার রাত সাড়ে ১১টার। এর আগেই তিনি ঘুমিয়ে যান। সকালে টিভি খুলে দেখেন, সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণের খবর। শত শত আহত রোগী চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে। এক মুহূর্তও আর দেরি করেননি। দুই হাতে ভর করে বাসা থেকে বের হন। তারপর চারটি বাহন পাল্টে চমেকে এসে মুমূর্ষু রোগীর জন্য দুই ব্যাগ রক্ত দেন।

নাজিম উদ্দিনের প্রতিটি কথা শুনলেও যে কারও চোখে জল আসবে। চমেকে এভাবে ছুটে আসার কারণ বলতে গিয়ে বলেন, ‘আমার তো ভাই টাকা-পয়সা নেই। এই দেহটি আছে। এখান থেকে যা প্রয়োজন তার সবটাই দিতে রাজি। রক্ত দিয়ে হলেও যদি সহযোগিতা করতে না পারি, তাহলে বেঁচে থেকে লাভটা কী?’

নাজিম উদ্দিন যখন চমেকের ব্লাড ব্যাংকের সামনে রক্ত দিতে যান, তখন সবাই ঘিরে ধরেন তাঁকে। দুই পা যাঁর থেকেও নেই, দুই হাতে ভর করেই যাঁর চলাফেরা; তিনি কিনা আগ্রাবাদের সিমেন্ট ক্রসিং থেকে আসেন রক্ত দিতে! উপস্থিত সবাই একপ্রকার বিস্মিত হয়ে যান। অনেকের কাছে হয়ে যান তিনি ‘অন্য গ্রহের বাসিন্দা’।

নাজিম আজকের পত্রিকাকে জানান, শনিবার রাতে সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণ হয়। পরদিন সকাল সকাল টিভি খুলে জানেন সীতাকুণ্ডের ভয়াবহতা। এক মিনিটও আর দেরি করেননি। বাসা থেকে ১০ মিনিটের পথ আগ্রাবাদ সিমেন্ট ক্রসিং। দুই হাতে ভর করে এসে ১০ নম্বর বাসে উঠে চলে আসেন দুই নম্বর গেট। সেখান থেকে একটি অটো রিকশা করে প্রবর্তক মোড়, তারপর আবার রিকশা করে জরুরি বিভাগের সামনে এসে উপস্থিত হন। এর মধ্যে এক আত্মীয় রক্ত লাগবে বললে তিনি চমেকের ব্লাড ব্যাংকে গিয়ে দুই ব্যাগ রক্ত দেন।

নাজিম উদ্দিন জানান, তাঁর মা-বাবা, স্ত্রী ও ১০ বছর বয়সী এক মেয়ে আছে। কাঠগড় কনটেইনার ডিপোর মালিক তাঁকে ছোট একটি চাকরি দেন। সেই টাকায় তাঁর সংসার চলে। পাশাপাশি মানবিক কাজে যুক্ত আছেন।

গতকাল বেলা ৩টায়ও তিনি চমেকে যান। নাজিম বলেন, ‘কারও রক্ত লাগবে কিনা তা খোঁজ নিতে আসা। কারণ আমার কাছে রক্ত দেওয়ার অনেক পরিচিত মানুষ আছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত