Ajker Patrika

দখল-দূষণে মরছে বলেশ্বর

পিরোজপুর প্রতিনিধি
দখল-দূষণে মরছে বলেশ্বর

পিরোজপুরে প্রায় এক ডজন নদ-নদী এবং অসংখ্য খাল দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভরাট করা অংশে দখলদারেরা নির্মাণ করছেন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়ি।

পিরোজপুরের একসময়ের প্রমত্তা বলেশ্বর নদ এখন দখলে-দূষণে প্রায় মরে গেছে। অথচ খরস্রোতা বলেশ্বরকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল জনবসতি। আর ব্যবসা-বাণিজ্য বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকেও ছিল জমজমাট। সে সময় এ নদ ছিল বিশাল। আর সংক্ষিপ্ত পথ থাকায় বলেশ্বর ছিল আন্তর্জাতিক নৌরুট। ব্যবসা-বাণিজ্য আর চলাচলের সুবিধার জন্য নদটি ছিল সুপরিচিত। মূলত এই রুটকে কেন্দ্র করেই ব্যবসায়ী বন্দর ঝালকাঠি এবং বাখরগঞ্জ হয়ে উঠেছিল দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম ব্যবসা প্রধান ও জনবসতিপূর্ণ এলাকা। আর পিরোজপুর হয়ে ওঠে এর ট্রানজিট রুট। এক সময়ের সেই জমজমাট ট্রানজিট রুটের বলেশ্বর ও দামোদরের দুই তীরে দখল চলছে। দুই শতাধিক দখলদারের থাবায় নাব্যতা হারিয়ে মরা বলেশ্বর আর দামোদর খালে পরিণত হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) শহর রক্ষা বাঁধের নামে অপরিকল্পিতভাবে নদের মাঝখানে ব্লক ফেলায় খেয়া নৌকাসহ ছোট ছোট ট্রলার এখন নদের মাঝখানে নোঙর করতে হয়। কিন্তু যখন জোয়ার আসে তখন সমস্যায় পড়েন যাত্রীরা, বিশেষ করে নারী ও শিশুরা। আগে বড় বড় কার্গো জাহাজে করে সরকারি খাদ্যশস্য এবং ইট, বালু, পাথর পরিবহন করা যেত, কিন্তু এখন ব্লকের কারণে পাড়ে এসব পণ্যবাহী নৌযান পাড়ে ভিড়তে পারে না। তা ছাড়া রয়েছে ডুবো চর। এ কারণে কোনো জাহাজ আসতে পারে না।

জেলা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা নকিব বলেন, দামোদরের দুই তীরের খাল ভরাট করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়ি নির্মাণ করায় খাল পরিণত হচ্ছে নর্দমায়। শুধু বর্ষাকালে কিছু মাঝারি ধরনের নৌকা মালামাল নিয়ে চলাচল করতে পারে। বিভিন্ন সময় দখলকার উচ্ছেদে প্রশাসন ব্যবস্থা নিলেও, কিছুদিন পর আবারও চলে দখলের মহোৎসব। আর এতে জল পথে সহজ ও সাশ্রয়ী যোগাযোগ বন্ধের উপক্রম হয়েছে।

পাশাপাশি মাঝখানে ব্লক ফেলায় শহরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা বলেশ্বর নদ এখন মরা নদে পরিণত হয়েছে। ফলে একদিকে যেমন ব্যবসা-বাণিজ্যে পরিবহন খরচ বাড়ছে, অন্যদিকে সৃষ্টি হচ্ছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। পরিবেশ বিপর্যস্ত হচ্ছে।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসী, অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে এবং নদ-নদী ও খালের পাড়ে ইজারা নেওয়া জায়গায় পাকা স্থাপনা নির্মাণ বন্ধে প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ চান। তাঁদের দাবি, সঠিকভাবে দামোদর খাল খনন করে পণ্যবাহী নৌযান চলাচলের ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে মন্ত্রী ও স্থানীয় সাংসদের মাধ্যমে পাউবোর শহর রক্ষা বাঁধের নামে অপরিকল্পিতভাবে নদের মাঝে ব্লক ফেলায় যে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে, তা থেকে পিরোজপুরের বাসিন্দাদের মুক্তি দেওয়ার দাবি জানান তাঁরা।

এ ব্যাপারে পিরোজপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবে মাওলা মো. মেহেদী হাসান বলেন, ভাঙন রোধে কাজ করা হচ্ছে।  

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত