Ajker Patrika

দূষণে মৃত্যুঘণ্টা চিকনাই নদের

আটঘরিয়া (পাবনা) প্রতিনিধি
দূষণে মৃত্যুঘণ্টা চিকনাই নদের

পাবনার আটঘরিয়ায় দখল ও দূষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে চিকনাই নদ। অপরিকল্পিতভাবে স্লুইসগেট, সেতু, কালভার্ট ও অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের কারণে দিন দিন নদটি সরু হয়ে পড়ছে। এ ছাড়া নদে পাট জাগ দেওয়ায় এর স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়েছে।

উপজেলার ভূমি অফিসের সূত্রে জানা গেছে, চিকনাই নদের উৎপত্তিস্থল ধরা হয় নাটোরের গুরুদাসপুরে গাড়ফা এলাকাকে। এটি পাবনার চাটমোহরের বড়াল নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। চিনাই নদটি আটঘরিয়া উপজেলার দেবোত্তর ইউনিয়নের গোড়রী থেকে শুরু হয়ে লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের দুলামপুর পর্যন্ত প্রবাহিত হচ্ছে। নদটির দৈর্ঘ্য ২৬ কিলোমিটার, প্রস্থ ১৫০ ফুট ও গভীরতা প্রায় ২৫ ফুট।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এ বছর তেমন বৃষ্টি হয়নি। তাই কৃষকেরা নদে পাট জাগ দিয়েছেন। এতে নদের পানি দূষিত হয়েছে।

এ ছাড়া কচুরিপানা, হাট-বাজারের বর্জ্য সরাসরি নদে আসায় পানি দূষণ হচ্ছে।

জানতে চাইলে উপজেলার তারাপাশা গ্রামের কৃষক মো. মোসলেম উদ্দিন বলেন, এই এলাকার অন্যতম প্রধান ফসল পাট। গত বছর ভালো দাম পাওয়ায় এলাকার অনেক কৃষক এবার পাট চাষে ঝুঁকেছেন। তবে এবার খরা হওয়ায় খাল-বিলে পর্যাপ্ত পানি ছিল না। তাই কৃষকেরা বাধ্য হয়ে চিকনাই নদে পাট জাগ দিয়েছেন। এতে নদের পানি দূষিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বৃষ্টি হলে নদের পানি আবারও স্বাভাবিক হবে।

উপজেলার সুজাপুর গ্রামের মাঝি বিনোদ পাটোয়ারী বলেন, একসময় গোড়রী ঘাট থেকে নৌকায় মানুষ ও মালামাল নিয়ে ধানুয়াঘাটা, হাটগ্রাম, ডেমরাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে আনা-নেওয়া করতেন তিনি। কিন্তু এখন নদটিতে অপরিকল্পিতভাবে সেতু ও কালভার্ট নির্মাণের কারণে নৌকা চালানো যায় না। তাই এই পেশা ছেড়ে এখন অন্য কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন তিনি।

ঘাসিখোলা গ্রামের জেলে শ্রীচরণ হালদার বলেন, এই নদে প্রচুর পরিমাণ পুঁটি, বোয়াল, শিং, মাগুর, কই, ট্যাংরাসহ বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ পাওয়া যেত। এই মাছ ধরে বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করতেন তিনি। নদের পানি দূষণের কারণে দেশি প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও দেবোত্তর ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক জয়ব্রত সাহা বলেন, একসময় এই নদীপথ ব্যবহার করে উপজেলার গোড়রী বাজার থেকে ব্যবসায়ীরা পাট ও অন্য মালামাল নিয়ে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জের, চাঁদপুর, সিরাজগঞ্জ, বেড়া, ভাঙ্গুড়াসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে ব্যবসা করতেন। এখন সেটি মৃতপ্রায়।

নদী রক্ষা আন্দোলনের পাবনা জেলা কমিটির সদস্যসচিব এস এম মাহবুবুর রহমান বলেন, ডেমরার স্লুইসগেট নির্মাণের কারণে চিকনাই নদের সঙ্গে বড়ালের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। ফলে অবাধ পানি প্রবাহ বন্ধ হয়। এ ছাড়া উপজেলার তারাপাশা নামক স্থানে স্লুইসগেট নির্মাণ করায় ইছামতী হয়ে পদ্মা নদীর সঙ্গে এর সংযোগ বন্ধ হয়েছে। ফলে চিকনাই নদ ক্ষতির মুখে পড়েছে।

উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডর সহকারী (পাউবো) প্রকৌশলী মো. ফরিদ আহম্মেদ বলেন, নদের পানি দূষণ রোধে সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার পরিকল্পনা আছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাকসুদা আক্তার মাসু বলেন, চিকনাই নদটির গতিধারা ফিরিয়ে আনতে প্রতিনিয়ত কাজ করা হচ্ছে। নদের পাড়ে গড়ে ওঠা মুরগির খামার বন্ধের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ ছাড়া নদটির ব্যবহারবিধির সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রুয়া নির্বাচন: বিএনপিপন্থীদের বর্জন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জামায়াতপন্থী ২৭ জন নির্বাচিত

সৌদি আরবের কেনা ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলকে দেওয়ার অনুরোধ যুক্তরাষ্ট্রের, প্রত্যাখ্যান করে কিসের ইঙ্গিত দিল রিয়াদ

‘পাপ কাহিনী’র হাত ধরে দেশের ওটিটিতে ফিরল অশ্লীলতা

বীর্যে বিরল অ্যালার্জি, নারীর বন্ধ্যাত্ব নিয়ে চিকিৎসকদের নতুন সতর্কতা

কক্সবাজারে যাওয়ার পথে ২৩ মামলার আসামিকে কুপিয়ে হত্যা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত