Ajker Patrika

নৈতিক অবক্ষয়ের কারণ ও প্রতিকার

ড. এ এন এম মাসউদুর রহমান
Thumbnail image

যৌবন আল্লাহ তাআলার বড় নেয়ামত। এ সময় ব্যক্তি যা ইচ্ছা করতে পারে। কিন্তু সময়টি বেশি দিন স্থায়ী হয় না। তাই যৌবনের গুরুত্ব অনুধাবন করে সুস্থ-সুন্দর কাজ করাই যুবকের দায়িত্ব। মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা পাঁচটি জিনিসের আগে পাঁচটি জিনিসকে সুবর্ণ সুযোগ মনে করো। বার্ধক্যের আগে যৌবনকে, অসুস্থতার আগে সুস্থতাকে, অসচ্ছলতার আগে সচ্ছলতাকে, ব্যস্ততার আগে অবসরকে এবং মৃত্যুর আগে জীবনকে।’ (মুস্তাদরাকে হাকিম) ইমাম আহমদ (রহ.) বলেন, ‘আমি যৌবনকে এমন বস্তুর সঙ্গে তুলনা করি, যা ক্ষণিকের জন্য আমার বগলের নিচে থেকে এরপর হারিয়ে যায়।’

যৌবন ইবাদতের সেরা সময়
যৌবনকাল বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগি করার সুবর্ণ সময়। যারা বুদ্ধিমান তারাই যৌবন কাজে লাগায়। যৌবন চলে যাওয়ার পর আফসোস ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। কারণ এটি বারবার ফিরে আসে না। যারা অবহেলা করে যৌবন নষ্ট করে, তারা যেমন দুনিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তেমনি আখিরাতে এ-সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়া ছাড়া কোনো আদম সন্তানের দুই পা সামনে এগোতে পারবে না। প্রশ্নগুলো হলো—জীবন কোথায় ব্যয় করেছে, যৌবনকাল কোথায় নিঃশেষ করেছে, সম্পদ কোথা থেকে উপার্জন করেছে, সম্পদ কোথায় ব্যয় করেছে এবং যা জেনেছে, সেই অনুযায়ী কতটুকু আমল করেছে।’ (তিরমিজি) তিনি আরও বলেন, ‘কিয়ামতের দিন যখন আল্লাহর ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না, তখন সাত শ্রেণির মানুষকে আল্লাহ তাঁর ছায়া দেবেন। এর মধ্যে এক শ্রেণির হলো, যে যুবক আল্লাহর ইবাদতে তার যৌবনকাল কাটিয়ে দেয়।’ (বুখারি)

যুবকদের অধঃপতনের কারণ ও প্রতিকার
যুবসমাজ জাতির চালিকা শক্তি। তাদের ছাড়া সমাজ পরিবর্তন অসম্ভব। তাদের শক্তি ও ঐক্যের ওপর ভিত্তি করেই যেকোনো আন্দোলন সফলতার মুখ দেখে। তাই যে সমাজে যুবকদের চরিত্র ভালো থাকবে, সেখানে শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্বাভাবিক জীবন বিরাজমান থাকবে। বিপরীতে যুবকদের চরিত্র নষ্ট হলে সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট হয়। এখানে যুবসমাজের অধঃপতনের প্রধান কয়েকটি কারণ ও প্রতিকার তুলে ধরা হলো:

মাদকাসক্তি: মাদকে আসক্তি যুবসমাজকে অধঃপতনের চূড়ান্ত সীমায় নিয়ে গেছে। অথচ সব নেশাজাতীয় দ্রব্য হারাম। মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা মাদক গ্রহণ করবে না। কারণ তা সব অপকর্ম ও অশ্লীলতার চাবিকাঠি।’ (ইবন মাজাহ) হাদিসে এসেছে, মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত দশ শ্রেণির মানুষের প্রতি রাসুলুল্লাহ (সা.) অভিশাপ দিয়েছেন। তারা হলো—মদপানকারী, মদ প্রস্তুতকারী, মদ তৈরির উপদেষ্টা, মদ বহনকারী, যার কাছে বহন করা হয়, যে পান করায়, মদ বিক্রেতা, মূল্য গ্রহণকারী, মদ ক্রয়-বিক্রয়কারী এবং যার জন্য মদ কেনা হয়।’ (তিরমিজি) তাই মদ ও সব নেশাজাতীয় দ্রব্য থেকে বেঁচে থাকাই যুবসমাজের মুক্তির একান্ত পথ।

অশ্লীলতা: যুবসমাজ ভিনদেশি অশ্লীল সংস্কৃতির কোপানলে পড়ে তাদের চরিত্র হারাতে বসেছে। তাদের মেধা-মগজ সর্বদা সে দিকেই পড়ে থাকে। তাই তাদের এ অধঃপতন। আল্লাহ বলেন, ‘আর যারা জুলুম করেছে, তোমরা তাদের প্রতি ঝুঁকে পোড়ো না; অন্যথায় আগুন তোমাদের স্পর্শ করবে এবং আল্লাহ ছাড়া তোমাদের কোনো অভিভাবক থাকবে না।’ (সুরা হুদ: ১১৩)। মহানবী (সা.) বলেন, ‘সে ব্যক্তি আমাদের দলভুক্ত নয়, যে আমাদের ছেড়ে অন্যের সাদৃশ্য গ্রহণ করে। তোমরা ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের সাদৃশ্য অবলম্বন কোরো না।’ (তিরমিজি) 

অবাধ মেলামেশা: ইসলাম কখনোই নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা অনুমোদন করে না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে নবি পত্নীগণ, তোমরা অন্য নারীদের মতো নও; যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, তবে পরপুরুষের সঙ্গে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না। যার ফলে সে ব্যক্তির কুবাসনা সৃষ্টি হয়, যার অন্তরে আসক্তি আছে। তোমরা সংযত কথাবার্তা বলো।’ (সুরা আহজাব: ৩২) 

দুনিয়ার মোহ: মানবজীবন পরিচালনার জন্য ইহকালীন ও পারলৌকিক উভয় জ্ঞান অর্জন করাই ফরজ। তবে যে জ্ঞানই অর্জন করি না কেন, তা যেন আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হয়। কিন্তু আজকের যুবসমাজ কেবল পার্থিব উদ্দেশ্যেই জ্ঞানার্জন করার কারণে এবং অর্থ, নাম, খ্যাতির পেছনে দৌড়ানোর কারণে পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি এমন ইলম অর্জন করে, যা দিয়ে সে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে, কিন্তু সেই শিক্ষা কেবল পার্থিব কোনো লাভের উদ্দেশ্যে অর্জন করে, তবে সে কিয়ামতের দিন জান্নাতের সুগন্ধটুকুও পাবে না।’ (আবু দাউদ) 

অসৎ সঙ্গ: অসৎ বন্ধুর সঙ্গ মানুষকে প্রতারিত করে। কিন্তু প্রতারিত হওয়ার পর আফসোস ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। আল্লাহ বলেন, ‘আর সেদিন জালিম নিজের হাত দুটো কামড়িয়ে বলবে, হায়! আমি যদি রাসুলের সঙ্গে কোনো পথ অবলম্বন করতাম। হায় আমার দুর্ভোগ! আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম। অবশ্যই সে তো আমাকে উপদেশবাণী থেকে বিভ্রান্ত করেছিল, আমার কাছে তা আসার পর। আর শয়তান তো মানুষের জন্য চরম প্রতারক।’ (সুরা ফুরকান: ২৭-২৯)

যেসব কারণে যুবসমাজ অধঃপতিত হয়েছে তা যত তাড়াতাড়ি প্রতিহত করা যাবে, তত তাড়াতাড়ি যুবসমাজের উন্নয়ন সাধন করা সম্ভব হবে। অন্যথায় সমাজ, দেশ ও জাতি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

লেখক: অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত