Ajker Patrika

পশুর হাটে দালালের দৌরাত্ম্য

সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৬ জুলাই ২০২২, ১৫: ১১
পশুর হাটে দালালের দৌরাত্ম্য

পবিত্র ঈদুল আজহার বাকি মাত্র চার দিন। হাটগুলোতেও রয়েছে পর্যাপ্ত পশুর জোগান। ক্রেতা-বিক্রেতারাও আসছেন দলে দলে। আর এটিকে মোক্ষম সময় ভেবে নিয়েছে হাট ইজারাদারের লোকেরা। সে কারণে পশুর হাটে সাঁটানো হয়নি টোল আদায়ের কোনো তালিকা। ক্রেতা-বিক্রেতাদের অন্ধকারে রেখে উভয়ের কাছ থেকে টাকা আদায় করছেন তাঁরা ইচ্ছেমতো। সেই সঙ্গে পশুর হাটে বেড়েছে দালালের দৌরাত্ম্য। তাঁরা উভয়কে ঠকিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। এমনই দৃশ্য দেখা গেছে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পশুর হাটগুলোতে।

তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ-আল-মারুফ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গবাদিপশুসহ ১২৫ ধরনের দ্রব্য বেচাকেনার জন্য টোল নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে প্রতিটি গরু ও মহিষ সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা, ছাগল ও ভেড়ার জন্য ১৫০ টাকা টোল নির্ধারণ করা হয়। বিক্রেতা নয়, গবাদিপশুর ক্ষেত্রে শুধু ক্রেতা টোল দেবেন। এ-সংক্রান্ত নির্দেশনা ও তালিকা ইতিমধ্যে হাট ইজারাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আর সেগুলো প্রতিপালনে সার্বক্ষণিক তদারকি করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া কমবেশি সবখানে দালাল আছে। তারপরও দেখছি কী করা যায়।’

জানা গেছে, প্রতিটি হাটে টোল আদায়ের তালিকা দৃশ্যমান স্থানে সাঁটানো বাধ্যতামূলক। কিন্তু গত শনিবার বিকেলে সরেজমিন উপজেলার প্রাণকেন্দ্র মীরগঞ্জ হাটে কোথাও এ তালিকা সাঁটানো দেখা যায়নি। একই অবস্থা ছিল শোভাগঞ্জ পশুর হাটেও।

উপজেলার ১৫ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ছোট-বড় ৩৯টি হাট রয়েছে। এর মধ্যে ৭টি হাটে পশু বেচাকেনা শুরু হয়েছে। হাটগুলো হচ্ছে মীরগঞ্জ, কাঠগড়া, বেলকা, শোভাগঞ্জ, কাশিম বাজার, পাঁচপীর ও জামাল হাট।

এর মধ্যে গত শনিবার মীরগঞ্জ ও শোভাগঞ্জ হাট ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতাদের কাছে অতিরিক্ত টোল আদায়ের পাশাপাশি বিক্রেতাদের কাছ থেকেও অবৈধভাবে টোল নেওয়া হচ্ছে। বেচাকেনার জন্য নির্ধারিত টোল চার্টও চোখে পড়েনি কোথাও। সেই সঙ্গে সরব উপস্থিতি ছিল পশুর দালালদেরও।

মীরগঞ্জ হাটে পশু বিক্রি করে বাড়ি ফিরছিলেন বামনডাঙ্গার শিক্ষক আ. রউফ মিয়া (৫৫)। তিনি বলেন, ‘পশুর হাটে টোল আদায়ের তালিকা টাঙানো থাকার কথা ছিল। কিন্তু সেটি কোথাও দেখা যায়নি। সে কারণে ইজারাদারের লোকজন ইচ্ছেমতো টোল আদায় করছেন। আমার কাছে ২০০ আর যিনি গরুটি ক্রয় করেছেন তাঁর কাছে ৬০০। মোট ৮০০ টাকা নিয়েছেন ইজারাদারের লোকজন। তাঁদের সঙ্গে এ ব্যাপারে অনেক কথা হয়েছে কোনো কাজ হয়নি।’

গরু না কিনে খালি হাতে বাড়ি ফিরছিলেন সোনারায় গ্রামের মোজাম্মেল হক (৬০)। তিনি বলেন, ‘কেমন করি গরু কিনি। দালাল দিয়া হাট ভর্তি। হাটে কোনো মালিকের কাছে গরু নেই। সবগুলো দালালের হাতে। তাঁরা কী সব ভাষা ব্যবহার করেন, বোঝায় যায় না। সে কারণে বাড়ি ফেরত যাচ্ছি। অন্য হাটে গরু কিনব ভাবছি।’

শোভাগঞ্জ বাজারের গরু ব্যবসায়ী আলম মিয়া (৪৫) বলেন, ‘এ হাটে গরু কিনলে ৬০০ টাকা আর বিক্রি করলে ২০০ টাকা দিতে হয়। একটি গরু কেনাবেচা হলেই ৮০০ টাকা ইজারাদারের লোকদের পকেটে চলে যায়। করার কিছুই নেই।’

মীরগঞ্জ ও শোভাগঞ্জ হাটের ইজারাদার মো. সোহেল রানা অতিরিক্ত টোল নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘করোনার কারণে গত দুই বছর কোনো ব্যবসা হয়নি। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এটি করা হচ্ছিল। এ ছাড়া টোল নির্ধারণ তালিকা কাঠ আর বাঁশের অভাবে সাঁটানো হয়নি। আগামী হাটবার এটি করা হবে ইনশা আল্লাহ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত