বাজারে কম দামের মাছ-সবজি খুঁজছে মানুষ

নিত্যপণ্যের দাম প্রতিদিনই বাড়ছে। বাজার খরচের বাজেট না মেলায় আংশিক পচা বা নিম্নমানের মাছ-মাংস ও সবজি কিনছেন অধিকাংশ ক্রেতা। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির চিত্র উঠে এসেছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তালিকাতেও। বাজারের ৩২ ধরনের খাদ্যপণ্যের দামের ওঠানামার হিসাব রাখে সংস্থাটি। তাদের গত এক মাসের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এ সময়ের ব্যবধানে বাজারে ৩২ খাদ্যপণ্যের মধ্যে বেড়েছে ১৯টির দাম। কমেছে শুধু একটি পণ্য, ব্রয়লার মুরগির দাম, যা গত মাসের চেয়ে বর্তমানে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে।

গতকাল কারওয়ান বাজারে মাছ কিনতে আসা কাজী ইয়াসিন জানান, তাজা রুই মাছের দাম ৩৫০ টাকা। আবার একই মাছ মরে যাওয়ার কারণে বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায়। এ কারণে অন্যান্য পণ্যের খরচ মেটাতে তিনি কম দামের মাছটিই কিনেছেন। তবে মাছ বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এ সপ্তাহে আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে প্রায় সব ধরনের মাছ।

সেগুনবাগিচার সিটি করপোরেশন মার্কেটে সবজি কিনছিলেন ফখরুল ইসলাম। তিনি জানান, এক দিন বা দুই দিন আগের সবজি কিছুটা কম দামে পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণে তিনি কম দামের সবজিই কিনেছেন। তিনি বলেন, আগেই বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে, আয় দিয়ে আর চলছে না। এখন কিছুটা নিম্নমানের হলেও কম দামের পণ্যের দিকে যেতে হচ্ছে।

সেগুনবাগিচার সিটি করপোরেশন মার্কেটে দেখা গেছে, শিম কেজি প্রতি ৫০-৬০ টাকা, মানভেদে বেগুন ৫০-৮০ টাকা, ওলকপি ৫০-৬০ টাকা, দেশি গাজর ৬০-৮০ টাকা, কাঁচা টমেটো ৮০-১০০ টাকা, লাল টমেটো ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া মানভেদে বাজারে একটি ফুলকপি ৪০-৬০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কেজি প্রতি কাঁচা মরিচের দাম ৬০-৮০ টাকা। আর পাতাসহ নতুন পেঁয়াজের প্রতিটি আঁটি বিক্রি হচ্ছে ৫০-৭০ টাকায়। তুলনামূলক কম দামের মধ্যে আছে মুলা মানভেদে প্রতি কেজি ৩০-৪০ টাকা এবং পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ টাকায়। এক বা দুই দিন আগের একই পণ্য বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ২০ টাকা কমে। এ ছাড়া বাজারে ক্যাপসিকাম, ব্রকলি ও রেড ক্যাভেজের মতো সবজিও এসেছে। তবে এসব সবজি সাধারণের নাগালের বাইরে।

সবজি বিক্রেতা মোজাফফর জানান, ‘সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় বাজারে একটু নিম্নমানের সবজির চাহিদাই বেশি। দুই-এক দিন আগের জমে যাওয়া সবজির দাম কম হওয়াতে হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া সবাই সেগুলোই কিনছেন। এ কারণে আমরাও আড়ত থেকে খুব ভালো সবজি একটু কম আনছি।’

এদিকে বাজারে কমতে শুরু করেছে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম। খুচরায় প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকায়। মুরগির ডিমের ডজন ১২৫-১৩০ টাকা।

বাজারে নতুন পেঁয়াজ আসতে শুরু করায় পেঁয়াজ ও রসুনের দামও কমতির দিকে।

বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে মানুষের এমন নাভিশ্বাস উঠলেও জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলছে, বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে তারা। সংস্থাটির সহকারী পরিচালক এবং ঢাকা অফিসের প্রধান আব্দুল জব্বার মণ্ডল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা যেখানে হাত দিচ্ছি, সেখানেই অনিয়ম ধরা পড়ছে। দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে অনেকে ব্যক্তিগত মুনাফা করার চেষ্টা করছেন। বাজারে পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে নিয়মিত তদারক করছি। যেখানে অসাধুতা পেয়েছি, সেখানেই তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনেছি।’