Ajker Patrika

ক্ষতিকর মাইক্রোপ্লাস্টিক টি-ব্যাগ ও চিনিতে

বেলাল হোসেন, জাবি
আপডেট : ২২ মে ২০২২, ০৮: ৫৮
ক্ষতিকর মাইক্রোপ্লাস্টিক টি-ব্যাগ ও চিনিতে

দেশের বিভিন্ন ব্র্যান্ডের চিনি ও টি-ব্যাগে ক্ষতিকর উপাদান মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি রয়েছে। এই দাবি করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। তাঁরা পৃথক দুটি গবেষণায় এমন কিছুর সন্ধান পেয়েছেন বলে প্রকাশিত নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।

‘ইজ দেয়ার টি কমপ্লিমেন্টেড উইথ দি অ্যাপেইলিং ফ্লেভার অব মাইক্রোপ্লাস্টিক? আ পায়োনিয়ারিং স্টাডি অন প্লাস্টিক পলিউশন ইন কমার্শিয়ালি অ্যাভেইলেবল টি ব্যাগস ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে টি-ব্যাগসংক্রান্ত গবেষণাটি আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘সায়েন্স অব দ্য টোটাল এনভায়রনমেন্ট’-এ প্রকাশিত হয়েছে। অন্যদিকে চিনিসংক্রান্ত গবেষণাটিও একই জার্নালে গৃহীত হয়েছে।

দুটি গবেষণাতেই অংশগ্রহণ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, অধ্যাপক খবির উদ্দিন, একই বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরিন এবং ব্রাজিলের ফেডারেল ইউনিভার্সিটি অব গোয়াসের গুইলহার্ম মেলাফিয়া।

চিনিসংক্রান্ত নিবন্ধটিতে উল্লেখ করা হয়, ‘বাজারের ৫টি ব্র্যান্ড ও নন-ব্র্যান্ডের চিনিতে আশঙ্কাজনক মাত্রায় মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি রয়েছে, যা শুধু চিনির মাধ্যমেই দেশের মোট জনসংখ্যার দেহে প্রতিবছর গড়ে ১০ দশমিক ২ টন মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা প্রবেশ করতে পারে।’

এতে দাবি করা হয়, ‘রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন সুপারমার্কেট থেকে সংগ্রহ করা ৫টি জনপ্রিয় ব্র্যান্ড এবং দুটি নন-ব্র্যান্ডের চিনিতে কেজি প্রতি গড়ে ৩৪৩ দশমিক ৭টি প্লাস্টিক কণা রয়েছে। যার মধ্যে অধিকাংশ কণাই ৩০০ মাইক্রোমিটারের চেয়ে ছোট আকারের এবং কালো, গোলাপি, নীল ও বাদামি বর্ণের। এসব প্লাস্টিক কণার মধ্যে রয়েছে এবিএস, পিভিসি, পিইটি, ইভিএ, সিএ, পিটিএফই, এইচডিপিই, পিসি এবং নাইলন নামক রাসায়নিক কণা।’

এদিকে টি-ব্যাগের ওপর পরিচালিত গবেষণায় জানা যায়, ‘নমুনা হিসেবে ব্যবহৃত ৫টি ব্র্যান্ডের টি-ব্যাগে পলিটেট্রা ফ্লুরোইথিলিন, হাই ডেনসিটি পলিথিলিন, পলি কার্বোনেট, পলিভিনাইল ক্লোরাইড, নাইলন, ইথিলিন ভিনাইল এসিটেট, সেলুলোজ এসিটেট এবং এবিএস প্রভৃতি প্লাস্টিক কণা পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে ইথিলিন ভিনাইল এসিটেট, এবিএস এবং সেলুলোজ এসিটেটের আধিক্য তুলনামূলক বেশি। এসব আণুবীক্ষণিক প্লাস্টিক কণা আকারে ৩৩ থেকে ২ হাজার ১৮০ মাইক্রোমিটার পর্যন্ত হয়। প্লাস্টিকগুলো কিছু তন্তু আকৃতির, কিছু টুকরা, কিছু গোলক আকৃতির এবং কিছু ঝিল্লি (ফিল্ম) আকৃতির।’

গবেষণায় আরও উল্লেখ করা হয়, ‘টি-ব্যাগগুলোতে প্রায় ৯ ধরনের রং পাওয়া গেছে; যেগুলোর মধ্যে বাদামি, নীল ও লাল রঙের প্রাধান্য বেশি। একটি চা-পাতাভর্তি টি-ব্যাগে ৫০৫টি এবং খালি টি-ব্যাগে ৪৭৭টি প্লাস্টিকের কণা রয়েছে। টি-ব্যাগের চা পান করার মাধ্যমে প্রতিবছর প্রায় ১০ দশমিক ৯ টন মাইক্রোপ্লাস্টিক দেহে প্রবেশ করতে পারে।’ তবে দুটি গবেষণাতেই নমুনা হিসেবে পরীক্ষিত ব্র্যান্ডগুলোর নাম প্রকাশ করেননি গবেষকেরা।

দেশীয় পণ্যের ওপর এ ধরনের গবেষণা বাজারে প্রভাব ফেলবে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে গবেষক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের বাজারে ভোক্তাদের বিকল্প নেই। তা ছাড়া খাদ্যের মান যাচাইকারী সংস্থাগুলোর মানদণ্ডে ‘মাইক্রোপ্লাস্টিকের’ বিষয়টি এখনো অনুল্লেখিত। এই অবস্থায় খাদ্যের মধ্যে ক্ষতিকর উপাদান সম্পর্কে ভোক্তাদের সচেতন হওয়া জরুরি। তাহলে যথাযথ কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে সঠিক নীতি নির্ধারণ করতে পারবে। বৈদেশিক ব্র্যান্ডগুলোর বিভিন্ন খাদ্যেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়েছে। বৈশ্বিক সংস্থাগুলো এ ব্যাপারে ওয়াকিবহাল।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত