Ajker Patrika

বাংলাদেশি সমর্থকেরা স্বীকৃতি পেয়েছেন যে বিশ্বকাপে

নাজিম আল শমষের, ঢাকা
Thumbnail image

মরুর বুকে বিশ্বকাপ; নাম ঘোষণার পর থেকেই কাতারকে নিয়ে নাক সিটকানো একটা ভাব চলে এসেছিল ফুটবল বিশ্বের উঁচু মহলের। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বকাপ আয়োজকদের মধ্যে আয়তনে সবচেয়ে ছোট দেশ হিসেবে কীভাবে কাতার বিশ্বকাপের আয়োজন বাগিয়ে নিল তা নিয়ে একটা শব্দই এসেছে বারবার—দুর্নীতি, দুর্নীতি, দুর্নীতি!

ঘুষ আর প্রভাব খাটিয়ে আয়োজন স্বত্ব নেওয়ার অভিযোগ ছিল রাশিয়ার বিরুদ্ধেও। কাতারও এড়াতে পারেনি এর দায়। তেলের টাকায় ‘ধরাকে সরাজ্ঞান করা’ ছোট দেশ বিশ্বকাপ আয়োজনে কতটা সফল হবে তা নিয়ে সংশয় তো ছিলই, পিছু ছাড়েনি বিশ্বের প্রভাবশালী সব গণমাধ্যমও। বিশেষ করে অভিবাসী শ্রমিকদের নিয়ে কাতার সরকারের বিমাতাসুলভ আচরণ, মানবাধিকার লঙ্ঘন, সমকামিতা নিয়ে কঠিন অবস্থান নিয়ে কাতারকে ধুয়ে দেওয়া হয়েছে অসংখ্যবার। একটি আয়োজক দেশ হিসেবে কাতারের মতো অবমাননার শিকার সম্ভবত আর কোনো দেশই হয়নি। খেলা দেখতে আসা দর্শকদের জন্য পর্যাপ্ত বিনোদনের ব্যবস্থা না থাকা, টিকিটের আগুনে দাম, ফ্যান ভিলেজে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার অভাব, মাঠে বিয়ার নিয়ে ঢুকতে না পারা; এত সব সমালোচনা প্রশ্ন তুলে দিয়েছিল স্বাগতিক হিসেবে কাতারের সক্ষমতা নিয়ে।

বিশ্বকাপ আয়োজন করার জন্য কাতার অর্থ ঢেলেছে ২২ হাজার কোটি ডলারের বেশি। আগের ২১ আসরের স্বাগতিকেরাও এত অর্থ খরচ করেনি। এত অর্থ ঢালার পরও সমালোচনায় জর্জরিত কাতারকে সফল দাবি করতে হতো মাঠের খেলা দিয়ে। এই একটা জায়গায় অতীতের ২১ আয়োজককে টেক্কা দিয়েছে সাড়ে ১১ হাজার বর্গকিলোমিটারের দেশ কাতার। মাঠের ৩২ দল এমনই এক বিশ্বকাপ উপহার দিয়েছে, শুধু এটিতেই কাতারকে মনে রাখতে হবে বহুকাল।

বিশ্বকাপের শুরুর চমক হয়ে এসেছিল আরবেরই আরেক দেশ সৌদি আরব। ‘সি’ গ্রুপের প্রথম ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে ২-১ গোলে হারিয়ে এবারের আসরের অঘটনের জন্ম দিয়েছিল সৌদি। সেই অঘটনের রেশ থাকতেই জাপানের কাছে হারল চারবারের বিশ্বসেরা জার্মানি। জাপানের কাছে হারে স্পেনও। দুই বিশ্বসেরার গ্রুপ থেকে এশিয়ার কোনো দল গ্রুপসেরা হয়ে উঠবে, সেটা কে জানত? কম যায়নি দক্ষিণ কোরিয়াও। পর্তুগালকে হারিয়ে গ্রুপ পর্বের বাধা টপকেছে তারাও। বিশ্বকাপের সবচেয়ে পাগলাটে আর রোমাঞ্চকর গ্রুপ পর্ব হয়েছে কাতারে। জার্মানি, বেলজিয়ামের মতো দল দেশে ফিরেছে নকআউটে খেলতে না পারার আক্ষেপ নিয়ে। দর্শকেরা গ্রুপ পর্বেই পেয়েছেন নকআউটের স্বাদ।

কাতারকে হয়তো সবচেয়ে বেশি মনে রাখা হবে ছোটদের বড় হয়ে ওঠার বিশ্বকাপ হিসেবে। স্পেন-ব্রাজিল, পর্তুগালের মতো দল যা পারেনি, তা করে দেখিয়েছে আফ্রিকার এক দেশ মরক্কো।

এবার বাংলাদেশকে নতুন করে চিনেছে ফুটবলবিশ্ব। বিশ্বকাপের ৩২ দলের বাইরে কাতারে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত নামটা সম্ভবত বাংলাদেশ। এই প্রথম আর্জেন্টাইনরা বাংলাদেশের সমর্থকদের সঙ্গে মিলেমিশে গেলেন। বাংলাদেশ-আর্জেন্টিনার কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের উদ্যোগের খবর জানা গেল। সংবাদ সম্মেলনে আর্জেন্টিনা কোচ লিওনেল স্কালোনি পর্যন্ত ধন্যবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশের দর্শকদের। ব্রাজিলিয়ানরাও ভালোবাসা জানিয়েছেন বাংলাদেশকে। কাতারে নানাভাবেই এসেছে বাংলাদেশ।

যে বিশ্বকাপ বাংলাদেশের সমর্থকগোষ্ঠীকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যায়, ভালোবাসার স্বীকৃতি দেয়—তাকে কি অসফল বলা যায়? 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত