Ajker Patrika

তিন চক্রের কবলে ডিমের বাজার

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম
তিন চক্রের কবলে ডিমের বাজার

একটি ডিমের গাড়িতে ১ লাখ ৪৪ হাজার ডিম পরিবহন করা হয়। আগে টাঙ্গাইল থেকে চট্টগ্রাম ডিম নিয়ে আসতে প্রতি গাড়ির পেছনে খরচ হতো সাড়ে ১৬ হাজার টাকা। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর এখন প্রতি গাড়ির পেছনে খরচ হয় ২০ হাজার টাকা। সেই হিসাবে একটি গাড়িতে ডিম পরিবহনে খরচ বাড়ল সাড়ে ৩ হাজার টাকা। অথচ এই অজুহাতে ২ সপ্তাহ আগে প্রতি ডিমে দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ২ থেকে আড়াই টাকা।

ডিম ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ভাড়া বৃদ্ধির অজুহাত কাজে লাগিয়ে বড় বড় পোলট্রি ব্যবসায়ী এবং ব্রোকাররা (দালাল) পরিকল্পিতভাবে ডিমের দাম বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। যে কারণে দুই সপ্তাহ আগে হঠাৎ করেই ডিমের বাজার অস্থির হয়ে ওঠে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সারা দেশের ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে তিনটি সিন্ডিকেট।

বড় কোম্পানিগুলো মিলে গড়ে উঠেছে একটি সিন্ডিকেট, তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতির ব্যানারে গড়ে উঠেছে আরেকটি সিন্ডিকেট। অন্যদিকে টাঙ্গাইলে ৩০-৩৫ ব্রোকার (দালাল) মিলে গড়ে তুলেছেন আরেকটি সিন্ডিকেট। এই তিন সিন্ডিকেটের ইচ্ছায় ডিমের দাম বাড়ে-কমে। এর মধ্যে তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতি এবং বড় পোলট্রি কোম্পানিগুলো মুখ্য ভূমিকা পালন করে। বাজারে ডিমের দাম বাড়ে-কমে তাদের ইশারায়।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক পাহাড়তলী বাজারের মেসার্স আবদুল সাভার পোলট্রির মালিক আব্দুস শুক্কুর বলেন, ‘ডিমের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে পাইকারি বিক্রেতাদের কোনো হাত নেই। এর সঙ্গে বড় কোম্পানি, তেজগাঁও বাজারের আড়তদারেরাই জড়িত। আমরা তাঁদের কাছ থেকে যে দরে কিনি, তার সঙ্গে পরিবহন ভাড়া যোগ করার পর প্রতিটি ডিমে সর্বোচ্চ ১০- ১৫ পয়সা লাভে বিক্রি করে দিই। ৮ টাকা ৪০ পয়সা দিয়ে কিনলে আমরা ৮ টাকা ৭০ পয়সায় বিক্রি করি। এর মধ্যে ১৫ থেকে ২০ পয়সা পরিবহন খরচ যায়। বাকি ১০ থেকে ১৫ পয়সা আমরা লাভ করি।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তেজগাঁও বাজার নিয়ন্ত্রণ করে তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতি। ওই সমিতিতে বর্তমানে ৬৫টি জনের মতো সদস্য থাকলেও বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন ২৫-২৬ জন আড়তদার। বাকিরা তাঁদের কাছ থেকে ডিম নিয়ে পাইকারি বিক্রি করে। অন্যদিকে টাঙ্গাইলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করেন ৩০-৩৫ জন। 
তাঁদের মধ্যে টাঙ্গাইলের বরচুনা এলাকার জাকিয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক মো. জাহেদ হাসান, একই এলাকার মনির, দুলাল, হালিম, মঞ্জু, মজিদ অন্যতম। তাঁরা ৫-৬ জন বাজারে প্রভাব বিস্তার করেন। তাঁরা যেভাবে বলেন, অন্যরা সে অনুযায়ী বাজারে প্রভাব বিস্তার করেন।

এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি আমানত উল্লাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ডিমের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে বড় বড় কোম্পানি জড়িত। তারাই বাজারে ডিমের দাম বাড়িয়ে দেয়। সর্বোচ্চ যখন দাম ওঠে, আমরা দর দিয়েছিলাম ১ হাজার ৮০ টাকা (১০০ ডিম)। কিন্তু কাজী ফার্মসহ বড় কোম্পানিগুলো এই দর তুলেছে ১ হাজার ২০০ টাকা। তারা যে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি করেছে, সেটির প্রমাণ আমাদের কাছে আছে। এখনো দেখেন, গতকাল আমাদের দর ছিল ৮৩০ টাকা, কাজী ফার্ম দর তুলেছে ৮৮০ টাকায়।’

কাজী ফার্মের ডেপুটি ম্যানেজার তাসফিয়া তাবাসসুম বলেন, ‘আমরা তেজগাঁও বাজার সমিতিকে অনুসরণ করি। সমিতি থেকে যে দর দেওয়া হয়, ওই দরে আমরা ডিম বিক্রি করি। যখন দাম খুব বেড়েছে, তখন সমিতি থেকে ১০ টাকা ৮০ পয়সা দর দিয়েছিল। আমরা ওই দামে বিক্রি করেছি। আজকে তারা ৮ টাকা ৪০ পয়সা দর দিয়েছে, আমরা ওই দামে বিক্রি করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত