বিভুরঞ্জন সরকার
১৮ জুন বিকেলে ঢাকার বাইরে ছিলাম। ঠিক ৪টা ৪২ মিনিটে মোবাইলটা বেজে উঠল। তরুণ কবি কাজী শোয়েব শাবাব ওপাশ থেকে ভেজা গলায় বললেন, ‘অসীমদা আর নেই। কিছুক্ষণ আগে হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেছেন।’ ফোনটা কান থেকে নামিয়ে কেমন আনমনা হয়ে পড়লাম। অসীমদা, কবি অসীম সাহা অসুস্থ ছিলেন জানি, কিন্তু তাঁর এই বিদায়ের খবর শোনার জন্য মানসিকভাবে তৈরি ছিলাম না।
কবি অসীম সাহার সঙ্গে পরিচয় বহু বছরের। কিন্তু ২০১৮ সালের শেষ দিক থেকে বছরখানেক আমরা সহকর্মী ছিলাম। আমাদের নতুন সময় নামের একটি দৈনিকে আমি আর অসীমদা একসঙ্গে কাজ করেছি। তখনই মূলত তাঁকে ঘনিষ্ঠভাবে চেনা।
১৯৪৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি অসীম সাহা জন্মগ্রহণ করেন। সেই হিসাবে এর আগে তাঁর ৭৪টি জন্মদিন এসেছে। ২০১৯ সালের জন্মদিনে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে গ্রহণ করেন রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘একুশে পদক’। শেখ হাসিনার হাত থেকে একুশে পদক নিয়ে খুব উচ্ছ্বসিত হয়েছিলেন অসীমদা। কারণ, শেখ হাসিনা তাঁর সহপাঠী ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে।
পদক বা পুরস্কার পাওয়ার জন্য কবি তাঁর কবিতা রচনা করেন না। কিন্তু পদক বা পুরস্কার একধরনের স্বীকৃতি, যা যে কাউকে উৎসাহিত করে, নিজের কাজে আরও নিমগ্ন হতে অনুপ্রাণিত করে। অসীম সাহা এর আগে বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ আরও অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। একুশে পদক রাষ্ট্রের কাছ থেকে পাওয়া তাঁর সৃষ্টির সর্বোচ্চ স্বীকৃতি, তাঁকে পাঠকের কাছে আরও দায়বদ্ধ করেছে।
শিল্পের সাধনায় নিবেদিতপ্রাণ কবি অসীম সাহা লেখালেখি করেছেন গত শতকের ষাটের দশকের মধ্যভাগ থেকে। ওই সময়কালটা ছিল বাঙালির প্রতিবাদের, প্রতিরোধের এবং জাগরণের সময়। তরুণ অসীম সাহার রক্তেও টগবগ করছিল বাঙালির জাতীয় মুক্তির গান। কবিতায় তিনি তাঁর দ্রোহের কথা বলেছেন। বলেছেন ভালোবাসার কথা। ভালোবাসা দেশের জন্য, ভালোবাসা মানুষের জন্য। মূলত কবি হলেও তিনি গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ছড়া, কিশোর কবিতাও অনেক লিখেছেন।
বলা হয়ে থাকে কবিরা খুব বানান সচেতন নন; কিংবা ব্যাকরণের কঠিন নিয়ম তাঁদের বাঁধতে পারে না। অসীম সাহা এর মধ্যে পড়েন না। তিনি নিজে বানান ও ব্যাকরণ সচেতন বলে অন্যদের সচেতন করার তাগিদ থেকে কয়েক বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমে ‘বাংলা ভাষার সহজ ব্যবহারিক অভিধান’ রচনা করেছেন।
১৯৬৫ সালে তাঁর লেখা প্রথম জাতীয় পত্রিকায় ছাপা হয়। পাঁচ দশকের বেশি সময়ে তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা ৫১। বলা যায়, বছরে গড়ে একটি বই বেরিয়েছে।
পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করব, কবি অসীম সাহার প্রবন্ধের বই ‘প্রগতিশীল সাহিত্যের ধারা’র প্রতি। ১৯৭৬ সালে বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। এরপর দীর্ঘ সময় পর ২০১৮ সালে ‘চিরদিন’ প্রকাশনী থেকে আবার ছাপা হয়েছে বইটি। শিল্প-সাহিত্যের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ১৬টি প্রবন্ধ স্থান পেয়েছে এই গ্রন্থে।
কবিতার মতো গদ্য রচনায়ও ছিলেন সিদ্ধহস্ত। তাঁর ভাষারীতি, রচনাশৈলী পাঠককে আকৃষ্ট না করে পারে না। তিনি ব্যক্তিজীবনে যেমন ছিলেন স্পষ্টভাষী, কিছুটা একরোখা, রচনায়ও তা-ই। যা বলতে চেয়েছেন তা স্পষ্ট এবং সরাসরি বলেছেন। তাঁর মতের সঙ্গে কারও ভিন্নতা থাকতেই পারে, কিন্তু তাঁর বক্তব্যের পেছনে যে যুক্তির জোর, তা অস্বীকার করা যাবে না।
প্রথম প্রবন্ধ ‘প্রগতিশীল সাহিত্যের পটভূমিকা’ থেকে কিছু অংশ: ‘অনেকে মনে করেন, সাহিত্যে রাজনীতির অনুপ্রবেশ ঘটানো অযৌক্তিক। কেননা সাহিত্য হৃদয়বৃত্তিনির্ভর। সে ক্ষেত্রে রাজনীতি সাহিত্যের মৌলিকতাকে ক্ষুণ্ন করে। আমাদের মনে হয় এ বক্তব্য পুরোপুরি সঠিক নয়। সামাজিক উত্থান-পতনের কেন্দ্র স্পর্শ করে আছে রাজনীতি। তাই সমাজকাঠামোতে অবস্থান করে তাকে অস্বীকার করা অসম্ভব। আর সে চেষ্টাও পলায়নপরতা মাত্র। স্বীকার্য যে, রাজনৈতিক নেতা যেভাবে রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করেন, সাহিত্যিক সেভাবে আলোচনা করেন না। কিন্তু তা রাজনীতির বর্জনকে স্বীকার করে না। রাজনীতি কোনোক্রমেই শিল্প (আর্ট) নয়। কিন্তু সাহিত্য অবশ্যই শিল্পকর্ম। সাহিত্যের সার্থকতা নির্ভর করে শিল্পীর সৃষ্টি কর্মের সার্থকতার ওপর। ফলে সাহিত্যের উপাদান যা-ই হোক না কেন, তাকে মহৎ সাহিত্যের শিরোপা লাভে অবশ্যই শিল্পসম্মত হতে হয়। রাজনীতি সাহিত্যের উপাদান হওয়া সত্ত্বেও তা শাশ্বত সাহিত্যের মর্যাদা লাভে সমর্থ হয়েছে, এ দৃষ্টান্ত বিশ্বের ইতিহাসে দুর্লভ নয়। সন্দেহ নেই যে, মহৎ স্রষ্টার কাছে উপাদান তেমন বড় কথা নয়, যেকোনো ভিত্তির ওপরে সৌধ নির্মাণ করাই তাদের পক্ষে সম্ভব।’
কেউ কেউ মনে করেন, সহজ কথা কঠিন করে বলার নামই সাহিত্য। আবার কারও কাছে কঠিন কথা সহজ করে বলতে পারাটাই উত্তম সাহিত্য। অসীম সাহার প্রবন্ধ পড়তে গিয়ে পাঠকদের গালে হাত দিয়ে ভাবতে হয় না যে লেখক কী বলছেন বা বলতে চেয়েছেন।
তাঁর ‘কবি: ব্যক্তি ও শিল্পী’ প্রবন্ধ থেকে সামান্য অংশ: ‘কবি যেমন সমাজবিচ্ছিন্ন নন, সমাজের উত্থান-পতনের আওতাবহির্ভূত নন, তেমনি তিনি ব্যক্তিজীবন, ব্যক্তিজীবনের সামগ্রিক উত্থান-পতনবহির্ভূতও নন। ব্যক্তি সমাজের ভিত্তি, বিন্দু বিন্দু জল আর এই বিন্দু বিন্দু জলের বিস্তৃতির নামই সমুদ্র। সমুদ্রে যেমন বিন্দু বিন্দু জলের শব্দ জাগে, তেমনি বিন্দুর মধ্যেও সিন্ধুর কল্লোল প্রতিধ্বনিত হয়। জীবনের ক্ষেত্রে, শিল্পের ক্ষেত্রেও কি সেই সত্য অস্বীকৃত? না। বাস্তব দৃষ্টিকোণ থেকে এই মৌলিক সত্য সন্ধানে আগ্রহী হলে দেখা যাবে, বিশ্বের কোনো কবিই তাঁর ব্যক্তিজীবনের বাইরে থেকে শিল্পের বা কবিকর্মে সফলতা অর্জন করতে পারেননি। শুধু তা-ই নয়, আসলে কোনো কবিই ব্যক্তিজীবনকে অতিক্রম করতে পারেন না। তাঁর সৃষ্টিকর্মে কোনো না কোনোভাবে ব্যক্তিজীবনের প্রতিভাস ঘটতে বাধ্য। এ ক্ষেত্রে একজন কবির অনুভবের ভিন্নতার কারণে জীবন-প্রতিভাস অপেক্ষাকৃত স্পষ্ট হতে পারে, অস্পষ্ট হতে পারে না কিছুতেই। যদি তা হয়, তাহলে বুঝতে হবে তিনি মূলত কবি নন, প্রতারক।’
অসীম সাহা জীবনবিচ্ছিন্ন প্রতারক নন, তিনি জীবনঘনিষ্ঠ কবি। কবির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি তাঁর রচিত একটি কবিতা উদ্ধৃত করে। ‘কবিরা মানুষ নয়’ কবিতাটি তিনি ২০০৩ সালে তাঁর জন্মদিনেই লিখেছিলেন।
‘কবিদের কোনো বাড়িঘর নেই/ কবিরা থাকেন শূন্যে/ হাছনের মতো গড়ে তোলে ঘর/ স্থপতির নৈপুণ্যে।/ কবিদের কোনো সংসার নেই/ কবিরা চলেন ভাগ্যে/ একটি জীবন শুধু কেটে যায়/ সন্ন্যাসে, বৈরাগ্যে।/ কবিরা মানুষ নয়/ কবিদের কাছে মানুষের ঘটে/ চিরকালের পরাজয়।’
লেখক: বিভুরঞ্জন সরকার
জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
১৮ জুন বিকেলে ঢাকার বাইরে ছিলাম। ঠিক ৪টা ৪২ মিনিটে মোবাইলটা বেজে উঠল। তরুণ কবি কাজী শোয়েব শাবাব ওপাশ থেকে ভেজা গলায় বললেন, ‘অসীমদা আর নেই। কিছুক্ষণ আগে হাসপাতালে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেছেন।’ ফোনটা কান থেকে নামিয়ে কেমন আনমনা হয়ে পড়লাম। অসীমদা, কবি অসীম সাহা অসুস্থ ছিলেন জানি, কিন্তু তাঁর এই বিদায়ের খবর শোনার জন্য মানসিকভাবে তৈরি ছিলাম না।
কবি অসীম সাহার সঙ্গে পরিচয় বহু বছরের। কিন্তু ২০১৮ সালের শেষ দিক থেকে বছরখানেক আমরা সহকর্মী ছিলাম। আমাদের নতুন সময় নামের একটি দৈনিকে আমি আর অসীমদা একসঙ্গে কাজ করেছি। তখনই মূলত তাঁকে ঘনিষ্ঠভাবে চেনা।
১৯৪৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি অসীম সাহা জন্মগ্রহণ করেন। সেই হিসাবে এর আগে তাঁর ৭৪টি জন্মদিন এসেছে। ২০১৯ সালের জন্মদিনে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে গ্রহণ করেন রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘একুশে পদক’। শেখ হাসিনার হাত থেকে একুশে পদক নিয়ে খুব উচ্ছ্বসিত হয়েছিলেন অসীমদা। কারণ, শেখ হাসিনা তাঁর সহপাঠী ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে।
পদক বা পুরস্কার পাওয়ার জন্য কবি তাঁর কবিতা রচনা করেন না। কিন্তু পদক বা পুরস্কার একধরনের স্বীকৃতি, যা যে কাউকে উৎসাহিত করে, নিজের কাজে আরও নিমগ্ন হতে অনুপ্রাণিত করে। অসীম সাহা এর আগে বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ আরও অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। একুশে পদক রাষ্ট্রের কাছ থেকে পাওয়া তাঁর সৃষ্টির সর্বোচ্চ স্বীকৃতি, তাঁকে পাঠকের কাছে আরও দায়বদ্ধ করেছে।
শিল্পের সাধনায় নিবেদিতপ্রাণ কবি অসীম সাহা লেখালেখি করেছেন গত শতকের ষাটের দশকের মধ্যভাগ থেকে। ওই সময়কালটা ছিল বাঙালির প্রতিবাদের, প্রতিরোধের এবং জাগরণের সময়। তরুণ অসীম সাহার রক্তেও টগবগ করছিল বাঙালির জাতীয় মুক্তির গান। কবিতায় তিনি তাঁর দ্রোহের কথা বলেছেন। বলেছেন ভালোবাসার কথা। ভালোবাসা দেশের জন্য, ভালোবাসা মানুষের জন্য। মূলত কবি হলেও তিনি গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ছড়া, কিশোর কবিতাও অনেক লিখেছেন।
বলা হয়ে থাকে কবিরা খুব বানান সচেতন নন; কিংবা ব্যাকরণের কঠিন নিয়ম তাঁদের বাঁধতে পারে না। অসীম সাহা এর মধ্যে পড়েন না। তিনি নিজে বানান ও ব্যাকরণ সচেতন বলে অন্যদের সচেতন করার তাগিদ থেকে কয়েক বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমে ‘বাংলা ভাষার সহজ ব্যবহারিক অভিধান’ রচনা করেছেন।
১৯৬৫ সালে তাঁর লেখা প্রথম জাতীয় পত্রিকায় ছাপা হয়। পাঁচ দশকের বেশি সময়ে তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা ৫১। বলা যায়, বছরে গড়ে একটি বই বেরিয়েছে।
পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করব, কবি অসীম সাহার প্রবন্ধের বই ‘প্রগতিশীল সাহিত্যের ধারা’র প্রতি। ১৯৭৬ সালে বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। এরপর দীর্ঘ সময় পর ২০১৮ সালে ‘চিরদিন’ প্রকাশনী থেকে আবার ছাপা হয়েছে বইটি। শিল্প-সাহিত্যের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ১৬টি প্রবন্ধ স্থান পেয়েছে এই গ্রন্থে।
কবিতার মতো গদ্য রচনায়ও ছিলেন সিদ্ধহস্ত। তাঁর ভাষারীতি, রচনাশৈলী পাঠককে আকৃষ্ট না করে পারে না। তিনি ব্যক্তিজীবনে যেমন ছিলেন স্পষ্টভাষী, কিছুটা একরোখা, রচনায়ও তা-ই। যা বলতে চেয়েছেন তা স্পষ্ট এবং সরাসরি বলেছেন। তাঁর মতের সঙ্গে কারও ভিন্নতা থাকতেই পারে, কিন্তু তাঁর বক্তব্যের পেছনে যে যুক্তির জোর, তা অস্বীকার করা যাবে না।
প্রথম প্রবন্ধ ‘প্রগতিশীল সাহিত্যের পটভূমিকা’ থেকে কিছু অংশ: ‘অনেকে মনে করেন, সাহিত্যে রাজনীতির অনুপ্রবেশ ঘটানো অযৌক্তিক। কেননা সাহিত্য হৃদয়বৃত্তিনির্ভর। সে ক্ষেত্রে রাজনীতি সাহিত্যের মৌলিকতাকে ক্ষুণ্ন করে। আমাদের মনে হয় এ বক্তব্য পুরোপুরি সঠিক নয়। সামাজিক উত্থান-পতনের কেন্দ্র স্পর্শ করে আছে রাজনীতি। তাই সমাজকাঠামোতে অবস্থান করে তাকে অস্বীকার করা অসম্ভব। আর সে চেষ্টাও পলায়নপরতা মাত্র। স্বীকার্য যে, রাজনৈতিক নেতা যেভাবে রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করেন, সাহিত্যিক সেভাবে আলোচনা করেন না। কিন্তু তা রাজনীতির বর্জনকে স্বীকার করে না। রাজনীতি কোনোক্রমেই শিল্প (আর্ট) নয়। কিন্তু সাহিত্য অবশ্যই শিল্পকর্ম। সাহিত্যের সার্থকতা নির্ভর করে শিল্পীর সৃষ্টি কর্মের সার্থকতার ওপর। ফলে সাহিত্যের উপাদান যা-ই হোক না কেন, তাকে মহৎ সাহিত্যের শিরোপা লাভে অবশ্যই শিল্পসম্মত হতে হয়। রাজনীতি সাহিত্যের উপাদান হওয়া সত্ত্বেও তা শাশ্বত সাহিত্যের মর্যাদা লাভে সমর্থ হয়েছে, এ দৃষ্টান্ত বিশ্বের ইতিহাসে দুর্লভ নয়। সন্দেহ নেই যে, মহৎ স্রষ্টার কাছে উপাদান তেমন বড় কথা নয়, যেকোনো ভিত্তির ওপরে সৌধ নির্মাণ করাই তাদের পক্ষে সম্ভব।’
কেউ কেউ মনে করেন, সহজ কথা কঠিন করে বলার নামই সাহিত্য। আবার কারও কাছে কঠিন কথা সহজ করে বলতে পারাটাই উত্তম সাহিত্য। অসীম সাহার প্রবন্ধ পড়তে গিয়ে পাঠকদের গালে হাত দিয়ে ভাবতে হয় না যে লেখক কী বলছেন বা বলতে চেয়েছেন।
তাঁর ‘কবি: ব্যক্তি ও শিল্পী’ প্রবন্ধ থেকে সামান্য অংশ: ‘কবি যেমন সমাজবিচ্ছিন্ন নন, সমাজের উত্থান-পতনের আওতাবহির্ভূত নন, তেমনি তিনি ব্যক্তিজীবন, ব্যক্তিজীবনের সামগ্রিক উত্থান-পতনবহির্ভূতও নন। ব্যক্তি সমাজের ভিত্তি, বিন্দু বিন্দু জল আর এই বিন্দু বিন্দু জলের বিস্তৃতির নামই সমুদ্র। সমুদ্রে যেমন বিন্দু বিন্দু জলের শব্দ জাগে, তেমনি বিন্দুর মধ্যেও সিন্ধুর কল্লোল প্রতিধ্বনিত হয়। জীবনের ক্ষেত্রে, শিল্পের ক্ষেত্রেও কি সেই সত্য অস্বীকৃত? না। বাস্তব দৃষ্টিকোণ থেকে এই মৌলিক সত্য সন্ধানে আগ্রহী হলে দেখা যাবে, বিশ্বের কোনো কবিই তাঁর ব্যক্তিজীবনের বাইরে থেকে শিল্পের বা কবিকর্মে সফলতা অর্জন করতে পারেননি। শুধু তা-ই নয়, আসলে কোনো কবিই ব্যক্তিজীবনকে অতিক্রম করতে পারেন না। তাঁর সৃষ্টিকর্মে কোনো না কোনোভাবে ব্যক্তিজীবনের প্রতিভাস ঘটতে বাধ্য। এ ক্ষেত্রে একজন কবির অনুভবের ভিন্নতার কারণে জীবন-প্রতিভাস অপেক্ষাকৃত স্পষ্ট হতে পারে, অস্পষ্ট হতে পারে না কিছুতেই। যদি তা হয়, তাহলে বুঝতে হবে তিনি মূলত কবি নন, প্রতারক।’
অসীম সাহা জীবনবিচ্ছিন্ন প্রতারক নন, তিনি জীবনঘনিষ্ঠ কবি। কবির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি তাঁর রচিত একটি কবিতা উদ্ধৃত করে। ‘কবিরা মানুষ নয়’ কবিতাটি তিনি ২০০৩ সালে তাঁর জন্মদিনেই লিখেছিলেন।
‘কবিদের কোনো বাড়িঘর নেই/ কবিরা থাকেন শূন্যে/ হাছনের মতো গড়ে তোলে ঘর/ স্থপতির নৈপুণ্যে।/ কবিদের কোনো সংসার নেই/ কবিরা চলেন ভাগ্যে/ একটি জীবন শুধু কেটে যায়/ সন্ন্যাসে, বৈরাগ্যে।/ কবিরা মানুষ নয়/ কবিদের কাছে মানুষের ঘটে/ চিরকালের পরাজয়।’
লেখক: বিভুরঞ্জন সরকার
জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক, আজকের পত্রিকা
ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
১৮ দিন আগেআধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
০৮ মে ২০২৫পাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
০৮ মে ২০২৫ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে দুই চিরবৈরী প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনার পারদ ক্রমেই চড়ছিল। তা তুঙ্গে উঠল এবার পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা দিয়ে। পাশাপাশি সীমান্তেও দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে...
০৮ মে ২০২৫