Ajker Patrika

হৃদয়ের এক গভীর অনুভব

সম্পাদকীয়
হৃদয়ের এক গভীর অনুভব

বাচ্চাদের আনন্দ, উদ্দীপনা আর তাদের গল্প ও গানে ভরে উঠত আকাশ-বাতাস, যা আমি প্রতিদিন প্রাণভরে উপভোগ করতাম। সূর্যাস্তের সময় একা বসে গাছের ছায়া লম্বা হতে দেখতাম। বিকেলের নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করে যখন শিশুদের কোলাহল কানে আসত, মনে হতো এই গান, শব্দ, চিৎকার যেন ওই গাছেদের মতো, যারা এই বিশ্বের হৃদয় থেকে জন্ম নিয়ে জীবনের ঝরনার মতো অনন্ত আকাশের দিকে ঝরে চলেছে। আমি দেখতে পেতাম, বুঝতে পারতাম, আমাদের মতো বড় হয়ে যাওয়া শিশুদের কলরোলও ওই অসীমে গিয়ে মিশে যাচ্ছে। হৃদয়ের সে ছিল এক গভীর অনুভব।

ঠিক এই পরিবেশে আমি গীতাঞ্জলি লিখি এবং ভারতের নক্ষত্রখচিত আকাশের নিচে মধ্যরাতে সেই বই থেকে গান গাই নিজের মনে। খুব ভোরে এবং সূর্যাস্তের ছটার মধ্যে এই গানগুলো লেখা হয়। তারপর একটা দিন আসে যখন এই গানের ডালি নিয়ে বৃহত্তর পৃথিবীর সামনে দাঁড়ানোর তাগিদ অনুভব করি।

বুঝতে পারি, সেই নির্জনতা ছিন্ন করে এই সদানন্দময় শিশুদের মধ্যে এসে দাঁড়ানো, আমার সহযাত্রীদের কাজে লাগার যে আকাঙ্ক্ষা নিজের মধ্যে তৈরি হয়েছিল, তা আসলে বৃহত্তর বিশ্বতীর্থের প্রতি যাত্রার এক উপক্রমণিকা ছিল। একইভাবে অন্তর থেকে প্রবল বাসনা অনুভব করি, বাইরে গিয়ে পশ্চিমের মানবতাকে স্পর্শ করতে।

আমি এ ব্যাপারে সচেতন ছিলাম যে বর্তমান সময়টা পশ্চিমের মানুষদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হওয়ার সময়। তাঁদের প্রবল উদ্দীপনা যার চালিকাশক্তি। গোটা বিশ্বের শক্তি যেন তার হাতে, সব সীমানা উপচে পড়েছে তার জীবনশক্তিতে, এক বৃহৎ ভবিষ্যতের দিকে তার ইশারা। শেষনিশ্বাস ফেলার আগে একবার পশ্চিমে এসে সেই মানবাত্মাকে স্পর্শ করব।

গীতাঞ্জলির কবিতাগুলো বাংলায় লেখার পর সেগুলোকে ইংরেজিতে অনুবাদ করে আমি বাইরে পা রাখি। সঙ্গে নিয়ে যাই ইংরেজি অনুবাদের পাণ্ডুলিপি। যেসব ব্রিটিশ বন্ধুজন অনুবাদ পড়েছিলেন, তাঁরা একপ্রকার সেগুলোকে মান্যতাই দিয়েছিলেন। পশ্চিম বিলম্ব না করে তার হৃদয় উন্মুক্ত করে দেয়। 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম বাঙালি, যিনি ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার পান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত