Ajker Patrika

ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় স্যালাইন জোগানে অনিশ্চয়তা

রাশেদ রাব্বি, ঢাকা
ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় স্যালাইন জোগানে অনিশ্চয়তা

চাহিদার তুলনায় আইভি ফ্লুইড বা শিরায় ব্যবহারযোগ্য স্যালাইনের সরবরাহ অনেক কম। এমনকি আমদানি করেও চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। ফলে এবারও ডেঙ্গু মৌসুমে আইভি ফ্লুইড বা শিরায় ব্যবহারযোগ্য স্যালাইনের সংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা আছে। স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক পর্যালোচনা সভায়ও এই আশঙ্কার বিষয় প্রকাশ পেয়েছে। আমদানি করে চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে জটিলতার বিষয়টিও সভায় উঠে আসে। এই অবস্থায় দেশে উৎপাদন বাড়ানো এবং ডেঙ্গুর ভরা মৌসুমের আগেই আইভি ফ্লুইড ও পরীক্ষার কিট কিনে মজুত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সূত্রমতে, সভায় আগামী জুন মাসের মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডে (ইডিসিএল) আইভি ফ্লুইড উৎপাদন চালু করতে উদ্যোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসায় সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে আইভি ফ্লুইডের চাহিদা নিরূপণ করে ১৫ দিনের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গত বছরের চাহিদার ভিত্তিতে বর্তমান চাহিদা পূরণ করতে এমএসআর তহবিল থেকে আইভি ফ্লুইড কিনে মজুত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম বলেন, ‘গত বছর ফ্লুইডের কতটা ঘাটতি ছিল, স্থানীয় বাজার থেকে কতটা সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছিল, সেটা নিরূপণের চেষ্টা করছি। আমদানির মাধ্যমে ফ্লুইডের চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। কারণ, এগুলো বেশ ভারী এবং পলিব্যাগে থাকার কারণে অনেক পরিমাণে নষ্ট হয়। আমরা চেষ্টা করছি এই সমস্যাগুলোর সমাধান করার।’

জানা যায়, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে ২৪ মার্চ অনুষ্ঠিত আইভি ফ্লুইড পরিস্থিতি পর্যালোচনা সভায় মোট সাতটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে আইভি ফ্লুইড পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়। সভায় ইডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. এহসানুল কবির জানান, গত মৌসুম থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোর চাহিদা ছিল ২৯ লাখ ৬৬ হাজার ৭৭০ লিটার আইভি ফ্লুইড। বিপরীতে বেসরকারি ছয়টি কোম্পানি থেকে মাত্র ৫ লাখ ৬৬ হাজার ২১ লিটার ফ্লুইড সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছে। ইডিসিএল এই সময়ে ভারত থেকে ২৩ লাখ লিটার আমদানির অনুমোদন দিলেও মাত্র ১৩ লাখ লিটার স্যালাইন আমদানি করা সম্ভব হয়েছে। তারপরও ১১ লাখ লিটার ফ্লুইডের ঘাটতি রয়ে গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. মইনুল আহসান সভায় বলেন, ডেঙ্গুর পিক সিজনে (ভরা মৌসুম) দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে দৈনিক প্রায় ১০ হাজার রোগী ভর্তি থাকে। দিনে নতুন আক্রান্ত হয় প্রায় তিন হাজার। ২০২৩ সালে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয় ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন। প্রত্যেক রোগীর জন্য দৈনিক ২ দশমিক ৫ লিটার ফ্লুইড লাগে। সেই হিসাবে দিনে ফ্লুইড লাগে ২৫ হাজার লিটার এবং মাসে ৭ লাখ ৫০ হাজার লিটার। এর মধ্যে নরমাল স্যালাইন ৫ লাখ লিটার এবং বাকিটা গ্লুকোজ স্যালাইন। বেসরকারি হাসপাতালেও স্যালাইনের ব্যাপক চাহিদা থাকে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান সভায় বলেন, ডেঙ্গুর পিক সিজনের আগেই যদি স্থানীয় বাজার থেকে এমএসআর ফান্ড দিয়ে আইভি ফ্লুইড ও টেস্ট কিট কিনে মজুত করা যায়, তবে সংকট হবে না। মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান বলেন, আমদানি করা স্যালাইনের গুণগত মান ও ব্যবহার পদ্ধতিতে ত্রুটি ছিল। এ ক্ষেত্রে দেশজ উৎপাদন বাড়িয়ে আইভি ফ্লুইডের চাহিদা মেটাতে গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

সভায় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব সামনে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশে আইভি ফ্লুইড স্যালাইনের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে নির্দেশ দেন। সভায় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব (জনস্বাস্থ্য) ডা. মো. শিবির আহমেদ ওসমানীও সভায় বক্তব্য দেন।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা থেকে জানা গেছে, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে মৌসুম-পরবর্তী ও প্রাক্-মৌসুম জরিপের ফল বিশ্লেষণ করা হবে। সেই ফলের ভিত্তিতে মশা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত