Ajker Patrika

খাল দখল করে খামার গতি বদলে পাড়ে ভাঙন

রাতুল মণ্ডল, শ্রীপুর (গাজীপুর) 
আপডেট : ২৪ অক্টোবর ২০২২, ১৪: ২৮
খাল দখল করে খামার গতি বদলে পাড়ে ভাঙন

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ি ইউনিয়নে এক প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে সুতিখাল দখল করে ভবন ও পোলট্রি খামার নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। খালের অর্ধেক অংশ দখল করায় পরিবর্তন হয়েছে পানির গতিপথ। এতে খালের পাড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। তবে স্থানীয় বাসিন্দারা প্রভাবশালী ভবনমালিকের ভয়ে প্রতিবাদ করতে পারছেন না।

খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, কাপাসিয়ার বানিয়ার বিল এলাকা থেকে সুতিখালের উৎপত্তি। এটি শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ি ও প্রহলাদপুর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের বুক চিরে বয়ে গেছে। এই খালে এক সময় প্রচুর পরিমাণ দেশি প্রজাতির মাছের অভয়ারণ্য ছিল। কিন্তু সম্প্রতি দখল আর দূষণের ফলে সুতিখাল হারাতে বসেছে ঐতিহ্য।

রাজাবাড়ি ইউনিয়নের চিনাশুকানিয়া গ্রামের মারফত আলী ২০২২ সালের মাঝামাঝির দিকে সুতিখালের অর্ধেক অংশ দখল করে গড়ে তুলেছেন একটি পাকা ভবন। আর এই ভবন নির্মাণের সময় স্থানীয়রা কয়েকজন প্রতিবাদ করলেও মেলেনি প্রতিকার। ভবন মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয়রা তখন খাল রক্ষায় জোরালো প্রতিবাদ করতে পারেনি। খালের জমি দখল করে ভবন নির্মাণের ফলে খালের গতিপথ পরিবর্তনসহ খালটি অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। এতে কমেছে পানি প্রবাহ। কমে গেছে দেশি প্রজাতির মাছ।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সুতিখালের অর্ধেক অংশ দখল করে ইট দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে বড় একটি ভবন। যা খালের বেশির ভাগ অংশ দখল হয়েছে। খালের নিচ থেকে পিলার নির্মাণ ও তাঁর ওপর ইটের গাঁথুনী দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ভবন। বর্তমানে ভবনে পোলট্রি মুরগি পালনের জন্য ভবনটি ব্যবহার করছেন মারফত আলী।

চিনাশুকানীয়া গ্রামের সিরাজ উদ্দিনের স্ত্রী মনোয়ারা বলেন, ‘এই খাল পাড়ের সব মানুষ সারা বছর সুতিখাল থেকে মাছ শিকার করত। কিন্তু সম্প্রতি খালের অর্ধেক অংশ দখল করে ভবন নির্মাণসহ বিভিন্ন জায়গায় দখলের ফলে কচুরিপানা আটকে পানি প্রবাহ কমেছে। তাতে করে কমে গেছে মাছ।’

স্থানীয় বাসিন্দা আইনুল হক বলেন, ‘সুতি একটি ঐতিহাসিক খাল। আর এই খাল দখল করে স্থাপনা নির্মাণ হলো কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নিল না। আমরা স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েছি। তবুও কোনো কাজ হয়নি। এভাবে দখল হতে থাকলে সুতিখাল অস্তিত্ব হারাবে। আমরা খাল দখলমুক্ত করার দাবি করছি।’

খাল দখল করে ভবন নির্মাণকারী মারফত আলী বলেন, ‘আমি খালের পাড়ে ঘর নির্মাণ করেছি। খালের কিছু অংশ পড়েছে, তাতে সমস্যা কি? আমার বাড়ির পাশে খাল, এখানে তো আর আপনি বাড়ি করবেন না। অসুবিধা হলে সরকারি লোক এসে ভেঙে দেবে।’

রাজাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. জুয়েল মিয়া বলেন, ‘সুতিখাল দখল করে স্থাপনার বিষয়টি আমি জানি। কী করব আমি? আমি নতুন নির্বাচিত হয়েছি। ভালোভাবে খোঁজ খবর নিয়ে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।’

নদী পরিব্রাজক দল শ্রীপুর শাখার সভাপতি সাঈদ চৌধুরী বলেন, ‘শুধু সুতিখাল নয়, আমাদের বেঁচে থাকা প্রয়োজনে ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ভালোভাবে বেড়ে ওঠার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য খাল-বিল ও নদী-নালা কোনো কিছুই দখল বা দূষণ করা ঠিক না। এসব না থাকলে আমাদের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে।’

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়টি মাত্রই জানলাম। খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত