Ajker Patrika

হতদরিদ্রদের দক্ষ কর্মী বানায় শিশু পরিবার

শাকিলা ববি, সিলেট
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২১, ১১: ১৯
হতদরিদ্রদের দক্ষ কর্মী বানায় শিশু পরিবার

সিলেট সদর উপজেলার হাটখোলা ইউনিয়নের মো. শামিম আহমদ (৩৪)। ৭ বছর বয়সে তিনি বাবাকে হারান। ফলে আর্থিক সংকটে পড়ে পরিবার। কোনো উপায় না পেয়ে ১৯৯৩ সালে তাঁকে সিলেট শিশু পরিবারে ভর্তি করা হয়। এরপর থেকে তাঁর নতুন জীবনের শুরু হয়।

শিশু পরিবারে থাকাকালে এইচএসসি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। এরপর ২০১৩ সালে সমাজসেবা অফিসে চাকরি হয়। বর্তমানে বিশ্বনাথে ইউনিয়ন সমাজকর্মী হিসেবে কর্মরত আছেন। মা, স্ত্রী, দুই সন্তান ও পরিবারে অন্য সদস্যদের নিয়ে সুখে-শান্তিতে জীবনযাপন করছেন।

শামিমের মতো সিলেট জেলা সমাজসেবার অফিসের অধীনে গরিব ও অসহায় প্রায় ৭ হাজার ছেলে-মেয়ে বেড়ে উঠেছেন। তাঁদের অনেককেই পুনর্বাসন করেছেন সমাজসেবা কার্যালয়। এখন কেউ ব্যবসা করছেন, কেউ সরকারি চাকরি করছেন। অনেকেই সরকারের উচ্চপদে আসীন।

শামিম আহমদ বলেন, ‘শিশু পরিবারের একজন সদস্য হিসেবে আমি গর্বিত। এই পরিবার আমার জীবন পাল্টে দিয়েছে। বাবার মৃত্যুর পর এখানে আমাকে ভর্তি করানো হয়। পরিবারে থাকলে হয়তো লেখাপড়াই করা হতো না। আর ভালো চাকরিও হতো না। আমি সমাজসেবা কার্যালয়ের আছে কৃতজ্ঞ। কারণ তারা অনেক মানুষের জীবনকে সুন্দর করতে কাজ করছে।’

সিলেট সমাজসেবা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বাগবাড়ি এলাকায় সরকারি শিশু পরিবারের (বালক) কার্যক্রম শুরু ১৯৫৬ সালে। এরপর বিভিন্ন সময় সরকারি শিশু পরিবার (বালিকা), ছোটমণি নিবাস, শিশু-কিশোরীদের নিরাপদ আবাসন (সেফহোম), প্রতিবন্ধী মেয়েদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনকেন্দ্র, সরকারি বাক্-শ্রবণ প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়, শেখ রাসেল শিশু-কিশোর প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনকেন্দ্র (বালক), শেখ রাসেল শিশু-কিশোর প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনকেন্দ্র (বালিকা) প্রতিষ্ঠিত হয়।

এসব প্রতিষ্ঠানে এখন পর্যন্ত নিবন্ধিত হয়েছে ৬ হাজার ৭৮৭ জন। এসব প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ৬০১ জন আছে। এখানে ১ দিন থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত ছেলে-মেয়েদের রাখা হয়। পর্যায়ক্রমে তাদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পুনর্বাসিত করা হয়। ১৮ বছর হয়ে গেলেও যাদের যাওয়ার আর কোনো জায়গা থাকে না। সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তারা তাঁদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পুনর্বাসন করে থাকেন।

এই প্রতিষ্ঠানের নিবাসীদের নির্দিষ্ট বয়স পূর্ণ হওয়ার আগেই কম্পিউটার প্রশিক্ষণ, সেলাই, ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ, হোটেল ম্যানেজমেন্ট প্রশিক্ষণ, কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সর্বশেষ প্রতিষ্ঠানটিতে প্রফেশনাল ক্রিকেট দলের কার্যক্রম শুরু হয়। এই দলের অনেকেই সিলেটসহ ঢাকায় খেলছেন। এর বাইরে সমাজসেবা অফিসের অধীনে প্রবীণ নিবাস (বৃদ্ধাশ্রম) আছে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আছে সমন্বিত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষা কার্যক্রম (বালক)।

এ ব্যাপারে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক নিবাস রঞ্জন দাশ বলেন, ‘সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে গরিব, অসহায়, নির্যাতিত ছেলে-মেয়েরা বেড়ে উঠছে। তারা যেন এখন থেকে বেড়িয়ে উপার্জন করতে ও পরিবারে ফিরে যেতে পারে, আমরা সেই চেষ্টা করি। এখানে অনেকেই মেধা আর যোগ্যতা দিয়ে সরকারি চাকরিও করছেন।’

নিবাস রঞ্জন আরও বলেন, ‘সমাজসেবা কার্যালয়ের ভালো কাজগুলোর মধ্যে আবাসিক প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যতম। এসব প্রতিষ্ঠানে নির্দিষ্ট একটা সময় পর্যন্ত এসব শিশুর লালন-পালন করা হয়। আমাদের লক্ষ্য থাকে এরপর যাতে তারা সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। মূল ধারায় ফিরে যেতে পারে। সে জন্য আমরা বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত