Ajker Patrika

বিলুপ্তির পথে অগ্নিশিখা

চয়ন বিকাশ ভদ্র
বিলুপ্তির পথে অগ্নিশিখা

জিম্বাবুয়ের জাতীয় ফুল কী? ঘাবড়ে যাবেন না প্রশ্নটি শুনে। খেই ধরিয়ে দেওয়া যাক। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই ফুলের নাম দিয়েছিলেন অরণ্যের অগ্নিশিখা। বর্তমানে ভারতের তামিলনাড়ুর রাজ্য ফুল এটি। তামিল ভাষায় এটি কিঝাক্সগু, সেঙ্গানথাল ও কানভালি নামে পরিচিত। বিশ্বে যে ৭৭টি পরিবারের ফুল নিয়মিত রং বদলায়, এটি তাদের একটি। এই উদ্ভিদের বৈজ্ঞানিক নাম গ্লোরিওসা সুপারবা, এটি কলচিকেসি পরিবারের উদ্ভিদ। আর চিন্তা করতে হবে না। বলে দিই।

বাংলায় আমরা একে উলটচণ্ডাল নামে চিনি। আর ইংরেজিতে এই ফুল ফ্লেম লিলি, ক্লাইম্বিং লিলি, টাইগার ক্ল, ফায়ার লিলি, গ্লোরি লিলি, ক্রিপিং লিলি, গ্লোরিওসা লিলি ইত্যাদি নামে পরিচিত। এবার মনে পড়েছে কিছু?

উলটচণ্ডাল লতানো বীরুৎ-জাতীয় উদ্ভিদ। নগরসভ্যতার বিকাশ ও বনভূমি বিলুপ্ত হওয়ার কারণে হারিয়ে যাওয়ার পথে এই ফুল। ১৯৪৭ সালে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ তাঁর ২১তম জন্মদিনে রোডেশিয়া তথা বর্তমান জিম্বাবুয়ে ভ্রমণকালে এই ফুলের আকারে হীরা উপহার পেয়েছিলেন।

এই ফুল প্রথমে ক্রিম সাদা রঙের হয়। পরের দিন ফুলের পাঁচটি পাপড়ির মুক্ত প্রান্তের দিকে অর্ধেক হলুদাভ হয়ে ওঠে। এর গোড়ার দিকে মলিন সাদা বা ক্রিম রং থাকে। তৃতীয় দিন পাপড়িগুলোর এক প্রান্তের এক-তৃতীয়াংশ উগ্র লাল, মাঝে হলুদাভ এবং গোড়ার দিকে ক্রিম রঙের দেখায়। চতুর্থ দিন প্রায় পুরোটাই লাল হয়ে যায়। কিন্তু মুক্ত প্রান্তের রং আরও গাঢ় লাল রঙের হয়। ভাদ্র-আশ্বিন মাসে এই ফুল ফুটতে দেখা যায়। মূলত অ্যান্থোসায়ানিনের জন্য এ রকম ঘটনা ঘটে।

এদের প্রতিটি পাপড়ি ঢেউখেলানো। পাপড়িগুলোর দৈর্ঘ্য ৭ থেকে ৮ সেন্টিমিটার এবং প্রস্থ ১ সেন্টিমিটার। ভেষজ গাছ হিসেবে এটি গ্রামাঞ্চলে পরিচিত। বায়বীয় কাণ্ডের প্রতিটি গাঁট থেকে এর পাতা জন্মায়। সেই পাতাগুলো যেমন চওড়া, তেমন লম্বা। পাতার ডগা সরু হতে হতে পরিণত হয়, যা অনেকটা হনুমানের লেজের মতো জড়িয়ে ঝোপঝাড়ের শীর্ষে পৌঁছে যায়।

গ্লোরিওসা সুপারবা ছাড়াও পৃথিবীতে উলটচণ্ডালের আরও ৭টি প্রজাতি আছে। উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় গাছ এটি। এর টিউবারাস রাইজোমে মেলে বিষাক্ত অ্যালকালয়েড কলচিসিন ও গ্লোরিওসিন। জঙ্গলে জন্ম হলেও এই লতানো বনফুলের সৌন্দর্য অনন্য। লাল আর হলুদে মিশ্রিত ফুল মন কেড়ে নিতে পারদর্শী যেকোনো ফুলপ্রেমীর। এর সৌন্দর্য প্রজাপতি আর ভ্রমরকে আকর্ষণ করে এবং পরাগায়নের মাধ্যমে বাড়িয়ে তোলে প্রকৃতির সৌন্দর্য। তবে উলটচণ্ডাল বা অগ্নিশিখা নামক এই ফুল খুবই বিষাক্ত।

মারাত্মক বিষাক্ত এ গাছের কোনো অংশ খেয়ে ফেললে মৃত্যু হতে পারে। এমনকি গাছের ছোঁয়াতেও ত্বকে জ্বালাপোড়া ভাব হতে পারে। বহু দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর কারণ হিসেবে পরিচিত এই অগ্নিশিখা উদ্ভিদ। এটি বিষাক্ত হলেও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ উদ্ভিদ। তবে বিশেষজ্ঞের অনুমতি ছাড়া এর ব্যবহার ও সেবন সম্পূর্ণ নিষেধ। এর রাইজোম ব্যবহার হয় সন্তান জন্মদানের সময় প্রসববেদনা লাঘবের জন্য। এ ছাড়া সাপে কামড়ানো, গাউট, বন্ধ্যত্ব, কলেরা, কিডনি সমস্যা, আলসার, কাটাছেঁড়া, স্মলপক্স, ক্যানসার, বিভিন্ন যৌনরোগ প্রতিরোধে উলটচণ্ডাল ব্যবহার হয় বহুলভাবে। 

লেখক: সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ, মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ, ময়মনসিংহ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সঠিক সময়ে নির্বাচন না হলে দেশে মার্শাল ল হবে: নাগরিক ঐক্যের মান্না

হোয়াইট হাউসে মধ্যাহ্নভোজের আগেই বের হয়ে যেতে বলা হয় জেলেনস্কিকে

‘আমাদের অনুমতি ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করলে থানা ঘেরাও করব’, সরকারি কর্মকর্তার বক্তব্য ভাইরাল

চকরিয়া থানার ওসিকে প্রত্যাহারের নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

সৈয়দ জামিলের অভিযোগের জবাবে যা লিখলেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত