Ajker Patrika

সড়কের ধুলায় দুর্ভোগ

আনোয়ার সাদাৎ ইমরান, মধুপুর
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২২, ১৬: ৪৯
Thumbnail image

মাত্র চঞ্চল হয়ে উঠেছে সিনথিয়া। মায়ের আঁচল ছেড়ে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি যেন তার কাজ। কিন্তু শিশুটির চারদিকের পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর করে তুলেছে উন্নয়নের ধুলা। ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রাখার পরও থালার খাবারে ধুলা পড়ে হয়ে যায় লাল। বাধ্য হয়েই ফেলে দিতে হয় কিচকিচে বালুযুক্ত খাবার। ক্ষোভ ও কষ্ট নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন মধুপুর-চাপড়ী সড়কের শেওরাপাড়া এলাকার গৃহবধূ সোনিয়া।

জানা গেছে, উপজেলা সদর থেকে চাপড়ী হাট জিসি পর্যন্ত ইটের খোয়ার সঙ্গে ডাস্ট (মিহি ইটের গুঁড়া) মিশিয়ে সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে। ফলে এ দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে এলাকায়। নতুন এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ সড়ক পুনর্নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আলিফ ট্রেডার্স এই কাজ বাস্তবায়ন করাচ্ছে সাব-ঠিকাদার দিয়ে।

অভিযোগ রয়েছে ওই ঠিকাদার বিভিন্ন এলাকার খোয়া বিক্রির দোকান থেকে উচ্ছিষ্ট ডাস্ট সংগ্রহ করে পানি দিয়ে মিশিয়ে সড়ক উন্নয়নকাজে ব্যবহার করছে। ইতিমধ্যে ইটের খোয়া ধুলায় পরিণত হয়ে পুরো গ্রাম ধূসর করে ফেলেছে।

সরেজমিন মধুপুর-চাপড়ী সড়ক এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তার দুই ধারের বাড়িঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, গাছপালাসহ সবকিছু বিবর্ণ হয়ে গেছে। গাড়ির চাকার চাপে ইট গলে সূক্ষ্ম কণায় পরিণত হয়ে বাতাসে উড়ে পুরো এলাকায় লাল আবরণের সৃষ্টি করেছে। সৌরবিদ্যুতের সোলার প্যানেলগুলো লাল বস্তুখণ্ডে পরিণত হয়েছে। বেশকিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে ধুলার অত্যাচারে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সকাল ও সন্ধ্যায় কিছু সময়ের জন্য ব্যবসায়ীরা দোকান খুলে ব্যবসা করে থাকেন। কিছু দোকান ধুলা থেকে রক্ষা পেতে দোকানের বাইরের অংশেও পলিথিন বা প্লাস্টিকের বস্তা দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। এলাকার অনেক শিশু শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়েছে। এ অবস্থায় এলাকাবাসীর স্বাস্থ্য বিপর্যয় ঘটার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

ব্যবসায়ী আফছার আলী, রনিসহ কয়েকজন বলেন, ‘ধুলার কারণে আমরা বন্দী হয়ে পড়েছি। দোকানের সামনে আরেকটি বেড়া দিতে বাধ্য হয়েছি ধুলা থেকে বাঁচতে।’

রানিয়াদ গ্রামের পঞ্চাশোর্ধ্ব নাছিমা বেগম বলেন, ‘বাইরে কোনো কাপড় শুকানো যায় না। ঘরের বিছানায় বসা যায় না। গাছের পাতা, ঘরের চালের রং পাল্টে হয়েছে লাল। জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।’

রানিয়াদ গ্রামের মামুন, ইয়াসিনসহ কয়েকজন জানান, ধুলার কারণে এই গ্রামের প্রায় প্রতিটি শিশু ঠান্ডা-কাশিতে ভুগছে। অনেকের শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছে।

মধুপুর শহীদ স্মৃতি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ বলেন, চারদিকের পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠেছে। শিক্ষার্থীরা সকালে আসে পরিষ্কার জামাকাপড় নিয়ে। বিকেলে যায় ময়লা অবস্থায়।

এ বিষয়ে ঠিকাদারি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে নির্মাণ তদারকি সংস্থা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) মধুপুরের প্রকৌশলী জয়নাল আবেদীন সাগর জানান, ডব্লিউএমএম প্রযুক্তির ব্যবহার এই প্রথমবারের মতো করা হচ্ছে। উন্নয়ন টেকসই হবে বলেই প্রকল্পটির এমন নকশা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে ধুলা নিয়ন্ত্রণে পানি ব্যবহারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত