Ajker Patrika

অবহেলার পাটকাঠির বেড়েছে কদর, যাচ্ছে বিদেশেও

ফরিদপুর প্রতিনিধি
অবহেলার পাটকাঠির বেড়েছে কদর, যাচ্ছে বিদেশেও

সোনালি আঁশে দেশসেরা ফরিদপুর। তাই তো এই জেলার ব্র্যাডিং পণ্য পাট, আর এই পাটের কোনো কিছুই এখন আর ফেলনা নয়। আগে অবহেলা-অনাদরে পাটকাঠি পড়ে থাকত। শুধু রান্নার জ্বালানি, ঘরের বেড়া, পানের বরজের ছাউনি তৈরিতে ব্যবহৃত হতো পাটকাঠি। বর্তমানে বিশ্ববাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় এই পাটকাঠির কদর বেড়েছে।

আঁশ ছাড়িয়ে নেওয়ার পর পড়ে থাকত পাটকাঠি। তবে প্রযুক্তির কল্যাণে এখন পাটকাঠি রূপ নিয়েছে অর্থকারী পণ্যে। পার্টিকেল বোর্ড ও চারকোল কারখানায় ব্যাপক চাহিদা থাকায় তা রপ্তানি হচ্ছে চীনসহ বিভিন্ন দেশে। ফলে চলতি মৌসুমে পাটকাঠি বিক্রি করে ১৩০ কোটি টাকার বেশি আয় করবেন শুধু ফরিদপুরের চাষিরাই। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাটকাঠি খুলে দিতে পারে অর্থনীতির নতুন দুয়ার।

জানা গেছে, সঠিক সময়ে বৃষ্টি আর বর্ষার পানির অভাবে এবার পাট জাগ দিতে হিমশিম খেতে হয় চাষিদের। এমনকি পানির অভাবে খেতেই অনেক পাট শুকিয়ে মরে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে কৃষকেরা মাটি খুঁড়ে পাট জাগ দিতে বাধ্য হন। এতে নষ্ট হয়ে যায় পাটের রং, যার প্রভাব পড়ে দামে। অন্য যেকোনো মৌসুমের চেয়ে এবারের পাটের উৎপাদন ব্যয় বেশি হওয়ায় লোকসানের মুখে চাষিরা। তাই আঁশের লোকসান পুষিয়ে নিতে পাটকাঠিই বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। ফরিদপুরের সালথা, নগরকান্দা, বোয়ালমারীসহ বেশ কয়েকটি উপজেলা ঘুরে দেখা মেলে এমন চিত্র।

সালথার গোট্টি ইউনিয়নের পাটচাষি ফিরোজ মোল্লা, হাবিবুর রহমান, সিরাজ প্রামাণিকসহ অনেক চাষি জানান, এতকাল রান্নার জ্বালানি হিসেবে, বাড়িঘর ও সবজি খেতের বেড়া, মাচা, পানবরজ তৈরিতে ব্যবহার হওয়া পাটকাঠি এখন আমাদের আশার আলো দেখাচ্ছে। কয়েক বছর ধরে এই রুপালি কাঠি থেকে বেশ আয় হচ্ছে। বড় বড় কোম্পানির এজেন্ট এসে গ্রাম থেকে এটি কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমানে ১০০ আঁটি কাঠির (শুকনা) মূল্য ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা।

পাটকাঠি ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন শেখ বলেন, ‘এই মৌসুমে আমি দেড় থেকে দুই কোটি টাকার কাঠি ক্রয় করে পার্টিকেল বোর্ড তৈরিতে কারখানায় বিক্রি করি।’

ফরিদপুর চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট নজরুল ইসলাম বলেন, চাষিদের রক্ষা করতে হলে পাটকাঠিতে দর দিতে হবে। যেসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান পাটকাঠির ব্যবহার করে তাদের আরও আন্তরিক হয়ে চাষিদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তবেই এ জেলার পাটচাষিরা পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকতে পারবেন।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, চীনসহ বিভিন্ন দেশে পাটকাঠি পুড়িয়ে পাওয়া কার্বন থেকে আতশবাজি, কার্বন পেপার, প্রিন্টার ও ফটোকপিয়ারের কালি, মোবাইলের ব্যাটারি, দাঁত পরিষ্কারের ওষুধ ও সারসহ নানা পণ্য তৈরি করা হয়। এমনকি পার্টিকেল বোর্ড তৈরিতে ব্যবহার হচ্ছে সোনালি আঁশের রুপালি কাঠি। এ কারণে দেশে দেশে বৃদ্ধি পাচ্ছে এর চাহিদা। দামও মিলছে বেশ।

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জিয়াউল হক বলেন, ফরিদপুরে ১ হেক্টর জমিতে চাষিদের উৎপাদিত পাট থেকে ১৫ হাজার টাকার কাঠি বের হচ্ছে। চাষিরা পাট বিক্রি করে বেশ ক্ষতির মুখে পড়েছেন, আশা করছি এই কাঠিতে কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন তারা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত