Ajker Patrika

রাত নামলেই জাটকা শিকার

খান রফিক, বরিশাল
আপডেট : ০৭ মার্চ ২০২২, ১০: ৫৯
রাত নামলেই জাটকা শিকার

ইলিশের বিভিন্ন অভয়াশ্রমে সব ধরনের মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শুরু হয় গত ১ মার্চ। জাটকা পূর্ণাঙ্গ ইলিশে পরিণত হতে টানা ২ মাস এ বিধিনিষেধ চলবে। কিন্তু ইলিশের ৬ষ্ঠ অভয়াশ্রমে (হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ, সদরের আংশিক) এমন বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে জাটকা ধরছেন জেলেরা। রাতে অভিযান না থাকায় সারা রাত জাটকা শিকার চলছে মেঘনা, কালাবদর, মাসকাটা, কীর্তনখোলা, আড়িয়াল খা নদের ৮২ কিলোমিটারজুড়ে।

মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বরিশাল সদর উপজেলার কালাবদর নদীর হবিনগর পয়েন্ট থেকে মেহেন্দীগঞ্জের বামনীরচর, মেহেন্দীগঞ্জের গজারিয়া নদীর হাটপয়েন্ট থেকে হিজলা লঞ্চঘাট, হিজলার মৌলভীরহাট থেকে মেহেন্দীগঞ্জসংলগ্ন মেঘনার দক্ষিণ-পশ্চিম জাঙ্গালিয়া পর্যন্ত মোট ৮২ কিলোমিটার নদ-নদী ৬ষ্ঠ অভয়াশ্রমের আওতায় পড়েছে। এ সময় জাটকা বড় হতে দিতে অভয়াশ্রমে মাছ ধরা রোধে প্রচারও চলছে। কিন্তু থামানো যাচ্ছে না জাটকা শিকার।

৬ষ্ঠ অভয়াশ্রমের প্রধান ক্ষেত্র মেহেন্দীগঞ্জ ও হিজলা। মেহেন্দীগঞ্জের অবস্থা নিয়ে হতাশ প্রশাসন। গতকাল রোববার মেঘনা, কালাবাদর এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেদার চলছে জাটকা শিকার। তবে জেলেরা জানিয়েছেন, তাঁরা পেটের দায়ে নদীতে নামছেন। কারণ এখনো খাদ্য সহায়তা পাননি।

মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা কামাল হোসেন জানান, নিষেধাজ্ঞার পর থেকে দৈনিক দিনে ২টি দল নদীতে থাকে। ইতিমধ্যে ৫ জনের জেল ও ২ লাখ মিটার জাল জব্দ করেছেন। প্রথম দুই দিন জেলেরা নদীতে নামেনি। কিন্তু এখন আর থামানো যাচ্ছে না। নদীতে জাটকা প্রচুর। ১টা ইলিশ পেলে এর সঙ্গে ৫টা জাটকা ধরা পড়ছে। জেলেরা ইঞ্জিনচালিত ছোট নৌকা নিয়ে নদীতে নামে। তাদের অবস্থান টের পেলে পাশের খালে ঢুকে পড়ে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রীর পিএসকে ফোন দিয়ে বলেছেন এখানকার মেঘনা, কালাবদরে জাটকা ধরা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।

কামাল হোসেন জানান, উত্তাল মেঘনায় জাটকা নিধন ঠেকাতে গিয়ে তিনি ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। এখন জেলেরা রাতেই নামে বেশি। কিন্তু রাতে অভিযান কঠিন। কেননা একবার কোস্টগার্ড মারা গেছে, ইউএনও আহত হয়েছেন। এখানকার মানুষ দুর্ধর্ষ, নারীরা আসেন দল বেঁধে। তাঁরাও বিব্রত। যে কারণে রাতে অভিযানে নামা কঠিন।

এ রকম পরিস্থিতিতে নৌ-পুলিশ, কোস্টগার্ড নিয়ে ঝটিকা অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিন্তু সমস্যা হলো নদীতে কম বয়স্ক ছেলেদের নামিয়ে দেওয়া হয়। তা ছাড়া জনপ্রতিনিধিরা সহযোগিতা করেন না।

মেহেন্দীগঞ্জ নৌ-পুলিশের ইন্সপেক্টর মো. ফারুক জানান, পেটের দায়ের কথা বলে জেলেরা নদীতে নামে। যদিও তাঁরা জিরো টলারেন্স দেখাচ্ছেন।

এদিকে হিজলার মেঘনায় দেদার চলছে জাটকা শিকার। হিজলা গৌরবদীর মেঘনা, ধুলখোলা, আবুপুর, গঙ্গাপুর, নাছো কাঠি এলাকায় দল বেঁধে জাটকা নিধন করেন জেলেরা। এর নেপথ্যে একটি শক্তিশালী চক্র রয়েছে বলে জানা গেছে।

জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির হিজলা উপজেলা সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, অভয়াশ্রমে নামে চলে নিষেধাজ্ঞা। মাছ ধরা তো অবাধে চলছে। মূল মেঘনায় অভিযানে যায় না প্রশাসন। অনেকটা লোক দেখানো কার্যক্রম। রাত থাকে অরক্ষিত।

হিজলা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা এম এম পারভেজ জানান, গত ৫ দিনে ১৪ জনকে জেল, ২ জনকে জরিমানা এবং ৩০ হাজার মিটার জাল উদ্ধার করেছেন। ইতিমধ্যে ১৪টি অভিযান করেছেন। রাতে ফোর্স পাওয়া যায় না, তাই সচরাচর অভিযান করা যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, হিজলায় জাটকা শিকার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। নিজস্ব নৌকা নেই। শ্রমিক, পুলিশ ম্যানেজ করে অভিযানে নামা অনেক জটিল হয়ে যায়।

এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস বলেন, অভিযান চলমান রয়েছে উপজেলাগুলোতে। নৌবাহিনীও আছে। তবে রাতে আরও জোরদার অভিযান দরকার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত