Ajker Patrika

নিধনের ধারা অব্যাহত

মামুনুর রশীদ
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৮: ৩০
নিধনের ধারা অব্যাহত

১৪ ডিসেম্বর আমরা ছিলাম স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কর্মী হিসেবে প্রবাসে। প্রবাস থেকেই খবর পেয়েছিলাম আমাদের প্রিয় মানুষ বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তির নায়কদের পাকিস্তানের দোসররা তুলে নিয়ে গেছে। তাঁদের কোনো খোঁজও পাওয়া যাচ্ছে না। যাঁদের তুলে নিয়ে গেছে, তাঁদের কারও কারও সঙ্গে আমাদের খুব নিবিড় সম্পর্ক ছিল। সুদীর্ঘ সময় ধরে সমাজে তাঁদের অবদান আমরা দেখে এসেছি। তাঁদের শ্রদ্ধা করেছি, ভালোবেসেছি। আবার তাঁরা যে ঢাকা শহর ছেড়ে চলে যাননি, তার জন্য ক্ষুব্ধও হয়েছি। কারণ এই শহর তখন কোনো অবস্থাতেই কোনো দেশপ্রেমিকের জন্য নিরাপদ ছিল না। 

‘সংশপ্তক’ উপন্যাসের নাট্যরূপ দিতে গিয়ে শহীদুল্লা কায়সারের সঙ্গে একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আমার তৈরি হয়েছিল। শুধু শহীদুল্লা কায়সার নন, তাঁর পরিবারের সঙ্গেও। প্রায়ই সকাল বেলায় তাঁর কায়েতটুলির বাসায় যেতাম, টেলিভিশনের জন্য ‘সংশপ্তক’-এর নাট্যরূপের পাণ্ডুলিপি নিয়ে। শহীদুল্লা কায়সার তখন সংবাদের অফিসে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে সকালের নাশতা করছেন। শিশু পুত্র-কন্যাদের সঙ্গে তাঁর ভোরবেলার খেলা। কোলে বসিয়ে কাউকে তিনি দুধ খাওয়াচ্ছেন। তিনি স্যুট পরতে ভালোবাসতেন, স্যুট পরেই এই কাজটি করতেন। কোলে বসিয়ে সন্তানদের দুধও খাওয়াতেন। প্রথম প্রথম একটু অবাক লাগত। একজন জেলখাটা কমিউনিস্ট, যিনি তাঁর অসাধারণ শিল্পগুণসমৃদ্ধ ‘সারেং বউ’ বা ‘সংশপ্তক’ লিখেছেন, কী গভীর গ্রামীণ জীবনের আখ্যান রচয়িতা, তিনি স্যুট-প্যান্ট কী করে পরেন! নিজেই ফক্সওয়াগন গাড়ি চালান আবার সংবাদের সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। 

পরবর্তীকালে আমি যখন ‘ওরা কদম আলী’ নাটক লিখি, বিভিন্ন জায়গায় আমি প্রশ্নের সম্মুখীন হই—কী করে আমিও স্যুট পরি এবং দামি সিগারেট খাই! একবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের সামনে এই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছিলাম। তখন জবাবে বলেছিলাম, আপনারা একটু চিন্তা করুন আমার নাটকের নাম ‘ওরা কদম আলী’, আমি কিন্তু বলিনি আমরা কদম আলী। আমি তো কদম আলী নই, কদম আলীদের জন্য লিখেছি। কদম আলী হলে আমি লিখতে পারতাম কি? সেই থেকে এতগুলো বছর যে শ্রেণিসংগ্রামের বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছি, একটা মধ্যবিত্ত জীবনযাপন করে তা কি সম্ভব হতো? পৃথিবীতে আমার নমস্য যাঁরা—ম্যাক্সিম গোর্কি, তলস্তয়, আন্তন চেখভ, বের্টল্ট ব্রেখট, শেক্‌সপিয়ার—তাঁরা কি কদম আলী শ্রেণির মানুষ? 

যাই হোক, সেই অসাধারণ লেখক শহীদুল্লা কায়সারকে আমরা হারালাম, হারালাম মুনীর চৌধুরীকে, যিনি আধুনিক নাটকের জন্ম দিয়েছিলেন। আরও কিছু অসাধারণ সাংবাদিক, যাঁরা এই পেশাকে বেছে নিয়ে নিদারুণ দারিদ্র্যকে গ্রহণ করেছিলেন। তখনকার দিনে সাংবাদিকদের অর্থনৈতিক জীবন আজকের দিনে কল্পনাই করা যায় না। যেসব পত্রিকা তখন বিখ্যাত ও জনপ্রিয় ছিল, তার সাংবাদিকেরা কেউই নিয়মিত বেতন পেতেন না, বেতনকাঠামোও তৈরি হয়নি তখন। মাসের পর মাস অনেক সাংবাদিক বেতন পেতেন না। কিন্তু লেখালেখিতে তাঁরা ছিলেন বিপ্লবী। ব্যাপারটি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বুঝতে পেরেছিল। তারা দেশটাকে মেধাশূন্য করার জন্য বুদ্ধিজীবীদের বেছে নিয়েছিল। 

আবার যেসব চিকিৎসক গণমানুষের কাছে ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয়, যাঁরা চিকিৎসার জন্য ধনী-গরিব বিবেচনা করতেন না, সামান্য ভিজিট নিয়ে কিংবা না নিয়েই মানুষের চিকিৎসা করতেন, তাঁরাও হানাদারদের টার্গেট হয়ে পড়লেন। কী নিষ্ঠুর বিবেচনা! কিন্তু ওই সব চিকিৎসক ভেবেছিলেন—আমরা তো মানুষের সেবা করি, আমাদের কী অপরাধ? সেই অপরাধটাই পাকিস্তানিদের কাছে প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ল, তাদের হত্যা করল। তাঁদের মধ্যে ছিলেন একজন চক্ষু চিকিৎসক ডা. আলীম চৌধুরী। তিনি রণদা প্রসাদ সাহার প্রতিষ্ঠিত মির্জাপুরের কুমুদিনী হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে যোগদান করেন। কত অন্ধজনকে তিনি চোখের আলো ফিরিয়ে দিয়েছেন, তার কোনো ঠিকঠিকানা নেই। তাঁকেও হত্যা করল পাকিস্তানি বাহিনী ও এদেশীয় দোসররা।

এসব হত্যাকাণ্ডের মধ্যে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে উৎসাহিত করেছিল এ দেশেরই কিছু নরঘাতক পিশাচ। প্রশ্ন জাগে—কেন এ দেশের একধরনের ঘাতককুল তাঁদের হত্যা করল? তাঁদের তো কোনো দল ছিল না, রাজনীতি যতটুকু ছিল, তা মানুষের মুক্তির জন্যই। তারপর জল গড়িয়ে কেটে গেছে বায়ান্ন বছর। কোথাও গিয়ে মিলল না একটি ধারায়। দুটি বড় বিভাজন তৈরি হয়ে গেল। একদিকে দেশপ্রেমিক ধারা, অন্যদিকে সাম্প্রদায়িক ধারা। ওই একাত্তরের শেষ প্রহরে যারা দেশপ্রেমিকদের হত্যা করল, তারা কিন্তু তাদের কৃতকর্মের জন্য কোনো অনুশোচনা করল না, বরং এ দেশে ধর্মভিত্তিক ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখল। 

এর মধ্যে রাজনীতিতে একটি নতুন উপাদানের সৃষ্টি হলো, তা হলো দুর্নীতি। দুর্নীতি ক্রমান্বয়ে সমাজের সর্বস্তরে প্রবেশ করতে থাকল। আর সেই সঙ্গে একটা ধর্মভিত্তিক সংস্কৃতির সৃষ্টি হলো, যা একেবারেই ছিল কল্পনার বাইরে। যে চিহ্নিত শক্তি একাত্তরজুড়ে, বিশেষ করে ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে আমাদের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করল, তারাই একটা সময়ে শক্তি সঞ্চয় করে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হলো। পৃথিবীতে এত স্বল্প সময়ের মধ্যে কোথাও মুক্তিযুদ্ধের বিপরীত শক্তি ক্ষমতার অংশীদার হতে পারেনি। এ এক বড় বিস্ময়!

আর মুক্তিযুদ্ধের শক্তি এই পরিস্থিতিতে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে শুরু করল। মানুষ এমন কেন হলো? এটা কি মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যর্থতা? কিছুটা তো বটেই। কারণ মুক্তিযুদ্ধের যে সামষ্টিক অংশগ্রহণ, তা বিবেচিত হয়নি। সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ এবং তাদের আত্মত্যাগ কোথাও রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ অগ্রযাত্রায় বিবেচনা করা হয়নি। সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা ও তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের যেভাবে বিবেচনা করা হয়েছে, সেইভাবে নাগরিকদের অবদান স্বীকার করা হয়নি। এটি একটি বড় উপাদান। মুক্তিযুদ্ধের পরে যেসব ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করা হয়েছিল, একপর্যায়ে তারা দেউলিয়া হয়ে যায়, এটিও মুক্তিযুদ্ধের এক বড় ধরনের পরাজয়। মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের অধীন প্রতিষ্ঠানগুলো অতীতে লাভজনক হলেও তা একসময় দেউলিয়াত্বের মর্যাদা গ্রহণ করে। যে সংস্কৃতি হওয়া উচিত ছিল অসাম্প্রদায়িক, সম্প্রতি তাও মুষ্টিমেয় সংস্কৃতিকর্মীর দ্বারা একটি সংগ্রামী রূপ পাওয়ার পরেও বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছাতে পারেনি। এ এক বড় দুর্ভাগ্য! 

বিভিন্ন সময়ে সাম্প্রদায়িক কারণে যেসব দাঙ্গা ও অভিবাসন প্রক্রিয়া চলেছে, তাতে মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো সক্রিয় ভূমিকা দেখা যায়নি, যার ফলে কখনো কখনো মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি মানুষের বিরূপ ধারণা তৈরি হয়েছে। এই বিরূপ ধারণা তৈরি হওয়ার কারণে ধর্মীয় সংস্কৃতির এক অনুপ্রবেশ ঘটেছে। নারীমুক্তির ক্ষেত্রে একটা পর্যায়ে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কোনো কাজ করেনি। তাই দেশে বিপুল সংখ্যক মাদ্রাসা গড়ে উঠেছে। রাষ্ট্রক্ষমতা থাকার ফলেও বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার তেমন কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে দেখা গেছে এসব ব্যবস্থাকে নানাভাবে উৎসাহিত করেছে। দেশে একটা অত্যন্ত শক্তিশালী মাদ্রাসা বোর্ড গড়ে উঠেছে। রাজনীতি এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে ভোট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভোটের রাজনীতি করতে গিয়ে এই ব্যবস্থাগুলো রাজনৈতিক দলগুলোকেও মেনে নিতে হয়েছে। 

গত শতাব্দীর ত্রিশের দশকে যেসব রাজনৈতিক দল সাম্যবাদ ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতির কথা বলত, তারাও এই পর্যায়ে এসে সেই সব সংগ্রাম তাঁদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে রাখেনি, যার ফলে তারা অতি সংখ্যালঘু একটি রাজনৈতিক দল গঠন করে এবং জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক ক্রমাগত বিচ্ছিন্ন করতে থাকে। এই জটিল রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে দেশে অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক চর্চা মুখ থুবড়ে পড়েছে। 

যদিও মাঠে এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসমৃদ্ধ তেমন কোনো কাজ নেই, কিন্তু ধর্মভিত্তিক কাজ অনেক প্রসারিত। আজ মনে পড়ে—কত রাজনীতিবিদ নিজেকে নিঃস্ব করে কত বড় বড় ঘটনার জন্ম দিয়েছেন, কত বড় বড় কৃষক আন্দোলন করেছেন, সেই সব কৃষক-শ্রমিকের কত বড় বড় আত্মত্যাগ—সব বৃথা হতে চলেছে। আজ ছাত্ররাজনীতি, কৃষক-শ্রমিকের রাজনীতি—সবকিছু কোন দিকে কী পর্যায়ে গিয়ে অবসন্ন হয়ে যাচ্ছে! আজ বায়ান্ন বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেল, শুধু ঢাকা শহরে নয়, সারা দেশে বুদ্ধিজীবী নিধন চলছে। মুক্তবুদ্ধির মানুষকে হত্যা করছে উগ্র সাম্প্রদায়িক জঙ্গিগোষ্ঠী। যাঁরা সারা জীবন উৎসর্গ করেছেন বাংলাদেশের মুক্তির জন্য, তাঁদেরইবা জায়গা কোথায় হলো? আজ বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের চর্চা প্রায় অন্তর্নিহিত, বুদ্ধিজীবীরা খণ্ডিত-বিখণ্ডিত। আমরা কি বাংলাদেশে একটি অখণ্ড অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির চর্চার কথা ভাবতে পারি?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেষ সাক্ষীর জেরা চলছে

বাসস, ঢাকা  
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে সর্বশেষ (৫৪ তম) সাক্ষীর জেরা শুরু হয়েছে। এই মামলাটির বিচার চলছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ।

আজ সোমবার বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১-এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) মো. আলমগীরের জেরা শুরু করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমীর হোসেন। আইনজীবী আমীর হোসেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে শুনানি করছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আলমগীরের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়।

এই মামলার শুনানিতে এর আগে গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রতীক শহীদ আবু সাঈদের বাবাসহ স্বজনহারা পরিবারের একাধিক সদস্য সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার গুরুত্বপূর্ণ ‘স্টার উইটনেস’ হিসেবে সাক্ষ্য দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী নাহিদ ইসলাম এবং দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে অভিযোগ ওঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১।

পরবর্তীকালে, এই মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদ্‌ঘাটনে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রোভার) হওয়ার জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁর আবেদন মঞ্জুর করলে তিনি রাজসাক্ষী হিসেবে এই মামলায় সাক্ষ্য দেন।

মামলার প্রসিকিউশন পক্ষে শুনানি করছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম এবং গাজী এসএইচ তামিম। শুনানিতে তাঁদের সঙ্গে অপর প্রসিকিউটররাও উপস্থিত ছিলেন।

অন্যদিকে, এই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলা ছাড়াও ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনায় তাঁকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হলো রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ড নিয়ে। এই তিনটি মামলার বিচারকাজই বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ পাওয়ার আশায় সাগরে জেলেরা

  • এবার ভারতের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার।
  • গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলে পল্লিগুলোতে ব্যস্ততা।
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা
মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে বুধবার রাতে। এর আগে দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন জেলেরা। অনেকে দেখে নেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না। কেউ আবার জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করেন। ছবিটি কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের খুরেরমুখ এলাকার। ছবি: আজকের পত্রিকা

‘দুই দিন আগেই বাড়ি থেকে পাথরঘাটায় চলে এসেছি। এখন পুরোনো জাল সেলাই করছি। এক সপ্তাহের বাজারও করে এনেছি। আজ বিকেলে সাগর মোহনায় যাব, গভীর রাত থেকে জাল ফেলব।’ কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদরের বাইনচটকী এলাকার জেলে হোসেন আলী। গতকাল বুধবার সকালে বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।

মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা গতকাল বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে শেষ হয়েছে। তাই গতকাল দিনভর ছিল উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে ব্যস্ততা। অনেকে দেখে নিচ্ছিলেন ট্রলার ঠিকঠাক আছে কি না, কেউ জালের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছিলেন, কেউ আবার প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ অন্য সরঞ্জাম গুছিয়ে নিচ্ছিলেন।

বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র এবং ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে গতকাল শত শত ট্রলার নোঙর করে রাখা ছিল। জেলেদের উপস্থিতিতে ঘাট এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। ফকিরহাটের মুদি-মনিহারি দোকানগুলোতে জেলেরা কেনাকাটা করতে ভিড় জমান। ফকিরহাট এলাকার বিসমিল্লাহ ট্রলারের মাঝি রহিম মিয়া বলেন, ‘সাগরে মাছ শিকারে যেতে সকল প্রস্তুতি নিয়েছি। নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ হওয়ামাত্রই সাগরে নামব।’

জেলে নুরসাইদ ও ফোরকান মিয়া বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার সময় পরিবার-পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে কেটেছে। ওই সময়ে বেশ টাকা ঋণ করেছি। এখন সাগরে যাব। দেখি আল্লাহ ঋণ পরিশোধ করতে দেন কি না।’

নোয়াখালীর হাতিয়ার সূর্যমুখী, বাংলাবাজার, কাজিরবাজার, পাইতান মার্কেট চেয়ারম্যান ঘাটসহ বেশ কয়েকটি ঘাটে গতকাল জেলেদের ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে নৌকায় জাল তুলছিলেন, আবার অনেকে জ্বালানি তেল মজুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ট্রলারে নিয়ে যান। সূর্যমুখী ঘাটের এমভি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি জাফর উল্যা বলেন, ‘সাগরে ৮-১০ দিন থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছি। সন্ধ্যায় সাগরের উদ্দেশে রওনা দেব।’

সূর্যমুখী ঘাট জেলে সমিতির সভাপতি জবিয়ল হক বলেন, ‘সাগরে নামতে প্রস্তুত নোয়াখালীর হাতিয়ার ২০টি ঘাটের লক্ষাধিক জেলে। এসব ঘাটে প্রায় ১০ হাজার ছোট-বড় ফিশিং ট্রলার রয়েছে। প্রতি ট্রলারে ১০ জন হলেও লক্ষাধিক জেলে এই মাছ ধরার সঙ্গে জড়িত। তাঁদের সবাই গত ৫৮ দিন তীরে বেকার ছিলেন।’

পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী এলাকার জেলেরা গতকাল দিনভর সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন। এ ছাড়া মঠবাড়িয়া উপজেলার সাপলেজা, খেতাচিড়া, বড়মাছুয়া, ছোটমাছুয়া, ভান্ডারিয়া উপজেলার চরখালী, হেতালিয়া, কাউখালী উপজেলার সোনাকুর এলাকার জেলেরা, সদর উপজেলা এবং নেছারাবাদ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার জেলেরা প্রস্তুতি শেষে গত রাতে বঙ্গোপসাগরে রওনা হন।

কয়েক দিন ধরে কক্সবাজার উপকূলের জেলেপল্লিগুলোতে নৌকা, জাল মেরামতসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি সেরেছেন জেলেরা। গতকাল মেরিন ড্রাইভের টেকনাফের খুরেরমুখ, সাবরাং ও বাহারছড়া এলাকায় দেখা গেছে, সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা সারি সারি ট্রলারে জাল ও রসদ তোলেন জেলেরা।

একটি ট্রলারের মাঝি আবু তাহের জানান, এবার ভারতের সঙ্গে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় কেউ সাগরে মাছ শিকারে নামেনি। এতে উপকূলের কাছাকাছি সাগরে জাল ফেললেই ইলিশসহ অন্য মাছ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী তিনি।

কক্সবাজার শহরের ফিশারি ঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী জানান, কক্সবাজার উপকূলে ছোট-বড় ৭ হাজারের মতো যান্ত্রিক ট্রলার রয়েছে। এসব ট্রলারে প্রায় এক লাখ জেলে ও শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। অধিকাংশ ট্রলার নিষেধাজ্ঞা ওঠার সঙ্গে সঙ্গে সাগরে রওনা হবে।

[প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বরগুনা ও আমতলী, পিরোজপুর, কক্সবাজার এবং হাতিয়া প্রতিনিধি]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের নিষেধাজ্ঞা: স্থলবন্দর থেকে ফেরত আসছে রপ্তানি পণ্য

  • ক্রয়াদেশের চালান নিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা
  • সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা
  • আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ডেকেছে জরুরি বৈঠক
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২: ৪৪
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ভারতের স্থলবন্দর নিষেধাজ্ঞার পর সীমান্তে আটকে থাকা তৈরি পোশাক, খাদ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাকগুলো ফেরত আনছেন রপ্তানিকারকেরা। তবে যেসব ট্রাক বন্দরে ঢুকে গিয়েছিল, সেগুলো ভারতে প্রবেশ করানোর চেষ্টা চলছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এসব ট্রাক ঢুকতে পারবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।

ভারতের নিষেধাজ্ঞার এক দিন পরই গত রোববার লালমনিরহাটের বুড়িমারী ও যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দরসহ বিভিন্ন বন্দরে পণ্যের ট্রাক আটকে দেয় ভারত। সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, রোববার ভারতের আমদানি বিধিনিষেধের কারণে বুড়িমারী সীমান্তে প্রাণের ১৭ ট্রাক খাদ্যপণ্য আটকে যায়। এ ছাড়া বেনাপোলে ৩৬টি পোশাক বোঝাই ট্রাকসহ অন্যান্য পণ্যের শতাধিক ট্রাক ঢুকতে পারেনি।

গতকাল সোমবার পর্যন্ত বুড়িমারী থেকে প্রাণের পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলোর অর্ধেকের বেশি ফেরত নিয়ে আসে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া বেনাপোলে পোর্টের ভেতরে ২৪টি ট্রাক ছাড়া বাকিগুলো ফেরত চলে যায়।

বেনাপোল বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সাজেদুর রহমান গতকাল সোমবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল পোর্টের ভেতর ও বাইরে শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে ছিল। আজ পোর্টের ভেতরের ২৪টি ছাড়া বাকিগুলো ফেরত নিয়ে গেছেন মালিকেরা। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, পোর্টের ভেতরের ট্রাকগুলোও ফেরত নিতে হবে।

জানতে চাইলে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের হাতে ৬ মিলিয়ন ডলারের ক্রয় আদেশ রয়েছে। তার মধ্য থেকে রোববার বুড়িমারী দিয়ে ১৭ ট্রাকবোঝাই পণ্য পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেগুলো ঢুকতে পারেনি। ট্রাকগুলো ফেরত আনা হচ্ছে। নতুন করে কাগজপত্র তৈরি করে অন্য পথ দিয়ে পণ্য পাঠাতে হবে।’

বেনাপোল স্থলবন্দর সূত্রে জানা যায়, ওই ২৪টি ট্রাক পোর্টের ভেতরে থাকায় এখনো তারা ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের আশা, যেহেতু নিষেধাজ্ঞার আগে এই পণ্যগুলোর এলসি করা হয়েছিল, তাই এগুলো প্রবেশে অনুমতি পাবে। তবে এটি নির্ভর করবে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনার ওপর।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ইতিমধ্যে অনেক রপ্তানিকারক রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সঙ্গে আলোচনা করে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছে।

স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে আজ মঙ্গলবার আন্তমন্ত্রণালয়ের সভা ডেকেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, স্থলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জসমূহ এবং আশু করণীয় নির্ধারণে বাণিজ্যসচিবের সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় আন্তমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে।

সভায় নৌপরিবহন ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যবসায়ী প্রতিনিধি হিসেবে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিদের উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার হঠাৎ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করে। শুধু ভারতের নবসেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্দা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাব রপ্তানিও নিষিদ্ধ করা হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।

আমদানি ও রপ্তানিসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের ২৪টি বন্দরের মধ্যে ১৬টি বন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় বেনাপোল ও ভারতের পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে সবচেয়ে বেশি আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়। এর পরিমাণ ৮০ শতাংশ। বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২৫০ থেকে ৩০০ ট্রাকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে শতাধিক ট্রাক পণ্য থাকে তৈরি পোশাক।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত। ফলে ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে তৈরি পোশাক রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। অন্যদিকে প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো মোস্তাফিজুর রহমানের মতে, এই পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে তুলনামূলকভাবে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ওপর। তাই ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা অব্যাহত রাখাই সরকারের উচিত বলে মনে করছেন তিনি।

মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং ভারতের বিরোধপূর্ণ বিষয়সমূহ মিটিয়ে ফেলতে হবে এবং দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হবে উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

নিলামে গৌতম বুদ্ধের রত্নসম্ভার

আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৮৯৮ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ধূলিধূসর টিলা খুঁড়ে পাওয়া মূল্যবান এই রত্নগুলো এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে একটি বেসরকারি ব্রিটিশ সংগ্রহাগারে প্রায় দৃষ্টিচক্ষুর আড়ালে ছিল। এখন যেহেতু রত্নগুলোর হাতবদলের সময় এসেছে, তাই নতুন সংগ্রাহকেরা আগ্রহ নিয়ে এগুলো সংগ্রহের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু এখানে একটা অস্বস্তিও তৈরি হয়েছে।

গৌতম বুদ্ধের জন্মস্থান লুম্বিনীর কাছাকাছি, বর্তমানে ভারতের উত্তর প্রদেশে একটি ইটের ঘরের ভেতর থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০টি মুক্তা, রুবি, টোপাজ, নীলা ও নকশা করা সোনার পাত সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে এই রত্নগুলোর সঙ্গে সঙ্গে একটি খোদাই করা পাত্রে হাড়ের টুকরাও পাওয়া যায়, যেগুলোকে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষ বলে শনাক্ত করা হয়। এই আবিষ্কার তখন প্রত্নতত্ত্বের জগতে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।

সাদাবি’স এশিয়ার চেয়ারম্যান নিকোলাস চাউ মনে করেন, স্মরণকালের বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর মাঝে এই রত্নসম্ভার অন্যতম। তবে এগুলো নিলামে তোলার কারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। আর তা হচ্ছে—ভারতের ইতিহাসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে থাকা এবং বৌদ্ধদের কাছে পবিত্র এই সম্পদ বিক্রি করা কি নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য?

১৮৯৮ সালে ব্রিটিশ এস্টেট ম্যানেজার উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপ্পে লুম্বিনির ঠিক দক্ষিণে পিপ্রাওয়ায় অবস্থিত একটি ঢিবি খনন করেন। সেখান থেকেই প্রায় ২ হাজার বছর আগের ওই নির্দশনগুলো খুঁজে পাওয়া যায়।

ইতিহাসবিদদের মতে, প্রাপ্ত রত্নসম্ভার ও দেহাবশেষ, যা তখনো পর্যন্ত অক্ষত ছিল, সেগুলো গৌতম বুদ্ধের শাক্য বংশের এবং বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধদের ঐতিহ্য। হাড়ের নিদর্শনগুলো থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের মতো দেশগুলোতে বিতরণ করা হয়েছে। এসব দেশে এখনো সেগুলোর পূজা করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত