Ajker Patrika

ভাঙন শুরু, আতঙ্কে মানুষ

রায়পুরা (নরসিংদী) প্রতিনিধি
আপডেট : ২২ জুন ২০২২, ১৪: ২৩
Thumbnail image

কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে নদীর পানি বৃদ্ধি ও তীব্র স্রোতের কারণে নরসিংদীর রায়পুরার চরসুবুদ্দি ইউনিয়নের মহিষভেড় বল্লবপুর এলাকায় মেঘনাপারের দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে।

গত শনিবার রাত থেকে ভাঙন শুরু হয় এবং এখনো তা অব্যাহত রয়েছে। এই ভাঙনে ইতিমধ্যে ১০টি বসতঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নদীর পেটে চলে গেছে অনেক ফসলি জমি। ভাঙন আতঙ্কে বেশ কিছু পরিবারকে ইতিমধ্যে এলাকা ছাড়তে দেখা গেছে। গত আট বছরের ব্যবধানে ওই এলাকার কয়েক শ পরিবার নদীভাঙনের শিকার হয়েছে। ভাঙন রোধে টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। অন্যদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, মেঘনার বুকে জেগে ওঠা চরের কারণে নদীর গতিপথ বদলে গেছে। তাই মহিষভেড় গ্রামে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ওই পাশের মাটি কেটে সরিয়ে দিলেই ভাঙন থেমে যাবে। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার হবে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে নদীর পানি বেড়েছে। তীব্র স্রোতে মহিষভেড় ও বল্লবপুর গ্রামের দুই কিলোমিটার এলাকা ভেঙে গেছে। গত শনিবার রাতে এই ভাঙন শুরু হয়। গতকাল পর্যন্ত কয়েক বিঘা ফসলি জমিসহ ১০টি ঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। গত সোমবার রাত আনুমানিক ৩টার দিকে বিকট শব্দে নদীতে বিলীন হয়ে যায় পাঁচটি বসতঘর। পরে রাতেই মসজিদের মাইকে ভাঙনের কথা বলা হলে স্থানীয়রা দ্রুত এগিয়ে এলে ঘুমন্ত কয়েকজনকে নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়। তবে ঘরের ভেতর থাকা নগদ টাকা, স্বর্ণালংকারসহ আসবাবপত্র বের করে আনা সম্ভব হয়নি। নদীর পারে থাকা আরও কয়েকটি ঘর ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেন চরসুবুদ্দির ইউপির চেয়ারম্যান হাজি নাছির উদ্দিন।

মহিষভেড় এলাকায় ভাঙনের শিকার সাফিয়ার পরিবার খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করছে।

কথা হয় সাফিয়া বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘রাতে হঠাৎ বিকট শব্দে ঘুম ভাঙে। উঠে দেখি ঘরের এক পাশ দেবে যাচ্ছে। পরে দ্রুত এক নাতিসহ স্বামী-স্ত্রী ঘর থেকে বের হই। এ সময় চোখের পলকে ঘরটি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। পাশের গোয়ালঘরসহ দুটি গাভিও নদীতে ভেসে গেছে। সহায় সম্বল হারিয়ে এখন খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছি।’

চরসুবুদ্ধি ইউপির সদস্য হারুন সরকার বলেন, ‘আগে একবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা এলাকাটি পরিদর্শন করে গেছেন। বর্ষা এলেই নদীভাঙনে অনেক জমি ও বসতভিটা বিলীন হয়ে যায়। এখানে একটি গ্রাম রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হলে আশা করি মেঘনার ভাঙন থেকে মহিষভেড় গ্রামবাসী রক্ষা পাবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আজগর হোসেন বলেন, ‘নদীভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছি। শ্রীনগর ইউনিয়নের ভেলুয়ারচর এবং মহিষভেড়ের মাঝামাঝি একটি চর জেগে উঠেছে। ওই এলাকার ভাঙন রোধ এবং পানি প্রবাহের কারণে শিগগিরই ড্রেজিং করার ব্যবস্থা করা হবে। যাঁদের বসতভিটা বিলীন হয়ে গেছে তাঁদের একটি তালিকা প্রস্তুতি করা হচ্ছে। সরকারিভাবে তাঁদের নতুন আশ্রয়ণের ব্যবস্থা করা হবে।’

নরসিংদী জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিজয় চন্দ্র শংকর বলেন, ওই পারে মেঘনার বুকে জেগে ওঠা চরের কারণে নদীর গতিপথ বদলে গেছে। ফলে মহিষভেড় গ্রামে ভাঙন দেখা দিয়েছে। আশা করা যায় পাশের মাটি কেটে সরিয়ে দিলেই ভাঙন থেমে যাবে। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত