Ajker Patrika

মেশিন সচল, এক্স-রে নেই

নেত্রকোনা প্রতিনিধি
আপডেট : ২৫ জানুয়ারি ২০২২, ১২: ২৬
মেশিন সচল, এক্স-রে নেই

নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুটি এক্স-রে মেশিন আছে। দুটি মেশিনই সচল। অবশ্য একটি বাক্সবন্দী। কিন্তু প্রায় সাড়ে চার বছর ধরে হাসপাতালে এক্স-রে হয় না। কারণ রেডিওগ্রাফার না থাকায় মেশিন দুটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ফলে রোগীদের বেসরকারি রোগনির্ণয় কেন্দ্রে (ক্লিনিক) থেকে কয়েক গুণ বেশি টাকা দিয়ে এক্স-রে করাতে হচ্ছে।

গত শনিবার সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রায় ৫৬ জন রোগী আসেন চিকিৎসা নিতে। তাঁদের মধ্যে চিকিৎসক অন্তত সাতজনকে এক্স-রে করার পরামর্শ দেন।

উপজেলার বড়পারুয়া গ্রামের ফজলু মিয়া (৫৮) দুপুর একটার দিকে বলেন, ‘বুকের ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। ডাক্তার বলছেন এক্স-রে করাতে। পরে প্রাইভেট ক্লিনিকে ৪২০ টাকা দিয়ে এক্স-রে করেছি।’

খারনৈ এলাকার স্নাতকোত্তর পড়ুয়া শিক্ষার্থী নার্গিস আক্তার জানান, ইজিবাইক থেকে পড়ে তিনি হাতে ব্যথা পেয়েছিলেন। শনিবার সকাল ১০টায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গেলে চিকিৎসক তাঁকে এক্স-রে করাতে বলেন। তিনি জেলা শহরের মোক্তারপাড়া এলাকায় একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে এক্স-রে করান। এতে তাঁকে ৪০০ টাকা দিতে হয়েছে। শহরের যাওয়া-আসার ভাড়া সব মিলিয়ে তাঁর ১ হাজার ২০০ টাকা খরচ হয়েছে।

সনুড়া গ্রামের ময়না মিয়া প্রতিপক্ষের হামলায় পিঠে ব্যথা পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘হুনছি হাসপাতালে দুইডা এক্স-রে মেশিন আছে। কিন্তু চালানির মানুষ নাই। বাইরে থাইক্কা ৪৫০ টেহা দিয়া আমার হাতের এক্সরা করাইতে হইছে। হাসপাতালে এইডা করাইতে পারলে অনেক কম টেহা লাগত।’

রোগীরা বলেন, উপজেলা হাসপাতালে এক্স-রে মেশিন চালু থাকলে অনেক কম খরচে পরীক্ষা করাতে পারতেন। এত ভোগান্তি হতো না।

নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের রেডিওগ্রাফার মো. আমিনুল ইসলাম জানান, সরকারি হাসপাতালে ডিজিটাল মেশিনে এক্স-রে করাতে প্রতি প্রিন্ট ১৫০ থেকে ২০০ টাকা নেওয়া হয়। আর এনালগে খরচ অর্ধেক।

স্থানীয় বাসিন্দা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, কলমাকান্দার আটটি ইউনিয়নে প্রায় দুই লাখ ৭৫ হাজার মানুষের বাস। সেখানকার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০০৫ সালে একটি এক্স-রে মেশিন বরাদ্দ দেয় স্বাস্থ্য বিভাগ। সেটি দিয়েই চলছিল চিকিৎসাসেবা। কিন্তু হাসপাতালের রেডিওগ্রাফার পদে দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ আশ্রাফুজ্জামান ২০১৬ সালের ১০ আগস্ট টাঙ্গাইল জেলা সদর হাসপাতালে প্রেষণে যান। এরপর থেকে তিনি সেখানেই রয়েছেন। তাঁর প্রেষণ বাতিল চেয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তিনবার চিঠি দিয়েছে। কিন্তু গত তিন মাস আগে তিনি সেখানে স্থায়ীভাবে যোগদান করেন।

এদিকে, আশ্রাফুজ্জামান চলে যাওয়ার পর থেকে কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্স-রে মেশিনটি অযত্নে অবহেলায় পড়ে আছে। যন্ত্রটি পরিচালনার লোক না থাকায় তা আর ব্যবহার করা যাচ্ছে না।

স্থানীয়রা সরকারিভাবে এক্স-রে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত বছরের জানুয়ারিতে হাসপাতালে আরও একটি অত্যাধুনিক এক্স-রে মেশিন স্বাস্থ্য বিভাগ বরাদ্দ দেয়। ওই মেশিনটিও এখনো বাক্সবন্দী করে রাখা হয়েছে।

কলমাকান্দা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল খালেক বলেন, ‘এই অঞ্চলের বেশির ভাগ রোগীই সড়ক দুর্ঘটনায় জখম ও মারামারির ঘটনা নিয়ে হাসপাতালে যান। তাদের মধ্যে অনেককে ডাক্তার এক্স-রে করাতে পরামর্শ দেন। হাসপাতাল থেকে বাইরে রোগী নিয়ে গিয়ে এক্স-রে করানো খুবই জটিল কাজ। হাসপাতালে রেডিওগ্রাফার না থাকার বিষয়টি আমরা স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন সভায় উপস্থাপন করি। কিন্তু কাজ হচ্ছে না।’

কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, ‘হাসপাতালে দুটি এক্স-রে মেশিন থাকার পরও শুধু একজন রেডিওগ্রাফারের জন্য যন্ত্র দুটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। আমরা প্রতি মাসেই বিষয়টি ঊর্ধ্বতনদের জানানো হয়। আশা করা যাচ্ছে বিষয়টি দ্রুত সমাধান হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির দিনে এনসিপির শীর্ষ ৫ নেতা হঠাৎ কক্সবাজারে কেন

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন চাননি সাবেক সেনাপ্রধান হারুন-অর-রশীদ

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে চূড়ান্ত বৈঠক করল শশী থারুরের নেতৃত্বাধীন সংসদীয় কমিটি

ছাত্র-জনতার মিছিলের মুখে পড়েন এক মন্ত্রী

কক্সবাজারে পিটার হাসের সঙ্গে এনসিপি নেতাদের বৈঠকের খবর, ‘গুজব’ বললেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত