Ajker Patrika

বর্জ্যে দূষিত টাঙ্গুয়ার হাওর

রাজন চন্দ, তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ)
আপডেট : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১১: ৫০
বর্জ্যে দূষিত টাঙ্গুয়ার হাওর

সুনামগঞ্জের ৫১টি বিলের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে টাঙ্গুয়ার হাওর। হাওরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্য খুব সহজেই আকৃষ্ট করে পর্যটকদের। ফলে পর্যটকদের ভিড় বেড়েছে এই হাওরে। কিন্তু মিঠাপানির এই জলাভূমিতে নির্বিচারে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ শিকার, ফাঁদ পেতে অতিথি পাখি হত্যা, হিজল ও করছ গাছ কাটা, ইঞ্জিনচালিত নৌকার অবাধ যাতায়াতের কারণে হাওরের পরিবেশ দিন দিন হুমকির মুখে পড়ছে। একই সঙ্গে পর্যটকদের ব্যবহৃত প্লাস্টিক বর্জ্য দূষিত করছে হাওর।

স্থানীয়রা বলছেন, টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। নয়তো অচিরেই ধ্বংস হবে এই হাওরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্য।

তাহিরপুর উপজেলা হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক গোলাম সারোয়ার লিটন বলেন, ‘নানামুখী কারণে দিন দিন টাঙ্গুয়ার হাওরের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এখনই কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়াসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের সচেতনতা সৃষ্টিতে উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।’

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা হাজার হাজার পর্যটক ভাড়ায় চালিত ইঞ্জিন নৌকায় টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরছেন। এ সময় পর্যটকদের ব্যবহৃত কোমল পানীয়র বিভিন্ন প্লাস্টিকের বোতল, ওয়ান টাইম প্লাস্টিক গ্লাস ও থালা, চিপস, চানাচুরের প্যাকেট হরহামেশাই ফেলছেন হাওরের পানিতে। অপরদিকে স্থানীয় লোকজন রাতের আঁধারে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল দিয়ে ধরছেন মাছ। কেউ আবার জ্বালানির জন্য হিজল, করছ গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। অতিথি পাখি শিকারও করছেন নির্বিচারে। এই পাখি বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন তাঁরা। এসব কারণে দিন দিন হুমকির মুখে টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য।

টাঙ্গুয়ার হাওর ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আহমেদ কবির বলেন, ‘আমাদের ব্যবস্থাপনা কমিটির লোকজনকে ফাঁকি দিয়েই হাওরের মাছ ও পাখি শিকার করা হয়। এ ব্যাপারে প্রশাসনের লোকজন অনেক সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জাল ও পাখি শিকারিদের জরিমানা করেন। তবু থেমে থাকে না মাছ ও অতিথি পাখি শিকার।’

টাঙ্গুয়ার হাওর পাড়ের বাসিন্দা শিক্ষক নীহার রঞ্জন তালুকদার জানান, ছোটবেলায় টাঙ্গুয়ার হাওরে অনেক বড় বড় মাছ দেখতাম, শীতকালে পাখির কলতানে ঘুম ভাঙলেও বর্তমানে এসবের কিছুই এখন দেখা যায় না। প্রশাসনের এই বিষয়ে কঠোর নজরদারি বাড়ানো উচিত।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে টাঙ্গুয়ার হাওরের এক জেলে বলেন, ‘অন্য কোনো কর্মসংস্থান না থাকায় আমরা টাঙ্গুয়ার হাওরে মাছ ধরি, শীতের সময় পাখি শিকার করে তা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করি।’

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রায়হান কবির বলেন, ‘টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। এ ছাড়া স্থানীয় ব্যবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমে হাওরের বিভিন্ন জায়গায় টহল দেওয়া হয়। খুব শিগগিরই টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত