Ajker Patrika

ভয়ে পদত্যাগ করেন দালাল গভর্নর মালিক

এ আর চন্দন, ঢাকা
Thumbnail image

মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী এদিন জয়দেবপুর, টঙ্গী ও সাভার হয়ে ঢাকার উপকণ্ঠে এসে উপস্থিত হয়। লে. কর্নেল শফিউল্লাহর ‘এস’ ফোর্স ঢাকার ডেমরায় পৌঁছায়। যৌথ বাহিনীর অগ্রবর্তী সেনাদল শীতলক্ষ্যা ও বালু নদ অতিক্রম করে ঢাকার পাঁচ-ছয় মাইলের মধ্যে পৌঁছে যায়। বাসাব ও খিলগাঁও এলাকার চারদিকে আগে থেকেই পাকিস্তানি বাহিনী ফিল্ড ডিফেন্স নিয়েছিল।

কিন্তু ঢাকার আকাশ মিত্রবাহিনীর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে থাকায় পাকিস্তানি বাহিনী তেমন সুবিধা করতে পারেনি। মিত্রবাহিনী পাকিস্তানি সামরিক অবস্থানের ওপর তীব্র বিমান হামলা চালায়। বেশ কিছু অকুতোভয় তরুণ মুক্তিযোদ্ধা ঢাকায় ঢুকে পড়েন। নিরস্ত্র জনতাও রাস্তায় নেমে আসেন। জেনারেল নিয়াজি সেদিন পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়্যারলেসে সেনাপ্রধানকে পাঠানো বার্তায় (নম্বর জি-১২৮৬) বলেন, ‘ভারতীয় বিমান হামলার সহায়তায় বিদ্রোহীরা (মুক্তিবাহিনী) চারদিক থেকে শহর ঘিরে ফেলায় ঢাকা মারাত্মক চাপে আছে।’ (সূত্র: হামুদুর রহমান কমিশন রিপোর্ট)

এদিন গভর্নর ডা. মালিকের মন্ত্রিসভা ও শান্তি কমিটিসহ স্বাধীনতাবিরোধী নেতারা গভর্নর হাউসে জেনারেল নিয়াজির সঙ্গে বৈঠক চলাকালে মিত্রবাহিনী সেখানে বিমান হামলা করে। গভর্নর মালিক তখনই পদত্যাগ করেন এবং মন্ত্রিসভার সদস্যদের নিয়ে রেড ক্রসের গাড়িতে করে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আশ্রয় নেন। এ বিষয়ে বেসামরিক পুতুল সরকারের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী পরে তাঁর বইয়ে লিখেছেন, ‘১৩ ডিসেম্বর বেলা ১১টার দিকে ভারতীয় বিমানবাহিনী গভর্নর হাউসের ওপর আক্রমণ চালিয়েছিল।... লাইব্রেরিতে আগুন ধরে গিয়েছিল। মিলিটারি সেক্রেটারি ফায়ার ব্রিগেড ডেকে এবং অন্যান্য উপায়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছিলেন। গভর্নর আমাদের কয়েকজনকে ডাকলেন এবং বললেন, যেহেতু ইসলামাবাদ তাঁর উপদেশের প্রতি কর্ণপাত করছে না, সে কারণে তিনি পদত্যাগ করছেন। তিনি গভর্নর হাউস থেকে বেরিয়ে জরুরি পরিস্থিতিতে আশ্রয় নেওয়ার জন্য মাটির নিচে নির্মিত শেল্টারে গিয়ে আশ্রয় নেন।’ (সূত্র: বাংলাদেশের জন্ম)

এদিন দেশের বিভিন্ন এলাকায় কয়েক হাজার পাকিস্তানি সেনা আত্মসমর্পণ করে। শুধু ময়নামতিতেই আত্মসমর্পণ করে ১ হাজার ১৩৪ জন। সৈয়দপুরে আত্মসমর্পণ করে ৪৮ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের অধিনায়কসহ ১০৭ পাকিস্তানি সেনা। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের স্টুডিওতে বসে বার্তা বিভাগের প্রধান কামাল লোহানী, আলী যাকের ও আলমগীর কবির ঘন ঘন সংবাদ বুলেটিন পরিবেশন করেন। প্রতি মুহূর্তে খবর আসছিল—ঢাকা ছাড়া বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা মুক্ত।

জেনারেল নাগরা রাতে টাঙ্গাইলে হাজির হয়ে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা যদি আমাদের বিনা বাধায় এতটা পথ পাড়ি দিতে সাহায্য না করত, তাহলে আমাদের বাহিনী দীর্ঘ রাস্তায় যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ত। পথে পথেই আমাদের অনেক শক্তি ক্ষয় হয়ে যেত।’ 
ইসলামাবাদ থেকে নিয়াজিকে জানানো হয়, সহায়তার জন্য যে ‘মিত্রদের’ এসে পৌঁছানোর কথা ছিল, তা ৪৮ ঘণ্টার জন্য পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। (সূত্র: মূলধারা ৭১) 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত